কথামালা (১৯৪৪)/দুঃখী বৃদ্ধ ও যম

দুঃখী বৃদ্ধ ও যম।

এক অতি দুঃখী বৃদ্ধ ছিল। তাহার জীবিকানির্বাহের কোনও উপায় ছিল না। সে বনে কাঠ কাটিয়া ও কাঠ বেচিয়া, অতি কষ্টে দিনপাত করিত। গ্রীষ্মকালে, একদিন মধ্যাহ্ন-সময়ে, সে কাঠের বোঝা মাথায় করিয়া, বন হইতে আসিতেছে। ক্ষুধায় পেট জ্বলিতেছে তৃষ্ণায় ছাতি ফাটিতেছে; প্রখর রৌদ্রে সর্ব্বশরীর দগ্ধপ্রায় গলদঘর্ম হইতেছে; তপ্ত ধূলি ও বালুকাতে দুই পা পুড়িয়া যাইতেছে। অবশেষে, নিতান্ত ক্লান্ত হইয়া, কাঠের বোঝা ফেলিয়া, সে এক বৃক্ষের ছায়ায় বিশ্রাম করিতে বসিল। কিয়ৎক্ষণ পরে, সে মনে মনে বলিতে লাগিল, এরূপ ক্লেশভোগ করিয়া বাঁচিয়া থাকা অপেক্ষা, মরিয়া যাওয়া ভাল; কেনই বা আমার মরণ হয় না; আমার মত হতভাগ্য লোকের মরণ হইলেই মঙ্গল।

 মনের দুঃখে এইরূপ আক্ষেপ করিয়া, সেই চিরদুঃখী, যমকে সম্বোধিয়া বলিতে লাগিল, যম, তুমি আমায় ভুলিয়া আছ কেন? শীঘ্র আসিয়া আমায় লইয়া যাও; তাহা হইলেই আমার নিষ্কৃতি হয়। আর আমি ক্লেশ সহ্য করিতে পারি না। তাহার কথা সমাপ্ত না হইতেই, যম আসিয়া তাহার সম্মুখে দাড়াইলেন। সে তাঁহার বিকট মুর্ত্তি দেখিয়া ভয় পাইয়া জিজ্ঞাসা করিল, আপনি কে, কি জন্য এখানে আসিলেন? তিনি বলিলেন, আমি যম, তুমি আমায় ডাকিতেছিলে, তাই আসিয়াছি। এখন কি জন্য আমায় ডাকিতেছিলে, বল। তখন সে বলিল, মহাশয়, যদি আসিয়াছেন, তবে দয়া করিয়া, কাঠের বোঝাটি আমার মাথায় উঠাইয়া দেন, তাহা হইলেই আমার যথেষ্ট উপকার হয়। যম শুনিয়া, ঈষৎ হাস্য করিয়া, অন্তর্হিত হইলেন।


দিনপাত করিত—দিন কাটাইত।
দগ্ধ—প্রায় পোড়ার মত।
নিষ্কৃতি—মুক্তি, পরিত্রাণ।


প্রখর—প্রচণ্ড।
চিরদুঃখী—চিরকাল দুঃখভোগী।
বিকট মুর্তি—ভয়ানক চেহারা।