কথামালা (১৯৪৪)/শৃগাল ও সারস

শৃগাল ও সারস।

এক দিবস, এক শৃগাল, এক সারসকে বলিল, ভাই, কাল তোমায় আমার আলয়ে আহার করিতে হইবে। সারস সম্মত হইয়া পরদিন যথাকালে শৃগালের আলয়ে উপস্থিত হইল। উপহাস ও আমোদ করিবার নিমিত্ত, শৃগাল, অন্য কোনও আয়োজন না করিয়া, থালায় কিঞ্চিৎ ঝোল ঢালিয়া, সারসকে আহার করিতে বলিল, এবং আপনিও আহার করিতে বসিল। শৃগাল, জিহ্বা দ্বারা অনায়াসেই থালার ঝোল চাটিয়া খাইতে লাগিল। কিন্তু, সারসের ঠোঁট অতিশয় সরু ও লম্বা; সুতরাং, সে কিছুই আহার করিতে পারিল না, চুপ করিযা বসিয়া রহিল। আহারে বসিবার সময়, তাহার যেরূপ ক্ষুধা ছিল, সেইরূপই রহিল, উহার কিছুমাত্র নিবৃত্তি হইল না।

 সারসকে আহারে বিরত দেখিয়া, শৃগাল ক্ষোভপ্রকাশ করিয়া বলিল, ভাই, তুমি ভাল করিয়া আহার করিলে না, ইহাতে আমি অতিশয় দুঃখিত হইলাম। বোধ করি আহারের দ্রব্য সুস্বাদ হয় নাই, তাই ভাল করিয়া আহার করিলে না। সারস শুনিয়া, উপহাস বুঝিতে পারিয়া, তখন কোনও উক্তি করিল না; কিন্তু শৃগালকে জব্দ করিবার নিমিত্ত, যাইবার সময় বলিল, ভাই, কাল তোমায় আমার ওখানে গিয়া, আহার করিতে হইবে। শৃগাল সম্মত হইল।

 পরদিন, যথাকালে, শৃগাল, সারসের আলয়ে উপস্থিত হইলে, সারস, এক গলাসরু পাত্রে আহার-সামগ্রী রাখিয়া, শৃগালের সম্মুখে ধরিল, এবং আইস ভাই ভোজন করি, এই বলিয়া, আহার করিতে বসিল। সারস, আপন সরু লম্বা ঠোট অনায়াসে পাত্রের মধ্যে প্রবিষ্ট করিয়া, আহার করিতে লাগিল। কিন্তু শৃগাল কোনও মতে পাত্রের মধ্যে মুখ প্রবিষ্ট করিতে পারিল না; কেবল ক্ষুধায় ব্যাকুল হইয়া, সেই পাত্রের গাত্র চাটিতে লাগিল। পরে আহার সমাপ্ত হইলে, বিরক্তি প্রকাশ না করিয়া, সে এই বলিতে বলিতে চলিয়া গেল, “আমি কোনও মতে সারসকে দোষ দিতে পারি না। আমি যে পথে চলিয়াছিলাম, সারসও সে পথে চলিয়াছে।”


আয়োজন—যোগাড়।
বিরত—ক্ষান্ত।


অনায়াসেই—অক্লেশেই, সহজেই।
সুস্বাদ—সুতাব।