কাদম্বরী (তারাশঙ্কর তর্করত্ন, ১৮৯২)/কথারম্ভ-৭
এই কথা বলিতে বলিতে চন্দ্রোদয় হইল। নবোদিত চন্দ্রের আলোক অন্ধকারমধ্যে পতিত হওয়াতে বোধ হইল যেন, জাহ্নবীর তরঙ্গ যমুনার জলের সহিত মিলিত হইয়াছে। সুধাংশুসমাগমে যামিনী জ্যোৎস্নারূপ দশনপ্রভা বিস্তার করিয়া যেন আহ্লাদে হাসিতে লাগিল। চন্দ্রোদয়ে গাম্ভীর্য্যশালী সাগরও ক্ষুব্ধ হইয়া তরঙ্গরূপ বাহু প্রসারণ পূর্ব্বক বেলা আলিঙ্গন করে। সে সময়ে অবলার মন চঞ্চল হইবে আশ্চর্য্য কি? চন্দ্রের সহায়তা ও মলয়ানিলের অনুকূলতায় আমার হৃদয়স্থিত মদনানল প্রবল হইয়া জ্বলিয়া উঠিল। চন্দ্রের দিকে নেত্রপাত করিয়াও চারি দিকে মৃত্যুমুখ দেখিতে লাগিলাম। অন্ধকারে লক্ষ্য স্থির করিতে না পারিয়া কুসুমচাপ নিস্তব্ধ হইয়াছিল, এক্ষণে সময় পাইয়া শরাসনে শরসন্ধান পূর্ব্বক বিরহিণীদিগের অন্বেষণ করিতে লাগিল। আমিই উহার প্রথম লক্ষ্য হইলাম। নেত্রযুগল নিমীলিত ও অঙ্গ অবশ করিয়া মূর্চ্ছা অজ্ঞাতসারে আমাকে আক্রমণ করিল। তরলিকা সভয়ে ও সসম্ভ্রমে গাত্রে শীতল চন্দনজল সেচন পূর্ব্বক তালবৃন্ত দ্বারা বীজন করিতে লাগিল। ক্রমে চৈতন্য প্রাপ্ত হইয়া নয়ন উন্মীলন পূর্ব্বক দেখিলাম, তরলিকা বিষণ্ণ বদনে ও দীন নয়নে রোদন করিতেছে। আমি লোচন উন্মীলন করিলে আমাকে জীবিত দেখিয়া অতিশয় হৃষ্ট হইল, বিনয়বাক্যে কহিল, ভর্ত্তৃদারিকে! লজ্জা ও গুরুজনের অপেক্ষা পরিহার পূর্ব্বক, প্রসন্ন চিত্তে আমাকে পাঠাইয়া দাও, আমি তোমার চিত্তচোরকে এই স্থানে আনিতেছি। অথবা ইচ্ছা হয় চল, তথায় তোমাকে লইয়া যাই। তোমার আর এরূপ সাংঘাতিক সঙ্কট পুনঃ পুনঃ দেখিতে পারি না। তরলিকে! আমিও আর এরূপ ক্লেশকর বিরহবেদনা সহ্য করিতে পারি না। চল, প্রাণ থাকিতে থাকিতে সেই প্রাণবল্লভের শরণাপন্ন হই। এই বলিয়া তরলিকাকে অবলম্বন করিয়া উঠিলাম।
প্রাসাদ হইতে অবরোহণ করিবার উপক্রম করিতেছি এমন সময়ে দক্ষিণ লোচন স্পন্দ হইল। দুর্নিমিত্ত দর্শনে শঙ্কাতুর হইয়া ভাবিলাম, এ আবার কি! মঙ্গলকর্ম্মে অমঙ্গলের লক্ষণ উপস্থিত হয় কেন? ক্রমে ক্রমে শশধর আকাশমণ্ডলের মধ্যবর্ত্তী হইয়া সুধাসলিলের ন্যায়, চন্দনরসের ন্যায় জ্যোৎস্না বিস্তার করিলে, ভূমণ্ডল কৌমুদীময় হইয়া শ্বেতবর্ণ দ্বীপের ন্যায় ও চন্দ্রলোকের ন্যায় বোধ হইতে লাগিল। কুমুদিনী বিকসিত হইল। মধুকর মধুলোভে তথায় বসিতে লাগিল। নানাবিধ কুসুমরেণু হরণ করিয়া সুগন্ধ গন্ধবহ দক্ষিণ দিক্ হইতে মন্দ মন্দ বহিতে লাগিল। ময়ূরগণ উন্মত্ত হইয়া মনোহর স্বরে গান আরম্ভ করিল। কোকিলের কলরবে চতুর্দ্দিক ব্যাপ্ত হইল। আমি কণ্ঠস্থিত সেই অক্ষমালা ও কর্ণস্থিত সেই পারিজাতমঞ্জরী ধারণ করিয়া, রক্তবর্ণ বসনে অবগুণ্ঠিত হইয়া তরলিকার হস্ত ধারণ পূর্ব্বক প্রাসাদের শিখরদেশ হইতে নামিলাম। সৌভাগ্যক্রমে কেহ আমাকে দেখিতে পাইল না। প্রমদবনের নিকটে যে দ্বার ছিল তাহা উদ্ঘাটন পূর্ব্বক বাটী হইতে নির্গত হইয়া প্রিয়তমের সমীপে চলিলাম। যাইতে যাইতে ভাবিলাম, অভিসারপথে প্রস্থিত ব্যক্তির দাস দাসী ও বাহ্য আড়ম্বরের প্রয়োজন থাকে না। যেহেতু কন্দর্প সদর্পে শরাসনে শরসন্ধান পূর্ব্বক অগ্রে অগ্রে গমন করিয়া সহায়তা করেন। চন্দ্র পথ আলোকময় করিয়া পথপ্রদর্শক হন। হৃদয় পুরোবর্ত্তী হইয়া অভয় প্রদান করে।কিঞ্চিৎ দূর যাইয়া তরলিকাকে কহিলাম, তরলিকে! চন্দ্র যেরূপ আমাকে তাঁহার নিকট লইয়া যাইতেছেন এমনি তাঁহাকে কি আমার নিকটে লইয়া আসিতে পারেন না? তরলিকা হাসিয়া বলিল, ভর্ত্তৃদারিকে! চন্দ্র কিজন্য আপনার বিপক্ষের উপকার করিবেন? পুণ্ডরীক যেরূপ তোমার রূপলাবণ্যে মোহিত হইয়াছেন, চন্দ্রও সেইরূপ তোমার নিরুপম সৌন্দর্য্য দর্শনে মুগ্ধ হইয়া প্রতিবিম্বচ্ছলে তোমার গাত্র স্পর্শ ও কর দ্বারা পুনঃ পুনঃ চরণ ধারণ করিতেছেন। বিরহীর ন্যায় ইঁহার শরীরও পাণ্ডুবর্ণ হইয়াছে। তৎকালোচিত এই সকল পরিহাসবাক্য কহিতে কহিতে সরোবরের নিকটবর্ত্তী হইলাম। কৈলাসপর্ব্বত হইতে প্রবাহিত চন্দ্রকান্তমণির প্রস্রবণে চরণ ধৌত করিতেছিলাম এমন সময়ে সরোবরের পশ্চিম তীরে রোদনধ্বনি শুনিলাম। কিন্তু দূরপ্রযুক্ত সুস্পষ্ট কিছু বুঝা গেল না। আগমনকালে দক্ষিণ চক্ষু স্পন্দ হওয়াতে মনে মনে সাতিশয় শঙ্কা ছিল; এক্ষণে অকস্মাৎ রোদনধ্বনি শুনিয়া নিতান্ত ভীত হইলাম। ভয়ে কলেবর কাঁপিতে লাগিল। যে দিকে শব্দ হইতেছিল, ঊর্দ্ধশ্বাসে সেই দিকে দৌড়িতে লাগিলাম।
অনন্তর নিঃশব্দ নিশীথপ্রভাবে দূর হইতেই “হা হতোঽস্মি—হা দগ্ধোঽস্মি—হায় কি হইল—রে দুরাত্মন্ পাপকারিন্ পিশাচ মদন! কি কুকর্ম্ম করিলি—আঃ পাপীয়সি দুর্ব্বিনীতে মহাশ্বেতে! ইনি তোমার কি অপকার করিয়াছিলেন—রে দুশ্চরিত্র চন্দ্র চণ্ডাল! এক্ষণে তুই কৃতকার্য্য হইলি—রে দক্ষিণানিল! তোর মনোরথ পূর্ণ হইল—হা পুত্ত্রবৎসল ভগবন্ শ্বেতকেতো! তোমার সর্ব্বস্ব অপহৃত হইয়াছে বুঝিতে পারিতেছ না? হে ধর্ম্ম তোমাকে আর অতঃপর কে আশ্রয় করিবে? হে তপঃ! এত দিনের পর তুমি নিরাশ্রয় হইলে। সরস্বতি! তুমি বিধবা হইলে। সত্য! তুমি অনাথ হইলে। হায়! এত দিনের পর সুরলোক শূন্য হইল। সখে! ক্ষণকাল অপেক্ষা কর, আমি তোমার অনুগমন করি। চিরকাল একত্র ছিলাম, এক্ষণে সহায়হীন, বান্ধবহীন হইয়া কিরূপে এই দেহভার বহন করিব? কি আশ্চর্য্য! আজন্মপরিচিত ব্যক্তিকেও অপরিচিতের ন্যায় অদৃষ্টপূর্ব্বের ন্যায় পরিত্যাগ করিয়া গেলে? যাইবার সময় এক বার জিজ্ঞাসাও করিলে না? এরূপ কৌশল কোথায় শিখিলে? এরূপ নিষ্ঠুরতা কাহার নিকট অভ্যাস করিলে? হায়! এক্ষণে সুহৃৎশূন্য, সহোদরশূন্য হইয়া কোথায় যাইব? কাহার শরণাপন্ন হইব? কাহার সহিত আলাপ করিব? এত দিনের পর অন্ধ হইলাম। দশ দিক্ শূন্য দেখিতেছি। সকলই অন্ধকারময় বোধ হইতেছে। এই ভারভূত জীবনে আর প্রয়োজন কি? সখে! এক বার আমার কথায় উত্তর দাও। এক বার নয়ন উন্মীলন কর। আমি তোমার প্রফুল্ল মুখকমল এক বার অবলোকন করিয়া জন্মের মত বিদায় হই। আমার সহিত তোমার সেই অকৃত্রিম প্রণয় ও অকপট সৌহার্দ্দ কোথায় গেল? তোমার সেই অমৃতময় বাক্য, স্নেহময় দৃষ্টি স্মরণ করিয়া আমার বক্ষঃস্থল বিদীর্ণ হইতেছে।” কপিঞ্জল আর্ত্ত স্বরে মুক্তকণ্ঠে এইরূপ ও অন্যরূপ নানাপ্রকার বিলাপ ও পরিতাপ করিতেছেন শুনিতে পাইলাম।
কপিঞ্জলের বিলাপবাক্য শ্রবণ করিয়া আমার প্রাণ উড়িয়া গেল। মুক্ত কণ্ঠে রোদন করিতে করিতে দ্রুত বেগে দৌড়িলাম। পদে পদে পদস্খলন হইতে লাগিল, তথাপি গতির প্রতিরোধ জন্মিল না। তথায় উপস্থিত হইয়া দেখিলাম, যাঁহার শরণাপন্ন হইতে বাটীর বহির্গত হইয়াছিলাম, তিনি সরোবরের তীরে লতামণ্ডপমধ্যবর্ত্তী শিলাতলে শৈবালরচিত শয্যায় শয়ন করিয়া আছেন। কমল, কুমুদ, কুবলয় প্রভৃতি নানাবিধ কুসুম, শয্যার পার্শ্বে বিক্ষিপ্ত রহিয়াছে। মৃণাল ও কদলীপল্লব চতুর্দ্দিকে বিকীর্ণ আছে। তাঁহার শরীর নিস্পন্দ, বোধ হইল যেন, মনোযোগ পূর্ব্বক আমার পদশব্দ শুনিতেছেন; মনঃক্ষোভ হইয়াছিল বলিয়া যেন একমনা হইয়া প্রাণায়াম দ্বারা প্রায়শ্চিত্ত করিতেছেন; আমা হইতেও আর এক জন প্রিয়তম হইল বলিয়া যেন, ঈর্ষ্যা প্রযুক্ত প্রাণ দেহকে পরিত্যাগ করিয়া গিয়াছে। ললাটে ত্রিপুণ্ড্রক, স্কন্ধে বল্কলের উত্তরীয়, গলে একাবলী মালা, হস্তে মৃণালবলয়ধারণ পূর্ব্বক অপূর্ব্ব বেশ রচনা করিয়া যেন, আমার সহিত সমাগমের নিমিত্ত অনন্যমনা হইয়া মন্ত্র সাধন করিতেছেন। কপিঞ্জল তাঁহার কণ্ঠ ধারণ করিয়া রোদন করিতেছেন। অচিরমৃত সেই মহাপুরুষকে এই হতভাগিনী ও পাপকারিণী আমি গিয়া দেখিলাম। আমাকে দেখিয়া কপিঞ্জলের দুই চক্ষু হইতে অশ্রুস্রোত বহিতে লাগিল। দ্বিগুণ শোকাবেগ হইল। অতিশয় পরিতাপ পূর্ব্বক হা হতোস্মি বলিয়া আরও উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন।
তখন মূর্চ্ছা দ্বারা আক্রান্ত ও মোহে নিতান্ত অভিভূত হইয়া বোধ হইল যেন, অন্ধকারময় পাতালতলে অবতীর্ণ হইতেছি। তদনন্তর কোথায় গেলাম, কি বলিলাম কিছুই মনে পড়ে না। স্ত্রীলোকের হৃদয় পাষাণময় এজন্যই হউক, এই হতভাগিনীকে দীর্ঘ শোক ও চিরকাল দুঃখ সহ্য করিতে হইবে বলিয়াই হউক, দৈবের অত্যন্ত প্রতিকূলতাবশতই বা হউক, জানি না কি নিমিত্ত এই হতভাগিনীর প্রাণ বহির্গত হইল না। অনেক ক্ষণের পর চেতন হইয়া ভূতলে বিলুণ্ঠিত ও ধূলিধূসরিত আত্মদেহ অবলোকন করিলাম। প্রাণেশ্বর প্রাণত্যাগ করিয়াছেন, আমি জীবিত আছি, প্রথমতঃ ইহা নিতান্ত অসম্ভাব্য, অবিশ্বাস্য ও স্বপ্নকল্পিত বোধ হইল। কিন্তু কপিঞ্জলের বিলাপ শুনিয়া সে ভ্রান্তি দূর হইল। তখন হা হতোঽস্মি বলিয়া আর্ত্তনাদ ও পিতা মাতা সখিদিগকে সম্বোধন করিয়া উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ করিতে লাগিলাম।
হে জীবিতেশ্বর! এই অনাথাকে পরিত্যাগ করিয়া কোথায় গেলে? তুমি তরলিকাকে জিজ্ঞাসা কর আমি তোমার নিমিত্ত কত কষ্ট ভোগ ও কত ক্লেশ সহ্য করিয়াছি। তোমার বিরহে একদিন যুগসহস্রের ন্যায় বোধ হইয়াছে। প্রসন্ন হও, একবার আমার কথায় উত্তর দাও। আমি লজ্জা, ভয়, কুলে জলাঞ্জলি দিয়া তোমার শরণাপন্ন হইতে আসিয়াছি, তুমি রক্ষা না করিলে আর কে রক্ষা করিবে? একবার নেত্র উন্মীলন করিয়া এই অভাগিনীর প্রতি দৃষ্টিপাত কর, তাহা হইলে কৃতার্থ হই। আমার আর উপায়ান্তর নাই। আমি তোমার ভক্ত ও তোমার প্রতিই সাতিশয় অনুরক্ত। তোমা বই কাহাকেও জানি না। তুমি দয়া না করিলে আর কে দয়া করিবে? আঃ! এখনও জীবিত আছি! না পিতা মাতার বশবর্ত্তিনী হইলাম, না বন্ধুবর্গের ভয় রাখিলাম, না আত্মীয়গণের অপেক্ষা করিলাম। সমুদায় পরিত্যাগ করিয়া যাঁহার আশ্রয় লইতে আসিয়াছি, সেই প্রাণেশ্বর কোথায়? তিনি কি আমার নিমিত্ত প্রাণত্যাগ করিয়াছেন? অরে কৃতঘ্ন প্রাণ! তুই আর কেন যাতনা দিস্? আ—এই হতভাগিনীর মৃত্যু নাই! যমও এই পাপকারিণীকে স্পর্শ করিতে ঘৃণা করেন। কি জন্য আমি তোমাকে তাদৃশ অনুরক্ত দেখিয়াও গৃহে গমন করিয়াছিলাম? আর গৃহে প্রয়োজন কি? পিতা, মাতা, বন্ধুজন ও পরিজনের ভয় কি? হায়—এক্ষণে কাহার শরণাপন্ন হই। কোথায় যাই। অয়ি বনদেবতে! ভগবতি ভবিতব্যতে! অম্ব বসুন্ধরে! করুণা প্রকাশ করিয়া দয়িতের জীবন প্রদান কর। গ্রহাবিষ্টার ন্যায়, উন্মত্তার ন্যায় এইরূপ কত প্রকার বিলাপ করিয়াছিলাম সকল এক্ষণে স্মরণ হয় না। আমার বিলাপ শ্রবণে অজ্ঞান পশু পক্ষীরাও হাহাকার করিয়াছিল এবং পল্লবপাতচ্ছলে তরুগণেরও অশ্রুপাত হইয়াছিল। এত ক্ষণে পুনর্জীবিত হইয়াছেন মনে করিয়া প্রাণেশ্বরের হৃদয় স্পর্শ করিয়া দেখিলাম, কিন্তু জীবন কোথায়? প্রাণবায়ু একবার প্রয়াণ করিলে আর কি প্রত্যাগত হয়? দৈব প্রতিকূল হইলে আর কি শুভগ্রহ সঞ্চার হয়? আমার আগমন পর্য্যন্ত তুই প্রিয়তমের প্রাণ রক্ষা করিতে পারিস্ নাই বলিয়া একাবলী মালাকে কত তিরস্কার করিলাম। প্রসন্ন হও, প্রাণেশ্বরের প্রাণ দান কর বলিয়া কপিঞ্জলের চরণ ও তরলিকার কণ্ঠ ধারণ পূর্ব্বক দীন নয়নে রোদন করিতে লাগিলাম। সে সময়ে অভূতপূর্ব্ব, অশিক্ষিতপূর্ব্ব, অনুপদিষ্টপূর্ব্ব, যে সকল করুণ বিলাপ মুখ হইতে নির্গত হইয়াছিল তাহা চিন্তা করিলেও আর মনে পড়ে না। সে এক সময়, তখন সাগরের তরঙ্গের ন্যায় দুই চক্ষু দিয়া অনবরত অশ্রুধারা পড়িতে লাগিল ও ক্ষণে ক্ষণে মূর্চ্ছা হইতে লাগিল।
এই রূপে অতীত আত্মবৃত্তান্তের পরিচয় দিতে দিতে, অতীত শোকদুঃখের অবস্থা স্মৃতিপথবর্ত্তিনী হওয়াতে, মহাশ্বেতা মূর্চ্ছাপন্ন ও চৈতন্যশূন্য হইয়া যেমন শিলাতল হইতে ভূতলে পড়িতেছিলেন অমনি চন্দ্রাপীড় কর প্রসারিত করিয়া ধরিলেন এবং অশ্রুজলার্দ্র তদীয় উত্তরীয় বল্কল দ্বারা বীজন করিতে লাগিলেন। ক্ষণকালের পর সংজ্ঞা প্রাপ্ত হইলে চন্দ্রাপীড় বিষণ্ণ বদনে ও দুঃখিত চিত্তে কহিলেন, কি দুষ্কর্ম্ম করিয়াছি! আপনার নির্ব্বাপিত শোক পুনরুদ্দীপিত করিয়া দিলাম। আর সে সকল কথায় প্রয়োজন নাই। উহা শুনিতে আমারও কষ্ট বোধ হইতেছে। অতিক্রান্ত দুরবস্থাও কীর্ত্তনের সময় প্রত্যক্ষানুভূতের ন্যায় ক্লেশজনক হয়। যাহা হউক পতনোন্মুখ প্রাণকে, অতীব দুঃখের পুনঃ পুনঃ স্মরণরূপ হুতাশনে নিক্ষিপ্ত করিবার আর আবশ্যকতা নাই।
মহাশ্বেতা দীর্ঘ নিশ্বাস পরিত্যাগ এবং নির্ব্বেদ প্রকাশ পূর্ব্বক কহিলেন, রাজকুমার! সেই দারুণ ভয়ঙ্করী বিভাবরীতে যে প্রাণ পরিত্যাগ করিয়া যায় নাই, সে যে কখন পরিত্যাগ করিবে এমন বিশ্বাস হয় না। আমি এরূপ পাপীয়সী যে, মৃত্যুও আমার দর্শনপথ পরিহার করেন। এই নির্দ্দয় পাষাণময় হৃদয়ের শোক দুঃখ সকলই অলীক। এ নির্লজ্জ এবং আমাকেও স্বয়ং নির্লজ্জের অগ্রগণ্য করিয়াছে। যে শোক অবলীলাক্রমে সহ্য করিয়াছি, এক্ষণে কথা দ্বারা তাহা ব্যক্ত করা কঠিন কর্ম্ম কি? যে হলাহল পান করে হলাহলের স্মরণে তাহার কি হইতে পারে? আপনার সাক্ষাতে সেই বিষম বৃত্তান্তের যে ভাগ বর্ণনা করিলাম, তাহার পর এরূপ শোকোদ্দীপক কি আছে যাহা বলিতে ও শুনিতে পারা যাইবেক না। যে দুরাশা—মৃগতৃষ্ণিকা অবলম্বন করিয়া এই অকৃতজ্ঞ দেহভার বহন করিতেছি এবং সেই ভয়ঙ্কর ব্যাপারের পর প্রাণধারণের হেতুভূত যে অদ্ভুত ঘটনা হইয়াছিল তাহাই এই বৃত্তান্তের পরভাগ, শ্রবণ করুন।
সেই রূপ বিলাপের পর প্রাণপরিত্যাগ করাই প্রাণেশ্বরের বিরহের প্রায়শ্চিত্ত স্থির করিয়া তরলিকাকে কহিলাম, অয়ি নৃশংসে! আর কত ক্ষণ রোদন করিব, কতই বা যন্ত্রণা সহিব। শীঘ্র কাষ্ঠ আহরণ করিয়া চিতা সাজাইয়া দাও, জীবিতেশ্বরের অনুগমন করি। বলিতে বলিতে মহাপ্রমাণ এক মহাপুরুষ চন্দ্রমণ্ডল হইতে গগনমণ্ডলে অবতীর্ণ হইলেন। তাঁহার পরিধান শুভ্র বসন, কর্ণে সুবর্ণকুণ্ডল, বক্ষঃস্থলে হার ও হস্তে কেয়ূর। সেরূপ উজ্জ্বল আকৃতি কেহ কখন দেখে নাই। দেহপ্রভায় দিগ্বলয় আলোকময় করিয়া গগন হইতে ভূতলে পদার্পণ করিলেন। শরীরের সৌরভে চতুর্দ্দিক্ আমোদিত হইল। চারি দিকে অমৃতবৃষ্টি হইতে লাগিল; পীবর বাহুযুগল দ্বারা প্রিয়তমের মৃত দেহ আকর্ষণ পূর্ব্বক “বৎসে মহাশ্বেতে! প্রাণত্যাগ করিও না, পুনর্ব্বার পুণ্ডরীকের সহিত তোমার সমাগম সম্পন্ন হইবেক।” গম্ভীর স্বরে এই কথা বলিয়া গগনমার্গে উঠিলেন। আকস্মিক এই বিস্ময়কর ব্যাপার দর্শনে বিস্মিত ও ভীত হইয়া কপিঞ্জলকে ইহার তত্ত্ব জিজ্ঞাসা করিলাম। কপিঞ্জল আমার কথায় কিছুই উত্তর না দিয়া “রে দুরাত্মন্! বন্ধুকে লইয়া কোথায় যাইতেছিস্?” রোষ প্রকাশ পূর্ব্বক এই কথা কহিতে কহিতে তাঁহার পশ্চাৎ ধাবমান হইলেন। আমি উন্মুখী হইয়া দেখিতে লাগিলাম। দেখিতে দেখিতে তাঁহারা তারাগণের মধ্যে মিশাইয়া গেলেন। কপিঞ্জলের অদর্শন, প্রিয়তমের মৃত্যু অপেক্ষাও দুঃখজনক বোধ হইল। যে ঘটনা উপস্থিত ইহার মর্ম্ম বুঝাইয়া দেয় এরূপ একটী লোক নাই। তৎকালে কি কর্ত্তব্য কিছুই স্থির করিতে না পারিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, তরলিকে! তুমি ইহার কিছু মর্ম্ম বুঝিতে পারিয়াছ? স্ত্রীস্বভাবসুলভ ভয়ে অভিভূত এবং আমার মরণাশঙ্কায় উদ্বিগ্ন, বিষণ্ণ ও কম্পিতকলেবর হইয়া তরলিকা স্খলিত গদ্গদ বচনে বলিল, ভর্ত্তৃদারিকে! না, আমি কিছুই বুঝিতে পারি নাই। এ অতি আশ্চর্য্য ব্যাপার। আমার বোধ হয় ঐ মহাপুরুষ মানুষ নহেন। যাহা বলিয়া গেলেন তাহাও মিথ্যা হইবেক না। মিথ্যা কথা দ্বারা প্রতারণা করিবার কোন অভিসন্ধি দেখি না। এরূপ ঘটনাকে আশা ও আশ্বাসের আস্পদ বলিতে হইবেক; যাহা হউক, এক্ষণে চিতাধিরোহণের অধ্যবসায় হইতে পরাঙ্মুখ হও। অন্ততঃ কপিঞ্জলের আগমনকাল পর্য্যন্ত প্রতীক্ষা কর। তাঁহার মুখে সমুদায় বৃত্তান্ত অবগত হইয়া যাহা কর্ত্তব্য পরে করিও।
জীবিততৃষ্ণার অলঙ্ঘ্যতা ও স্ত্রীজনসুলভ ক্ষুদ্রতা প্রযুক্ত আমি সেই দুরাশায় আকৃষ্ট হইয়া তরলিকার বাক্যই যুক্তিযুক্ত স্থির করিলাম। আশার কি অসীম প্রভাব! যাহার প্রভাবে লোকেরা তরঙ্গাকুল ভীষণ সাগর পার হইয়া অপরিচিত ও অজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করে; যাহার প্রভাবে অতি দীন হীন জনেরও মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকে; যাহার প্রভাবে পুত্ত্রকলত্রাদির বিরহদুঃখও অবলীলাক্রমে সহ্য করা যায়; কেবল সেই আশা হস্তাবলম্বন দেওয়াতে জনশূন্য সরোবরতীরে যাতনাময়ী সেই কালযামিনী কথঞ্চিৎ অতিবাহিত হইল। কিন্তু ঐ যামিনী যুগশতের ন্যায় বোধ হইয়াছিল। প্রাতঃকালে উঠিয়া সরোবরে স্নান করিলাম। সংসারের অসারতা, সমুদায় পদার্থের অনিত্যতা, আপনার হতভাগ্যতা ও বিপৎপাতের অপ্রতীকারিতা দেখিয়া মনে মনে বৈরাগ্যোদয় হইল এবং প্রিয়তমের সেই কমণ্ডলু, সেই অক্ষমালা লইয়া ব্রহ্মচর্য্য অবলম্বন পূর্ব্বক অবিচলিত ভক্তি সহকারে এই অনাথনাথ ত্রৈলোক্যনাথের শরণাপন্ন হইলাম। বিষয়বাসনার সহিত পিতা মাতার স্নেহ পরিত্যাগ করিলাম। ইন্দ্রিয়সুখের সহিত বন্ধুদিগের অপেক্ষা পরিহার করিলাম।
পরদিন পিতা মাতা এই সকল বৃত্তান্ত অবগত হইয়া পরিজন ও বন্ধুজনের সহিত এই স্থানে আইসেন ও নানাপ্রকার সান্ত্বনাবাক্যে প্রবোধ দিয়া বাটী গমন করিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু যখন দেখিলেন, কোন প্রকারে অবলম্বিত অধ্যবসায় হইতে পরাঙ্মুখ হইলাম না, তখন আমার গমনবিষয়ে নিতান্ত নিরাশ হইয়াও অপত্যস্নেহের গাঢ়বন্ধনবশতঃ অনেক দিন পর্য্যন্ত এই স্থানে অবস্থিতি করিলেন ও প্রতিদিন নানাপ্রকার বুঝাইতে লাগিলেন; পরিশেষে হতাশ হইয়া দুঃখিত চিত্তে বাটী গমন করিলেন। তদবধি কেবল অশ্রুমোচন দ্বারা প্রিয়তমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করিতেছি। জপ করিবার ছলে তাঁহার গুণ গণনা করিয়া থাকি। বহুবিধ নিয়ম দ্বারা পরাভূত এই দগ্ধ শরীর পোষণ করিতেছি। এই গিরিগুহায় বাস করি, ঐ সরোবরে ত্রিসন্ধ্যা স্নান করি, প্রতিদিন এই দেবাদিদেব মহাদেব অর্চ্চনা করিয়া থাকি। তরলিকা ভিন্ন আর কেহ নিকটে নাই। আমার ন্যায় পাপকারিণী ও হতভাগিনী এই ধরণীতলে কাহাকেও দেখিতে পাই না। পাপকর্ম্মের একশেষ করিয়াছি, ব্রহ্মহত্যারও ভয় রাখি নাই। আমাকে দেখিলে ও আমার সহিত আলাপ করিলেও দুরদৃষ্ট জন্মে। এই কথা বলিয়া পাণ্ডুবর্ণ বল্কল দ্বারা মুখ আচ্ছাদন করিয়া বাষ্পাকুল নয়নে রোদন করিতে আরম্ভ করিলেন। বোধ হইল যেন, শরৎকালীন শুভ্র মেঘ চন্দ্রমাকে আবৃত করিল ও বৃষ্টি হইতে লাগিল।
মহাশ্বেতার বিনয়, দাক্ষিণ্য, সুশীলতা ও মহানুভাবতায় মোহিত হইয়া চন্দ্রাপীড় তাঁহাকে প্রথমেই স্ত্রীরত্ন বলিয়া জ্ঞান করিয়াছিলেন। তাহাতে আবার আদ্যোপান্ত আত্মবৃত্তান্ত বর্ণনা দ্বারা সরলতা প্রকাশ ও পতিব্রতাধর্ম্মের চমৎকার দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করাতে বিধাতার অলৌকিক সৃষ্টি বলিয়া বোধ হইল ও সাতিশয় বিস্ময় জন্মিল। তখন প্রীত ও প্রসন্ন চিত্তে কহিলেন, যাহারা স্নেহের উপযুক্ত কর্ম্মের অনুষ্ঠানে অসমর্থ হইয়া কেবল অশ্রুপাত দ্বারা লঘুতা প্রকাশ করে তাহারাই অকৃতজ্ঞ। আপনি অকৃত্রিম প্রণয় ও অকপট অনুরাগের উপযুক্ত কর্ম্ম করিয়াও কি জন্য আপনাকে অকৃতজ্ঞ ও ক্ষুদ্র বোধ করিতেছেন? বিশুদ্ধ প্রেম প্রকাশের নবীন পথ উদ্ভাবন পূর্ব্বক অপরিচিতের ন্যায় আজন্মপরিচিত বান্ধবজনের পরিত্যাগ এবং অকিঞ্চিৎকর পদার্থের ন্যায় সাংসারিক সুখে জলাঞ্জলি প্রদান করিয়াছেন; ব্রহ্মচর্য্য অবলম্বন পূর্ব্বক তপস্বিনীবেশে জগদীশ্বরের আরাধনা করিতেছেন; অনন্যমনা হইয়া প্রাণেশ্বরের সহিত সমাগমের উপায় চিন্তা করিতেছেন। এতদ্ব্যতিরিক্ত বিশুদ্ধ প্রণয় পরিশোধের আর পন্থা কি?
শাস্ত্রকারেরা অনুমরণকে যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রণালী বলিয়া নির্দ্দেশ করেন উহা ব্যামোহমাত্র। মূঢ় ব্যক্তিরাই মোহবশতঃ ঐ পথে পদার্পণ করে। ভর্ত্তা উপরত হইলে তাঁহার অনুগমন করা মূর্খতা প্রকাশ করা মাত্র উহাতে কিছুই উপকার নাই। না উহা মৃত ব্যক্তির পুনর্জীবনের উপায়, না তাঁহার শুভলোকপ্রাপ্তির হেতু, না পরস্পর দর্শন ও সমাগমের সাধন। জীবগণ নিজ নিজ ধর্ম্মানুসারে শুভাশুভ লোক প্রাপ্ত হয়। সুতরাং অনুমরণ দ্বারা যে পরস্পর সাক্ষাৎ হইবে তাহার নিশ্চয় কি? লাভ এই, অনুমৃত ব্যক্তিকে আত্মহত্যাজন্য মহাপাপে লিপ্ত হইয়া ঘোর নরকে চিরকাল বাস করিতে হয়। বরং জীবিত থাকিলে সৎকর্ম্ম দ্বারা স্বীয় উপকার ও শ্রাদ্ধতর্পণাদি দ্বারা উপরতের উপকার করিতে পারা যায়, মরিলে কাহার কিছুই উপকার নাই। অনুমরণ পতিব্রতার লক্ষণ নয়। দেখ, রতি, পতির মরণের পর ত্রিলোচনের নয়নানলে আত্মার আহুতি প্রদান করেন নাই। শূরসেন রাজার দুহিতা পৃথা, পাণ্ডুর মরণোত্তর অনুমৃতা হন নাই। বিরাটরাজের কন্যা উত্তরা, অভিমন্যুর মরণে আপন প্রাণ পরিত্যাগ করেন নাই। ধৃতরাষ্ট্রের কন্যা দুঃশলা, জয়দ্রথের মরণোত্তর অর্জ্জুনের শরানলে আপনারে আহুতি দেন নাই। কিন্তু উঁহারা সকলেই পতিব্রতা বলিয়া জগতে বিখ্যাত। এইরূপ শত শত পতিপ্রাণা যুবতী পতির মরণেও জীবিত ছিলেন শুনিতে পাওয়া যায়। তাঁহারাই যথার্থ বুদ্ধিমতী ও যথার্থ ধর্ম্মের গতি বুঝিতে পারিয়াছিলেন। বিবেচনা করিলে স্বার্থপর লোকেরাই দুঃসহ বিরহযন্ত্রণা সহ্য করিতে না পারিয়া অনুমরণ অবলম্বন করে। কেহ বা অহঙ্কার প্রকাশের নিমিত্ত এই পথে প্রবৃত্ত হয়। ফলতঃ ধর্ম্মবুদ্ধিতে প্রায় কেহ অনুমৃত হয় না। আপনি মহাপুরুষ কর্ত্তৃক আশ্বাসিত হইয়াছেন, তিনি যে মিথ্যা কথা দ্বারা প্রতারণা করিবেন এমন বোধ হয় না। দৈব অনুকূল হইয়া আপনার প্রতি অনুকম্পা প্রকাশ করিবেন, সন্দেহ নাই। মরিলে পুনর্ব্বার জীবিত হয়, এ কথা নিতান্ত অসম্ভাবিত নহে। পূর্ব্ব কালে গন্ধর্ব্বরাজ বিশ্বাবসুর ঔরসে মেনকার গর্ভে প্রমদ্বরা নামে এক কন্যা জন্মে। ঐ কন্যা আশীবিষদষ্ট ও বিষবেগে উপরত হইয়াছিল; কিন্তু রুরুনামক ঋষিকুমার আপন পরমায়ুর অর্দ্ধেক প্রদান করিয়া উহাকে পুনর্জীবিত করেন। অভিমন্যুর তনয় পরীক্ষিৎ অশ্বত্থামার অস্ত্র দ্বারা আহত ও প্রাণবিযুক্ত হইয়াও পরমকারুণিক বাসুদেবের অনুকম্পায় পুনর্ব্বার জীবিত হন। জগদীশ্বর সানুগ্রহ ও অনুকূল হইলে কিছুই অসাধ্য থাকে না। চিন্তা করিবেন না, অচিরাৎ অভীষ্টসিদ্ধ হইবেক। সংসারে পদার্পণ করিলেই পদে পদে বিপদ আছে। কিছুই স্থায়ী নহে। বিশেষতঃ দগ্ধ বিধি অকৃত্রিম প্রণয় অধিক কাল দেখিতে পারেন না। দেখিলেই অমনি যেন ঈর্ষান্বিত হন ও তৎক্ষণাৎ ভঙ্গের চেষ্টা পান। এক্ষণে ধৈর্য্য অবলম্বন করুন; অনিন্দনীয় আত্মাকে আর মিথ্যা তিরস্কার করিবেন না। এইরূপ নানাবিধ সান্ত্বনাবাক্যে মহাশ্বেতাকে ক্ষান্ত করিলেন। মনে মনে মহাশ্বেতার এই আশ্চর্য্য ঘটনাই চিন্তা করিতে লাগিলেন। ক্ষণ কাল পরে পুনর্ব্বার জিজ্ঞাসা করিলেন, ভদ্রে! আপনার সমভিব্যাহারিণী ও দুঃখের অংশভাগিনী পরিচারিকা তরলিকা এক্ষণে কোথায়?