কাব্যগ্রন্থ (তৃতীয় খণ্ড)/সোনার তরী/সোনার তরী

সােনার তরী

গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান কাটা হ’ল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা
খরপরশা।
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।

একখানি ছােট ক্ষেত আমি একেলা,
চারিদিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।
পরপারে দেখি আঁকা
তরুছায়ামসীমাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
প্রভাত বেলা।
এ পারেতে ছােট ক্ষেত আমি একেলা।

গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে।
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ভরা-পালে চলে যায়,
কোনাে দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায়
ভাঙে দু’ধারে,
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।

ওগাে তুমি কোথা যাও কোন বিদেশে!
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
যেয়াে যেথা যেতে চাও,
যারে খুসি তারে দাও
শুধু তুমি নিয়ে যাও
ক্ষণিক হেসে
আমার সােনার ধান কূলেতে এসে।

যত চাও তত লও তরণী পরে।
আর আছে?—আর নাই, দিয়েছি ভরে।
এতকাল নদীকূলে
যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলি দিলাম তুলে
থরে বিথরে
এখন আমারে লহ করুণা করে’।

ঠাই নাই, ঠাঁই নাই! ছােট সে তরী
আমারি সােনার ধানে গিয়েছে ভরি’।
শ্রাবণ গগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে
শূন্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি’,
যাহা ছিল নিয়ে গেল সােনার তরী।

ফাল্গুন, ১২৯৮।