কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড)/প্রভাত-সঙ্গীত/সমাপন

সমাপন


আজ আমি কথা কহিব না।
আর আমি গান গাহিব না।
হের আজি ভোর-বেলা এসেছেরে মেলা লোক।
ঘিরে আছে চারিদিকে
চেয়ে আছে অনিমিখে,
হেরে মোর হাসি-মুখ ভুলে গেছে দুখশোক।
আজ আমি গান গাহিব না।

সকাতরে গান গেয়ে পথপানে চেয়ে চেয়ে
এদের ডেকেছি দিবানিশি।
ভেবেছিনু মিছে আশা, বোঝে না আমার ভাষা,
বিলাপ মিলায় দিশি দিশি।
কাছে এরা আসিত না, কোলে বসে হাসিত না,
ধরিতে চকিতে হত লীন,
মরমে বাজিত ব্যথা, সাধিলে না কহে কথা,
সাধিতে শিখিনি এতদিন।
দিত দেখা মাঝে মাঝে, দূরে যেন বাঁশি বাজে,
আভাস শুনিনু যেন হায়।



মেঘে কভু পড়ে রেখা, ফুলে কভু দেয় দেখা,
প্রাণে কভু বহে চলে যায়।
আজ তারা এসেছেরে কাছে,
এর চেয়ে শোভা কিবা আছে!
কেহ নাহি করে ডর, কেহ নাহি ভাবে পর,
সবাই আমাকে ভালবাসে,
আগ্রহে ঘিরিছে চারিপাশে।

এসেছিস্ তোরা যত জনা
তোদের কাহিনী আজি শোনা।
যার যত কথা আছে খুলে বল্ মোর কাছে,
আজ আমি কথা কহিব না।
আয় তুই, কাছে আয়, তোরে মোর প্রাণ চায়,
তোর কাছে শুধু বসে রই,
দেখি শুধু, কথা নাহি কই।
ললিত পরশে তোর পরাণে লাগিছে ঘোর,
চোখে তোর বাজে বেণু বীণা;
তুই মোরে গান শুনাবি না?
জেগেছে নূতন প্রাণ, বেজেছে নূতন গান,
ওই দেখ পোহায়েছে রাতি।
আমারে বুকেতে নেরে, কাছে আয়, আমি যেরে
নিখিলের খেলাবার সার্থী।



চারিদিকে সৌরভ, চারিদিকে গীত-রব,
চারিদিকে স্থখ আর হাসি,
চারিদিকে শিশুগুলি মুখে আধ আধ বুলি,
চারিদিকে স্নেহপ্রেমরাশি।
আমারে ঘিরেছে কা'রা, সুখেতে করেছে সারা
জগতে হয়েছে হারা প্রাণের বাসনা,
আর আমি কথা কহিব না;
আর আমি গান গাহিব না।