কথামালা (১৯৪৪)/বৃদ্ধ সিংহ

বৃদ্ধ সিংহ।

এক সিংহ, অতিশয় বৃদ্ধ হইয়া, নিতান্ত দুর্ব্বল ও অক্ষম হইয়াছিল। সে, একদিন ভূমিতে পড়িয়া ঘন ঘন নিশ্বাস টানিতেছে; এমন সমযে, এক বনবরাহ তথায় উপস্থিত হইল। সিংহের সহিত ঐ বনবরাহের বিরোধ ছিল; কিন্তু সিংহ অতিশয় বলবান্ বলিয়া, সে কিছুই করিতে পারিত না। এক্ষণে সিংহের এই অবস্থা দেখিয়া, সে বারংবার দন্তাঘাত করিযা চলিযা গেল। সিংহের নড়িবার ক্ষমতা ছিল না; সুতরাং বনবরাহের দন্তাঘাত সহ্য করিয়া রহিল। কিয়ৎক্ষণ পরে, এক বৃষ তথায় উপস্থিত হইল। সিংহের সহিত এই বৃষের বিরোধ ছিল। এক্ষণে সে, সিংহকে মৃতবৎ পতিত দেখিয়া, শৃঙ্গ দ্বারা প্রহার করিয়া চলিয়া গেল। সিংহ এ অপমানও সহ্য করিয়া রহিল।

দেখাদেখি এক গর্দ্দভ ভাবিল, সিংহের যখন বল ও বিক্রম ছিল, তখন আমাদের সকলের উপরেই অত্যাচার করিযাছে। এখন সময পাইয়া, সকলেই সেই অত্যাচারের প্রতিশোধ করিতেছে। বনবরাহ ও বৃষ, সিংহের অপমান করিয়া চলিয়া গেল; সিংহ কিছুই করিতে পারিল না। আমি সময় পাইয়াছি, ছাড়ি কেন? এই বলিয়া, সিংহের নিকটে গিয়া, সে তাহার মুখে পদাঘাত করিল। সিংহ আক্ষেপ করিয়া বলিল, “হায়! দুর্ভাগ্যবশতঃ আমার কি দুর্দ্দশা ঘটিল! যে সকল পশু আমায় দেখিলে ভয়ে কাঁপিত, তাহারা অনায়াসে আমার অপমান করিতেছে। যাহা হউক, বনবরাহ ও বৃষ বলবান্ জন্তু; তাহারা যে অপমান করিয়াছিল, তাহা আমার কথঞ্চিৎ সহ্য হইয়াছিল। কিন্তু সকল পশুর অধম গর্দ্দভ যে আমায় পদাঘাত করিল, ইহা অপেক্ষা আমার শতবার মৃত্যু হওয়া ভাল ছিল।”


ঘন ঘন—ক্রমাগত, অনবরত।
বলবান্-জোরাল, বলশালী।
মৃতবৎ-মরার মত।
দুর্ভাগ্যবশতঃ—দুরদৃষ্টপ্রযুক্ত।


বিরোধ—ঝগড়া।
দন্তাঘাত করিয়া—কামড়াইয়া।
আক্ষেপ—দুঃখ, খেদ।
কথঞ্চিৎ—কোনও রূপে।