কল্পনা/মদনভস্মের পূর্বে
মদনভস্মের পূর্বে
একদা তুমি অঙ্গ ধরি ফিরিতে নব ভুবনে,
মরি মরি অনঙ্গদেবতা।
কুসুমরথে মকরকেতু উড়িত মধুপবনে,
পথিক বধূ চরণে প্রণতা।
ছড়াত পথে আঁচল হতে অশোক চাঁপা করবী
মিলিয়া যত তরুণ তরুণী,
বকুলবনে পবন হত সুরার মতো সুরভি—
পরান হত অরুণবরনি।
সন্ধ্যা হলে কুমারীদলে বিজন তব দেউলে
জ্বালয়ে দিত প্রদীপ যতনে,
শূন্য হলে তোমার তৃণ বাছিয়া ফুলমুকুলে
সায়ক তারা গড়িত গোপনে।
কিশোর কবি মুগ্ধছবি বসিয়া তব সোপানে
বাজায়ে বীণা রচিত রাগিণী।
হরিণ-সাথে হরিণী আসি চাহিত দীননয়ানে,
বাঘের সাথে আসিত বাঘিনি।
হাসিয়া যবে তুলিতে ধনু প্রণয়ভীরু ষোড়শী
চরণে ধরি করিত মিনতি।
পঞ্চশর গােপনে লয়ে কৌতূহলে উলসি
পরখছলে খেলিত যুবতী।
শ্যামল তৃণশয়নতলে ছড়ায়ে মধুমাধুরী
ঘুমাতে তুমি গভীর আলসে,
ভাঙাতে ঘুম লাজুক বন্ধু করিত কত চাতুরী—
নূপুরদুটি বাজাত লালসে।
কাননপথে কলস লয়ে চলিত যবে নাগরী
কুসুমশর মারিতে গােপনে,
যমুনাকুলে মনের ভুলে ভাসায়ে দিয়ে গাগরি
রহিত চাহি আকুলনয়নে।
বাহিয়া তব কুসুমতরী সমুখে আসি হাসিতে—
শরমে বালা উঠিত জাগিয়া,
শাসনতরে বাঁকায়ে ভুরু নামিয়া জলরাশিতে
মারিত জল হাসিয়া রাগিয়া।
তেমনি আজো উদিছে বিধু, মাতিছে মধুযামিনী,
মাধবীলতা মুদিছে মুকুলে।
বকুলতলে বাঁধিছে চুল একেলা বসি কামিনী
মলয়ানিলশিথিল দুকূলে।
বিজন নদীপুলিনে আজো ডাকিছে চখা চখিরে,
মাঝেতে বহে বিরহবাহিনী।
গােপন-ব্যথা-কাতরা বালা বিরলে ডাকি সখীরে
কাঁদিয়া কহে করুণ কাহিনী।
এসো গো আজি অঙ্গ ধরি সঙ্গে করি সখারে
বন্যমালা জড়ায়ে অলকে,
এসো গোপনে মৃদু চরণে বাসরগৃহ-দুয়ারে
স্তিমিতশিখা প্রদীপ-আলোকে।
এসো চতুর মধুর হাসি তড়িৎসম সহসা
চকিত করো বধূরে হরষে—
নবীন করো মানব-ঘর, ধরণী করো বিবশা
দেবতাপদ-সরস-পরশে।