কথামালা (১৯৪৪)/বাঘ ও বক

বাঘ ও বক।

একদা, এক বাঘের গলায় হাড় ফুটিয়াছিল। বাঘ যথেষ্ট চেষ্টা করিল, কিছুতেই হাড় বাহির করিতে পারিল না; যন্ত্রণায় অস্থির হইয়া, চারিদিকে দৌড়াইয়া বেড়াইতে লাগিল। সে, যে জন্তুকে সম্মুখে দেখে, তাহাকেই বলে, ভাই হে, যদি তুমি, আমার গলা হইতে, হাড় বাহির করিয়া দাও, তাহা হইলে, আমি তোমায় বিলক্ষণ পুরস্কার দিব, এবং চিরকালের জন্য তোমার কেনা হইয়া থাকিব। কোন জন্তই ভয়ে সম্মত হইল না।

 অবশেষে, এক বক, পুরস্কারের লোভে, সম্মত হইল; এবং বাঘের মুখের ভিতরে, আপন লম্বা ঠোট প্রবেশ করাইয়া দিয়া, অনেক যত্নে ঐ হাড় বাহির করিয়া আনিল। বাঘ সুস্থ হইল। বক, পুরস্কারের কথা উত্থাপিত করিবামাত্র, সে, দাঁত কড়মড় ও চক্ষু রক্তবর্ণ করিয়া বলিল, অরে নির্ব্বোধ, তুই বাঘের মুখে ঠোট প্রবেশ করাইয়া দিয়াছিলি। তুই যে নির্বিঘ্নে ঠোট বাহির করিয়া লইয়াছি, তাহাই ভাগ্য বলিয়া না মানিয়া, আবার পুরস্কার চাহিতেছিস্? যদি বাঁচিবার সাধ থাকে, আমার সম্মুখ হইতে যা; নতুবা এখনই, তোর ঘাড় ভাঙ্গিব। বক শুনিয়া হতবুদ্ধি হইয়া তৎক্ষণাৎ তথা হইতে প্রস্থান করিল।

অসতের সহিত ব্যবহার করা ভাল নয়।

যথেষ্ট-অনেক, বিস্তর।
অস্থির-কাতর।
বিলক্ষণ–প্রচুর, রীতিমত, উত্তমরূপ।
চিরকাল—যাবজ্জীবন।
অনেক যত্নে—বহুকষ্টে।
উত্থাপিত—যাহা উত্থাপন কবা হইয়াছে।
রক্তবর্ণ-লালবর্ণ।
নির্ব্বিঘ্নে—নিরাপদে।
আবার-পুনরায়।
নতুবা—নচেৎ, তাহা না হইলে।
তৎক্ষণাৎ—তখনি, সেই দণ্ডে।
অসতের-মন্দ লোকের।

যন্ত্রণায়—যাতনায়।
জন্তুকে—জীবকে, প্রাণীকে।
পুরস্কার—পারিতোষিক।
সম্মত-রাজী।
সুস্থ-আরাম।
চক্ষু-চোখ।
নির্ব্বোধ-বোকা, মূর্খ, অজ্ঞান।
ভাগ্য—শুভাদৃষ্ট।
সাধ-ইচ্ছা, অভিলাষ।
হতবুদ্ধি—অবাক্‌।
প্রস্থান করিল-চলিয়া গেল।
ব্যবহাব—কার্য্য, আচরণ।