ক্ষণিকা/কবির বয়স
কবির বয়স
ওরে কবি, সন্ধ্যা হয়ে এল,
কেশে তোমার ধরেছে যে পাক।
ব’সে ব’সে ঊর্ধ্বপানে চেয়ে
শুনতেছ কি পরকালের ডাক।
কবি কহে, ‘সন্ধ্যা হল বটে,
শুনছি বসে লয়ে শ্রান্ত দেহ
এ পারে ওই পল্লী হতে যদি
আজো হঠাৎ ডাকে আমায় কেহ।
যদি হোথায় বকুল-বনচ্ছায়ে
মিলন ঘটে তরুণ-তরুণীতে,
দুটি আঁখির ’পরে দুইটি আঁখি
মিলিতে চায় দুরন্ত সংগীতে-
কে তাহাদের মনের কথা লয়ে
বীণার তারে তুলবে প্রতিধ্বনি
আমি যদি ভবের কূলে বসে
পরকালের ভালো-মন্দই গনি॥
সন্ধ্যাতারা উঠে অস্তে গেল,
চিতা নিবে এল নদীর ধারে,
কৃষ্ণপক্ষে হলুদ-বর্ণ চাঁদ
দেখা দিল বনের একটি পারে।
শৃগাল-সভা ডাকে ঊর্ধ্বরবে।
পোড়ো বাড়ির শূন্য আঙিনাতে-
এমন কালে কোনো গৃহত্যাগী
হেথায় যদি জাগতে আসে রাতে,
জোড়হস্তে ঊর্ধ্বে তুলি মাথা
চেয়ে দেখে সপ্ত ঋষির পানে,
প্রাণের কূলে আঘাত করে ধীরে
সুপ্তিসাগর শব্দবিহীন গানে-
ত্রিভুবনের গোপন কথাখানি
কে জাগিয়ে তুলবে তাহার মনে
আমি যদি আমার মুক্তি নিয়ে
যুক্তি করি আপন গৃহকোণে॥
কেশে আমার পাক ধরেছে বটে,
তাহার পানে নজর এত কেন।
পাড়ার যত ছেলে এবং বুড়ো
সবার আমি এক-বয়সী জেনো।
ওষ্ঠে কারো সরল সাদা হাসি
কারো হাসি আঁখির কোণে কোণে,
কারো অশ্রু উছলে পড়ে যায়
কারো অশ্রু শুকায় মনে মনে,
কেউ-বা থাকে ঘরের কোণে দোঁহে
জগৎ-মাঝে কেউ-বা হাঁকায় রথ,
কেউ-বা মরে একলা ঘরের শোকে
জনারণ্যে কেউ-বা হারায় পথ-
সবাই মোরে করেন ডাকাডাকি,
কখন শুনি পরকালের ডাক।
সবার আমি সমান-বয়সী যে
চুলে আমার যত ধরুক পাক॥