নকল গড়


রাজস্থান



“জলস্পর্শ করব না আর
 চিতাের-রানার পণ,
“বুঁদির কেল্লা মাটির 'পরে
 থাকবে যতক্ষণ।”
“কী প্রতিজ্ঞা হায় মহারাজ,
মানুষের যা অসাধ্য কাজ
কেমন করে সাধবে তা আজ”
 কহেন মন্ত্রীগণ।
কহেন রাজা, “সাধ্য না হয়
 সাধব আমার পণ।”

বুদির কেল্লা চিতাের হতে
 যােজন-তিনেক দূর।
সেথায় হারাবংশী সবাই
 মহা মহা শূর।

হামু রাজা দিচ্ছে থানা,
ভয় কারে কয় নাইকো জানা-
তাহার সদ্য প্রমাণ রানা
 পেয়েছেন প্রচুর।
হারাবংশীর কেল্লা বুঁদি
 যােজন-তিনেক দূর।

মন্ত্রী কহে যুক্তি করি,
 “আজকে সারা রাতি
মাটি দিয়ে বুঁদির মতাে
 নকল কেল্লা পাতি।
রাজা এসে আপন করে
দিবেন ভেঙে ধূলির 'পরে,
নইলে শুধু কথার তরে
 হবেন আত্মঘাতী।”
মন্ত্রী দিল চিতাের-মাঝে
 নকল কেল্লা পাতি।

কুম্ভ ছিল রানার ভৃত্য
 হারাবংশী বীর—
হরিণ মেরে আসছে ফিরে,
 স্কন্ধে ধনু তীর।

খবর পেয়ে কহে, “কে রে
নকল বুঁদি কেল্লা মেরে
হারাবংশী রাজপুতেরে
 করবে নতশির।
নকল বুঁদি রাখব আমি
 হারাবংশী বীর।”

মাটির কেল্লা ভাঙতে আসেন
 রানা মহারাজ।
“দূরে রহো” কহে কুম্ভ-
 গর্জে যেন বাজ।
“বুঁদির নামে করবে খেলা,
সইব না সে অবহেলা-
নকল গড়ের মাটির ঢেলা
 রাখব আমি আজ।”
কহে কুম্ভ, “দূরে রহো
 রানা মহারাজ।”

ভূমির 'পরে জানু পাতি
 তুলি ধনুঃশর
একা কুম্ভ রক্ষা করে
 নকল বুঁদিগড়।

রানার সেনা ঘিরি তারে
মুণ্ড কাটে তরবারে—
খেলাগড়ের সিংহদ্বারে
 পড়ল ভূমি-'পর,
রক্তে তাহার ধন্য হল
 নকল বুঁদিগড়।