কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড)/ছবি ও গান/খেলা
খেলা
ছেলেতে মেয়েতে করে খেলা,
ঘাসের ’পরে, সাঁঝের বেলা।
ঘোর্ ঘোর্ গাছের তলে তলে,
ফাঁকায় পড়েছে মলিন আলো,
কোথাও যেন সোনার ছায়া ছায়া,
কোথাও যেন আঁধার কালো কালো।
আকাশের ধারে ধারে ঘিরে,
বসেছে রাঙা মেঘের মেলা,
শ্যামল ঘাসের ’পরে, সাঁঝে,
আলো আঁধারের মাঝে মাঝে,
ছেলেতে মেয়েতে করে খেলা।
ওরা যে কেন হেসে সারা,
কেন যে করে অমন্ধারা,
কেন যে লুটোপুটি,
কেন যে ছুটোছুটি,
কেন যে আহ্লাদে কুটিকুটি।
আঁখি দুটি নৃত্য করে,
নাচে চুল পিঠের ’পরে,
হাসিগুলি চোখে মুখে নুকোচুরি খেলা করে।
যেন মেঘের কাছে ছুটি পেয়ে
বিদ্যুতেরা এল ধেয়ে,
আনন্দে হলরে আপন্-হারা।
ওদের হাসি দেখে খেলা দেখে,
আকাশের একধার থেকে
মৃদু মৃদু হাস্চে একটি তারা।
ঝাউগাছে পাতাটি নড়ে না,
কামিনীর পাপ্ড়িটি পড়ে না।
আঁধার কাকের দল
সাঙ্গ করি কোলাহল,
কালো কালো গাছের ছায়ে,
কে কোথায় মিশায়ে যায়—
আকাশেতে পাখীটি ওড়ে না।
সাড়াশব্দ কোথায় গেল,
নিঝুম হয়ে এল এল
গাছপালা বন গ্রামের আশে পাশে।
শুধু খেলার কোলাহল,
শিশুকণ্ঠের কলকল,
হাসির ধ্বনি উঠেছে আকাশে।
কত আর খেল্বি ওরে,
নেচে নেচে হাতে ধরে
যে যার ঘরে চলে আয় ঝাট্,
আঁধার হয়ে এল পথঘাট।
সন্ধ্যাদীপ জ্বল্ল ঘরে
চেয়ে আছে তোদের তরে,
তোদের না হেরিলে মায়ের কোলে,
ঘরের প্রাণ যে কাঁদে সন্ধ্যে হলে।