কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড)/ছবি ও গান/জাগ্রত স্বপ্ন
জাগ্রত স্বপ্ন
আজ একেলা বসিয়া, আকাশে চাহিয়া,
কি সাধ যেতেছে, মন!
বেলা চলে যায়—আছিস্ কোথায়?
কোন্ স্বপনেতে নিমগন?
বসন্ত বাতাসে আঁখি মুদে আসে,
মৃদু মৃদু বহে শ্বাস,
গায়ে এসে যেন এলায়ে পড়িছে
কুসুমের মৃদুবাস।
যেন সুদূর নন্দন-কানন-বাসিনী
সুখ-ঘুম-ঘোরে মধুর-হাসিনী
অজানা প্রিয়ার ললিত পরশ
ভেসে ভেসে বহে যায়,
অতি মৃদু মৃদু লাগে গায়।
বিস্মরণ-মোহে আঁধারে আলোকে
মনে পড়ে যেন তায়,
স্মৃতি-আশামাখা মৃদু সুখে দুখে
পুলকিয়া উঠে কায়।
ভ্রমি আমি যেন সুদূর কাননে,
সুদূর আকাশতলে,
আন্মনে যেন গাহিয়া বেড়াই
সরযূর কলকলে।
গহন বনের কোথা হতে শুনি
বাঁশির স্বর আভাস,
বনের হৃদয় বাজাইছে যেন
মরমের অভিলাষ।
বিভোর হৃদয়ে বুঝিতে পারিনে
কে গায় কিসের গান,
অজানা ফুলের সুরভি মাখানো
স্বরসুধা করি পান।
যেনরে কোথায় তরুর ছায়ায়
বসিয়া রূপসী বালা,
কুসুম-শয়নে আধেক মগনা,
বাকল-বসনে আধেক নগনা,
সুখ দুখ গান গাহিছে শুইয়া
গাঁথিতে গাঁথিতে মালা।
ছায়ায় আলোকে, নিঝরের ধারে,
কোথায় গোপন গুহার মাঝারে,
যেন হেথা হোথা কে কোথায় আছে
এখনি দেখিতে পাব,
যেনরে তাদের চরণের কাছে
বীণা লয়ে গান গাব।
শুনে শুনে তা’রা আনত নয়নে
হাসিবে মুচুকি হাসি,
সরমের আভা অধরে কপোলে
বেড়াইবে ভাসি ভাসি।
মাথায় বাঁধিয়া ফুলের মাল।
বেড়াইব বনে মনে।
উড়িতেছে কেশ উড়িতেছে বেশ
উদাস পরাণ কোথা নিরুদ্দেশ,
হাতে লয়ে বাঁশি, মুখে লয়ে হাসি,
ভ্রমিতেছি আন্মনে।
চারিদিকে মোর বসন্ত হসিত,
যৌবন-কুসুম প্রাণে বিকশিত,
কুসুমের’ পরে ফেলিব চরণ,
যৌবন-মাধুরী ভরে।–
চারিদিকে মোর মাধবী মালতী
সৌরভে আকুল করে।
কেহ কি আমারে চাহিবে না?
কাছে এসে গান গাহিবে না?
পিপাসিত প্রাণে চাহি মুখপানে
কবে না প্রাণের আশা?
চাঁদের আলোতে, বসন্ত বাতাসে,
কুসুম-কাননে বাঁধি বাহুপাশে
সরমে সোহাগে মৃদু মধু হাসে
জানাবে না ভালবাসা?
আমার যৌবন-কুসুম-কাননে
ললিত চরণে বেড়াবে না?
আমার প্রাণের লতিকা-বাঁধন
চরণে তাহার জড়াবে না?
আমার প্রাণের কুসুম গাঁথিয়া
কেহ পরিবে না গলে?
তাই ভাবিতেছি আপনার মনে
বসিয়া তরুর তলে।