ক্ষণিকা/কবি
কবি
আমি যে বেশ সুখে আছি,
অন্তত নই দুঃখে কৃশ-
সে কথাটা পদ্যে লিখতে
লাগে একটু বিসদৃশ।
সেই কারণে গভীর ভাবে
খুঁজে খুঁজে গভীর চিতে
বেরিয়ে পড়ে গভীর ব্যথা
স্মৃতি কিম্বা বিস্মৃতিতে।
কিন্তু সেটা এত সুদূর,
এতই সেটা অধিক গভীর,
আছে কি না আছে তাহার
প্রমাণ দিতে হয় না কবির।
মুখের হাসি থাকে মুখে,
দেহের পুষ্টি পোষে দেহ,
প্রাণের ব্যথা কোথায় থাকে
জানে না সেই খবর কেহ।
কাব্য প’ড়ে যেমন ভাবো
কবি তেমন নয় গো।
আঁধার করে রাখে নি মুখ,
দিবারাত্র ভাঙছে না বুক,
গভীর দুঃখ ইত্যাদি সব
হাস্যমুখেই বয় গো॥
ভালোবাসে ভদ্রসভায়
ভদ্র পোশাক পরতে অঙ্গে,
ভালোবাসে ফুল্লমুখে
কইতে কথা লোকের সঙ্গে।
বন্ধু যখন ঠাট্টা করে;
মরে না সে অর্থ খুঁজে,
ঠিক যে কোথায় হাসতে হবে
একেক সময় দিব্যি বুঝে।
সামনে যখন অন্ন থাকে।
থাকে না সে অন্যমনে,
সঙ্গীদলের সাড়া পেলে
রয় না বসে ঘরের কোণে।
বন্ধুরা কয়, লোকটা রসিক—
কয় কি তারা মিথ্যামিধ্যি।
শত্রুরা কয়, লোকটা হালকা-
কিছু কি তার নাইকো ভিত্তি।
কাব্য দেখে যেমন ভাবো
কবি তেমন নয় গো।
চাঁদের পানে চক্ষু তুলে
রয় না পড়ে নদীর কূলে,
গভীর দুঃখ ইত্যাদি সব
মনের সুখেই বয় গো॥
‘সুখে আছি’ লিখতে গেলে
লোকে বলে— প্রাণটা ক্ষুদ্র!
আশাটা এর নয়কো বিরাট,
পিপাসা এর নয়কো রুদ্র।
পাঠক-দলে তুচ্ছ করে,
অনেক কথা বলে কঠোর।
বলে একটু হেসে খেলেই
ভরে যায় এর মনের জঠর।
কবিরে তাই ছন্দে বন্ধে
বানাতে হয় দুখের দলিল।
মিথ্যা যদি হয় সে, তবু
ফেলো পাঠক চোখের সলিল।
তাহার পরে আশিস কোরো
রুদ্ধকণ্ঠে ক্ষুব্ধবুকে,
কবি যেন আজন্মকাল
দুখের কাব্য লেখেন সুখে।
কাব্য যেমন কবি যেন
তেমন নাহি হয় গো।
বুদ্ধি যেন একটু থাকে,
স্নানাহারের নিয়ম রাখে-
সহজ লোকের মতোই যেন
সরল গদ্য কয় গো।
৬ আষাঢ়