কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড)/ছবি ও গান/স্মৃতি-প্রতিমা



স্মৃতি-প্রতিমা


আজ কিছু করিব না আর,
সমুখেতে চেয়ে চেয়ে গুন গুন গেয়ে গেয়ে
বসে বসে ভাবি একবার।
আজি বহু দিন পরে যেন সেই দ্বিপ্রহরে
সে দিনের বায়ু বহে যায়,
হায়রে মলিনা মায়া, অতীত প্রাণের ছায়া
এখনো কি আছিস্ হেথায়?
কেনরে পুরানো স্নেহে পরাণের শূন্য গেহে
দাড়ায়ে মুখের পানে চাস?
অভিমানে ছল?—ছল’ নয়নে কি কথা বল,
কেঁদে ওঠে হৃদয় উদাস।
আয়রে আয়রে অয়ি, শৈশবের স্মৃতিময়ী,
আয় তোর আপনার দেশে,
যে প্রাণ আছিল তেরি তাহারি দুয়ার ধরি
কেন আজ ভিখারিণী-বেশে।
আগুসরি ধীরি ধারি বার বার চাস ফিরি,
সংশয়েতে চলে না চরণ,




ভয়ে ভয়ে মুখপানে চাহিস্ আকুল প্রাণে,
স্নান মুখে না সরে বচন।
দেহে যেন নাহি বল, চোখে পড়ে-পড়ে জল,
এলোচুলে, মলিন বসনে;
কথা কেহ বলে পাছে ভয়ে না আসিস্ কাছে,
চেয়ে র’স আকুল নয়নে।
সেই ঘর, সেই দ্বার, মনে পড়ে বারবার
কত যে করিলি খেলাধূলি,
খেলা ফেলে গেলি চলে, কথাটি না গেলি বলে,
অভিমানে নয়ন আকুলি।
যেথা যা গেছিলি রেখে, ধূলায় গিয়েছে ঢেকে,
দেখরে তেমনি আছে পড়ি,
সেই অশ্র, সেই গান, সেই হাসি, অভিমান,
ধূলায় যেতেছে গড়াগড়ি।
তবেরে বারেক আয়, বসি হেথা পুনরায়,
ধূলিমাখা অতীতের মাঝে,
শূন্য গৃহ জনহীন পড়ে আছে কত দিন,
আর হেথা বাশি নাহি বাজে।
নিভিছে সাঝের ভাতি, আসিছে আঁধার রাতি,
এখনি ছাইবে চারিভিতে,
রজনীর অন্ধকারে, অকুল সাগরপারে
কেহ কারে নারিব দেখিতে।



একবার চেয়ে দেখি, কোনখানে আছে যে কি,
কোন্ খানে করেছিনু খেলা,
শুকানো এ মালাগুলি, রাখিরে কণ্ঠেতে তুলি,
কখন্ চলিয়া যাবে বেলা।
সেই পুরাতন স্নেহে হাতটি বুলাও দেহে,
মাথাটি বুকেতে তুলে রাখি,
কথা কও নাহি কও, চোখে চোখে চেয়ে রও,
আঁখিতে ডুবিয়া যাক্ আঁখি।