কথা ও কাহিনী/কথা/নগরলক্ষ্মী


নগরলক্ষী


ক্ল্পদ্রুমাবদান



  দুর্ভিক্ষ শ্রাবস্তীপুরে যবে
  জাগিয়া উঠিল হাহারবে
বুদ্ধ নিজ ভক্তগণে    শুধালেন জনে জনে,
  “ক্ষুধিতেরে অন্নদান-সেবা
  তােমরা লইবে বলাে কেবা।”

  শুনি তাহা রত্নাকর শেঠ
  করিয়া রহিল মাথা হেঁট।
কহিল সে কর জুড়ি,    “ক্ষুধার্ত বিশাল পুরী,
  এর ক্ষুধা মিটাইব আমি—
  এমন ক্ষমতা নাই স্বামী।”

  কহিল সামন্ত জয়সেন,
  “যে আদেশ প্রভু করিছেন
তাহা লইতাম শিরে    যদি মাের বুক চিরে
  রক্ত দিলে হ’ত কোনাে কাজ-
  মাের ধরে অন্ন কোথা আজ।”

  নিঃশ্বাসিয়া কহে ধর্মপাল,
  “কী কব, এমন দগ্ধ ভাল-
আমার সােনার খেত    শুষিছে অজন্মা-প্রেত
  রাজকর জোগানাে কঠিন।
  হয়েছি অক্ষম দীনহীন।”

  রহে সবে মুখে মুখে চাহি,
  কাহারাে উত্তর কিছু নাহি।
নির্বাক সে সভাঘরে    ব্যথিত নগরী-'পরে
  বুদ্ধের করুণ আঁখি দুটি
  সন্ধ্যাতারাসম রহে ফুটি।

  তখন উঠিল ধীরে ধীরে
  রক্তভাল লাজনম্রশিরে
অনাথপিণ্ডদসুতা,    বেদনায় অশ্রুপ্লুতা,
  বুদ্ধের চরণরেণু লয়ে
  মধুকণ্ঠে কহিল বিনয়ে-

  “ভিক্ষুণীর অধম সুপ্রিয়া
  তব আজ্ঞা লইল বহিয়া।
কঁদে যারা খাদ্যহারা    আমার সন্তান তারা,
  নগরীরে অন্ন বিলাবার
  আমি আজি লইলাম ভার।”

  বিস্ময় মানিল সবে শুনি-
  “ভিক্ষুকন্যা তুমি যে ভিক্ষুণী,
কোন্ অহংকারে মাতি   লইলে মস্তক পাতি
  এ-হেন কঠিন গুরু কাজ।
  কী আছে তােমার কহো আজ।”

  কহিল সে নমি সবা-কাছে,
  “শুধু এই ভিক্ষাপাত্র আছে।
আমি দীনহীন মেয়ে   অক্ষম সবার চেয়ে,
  তাই তােমাদের পাব দয়া-
  প্রভু-আজ্ঞা হইবে বিজয়া।

  “আমার ভাণ্ডার আছে ভ'রে
  তােমা-সবাকার ঘরে ঘরে।
তােমরা চাহিলে সবে   এ পাত্র অক্ষয় হবে,
  ভিক্ষা-অন্নে বাঁচাব বসুধা-
  মিটাইব দুর্ভিক্ষের ক্ষুধা।”