কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড)/ছবি ও গান/বিদায়
বিদায়
সে যখন বিদায় নিয়ে গেল,
তখন নবমীর চাঁদ অস্তাচলে যায়।
গভীর রাতি, নিঝুম চারিদিক,
আকাশেতে তারা অনিমিখ,
ধরণী নীরবে ঘুমায়।
অধরে তার প্রাণের মলিন ছায়া,
চোখের জলে মলিন চাঁদের আলো,
যাবার বেলা দুটি কথা বলে
বন-পথে কে ঐ চলে গেল।
ঘন গাছের পাতার মাঝে আঁধার পাখী গুটিয়ে পাখা,
তারি উপর চাঁদের আলো শুয়েছে,
ছায়াগুলি এলিয়ে দেহ আঁচলখানি পেতে যেন
গাছের তলায় ঘুমিয়ে রয়েছে।
গভীর রাতে বাতাসটি নেই; নিশীথে সরসীর জলে
কাঁপে না বনের কালো ছায়া,
ঘুম যেন ঘোম্টা-পরা বসে আছে ঝোপে-ঝাপে,
পড়ছে বসে কি যেন এক মায়া।
চুপ্ করে হেলে সে বকুল গাছে,
রমণী একেলা দাঁড়িয়ে আছে।
এলোথেলো চুলের মাঝে বিষাদ-মাখা সে মুখখানি
চাঁদের আলো পড়েছে তার ’পরে,
পথের পানে চেয়ে ছিল, পথের পানেই চেয়ে আছে
পলক নাহি তিলেক কালের তরে।
পশ্চিমের আকাশ-সীমায়
চাঁদখানি অস্তে যায় যায়।
ছোট ছোট মেঘ গুলি, শাদা শাদা পাখা তুলি
চলে যায় চাঁদের চুমো নিয়ে,
আঁধার গাছের ছায় ডুবু-ডুবু জোছনায়
ম্লানমুখী রমণী দাঁড়িয়ে।