উদ্‌বোধন

শুধু অকারণ পুলকে
ক্ষণিকের গান গা রে আজি প্রাণ
ক্ষণিক দিনের আলোকে।
যারা আসে যায়, হাসে আর চায়,
পশ্চাতে যারা ফিরে না তাকায়,
নেচে ছুটে ধায়, কথা না শুধায়,
ফুটে আর টুটে পলকে,
তাহাদেরই গান গা রে আজি প্রাণ
ক্ষণিক দিনের আলোকে॥

প্রতি নিমেষের কাহিনী
আজি বসে বসে গাঁথিস নে আর,
বাঁধিস নে স্মৃতিবাহিনী।
যা আসে আসুক, যা হবার হোক,
যাহা চলে যায় মুছে যাক শোক,
গেয়ে ধেয়ে যাক দ্যুলোক ভূলোক
প্রতি পলকের রাগিণী।
নিমেষে নিমেষ হয়ে যাক শেষ
বহি নিমেষের কাহিনী॥

 ফুরায় যা, দে রে ফুরাতে।
ছিন্ন মালার ভ্রষ্ট কুসুম
ফিরে যাস নেকো কুড়াতে।
বুঝি নাই যাহা চাই না বুঝিতে,
জুটিল না যাহা চাই না খুঁজিতে,
পুরিল না যাহা কে রবে যুঝিতে
তারি গহ্বর পুরাতে।
যখন যা পাস মিটায়ে নে আশ,
ফুরাইলে দিস ফুরাতে॥

ওরে থাক্, থাক্ কাঁদনি!
দুই হাত দিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দে রে

নিজ হাতে বাঁধা বাঁধনি।
যে সহজ তোর রয়েছে সমুখে
আদরে তাহারে ডেকে নে রে বুকে,
আজিকার মতো যাক যাক চুকে।
যত অসাধ্য-সাধনি।
ক্ষণিক সুখের উৎসব আজি,
ওরে থাক্‌, থাক্ কাঁদনি॥

শুধু অকারণ পুলকে
নদীজলে-পড়া আলোর মতন
ছুটে যা ঝলকে ঝলকে।
ধরণীর ‘পরে শিথিলবাঁধন
ঝলমল প্রাণ করিস যাপন-
ছুঁয়ে থেকে দুলে শিশির যেমন—
শিরীষফুলের অলকে।
মর্মরতানে ভরে ওঠ্ গানে
শুধু অকারণ পুলকে॥