কথা ও কাহিনী/কথা/স্বামীলাভ


স্বামীলাভ


ভক্তমাল



একদা তুলসীদাস জাহ্নবীর তীরে
 নির্জন শ্মশানে
সন্ধ্যায় আপন-মনে একা একা ফিরে
 মাতি নিজ গানে।
হেরিলেন মৃত পতি-চরণের তলে
 বসিয়াছে সতী-
তারি সনে এক সাথে এক চিতানলে
 মরিবারে মতি।
সঙ্গীগণ মাঝে মাঝে আনন্দচীৎকারে
 করে জয়নাদ,
পুরােহিত ব্রাহ্মণেরা ঘেরি চারি ধারে
 গাহে সাধুবাদ!


সহসা সাধুরে নারী হেরিয়া সম্মুখে
 করিয়া প্রণতি
কহিল বিনয়ে, “প্রভাে, আপন শ্রীমুখে
 দেহো অনুমতি।”

তুলসী কহিল, “মাতঃ, যাবে কোন্‌খানে,
 এত আয়ােজন?”
সতী কহে, “পতিসহ যাব স্বর্গ-পানে
 করিয়াছি মন।”
“ধরা ছাড়ি কেন, নারী, স্বর্গ চাহ তুমি”
 সাধু হাসি কহে,
“হে জননী, স্বর্গ যার, এ ধরণীভূমি
 তাঁহারি কি নহে!”


বুঝিতে না পারি কথা নারী রহে চাহি
 বিস্ময়ে অবাক-
কহে করজোড় করি, “স্বামী যদি পাই
 স্বর্গ দূরে থাক্।”
তুলসী কহিল হাসি, “ফিরে চলাে ঘরে-
 কহিতেছি আমি,
ফিরে পাবে আজ হতে মাসেকের পরে
 আপনার স্বামী।”
রমণী আশার বশে গৃহে ফিরে যায়
 শ্মশান তেয়াগি;
তুলসী জাহ্নবীতীরে নিস্তব্ধ নিশায়
 রহিলেন জাগি।

নারী রহে শুদ্ধচিতে নির্জন ভবনে-
 তুলসী প্রত্যহ
কী তাহারে মন্ত্র দেয়, নারী একমনে
 ধ্যায় অহরহ।
একমাস পূর্ণ হতে প্রতিবেশীদলে
 আসি তার দ্বারে
শুধাইল, “পেলে স্বামী?” নারী হাসি বলে,
 “পেয়েছি তাঁহারে।”
শুনি ব্যগ্র কহে তারা, “কহাে তবে কহো
 আছে কোন্ ঘরে।”
নারী কহে, “রয়েছেন প্রভু অহরহ
 আমারি অন্তরে।”