কথা ও কাহিনী/কথা/পণরক্ষা
পণরক্ষা
"মারাঠা দস্যু আসিছে রে ওই-
করাে করাে সবে সাজ”
আজমীর গড়ে কহিলা হাঁকিয়া
দুর্গেশ দুমরাজ।
বেলা দু-পহরে যে যাহার ঘরে
সেঁকিছে জোয়ারি রুটি,
দুর্গতোরণে নাকাড়া বাজিতে
বাহিরে আসিল ছুটি।
প্রাকারে চড়িয়া দেখিল চাহিয়া
দক্ষিণে বহু দূরে
আকাশ জুড়িয়া উড়িয়াছে ধুলা
মারাঠি অশ্বখুরে।
“মারাঠার যত পতঙ্গপাল
কৃপাণ-অনলে আজ
ঝাঁপ দিয়া পড়ি ফিরে নাকো যেন”
গর্জিলা দুমরাজ।
মাড়ােয়ার হতে দূত আসি বলে,
“বৃথা এ সৈন্যসাজ।
হেরো এ প্রভুর আদেশপত্র
দুর্গেশ দুমরাজ।
সিন্দে আসিছে, সঙ্গে তাঁহার
ফিরিঙ্গি সেনাপতি-
সাদরে তাঁদের ছাড়িবে দুর্গ
আজ্ঞা তােমার প্রতি।
বিজয়লক্ষী হয়েছে বিমুখ
বিজয়সিংহ-'পরে-
বিনা সংগ্রামে আজমীর গড়
দিবে মারাঠার করে।”
“প্রভুর আদেশে বীরের ধর্মে
বিরােধ বাধিল আজ”
নিশ্বাস ফেলি কহিলা কাতরে
দুর্গেশ দুমরাজ।
মাড়ােয়ার-দূত করিল ঘােষণা
“ছাড়াে ছাড়াে রণসাজ।”
রহিল পাষাণ-মুরতি-সমান
দুর্গেশ দুমরাজ।
বেলা যায় যায়, ধূধূ করে মাঠ,
দূরে দূরে চরে ধেনু-
তরুতলছায়ে সকরুণ রবে
বাজে রাখালের বেণু।
‘আজমীর গড় দিলা যবে মােরে
পণ করিলাম মনে,
প্রভুর দুর্গ শত্রুর করে
ছাড়িব না এ জীবনে।
প্রভুর আদেশে সে সত্য হায়
ভাঙিতে হবে কি আজ।'
এতেক ভাবিয়া ফেলে নিশ্বাস
দুর্গেশ দুমরাজ।
রাজপুত সেনা সরােষে শরমে
ছাড়িল সমরসাজ;
নীরবে দাঁড়ায়ে রহিল তােরণে
দুর্গেশ দুমরাজ।
গেরুয়া-বসনা সন্ধ্যা নামিল
পশ্চিম-মাঠ-পারে;
মারাঠি সৈন্য ধুলা উড়াইয়া
থামিল দুর্গদ্বারে।
“দুয়ারের কাছে কে ওই শয়ান।
ওঠো ওঠো খােলো দ্বার”-
নাহি শােনে কেহ, প্রাণহীন দেহ
সাড়া নাহি দিল আর।
প্রভুর কর্মে বীরের ধর্মে
বিরােধ মিটাতে আজ
দুর্গদুয়ারে ত্যজিয়াছে প্রাণ
দুর্গেশ দুমরাজ।