মানী

আরঙজেব ভারত যবে
করিতেছিল খান্‌খান্‌—
মারব পতি কহিলা আসি
করহ প্রভু অবধান—
গোপনরাতে অচলগড়ে
নহর্ যাঁরে এনেছে ধ’রে

বন্দী তিনি আমার ঘরে
সিরোহিপতি সুরতান,
কী অভিলাষ তাঁহার পরে
আদেশ মোরে করো দান।

শুনিয়া কহে আরঙজেব
কী কথা শুনি অদ্‌ভুত।
এতদিনে কি পড়িল ধরা
অশনিভরা বিদ্যুৎ।
পাহাড়ি ল’য়ে কয়েক শত
পাহাড়ে বনে ফিরিতে রত,
মরুভূমির মরীচিমতো
স্বাধীন ছিল রাজপুত।
দেখিতে চাহি,—আনিতে তারে
পাঠাও কোনো রাজদূত।

মাড়োয়া-রাজ যশোবন্ত
কহিলা তবে জোড়কর,—
ক্ষত্রকুল-সিংহশিশু
লয়েছে আজি মোর ঘর,—
বাদ্‌শা তাঁরে দেখিতে চান
বচন আগে করুন দান

কিছুতে কোনো অসম্মান
হবে না কভু তাঁর পর,—
সভায় তবে আপনি তাঁরে
আনিব করি সমাদর।

আরঙজেব কহিলা হাসি
কেমন কথা কহ আজ।
প্রবীণ তুমি প্রবল বীর
মাড়োয়াপতি মহারাজ।
তোমার মুখে এমন বাণী
শুনিয়া মনে শরম মানি,
মানীর মান করিব হানি
মানীরে শোভে হেন কাজ?
কহিনু আমি, চিন্তা নাহি,
আনহ তাঁরে সভামাঝ।

সিরোহিপতি সভায় আসে
মাড়োয়ারাজে ল’য়ে সাথ;
উচ্চশির উচ্চে রাখি
সমুখে করে আঁখিপাত।
কহিল সবে বজ্রনাদে
“সেলাম করে বাদ্‌শাজাদে,”—

হেলিয়া যশোবন্ত-কাঁধে
কহিলা ধীরে নরনাথ,—
গুরুজনের চরণ ছাড়া
করিনে কারে প্রণিপাত।

কহিলা রোষে রক্ত আঁখি
বাদ্‌শাহের অনুচর—
“শিখাতে পারি কেমনে মাথা
লুটিয়া পড়ে ভূমিপর।”
হাসিয়া কহে সিরোহিপতি
“এমন যেন না হয় মতি
ভয়েতে কারে করিব নতি,
জানিনে কভু ভয় ডর।”
এতেক বলি দাঁড়াল রাজা
কৃপাণ পরে করি ভর।

বাদশা ধরি সুরতানেরে
বসায়ে নিল নিজপাশ।
কহিলা, বীর, ভারত মাঝে
কী দেশ পরে তব আশ।
কহিলা রাজা “অচলগড়
দেশের সেরা জগত-পর,”

সভার মাঝে পরস্পর
নীরবে উঠে পরিহাস।
বাদ্‌শা কহে “অচল হয়ে
অচলগড়ে করো বাস।”

১লা কার্ত্তিক, ১৩০৬