গল্পসল্প/মানুষ সবার বড়ো
মানুষ সবার বড়ো জগতের ঘটনা
মনে হ’ত মিছে না এ শাস্ত্রের রটনা।
তখন এ জীবনকে পবিত্র মেনেছি
যখন মানুষ বলে মানুষকে জেনেছি।
ভোরবেলা জানালায় পাখিগুলো জাগালে
ভাবিতাম, আছি যেন স্বর্গের নাগালে।
মনে হ’ত, পাকা ধানে বাঁশি যেন বাজানো,
মায়ের আঁচল-ভরা দান যেন সাজানো।
তরী যেত নীলাকাশে সাদা পাল মেলিয়া,
প্রাণে যেত অজানার ছায়াখানি ফেলিয়া।
বুনো হাঁস নদীপারে মেলে যেত পাখা সে,
উতলা ভাবনা মোর নিয়ে যেত আকাশে।
নদীর শুনেছি ধ্বনি কত রাত দুপুরে,
অপ্সরী যেত যেন তাল রেখে নূপুরে।
পুজার বেজেছে বাঁশি ঘুম হতে উঠিতেই,
পুজায় পাড়ার হাওয়া ভরে যেত ছুটিতেই।
বন্ধুরা জুটিতাম কত নব বরষে,
সুধায় ভরিত প্রাণ সুহৃদের পরশে।
পশ্চিমে হেনকালে পথে কাঁটা বিছিয়ে
সভ্যতা দেখা দিল দাঁত তার খিঁচিয়ে।
সভ্যতা কারে বলে ভেবেছিনু জানি তা—
আজ দেখি কী অশুচি, কী যে অপমানিত।
কলবল সম্বল সিভিলাইজেশনের,
তার সব চেয়ে কাজ মানুষকে পেষণের।
মানুষের সাজে কে যে সাজিয়েছে অসুরে,
আজ দেখি ‘পশু’ বলা গাল দেওয়া পশুরে।
মানুষকে ভুল ক’রে গড়েছেন বিধাতা,
কত মারে এত বাঁকা হতে পারে সিধা তা।
দয়া কি হয়েছে তাঁর হতাশের রোদনে,
তাই গিয়েছেন লেগে ভ্রমসংশোধনে।
আজ তিনি নররূপী দানবের বংশে
মানুষ লাগিয়েছেন মানুষের ধ্বংসে।