কথামালা (১৯৪৪)/সিংহ ও কৃষক
সিংহ ও কৃষক।
একদা এক সিংহ কোনও কৃষকের গোয়ালবাড়ীতে প্রবেশ করিয়াছিল। কৃষক, ঐ সিংহকে ধরিবার নিমিত্ত, গোয়াল-বাড়ীর দরজা বন্ধ করিয়া দিয়া, উহাকে ব্যতিব্যস্ত করিতে আরম্ভ করিল। সিংহ, প্রথমতঃ পলাইবার চেষ্টা পাইল; কিন্তু দ্বার রুদ্ধ দেখিয়া বুঝিতে পারিল, আর সহজে পলাইবার উপায় নাই। তখন সে ভয়ঙ্কর গর্জ্জন করিয়া, গোয়ালের গরুর প্রাণসংহার করিতে আরম্ভ করিল। কৃষক, সিংহকে ধরা অসাধ্য ভাবিয়া, এবং গোয়ালের গরু নষ্ট হইতেছে দেখিয়া, তাড়াতাড়ি দরজা খুলিয়া দিল; এবং সিংহ তৎক্ষণাৎ তথা হইতে চলিয়া গেল।
সিংহের গর্জ্জন ও গোলযোগ শুনিয়া কৃষকের স্ত্রী সেই স্থানে উপস্থিত হইল। সে, স্বামীকে নিতান্ত ব্যাকুল দেখি, কারণ জিজ্ঞাসিল, এবং সবিশেষ সমস্ত অবগত হইয়া, ভৎসনা করিয়া বলিল, “তোমার যেমন বুদ্ধি, তাহার উপযুক্ত ফল পাইয়াছি। আমি তোমার মত পাগল কখনও দেখি নাই। যে জন্তুকে দুরে দেখিলে লোকে ভয়ে পলায়ন করে, তুমি সেই দুরন্ত জন্তুকে ধরিবার বাসনা করিয়াছিলে।”
ব্যতিব্যস্ত-বিরক্ত, জ্বালাতন। ভয়ঙ্কর-ভয়ানক, ভীষণ।
গর্জন—চীৎকার। প্রাণসংহার—প্রাণবধ, জীবননাশ।
অসাধ্য-ক্ষমতার অতীত। গোলযোগ-গোলমাল।
সবিশেষ-আগাগোড়া। ফল-পুরস্কার, পারিতোষিক।