গীতবিতান/পরিশিষ্ট/পরিশোধ
পরিশিষ্ট ২
পরিশোধ
নাট্যগীতি
‘কথা ও কাহিনীতে প্রকাশিত ‘পরিশোধ’ নামক পদ্য-কাহিনীটিকে নৃত্যাভিনয় উপলক্ষে নাট্যীকৃত করা হয়েছে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এর সমস্তই সুরে বসানো। বলা বাহুল্য, ছাপার অক্ষরে সুরের সঙ্গ দেওয়া অসম্ভব ব’লে কথাগুলির শ্রীহীন বৈধব্য অপরিহার্য।
গৃহদ্বারে পথপার্শ্বে।
শ্যামা। এখনো কেন সময় নাহি হল।
নাম-না-জানা অতিথি—
আঘাত হানিলে না দুয়ারে,
কহিলে না ‘দ্বার খোলো’।
হাজার লোকের মাঝে
রয়েছি একেলা যে,
এসে আমার হঠাৎ-আলো—
পরান চমকি তোলো।
আঁধার-বাধা আমার ঘরে,
জানি না কাঁদি কাহার তরে।
চরণসেবার সাধনা আনো,
সকল দেবার বেদনা আনো,
নবীন প্রাণের জাগরমন্ত্র
কানে কানে বোলো।
রাজপথে
প্রহরীগণ। রাজার আদেশ ভাই—
চোর ধরা চাই, চোর ধরা চাই।
কোথা তারে পাই?
যারে পাও তারে ধরো,
কোনো ভয় নাই।
বজ্রসেনের প্রবেশ
প্রহরী। ধর্ ধর্, ওই চোর, ওই চোর।
বজ্রসেন। নই আমি, নই নই নই চোর।
অন্যায় অপবাদে
আমারে ফেলো না ফাঁদে।
নই আমি নই চোর।
প্রহরী। ওই বটে, ওই চোর, ওই চোর।
বজ্রসেন। এ কথা মিথ্যা অতি ঘোর।
আমি পরদেশী—
হেথা নেই স্বজন বন্ধু কেহ মোর।
নই চোর, নই আমি নই চোর।
শ্যামা। আহা মরি মরি,
মহেন্দ্রনিন্দিতকান্তি উন্নতদর্শন
কারে বন্দী ক’রে আনে চোরের মতন
কঠিন শৃঙ্খলে।— শীঘ্র যা লো সহচরী,
বল্ গে নগরপালে মোর নাম করি,
শ্যামা ডাকিতেছে তারে। বন্দী সাথে লয়ে
একবার আসে যেন আমার আলয়ে
দয়া করি।
সহচরী। সুন্দরের বন্ধন নিষ্ঠুরের হাতে ঘুচাবে কে।
নিঃসহায়ের অশ্রুবারি পীড়িতের চক্ষে মুছাবে কে।
আর্তের ক্রন্দনে হেরো ব্যথিত বসুন্ধরা,
অন্যায়ের আক্রমণে বিষবাণে জর্জরা।
প্রবলের উৎপীড়নে কে বাঁচাবে দুর্বলেরে—
অপমানিতেরে কার দয়া বক্ষে লবে ডেকে।
প্রহরীদের প্রতি
শ্যামা। তোমাদের একি ভ্রান্তি—
কে ওই পুরুষ দেবকান্তি,
প্রহরী, মরি মরি—
এমন ক’রে কি ওকে বাঁধে।
দেখে যে আমার প্রাণ কাঁদে।
বন্দী করেছ কোন্ দোষে।
প্রহরী। চুরি হয়ে গেছে রাজকোষে—
চোর চাই যে ক’রেই হোক।
হোক-না সে যেই-কোনো লোক—
নহিলে মোদের যাবে মান।
শ্যামা। নির্দোষী বিদেশীর রাখো প্রাণ—
দুই দিন মাগিনু সময়।
প্রহরী। রাখিব তোমার অনুনয়।
দুই দিন কারাগারে রবে,
তার পর যা হয় তা হবে।
বজ্রসেন। এ কী খেলা, হে সুন্দরী, কিসের এ কৌতুক।
কেন দাও অপমানদুখ—
মোরে নিয়ে কেন, কেন এ কৌতুক।
শ্যামা। নহে নহে নহে এ কৌতুক।
মোর অঙ্গের স্বর্ণ-অলঙ্কার
সঁপি দিয়া, শৃঙ্খল তোমার
নিতে পারি নিজদেহে। তব অপমানে
মোর অন্তরাত্মা আজি অপমান মানে।
বজ্রসেন। কোন্ অযাচিত আশার আলো
দেখা দিল রে তিমিররাত্রি ভেদি দুর্দিনদুর্যোগে।
কাহার মাধুরী বাজাইল করুণ বাঁশি।
অচেনা নির্মম ভুবনে দেখিনু এ কী সহসা—
কোন্ অজানার সুন্দর মুখে সান্ত্বনাহাসি।
২
কারাঘর
শ্যামার প্রবেশ
বজ্রসেন। এ কী আনন্দ!
হৃদয়ে দেহে ঘুচালে মম সকল বন্ধ।
দুঃখ আমার আজি হল যে ধন্য,
মৃত্যুগহনে লাগে অমৃতসুগন্ধ।
এলে কারাগারে রজনীর পারে উষাসম,
মুক্তিরূপা অয়ি লক্ষ্মী দয়াময়ী।
শ্যামা। বোলো না বোলো না আমি দয়াময়ী।
মিথ্যা, মিথ্যা, মিথ্যা!
এ কারাপ্রাচীরে শিলা আছে যত
নহে তা কঠিন আমার মতো।
আমি দয়াময়ী!
মিথ্যা, মিথ্যা, মিথ্যা।
বজ্রসেন। জেনো প্রেম চিরঋণী আপনারই হরষে,
জেনো, প্রিয়ে—
সব পাপ ক্ষমা করি ঋণশোধ করে সে।
কলঙ্ক যাহা আছে
দূর হয় তার কাছে—
কালিমার ’পরে তার অমৃত সে বরষে।
শ্যামা। হে বিদেশী, এসো এসো। হে আমার প্রিয়,
এই কথা স্মরণে রাখিয়ো
তোমা-সাথে এক স্রোতে ভাসিলাম আমি
হে হৃদয়স্বামী।
জীবনে মরণে প্রভু।
বজ্রসেন। প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে—
বাঁধন খুলে দাও, দাও দাও।
ভুলিব ভাবনা, পিছনে চাব না—
পাল তুলে দাও, দাও দাও।
প্রবল পবনে তরঙ্গ তুলিল—
হৃদয় দুলিল, দুলিল দুলিল।
পাগল হে নাবিক,
ভুলাও দিগ্বিদিক
পাল তুলে দাও, দাও দাও।
শ্যামা। চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে—
নিয়ো না, নিয়ো না সরায়ে।
জীবন মরণ সুখ দুখ দিয়ে
বক্ষে ধরিব জড়ায়ে।
স্খলিত শিথিল কামনার ভার
বহিয়া বহিয়া ফিরি কত আর—
নিজ হাতে তুমি গেঁথে নিয়ো হার,
ফেলো না আমারে ছড়ায়ে।
বিকায়ে বিকায়ে দীন আপনারে
পারি না ফিরিতে দুয়ারে দুয়ারে—
তোমার করিয়া নিয়ো গো আমারে
বরণের মালা পরায়ে।
৩
বজ্রসেন ও শ্যামা তরণীতে
শ্যামা। এবার ভাসিয়ে দিতে হবে আমার এই তরী।
তীরে বসে যায় যে বেলা, মরি গো মরি।
ফুল ফোটানো সারা ক’রে
বসন্ত যে গেল স’রে—
নিয়ে ঝরা ফুলের ডালা বলো কী করি।
জল উঠেছে ছল্ছলিয়ে, ঢেউ উঠেছে দুলে—
মর্মরিয়ে ঝরে পাতা বিজন তরুমূলে।
শূন্যমনে কোথায় তাকাস—
সকল বাতাস সকল আকাশ
ওই পারের ওই বাঁশির সুরে উঠে শিহরি।
বজ্রসেন। কহো কহো মোরে প্রিয়ে,
আমারে করেছ মুক্ত কী সম্পদ দিয়ে।
অয়ি বিদেশিনী,
তোমারই কাছে আমি কত ঋণে ঋণী।
শ্যামা। নহে নহে নহে। সে কথা এখন নহে
ওই রে তরী দিল খুলে।
তোর বোঝা কে নেবে তুলে।
সামনে যখন যাবি ওরে,
থাক্-না পিছন পিছে পড়ে—
পিঠে তারে বইতে গেলে
একলা প’ড়ে রইবি কূলে।
ঘরের বোঝা টেনে টেনে
পারের ঘাটে রাখলি এনে—
তাই যে তোরে বারে বারে
ফিরতে হল গেলি ভুলে।
ডাক্ রে আবার মাঝিরে ডাক্,
বোঝা তোমার যাক ভেসে যাক—
জীবনখানি উজাড় করে
সঁপে দে তার চরণমূলে।
বজ্রসেন। কী করিয়া সাধিলে অসাধ্য ব্রত কহো বিবরিয়া।
জানি যদি, প্রিয়ে, শোধ দিব এ জীবন দিয়ে—
এই মোর পণ।
শ্যামা। নহে নহে নহে। সে কথা এখন নহে।
তোমা লাগি যা করেছি কঠিন সে কাজ,
আরো সুকঠিন আজ তোমারে সে কথা বলা—
বালক কিশোর, উত্তীয় তার নাম—
ব্যর্থ প্রেমে মোর মত্ত অধীর।
মোর অনুনয়ে তব চুরি-অপবাদ
নিজ’পরে লয়ে সঁপেছে আপন প্রাণ।
এ জীবনে মম, ওগো সর্বোত্তম,
সর্বাধিক মোর এই পাপ
তোমার লাগিয়া।
বজ্রসেন। কাঁদিতে হবে রে, রে পাপিষ্ঠা,
জীবনে পাবি না শান্তি।
ভাঙিবে ভাঙিবে কলুষনীড় বজ্র-আঘাতে।
কোথা তুই লুকাবি মুখ মৃত্যু-আঁধারে।
শ্যামা। ক্ষমা করো নাথ, ক্ষমা করো।
এ পাপের যে অভিসম্পাত
হোক বিধাতার হাতে নিদারুণতর।
তুমি ক্ষমা করো।
বজ্রসেন। এ জন্মের লাগি
তোর পাপমূল্যে কেনা মহাপাপভাগী
এ জীবন করিলি ধিক কৃত। কলঙ্কিনী,
ধিক্ নিশ্বাস মোর তোর কাছে ঋণী।
শ্যামা। তোমার কাছে দোষ করি নাই,
দোষ করি নাই,
দোষী আমি বিধাতার পায়ে;
তিনি করিবেন রোষ—
সহিব নীরবে।
তুমি যদি না কর দয়া,
সবে না, সবে না, সবে না।
বজ্রসেন। তবু ছাড়িবি নে মোরে?
শ্যামা। ছাড়িব না, ছাড়িব না।
তোমা লাগি পাপ নাথ,
তুমি করো মর্মাঘাত।
ছাড়িব না।
শ্যামাকে বজ্রসেনের হত্যার চেষ্টা
নেপথ্যে। হায়, এ কী সমাপন! অমৃতপাত্র ভাঙিলি,
করিলি মৃত্যুরে সমর্পণ।
এ দুর্লভ প্রেম মূল্য হারালো হারালো
কলঙ্কে অসম্মানে।
৪
পথিকরমণী
সব-কিছু কেন নিল না, নিল না,
নিল না ভালোবাসা।
আপনাতে কেন মিটালো না যত-কিছু দ্বন্দেরে—
ভালো আর মন্দেরে।
নদী নিয়ে আসে পঙ্কিল জলধারা,
সাগরহৃদয়ে গহনে হয় হারা।
ক্ষমার দীপ্তি দেয় স্বর্গের আলো প্রেমের আনন্দেরে।
প্রস্থান
বজ্রসেন। ক্ষমিতে পারিলাম না যে
ক্ষমো হে মম দীনতা
পাপীজনশরণ প্রভু!
মরিছে তাপে মরিছে লাজে
প্রেমের বলহীনতা—
ক্ষমো হে মম দীনতা।
প্রিয়ারে নিতে পারি নি বুকে, প্রেমেরে আমি হেনেছি।
পাপীরে দিতে শাস্তি শুধু পাপেরে ডেকে এনেছি।
জানি গো, তুমি ক্ষমিবে তারে
যে অভাগিনী পাপের ভারে
চরণে তব বিনতা—
ক্ষমিবে না, ক্ষমিবে না আমার ক্ষমাহীনতা।
এসো এসো এসো প্রিয়ে,
মরণলোক হতে নূতন প্রাণ নিয়ে।
নিষ্ফল মম জীবন, নীরস মম ভুবন—
শূন্য হৃদয় পূরণ করো মাধুরীসুধা দিয়ে।
নূপুর কুড়াইয়া লইয়া
হায় রে নূপুর,
তার করুণ চরণ ত্যজিলি, হারালি কলগুঞ্জনসুর।
নীরব ক্রন্দনে বেদনাবন্ধনে
রাখিলি ধরিয়া বিরহ ভরিয়া স্মরণ সুমধুর।
তোর ঝঙ্কারহীন ধিক্কারে কাঁদে প্রাণ মম নিষ্ঠুর।
শ্যামার প্রবেশ
শ্যামা। এসেছি, প্রিয়তম।
ক্ষমো মোরে ক্ষমো।
গেল না, গেল না কেন কঠিন পরান মম
তব নিঠুর করুণ করে।
বজ্রসেন। কেন এলি, কেন এলি, কেন এলি ফিরে—
যাও যাও, চলে যাও।
শ্যামার প্রণাম ও প্রস্থান
বজ্রসেন। ধিক্ ধিক্ ওরে মুগ্ধ, কেন চাস্ ফিরে ফিরে।
এ যে দুষিত নিষ্ঠুর স্বপ্ন,
এ যে মোহবাষ্পঘন কুজ্ঝটিকা—
দীর্ণ করিবি না কি রে।
অশুচি প্রেমের উচ্ছিষ্টে
নিদারুণ বিষ—
লোভ না রাখিস
প্রেতবাস তোর ভগ্ন মন্দিরে।
নির্মম বিচ্ছেদসাধনায়
পাপক্ষালন হোক—
না কোরো মিথ্যা শোক,
দুঃখের তপস্বী রে—
স্মৃতিশৃঙ্খল করো ছিন্ন—
আয় বাহিরে,
আয় বাহিরে।
নেপথ্যে। কঠিন বেদনার তাপস দোঁহে
যাও চিরবিরহের সাধনায়।
ফিরো না, ফিরো না— ভুলো না মোহে।
গভীর বিষাদের শান্তি পাও হৃদয়ে,
জয়ী হও অন্তরবিদ্রোহে।
যাক পিয়াসা, ঘুচুক দুরাশা,
যাক মিলায়ে কামনাকুয়াশা।
স্বপ্ন-আবেশ-বিহীন পথে
যাও বাঁধনহারা,
তাপবিহীন মধুর স্মৃতি নীরবে ব’হে।
পরিশিষ্ট ৩
এই গানগুলি রবীন্দ্রনাথের নানা গ্রন্থে মুদ্রিত, অথচ প্রথম সংস্করণ গীত বিতানে (পরিশিষ্ট খ) যে গানগুলি রবীন্দ্রনাথের নয় বলিয়া নির্দিষ্ট তাহারই একাংশ। রবীন্দ্রনাথের রচনা নয় যে, এ সম্পর্কে অন্য নির্ভরযোগ্য মুদ্রিত প্রমাণ এপর্যন্ত পাওয়া যায় নাই। পরবর্তী গ্রন্থপরিচয় দ্রষ্টব্য।
১
এমন আর কতদিন চলে যাবে রে!
জীবনের ভার বহিব কত! হায় হায়!
যে আশা মনে ছিল, সকলই ফুরাইল—
কিছু হল না জীবনে।
জীবন ফুরায়ে এল। হায় হায়।
২
ওহে দয়াময়, নিখিল-আশ্রয় এ ধরা-পানে চাও—
পতিত যে জন করিছে রোদন, পতিতপাবন,
তাহারে উঠাও।
মরণে যে জন করেছে বরণ তাহারে বাঁচাও।
কত দুখ শোক, কাঁদে কত লোক, নয়ন মুছাও।
ভাঙিয়া আলয় হেরে শূন্যময়। কোথায় আশ্রয়—
তারে ঘরে ডেকে নাও।
প্রেমের তৃষায় হৃদয় শুকায়, দাও প্রেমসুধা দাও।
হেরো কোথা যায়, কার পানে চায়। নয়নে আঁধার—
নাহি হেরে দিক, আকুল পথিক চাহে চারি ধার।
এ ঘোর গহনে অন্ধ সে নয়নে তোমার কিরণে
আঁধার ঘুচাও।
সঙ্গহারা জনে রাখিয়া চরণে বাসনা পূরাও।
কলঙ্কের রেখা প্রাণে দেয় দেখা প্রতিদিন হায়।
হৃদয় কঠিন হল দিন দিন, লজ্জা দূরে যায়।
দেহ গো বেদনা, করাও চেতনা! রেখো না, রেখো না—
এ পাপ তাড়াও।
সংসারের রণে পরাজিত জনে নববল দাও!
৩
নিত্য সত্যে চিন্তন করো রে বিমলহৃদয়ে,
নির্মল অচল সুমতি রাখো ধরি সতত।
সংশয়নৃশংস সংসারে প্রশান্ত রহো,
তাঁর শুভ ইচ্ছা স্মরি বিনয়ে রহো বিনত।
বাসনা করো জয়, দুর করো ক্ষুদ্র ভয়।
প্রাণধন করিয়া পণ চলো কঠিন শ্রেয়পথে,
ভোলো প্রসন্নমুখে স্বার্থসুখ, আত্মদুখ—
প্রেম-আনন্দরসে নিয়ত রহো নিরত।
8
মা, আমি তোর কী করেছি।
শুধু তোরে জন্ম ভ’রে মা বলে রে ডেকেছি।
চিরজীবন পাষাণী রে, ভাসালি আঁখিনীরে—
চিরজীবন দুঃখানলে দহেছি।
আঁধার দেখে তরাসেতে চাহিলাম তোর কোলে যেতে—
সন্তানেরে কোলে তুলে নিলি নে।
মা-হারা সন্তানের মতো কেঁদে বেড়াই অবিরত—
এ চোখের জল মুছায়ে তো দিলি নে।
ছেলের প্রাণে ব্যথা দিয়ে যদি, মা, তোর জুড়ায় হিয়ে
ভালো ভালো, তাই তবে হোক—
অনেক দুঃখ সয়েছি।
৫
সকলেরে কাছে ডাকি আনন্দ-আলয়ে থাকি
অমৃত করিছ বিতরণ।
পাইয়া অনন্ত প্রাণ জগত গাহিছে গান
গগনে করিয়া বিচরণ।
সূর্য শূন্যপথে ধায়— বিশ্রাম সে নাহি চায়,
সঙ্গে ধায় গ্রহপরিজন।
লভিয়া অসীম বল ছুটিছে নক্ষত্রদল,
চারি দিকে চলেছে কিরণ।
পাইয়া অমৃতধারা নব নব গ্রহ তারা
বিকশিয়া উঠে অনুক্ষণ—
জাগে নব নব প্রাণ, চিরজীবনের গান
পূরিতেছে অনন্ত গগন।
পূর্ণ লোক লোকান্তর, প্রাণে মগ্ন চরাচর
প্রাণের সাগরে সন্তরণ।
জগতে যে দিকে চাই বিনাশ বিরাম নাই,
অহরহ চলে যাত্রীগণ।
মোরা সবে কীটবৎ, সমুখে অনন্ত পথ
কী করিয়া করিব ভ্রমণ।
অমৃতের কণা তব পাথেয় দিয়েছ, প্রভো,
ক্ষুদ্র প্রাণে অনন্ত জীবন।
৬
সখা, তুমি আছ কোথা—
সারা বরষের পরে জানাতে এসেছি ব্যথা।
কত মোহ, কত পাপ, কত শোক, কত তাপ,
কত যে সয়েছি আমি তোমারে কব সে কথা।
যে শুভ্র জীবন তুমি মোরে দিয়েছিলে সখা,
দেখো আজি তাহে কত পড়েছে কলঙ্করেখা।
এনেছি তোমারি কাছে, দাও তাহা দাও মুছে—
নয়নে ঝরিছে বারি, সভয়ে এসেছি পিতা।
দেখো দেব, চেয়ে দেখো হৃদয়েতে নাহি বল—
সংসারের বায়ুবেগে করিতেছে টলমল।
লহো সে হৃদয় তুলে, রাখো তব পদমূলে—
সারাটি বরষ যেন নির্ভয়ে রহে গো সেথা।
৭
সখা, মোদের বেঁধে রাখো প্রেমডোরে।
আমাদের ডেকে নিয়ে চরণতলে রাখো ধ’রে—
বাঁধো হে প্রেমভোরে।
কঠোর পরানে কুটিল বয়ানে
তোমার এ প্রেমের রাজ্য রেখেছি আঁধার ক’রে।
আপনার অভিমানে দুয়ার দিয়ে প্রাণে
গরবে আছি বসে চাহি আপনা-পানে।
বুঝি এমনি করে হারাব তোমারে—
ধূলিতে লুটাই আপনার পাষাণভারে।
তখন কারে ডেকে কাঁদিব কাতর স্বরে।
৮
ছি ছি সখা, কী করিলে, কোন্ প্রাণে পরশিলে—
কামিনীকুসুম ছিল বন আলো করিয়া।
মানুষ-পরশ-ভরে শিহরিয়া সকাতরে
ওই-যে শতধা হয়ে পড়িল গো ঝরিয়া।
জান তো কামিনী-সতী কোমল কুসুম অতি—
দূর হতে দেখিবার, ছুঁইবার নহে সে।
দূর হতে মৃদু বায় গন্ধ তার দিয়ে যায়,
কাছে গেলে মানুষের শ্বাস নাহি সহে সে।
মধুপের পদক্ষেপে পড়িতেছে কেঁপে কেঁপে,
কাতর হতেছে কত প্রভাতের সমীরে।
পরশিতে রবির শুকাইছে কলেবর,
শিশিরের ভরটুকু সহিছে না শরীরে।
হেন কোমলতাময় ফুল কি না ছুঁলে নয়—
হায় রে কেমন বন ছিল আলো করিয়া।
মানুষ-পরশ-ভরে শিহরিয়া সকাতরে
ওই-যে শতধা হয়ে পড়িল গো ঝরিয়া।
৯
না সজনী, না, আমি জানি জানি, সে আসিবে না।
এমনি কাঁদিয়ে পোহাইবে যামিনী, বাসনা তবু পূরিবে না।
জনমেও এ পোড়া ভালে কোনো আশা মিটিল না।
যদি বা সে আসে, সখী, কী হবে আমার তায়।
সে তো মোরে, সজনী লো, ভালো কভু বাসে না— জানি লো
ভালো ক’রে কবে না কথা, চেয়েও না দেখিবে—
বড়ো আশা করে শেষে পূরিবে না কামনা।
পরিশিষ্ট ৪
এই-সব গান কোনো রবীন্দ্র-নামাঙ্কিত গ্রন্থে বা রচনায় নাই। নানা জনের নানা সংগীতসংকলনে বা রচনায় ছড়ানো আছে। পরবর্তী গ্রন্থপরিচয় দ্রষ্টব্য।
১
ভাসিয়ে দে তরী তবে নীল সাগরোপরি।
বহিছে মৃদুল বায়, নাচিছে মৃদু লহরী।
ডুবেছে রবির কায়া, আধো আলো, আধো ছায়া-
আমরা দুজনে মিলি যাই চলল ধীরি ধীরি।
একটি তারার দীপ যেন কনকের টিপ
দূর শৈলভুরুমাঝে রয়েছে উজল করি।
নাহি সাড়া, নাহি শব্দ, মন্ত্রে যেন সব স্তব্ধ—
শান্তির ছবিটি যেন কী সুন্দর আহা মরি।
২
ছিলে কোথা বলো, কত কী যে হল
জান না কি তা? হায় হায়, আহা!
মানদায়ে যায় যায় বাসবের প্রাণ—
এখানে কী কর, তুমি ফুলশর
তারে গিয়ে করো ত্রাণ।
৩
চলো চলো, চলো চলো, চলো চলো ফুলধনু,
চলো যাই কাজ সাধিতে।
দাও বিদায় রতি গো!
এমন এমন ফুল দিব আনি
পরখিবে মানিনীহৃদয়ে হানি,
মরমে মরমে রমণী অমনি
থাকিবে গো দহিতে।
8
এসো গো এসো বনদেবতা, তোমারে আমি ডাকি।
জটার ’পরে বাঁধিয়া লতা বাকলে দেহ ঢাকি
তাপস, তুমি দিবস-রাতি নীরবে আছ বসি—
মাথার ’পরে উঠিছে তারা, উঠিছে রবি শশী।
বহিয়া জটা বরষা-ধারা পড়িছে ঝরি ঝরি,
শীতের বায়ু করিছে হাহা তোমারে ঘিরি ঘিরি।
নামায়ে মাথা আঁধার আসি চরণে নমিতেছে,
তোমার কাছে শিখিয়া জপ নীরবে জপিতেছে।
একটি তারা মারিছে উঁকি আঁধারভুরু-’পর,
জটার মাঝে হারায়ে যায় প্রভাতরবিকর।
পড়িছে পাতা, ফুটিছে ফুল, ফুটিছে পড়িতেছে—
মাথায় মেঘ কত-না ভাব ভাঙিছে গড়িতেছে।
মিলিয়া ছায়া মিলিয়া আলো খলিছে লুকাচুরি,
আলয় খুঁজে বনের বায়ু ভ্রমিছে ঘুরি ঘুরি।
তোমার তপ ভাঙাতে চাহে ঝটিকা পাগলিনী—
গরজি ঘন ছুটিয়া আসে প্রলয়রব জিনি,
ভ্রূকুটি করি চপলা হানে ধরি অশনিচাপ।
জাগিয়া উঠি নাড়িয়া মাথা তাহারে দাও শাপ।
এসো হে এসো বনদেবতা, অতিথি আমি তব—
আমার যত প্রাণের আশা তোমার কাছে কব।
নমিব তব চরণে, দেব, বসিব পদতলে—
সাহস পেয়ে বনবালারা আসিবে দলে দলে।
৫
কত ডেকে ডেকে জাগাইছ মোরে,
তবু তো চেতনা নাই গো।
মেলি মেলি আঁখি মেলিতে না পারি,
ঘুম রয়েছে সদাই গো।
মায়ানিদ্রাবশে আছি অচেতন,
শুয়ে শুয়ে কত দেখি কুস্বপন—
ধন রত্ন দাস বিলাসভবন—
অন্ত নাহি তার পাই গো।
কল্পনার বলে উঠিয়া আকাশে
ভ্রমি অহরহ মনের উল্লাসে,
ভাবি না কী হবে নিদ্রার বিনাশে—
কোথা আছি কোথা যাই গো
জানি না গো এ-যে রাক্ষসের পুরী,
জানি না যে হেথা দিনে হয় চুরি,
জানি না বিপদ আছে ভূরি ভূরি—
সুধা ব’লে বিষ খাই গো।
ভাঙিতে আমার মনের সংশয়
জাগায়ে দিতেছ নিজপরিচয়,
তুমি-যে জনক জননী উভয়
বুঝাইছ সদা তাই গো।
সে কথা আমার কানে নাহি যায়,
ভুলিয়ে রয়েছি রাক্ষসীমায়ায়—
কী হবে, জননী, বলো গো উপায়।
শুধু কৃপাতিক্ষা চাই গো।
৬
আঁধার সকলই দেখি তোমারে দেখি না যবে।
ছলনা চাতুরী আসে হৃদয়ে বিষাদবাসে
তোমারে দেখি না যবে, তোমারে দেখি না যবে
এসো এসো, প্রেমময়, অমৃতহাসিটি লয়ে।
এসো মোর কাছে ধীরে এই হৃদয়নিলয়ে।
ছাড়িব না তোমায় কভু জনমে জনমে আর,
তোমায় রাখিয়া হৃদে যাইব ভবের পার।
রবীন্দ্রনাথ-কর্তৃক সম্পাদিত গীতবিতানের পূর্ববর্তী দুই খণ্ডে যে-সব রচনা আছে, তাহাতে কবির রচিত গানের সংকলন সম্পূর্ণ হয় নাই। অবশিষ্ট সমুদয় গান এবং অখণ্ডিত আকারে গীতিনাট্য ও নৃত্যনাট্যগুলি তৃতীয় খণ্ডে দেওয়া গেল। অধিকাংশই রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন মুদ্রিত গ্রন্থে, কিছু রবীন্দ্রপাণ্ডুলিপিতে, কিছু সাময়িক পত্রাদিতে নিবদ্ধ ছিল।
বর্তমান গ্রন্থ- সংকলন ও সম্পাদনের ভার শ্রীকানাই সামন্তকে দেওয়া হইয়াছিল। এই খণ্ডের পরিকল্পনা হইতে মুদ্রণ অবধি সুদীর্ঘ সময়ে শ্রীমতী ইন্দিরাদেবী, শ্রীঅনাদিকুমার দস্তিদার, শ্রীপুলিনবিহারী সেন, শ্রীশান্তিদেব ঘোষ ও শ্রীশৈলজারঞ্জন মজুমদার নানা তথ্য ও নানা সন্ধান দিয়া, নানা সংশয়ের নিরসন করিয়া, বহু সাহায্য করিয়াছেন। ফলতঃ প্রত্যেক পদে তাঁহাদের এরূপ অকুণ্ঠিত সাহায্য না পাওয়া গেলে, এই গ্রন্থপ্রকাশের আশু কোনো সম্ভাবনা ছিল না।
ইহা ছাড়া, শ্রীঅমিয়চন্দ্র চক্রবর্তী, শ্রীঅহীন্দ্র চৌধুরী, ক্ষিতিমোহন সেন, শ্রীধীরেন্দ্রনাথ দাস, শ্রীনিত্যানন্দবিনোদ গোস্বামী, শ্রীপ্রফুল্লকুমার দাস, শ্রীপ্রভাত- কুমার মুখোপাধ্যায়, শ্রীশোভনলাল গঙ্গোপাধ্যায়, শ্রীসুকুমার সেন ও শ্রীসুধীরচন্দ্র কর বিভিন্ন প্রশ্নের সদুত্তর দিয়া এবং শ্রীমতী অরুন্ধতী চট্টোপাধ্যায়, শ্রীঅশ্বিনী- কুমার দাশগুপ্ত, শ্রীতপনমোহন চট্টোপাধ্যায়, শ্রীব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীযোগশচন্দ্র বাগল ও শ্রীসনৎকুমার গুপ্ত কয়েকখানি দুর্লভ গ্রন্থ দেখিবার সুযোগ দিয়া নানা ভাবে সম্পাদনকার্যে আনুকূল্য করিয়াছেন। বঙ্গীয়-সাহিত্য- পরিষৎ এবং সাধারণ-ব্রাহ্মসমাজের পাঠাগার হইতে কয়েকখানি প্রয়োজনীয় গ্রন্থ দেখিবার সুযোগ হইয়াছে। বিশ্বভারতী-গ্রন্থনবিভাগ ইঁহাদের সকলকেই কৃতজ্ঞতা জানাইতেছেন। বিশেষ বিষয়ে যাঁহার নিকটে বা যে রচনা হইতে সাহায্য পাওয়া গিয়াছে, গ্রন্থপরিচয়ে যথাস্থানে তাহা জানানো হইল। ইতি
তৃতীয়খণ্ড গীতবিতানের বর্তমান সংস্করণের প্রণয়ন-ব্যাপারে শ্রীঅনাদিকুমার দস্তিদার, শ্রীপ্রফুল্লকুমার দাস, শ্রীবিশ্বজিৎ রায় ও শ্রীশোভনলাল গঙ্গোপাধ্যায় নানা সময়ে গ্রন্থসম্পাদককে নানারূপ সাহায্য করেন এবং শ্রীশান্তিদেব ঘোষ কয়েকটি প্রশ্নের সদুত্তর জানাইয়া তাঁহাকে বিশেষভাবে বাধিত করিয়াছেন।
বর্তমান সংস্করণে নূতন যোগ করা হইল— ৮৫৭ পৃষ্ঠার ৭৯-সংখ্যক গান: বুঝি ওই সুদূরে ডাকিল মোরে ইত্যাদি।
গীতবিতান তৃতীয় খণ্ডের বর্তমান সংস্করণে ভগ্নহৃদয়-ধৃত বা ভগ্নহৃদয় হইতে রূপান্তরিত গানগুলি (পৃ ৭৬৮-৭৫/সংখ্যা ৩-১৯) একত্র দেওয়ায়, অনেক গানের সন্নিবেশে পূর্ব সংস্করণ হইতে বহু পার্থক্য ঘটিয়াছে। তাহা ছাড়া, ‘মুখের হাসি চাপলে কি হয়’ গানটি বর্জিত, এ সম্পর্কে যাহা কিছু তথ্য ৯৭০- অঙ্কিত পৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য।
বর্তমান সংস্করণে যে গানগুলি নূতন যোগ করা হইল তাহাদের সূচনা (প্রথম ছত্র) এরূপ—
- আনে জাগরণ মুগ্ধ চোখে পৃ ১০০১
- আমরা কত দল গো কত দল ৯৮৯
- উদাসিনী সে বিদেশিনী কে ৯০৮
- গন্ধরেখার পন্থে তোমার শূন্যে গতি ৯০২
- সন্ন্যাসী,/ধ্যানে নিমগ্ন নগ্ন তোমার চিত্ত ৯০২
প্রত্যেক গান সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পরবর্তী গ্রন্থপরিচয়ে যথাস্থানে দ্রষ্টব্য। গীতবিতানের বর্তমান সংস্করণ-প্রণয়নে শ্রীকানাই সামন্তকে নানাভাবে সাহায্য করিয়াছেন শ্রীপুলিনবিহারী সেন ও শ্রীপ্রফুল্লকুমার দাস।
- রবীন্দ্রনাথের গানের সংকলন ৯৬১::অধ্যায় বিশিষ্ট আকর গ্রন্থ ৯৬৪::বর্তমান গীতবিতানে বর্জিত গান ৯৬৫::দ্বিতীয় সংস্করণের বিজ্ঞাপন ৯৭১::প্রথম-দ্বিতীয় খণ্ডের বিষয়বিন্যাস ৯৭১
- তৃতীয় খণ্ড সম্পর্কে ৯৭৩::সাধারণভাবে ১০১৮
- সংযোজন-সংশোধন ১০৩৪
জ্ঞাতব্যপঞ্জী
রবীন্দ্রনাথের গানের সংকলন
এই তালিকায় অনুষ্ঠানপত্রাদি ধরা হয় নাই
১ ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী। ১২৯১
২ রবিচ্ছায়া। যোগেন্দ্রনারায়ণ মিত্র কর্তৃক প্রকাশিত। বৈশাখ ১২৯২ ‘অনেকগুলি গানে রাগ রাগিণীর নাম লেখা নাই। সে গানগুলিতে এখনও সুর বসান হয় নাই।…
‘এই গ্রন্থে প্রকাশিত অনেকগুলি গান আমার দাদা-পূজনীয় শ্রীযুক্ত জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের সুরের অনুসারে লিখিত হয়। অনেকগুলি গানে আমি নিজে সুর বসাইয়াছি, এবং কতকগুলি গান হিন্দুস্থানী গানের সুরে বসান হয়।’
৩ গানের বহি ও বাল্মীকিপ্রতিভা। বৈশাখ ১৮১৫ শক। বাংলা ১৩০০ সাল। সংক্ষেপে ‘গানের বহি’ রূপে উল্লিখিত। ‘১-চিহ্নিত গানগুলি আমার পূজনীয় অগ্রজ শ্রীযুক্ত জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের রচিত। ২-চিহ্নিত গানের সুর হিন্দুস্থানী হইতে লওয়া। আমার স্বরচিত অথবা প্রচলিত সুরের গানে কোন চিহ্ন দেওয়া হয় নাই।’
৪ কাব্যগ্রন্থাবলী। সত্যপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় প্রকাশিত। আশ্বিন ১৩০৩ ‘গীতিগ্রন্থ ও গীতিনাট্য ব্যতীত এই গ্রন্থাবলীর অন্যান্য পুস্তকে যে সকল গান …সূচীপত্রে তাহাদিগকে চিহ্নিত করিয়া দেওয়া গেল।’
৫ কাব্যগ্রন্থ। মোহিতচত্র সেন সম্পাদিত। অষ্টম ভাগ: ১৩১০
৬ রবীন্দ্র-গ্রন্থাবলী। হিতবাদীর উপহার। ১৩১১
৭ বাউল। জাতীয় সংগীতের সংকলন। সেপ্টেম্বর ১৯০৫
৮ গান। যোগন্দ্রনাথ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত। সেপ্টেম্বর ১৯০৮
৯ গান। ইণ্ডিয়ান প্রেস। ১৯০৯
- ‘কিশোরকালের সকল শ্রেষ্ঠ গান হইতে আরম্ভ করিয়া এ পর্যন্ত যত গান রচনা হইয়াছে, সমস্ত প্রকাশ করিবার চেষ্টা করা হইয়াছে। কিন্তু সম্পূর্ণ কৃতকার্য হইতে পারি নাই।··· অনেক গানে এখনো সুর বসানো হয় নাই···বাল্মীকি-প্রতিভা ও মায়ার খেলার গান গুটিকয়েক বিবিধ সঙ্গীতের মধ্যে দ্বিতীয়বার সন্নিবেশিত [এরূপ অন্য গানও প্রচুর]··· এই পুস্তকে সাতশত সাতাশটি গান আছে।’
১০ গীতাঞ্জলি। শ্রাবণ ১৩১৭
১১ গীতিমাল্য। জুলাই ১৯১৪
১২ গান। সেপ্টেম্বর ১৯১৪
১৩ গীতালি। ১৯১৪
১৪ ধর্মসঙ্গীত। ডিসেম্বর ১৯১৪
১৫ কাব্যগ্রন্থ। ইণ্ডিয়ান প্রেস। প্রথম ভাগ: ১৯১৫। দশম ভাগ: ১৯১৬
১৬ প্রবাহিণী। অগ্রহায়ণ ১৩৩২
১৭ গীতিচর্চ্চা। দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর -কর্তৃক সম্পাদিত। পৌষ ১৩৩২
‘পূজনীয় মহর্ষিদেবের ও পূজনীয় দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের দুইটি গান, তিনটি বেদগানও এই স্থানে সন্নিবেশিত করা হইল।’
১৮ ঋতু-উৎসব। ১৩৩৩। শেষবর্ষণ শারদোৎসব বসন্ত সুন্দর ও ফাল্গুনী এই পাঁচখানি গীতিগ্রন্থ বা গীতপ্রধান গ্রন্থের সংকলন।
১৯ বনবাণী। আশ্বিন ১৩৩৮। ইহার ‘নটরাজ-ঋতুরঙ্গশালা’ ও পরবর্তী অংশে বহু গান আছে।
২০ গীতবিতান। প্রথম সংস্করণ। প্রথম-দ্বিতীয় খণ্ড: আশ্বিন ১৩৩৮
- তৃতীয় খণ্ড: শ্রাবণ ১৩৩৯
- তৃতীয় খণ্ড: শ্রাবণ ১৩৩৯
২১ গীতবিতান। দ্বিতীয় সংস্করণ। প্রথম-দ্বিতীয় খণ্ড: মাঘ ১৩৪৮
যথাক্রমে ১৩৪৫ ভাদ্রে ও ১৩৪৬ ভাদ্রে প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ডের মুদ্রণ শেষ হইয়াছিল। প্রথম খণ্ডের গীতভূমিকা ‘প্রথম যুগের উদয়দিগঙ্গনে’ ঐ গ্রন্থে ছিল না। উত্তরকালে দুই খণ্ডে নূতন আখ্যাপত্র ও প্রথমখণ্ডে গীতভূমিকা সংযোজিত।