গীতবিতান/পূজা ও প্রার্থনা/৬৭

৬৭

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে।  (নয়নের নয়ন!)
হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে, হৃদয়ে রয়েছ গোপনে।  (হৃদয়বিহারী!)
বাসনার বশে মন অবিরত  ধায় দশ দিশে পাগলের মতো,
স্থির-আঁখি তুমি মরমে সতত  জাগিছ শয়নে স্বপনে।
(তোমার বিরাম নাই,  তুমি অবিরাম জাগিছ শয়নে স্বপনে।
তোমার নিমেষ নাই,  তুমি অনিমেষ জাগিছ শয়নে স্বপনে।)
সবাই ছেড়েছে, নাই যার কেহ,  তুমি আছ তার, আছে তব স্নেহ—
নিরাশ্রয় জন পথ যার গেহ  সেও আছে তব ভবনে।
(যে পথের ভিখারি সেও আছে তব ভবনে।
যার কেহ কোথাও নেই  সেও আছে তব ভবনে।)
তুমি ছাড়া কেহ সাথি নাই আর,  সমুখে অনন্ত জীবনবিস্তার—
কালপারাবার করিতেছ পার  কেহ নাহি জানে কেমনে।

(তরী বহে নিয়ে যাও কেহ নাহি জানে কেমনে।
জীবনতরী বহে নিয়ে যাও কেহ নাহি জানে কেমনে।)
জানি শুধু তুমি আছ তাই আছি,  তুমি প্রাণময় তাই আমি বাঁচি,
যত পাই তোমায় আরো তত যাচি— যত জানি তত জানি নে।
(জেনে শেষ মেলে না— মন হার মানে হে।)
জানি আমি তোমায় পাব নিরন্তর  লোক-লোকান্তরে যুগ-যুগান্তর—
তুমি আর আমি মাঝে কেহ নাই,  কোনো বাধা নাই ভুবনে।
(তোমার আমার মাঝে কোনো বাধা নাই ভুবনে।)