গোপীচন্দ্রের গান (প্রথম খণ্ড)/জন্মখণ্ড

গোপীচন্দ্রের গান

জন্মখণ্ড

মানিকচন্দ্র রাজা ছিল ধর্ম্মি বড় রাজা।
মএনাক বিবা করিল তার নও বুড়ি ভারজা॥
মএনাক বিবা করি রাজার না পুরিল মনের আশ।
তার পর দ্যাবপুরের পাঁচ কন্যা বিবা করি
পুরি গেল মনের হাবিলাস॥
আজি আজি কালি কালি বার বছর হৈল।
দ্যাবপুরের পাঁচ কন্যা ডাহিনী মএনা কন্দল নাগিল।
দেখিবার না পারি মহারাজ ব্যাগল করি দিল॥
সেই মএনাক ঘর বান্দি দিল ফেরুসা নগরে॥[]
মানিকচন্দ্র রাজা বঙ্গে বড় সতি।
হাল খানাএ খাজনা ছিল দ্যাড় বুড়ি কড়ি॥[] ১০

সেই জে রাজার রাইয়ত প্রজা দুস্ক নাহি পায়।[]
কারও মারুলি দিয়া কেহ নাহি জায়॥
কারও পুস্কনির জল কেহ না খায়।
আথাইলের ধন কড়ি পাথাইলে শুকায়॥
সোনার ভ্যাটা দিয়া রাইয়তের ছাওআলে খ্যালায়।[] ১৫
হ্যান দুক্‌খি কাঙ্গাল নাই জে ধরিয়া পালায়॥
পাতবেচা হইয়া রাইয়ত পাত বেছেয়া খায়।
স্ত্রী পুরুসে জুক্তি করি হস্তি কিনিবার চায়॥
খড়িবেচা হৈয়া খড়ি বেছেয়া খায়।
স্ত্রী পুরুসে বুদ্ধি করি দালান দিবার চায়॥ ২০
সেল্কা রাইয়তের ছিল সরঙ্গা নলের ব্যাড়া।
ব্রেতন করি জে ভাত খায় তার দুআরত ঘোড়া॥[]
ঘিনে বান্দি নাহি পিন্দে পাটের পাছড়া॥

আজি আজি কালি কালি বার বছর হৈল।
এক দক্‌খিন দেশি বাঙ্গাল সেই রাজার দরবারত উপস্থিত হৈল॥ ২৫
দক্‌খিন হৈতে[] আইল বাঙ্গাল লম্বা লম্বা দাড়ি।
সেই বাঙ্গাল আসিয়া মুলুকত্ কৈল্ল কড়ি॥
দেওআনগিরি চাকরি রাজা সেই বাঙ্গালক দিল।
দ্যাড় বুড়ি ছিল খাজনা পোন্দর গণ্ডা নিল।
রাম লক্‌খন দুটা গোলা দুআরে ছান্দিল॥ ৩০
কাঙ্গাল দুক্‌খিক মারি রাজার এধন ছাচিল।[]
খানে খানে রাজার তালুক ছন হইয়া গেল॥
পোন্দর গণ্ডা কড়ি রাইয়তের সাদিতে নাগিল।
সুখিত রাইয়ত প্রজা দুক্‌খিতা হইল॥
চাসালোকে দ্যায় খাজনা হাল গরু বেছেয়া। ৩৫
সাউত সদাগর দ্যায় খাজনা লাউ নৌকা বেছেয়া॥
ফকির দরবেশ দ্যায় খাজনা ঝোলা কেথা বেছেয়া॥
নাঙ্গল বেছায় জোঙ্গাল বেছায় আরো বেছায় ফাল।
খাজনার তাপত বেছায় দুধের ছোআল॥
দুধের পুত্র বেছেয়া হাকিমের মালগুজার জোগাইল। ৪০
পুত্র শোকে রাইয়ত পরজা কান্দিতে নাগিল।
ছোট রাইয়ত উঠি বলে বড় রাইয়ত ভাই।[]

ধন কাঙ্গালি হৈল রাজ্য রাজ্যের ভিতর।
ক্যামন করি বঞ্চিব রাইয়ত সকল॥
ছোট রাইয়তে বড় রাইয়তে পরামশ করিয়া। ৪৫
মহতের বাড়ি নাগি চলিল হাটিয়া॥

মহৎ মহৎ বৈলে রাইয়ত তুলিয়া ছাড়ে রাও।
ঘরে ছিল মহৎ বাহিরে দিল পাও॥

রাইয়তক বসিবার দিল দিব্ব সিঙ্গাসন।
করপুর তাম্বুল দিয়া জিগ্‌গায় বচন॥ ৫০
কি বাদে আসিলেন তার কও বিবরন॥
রাইয়ত বলে শুন মহৎ করি নিবেদন।

ধন কাঙ্গালি হৈছে রাজা রাজ্যের ভিতর।
ক্যামন করি বঞ্চিব রাইয়ত সকল॥
মহৎ বলে শুন রাইয়ত বলি নিবেদন। ৫৫
কোড়াকের বুদ্ধি নাই আমার শরিলের ভিতর॥
লক্‌খ টাকা ভাঙ্গিয়া রাইয়ত চৌহাটা বসাইও।
কাল। ধওল। পাঠা ন্যাও রসি সঙ্গরিয়া॥
হাস কৈতর ন্যাও খাঞ্চা ভরিয়া।
ধুপ সুন্দুর ন্যাও নান্দিয়া ভরিয়া। ৬০
মহাদেবের কাছে জাওতো চলিয়া॥
কি রাজ্ঞা যায় মহাদেব শুন কর্ণ ভরিয়া॥
ওঠে থাকি রাইযত হরসিত মন।
মহাদেবের কাছে জাইয়া দিল দরশন।
জোড়হস্ত করিয়া কয় বিবরন॥ ৬৫
ধন কাঙ্গালি হৈল রাজা, মহাদেব, রাজ্যের ভিতর।
কেমন করি বঞ্চি রাইয়ত সকল।
কি রাজ্ঞা হয় পরভু রাইয়াতের বরাবর॥
মহাদেব বলে শুন রাইয়তগন,
পারনি গঙ্গার নাগি চল হাটিয়া। ৭০
হরিবোল বলিয়া ছিনান করিয়া।
কালে। ধবল পাঠা দ্যাও বলিছেদ করিয়।॥
হাস কৈতর গুনা দ্যান জল উছরগিয়া,
ধুপ সুন্দুর গুনা স্থান ঘাটত ধরেয়া॥
একটা বিন্নার থোপ আনেন উখরিয়া।
লাংটি চিপি শাপ দ্যান রাজাক মঙ্গলবার দিনা॥ ৭৫
ধন কাঙ্গালি হৈল রাজা রাজ্যের ভিতর।
এয়ার বিচার করবেন ধম্ম নিরঞ্জন॥
লাংটি চিপিয়া শাও দিল সকলে মানিকচান বলিয়া।
আঠার বছরের পরমাই ছিল রাজার ফেলাইল টুটিয়া॥

এক মঙ্গলবার দিনা রাজাক রভিশাপ দিল। ৮০
ফের মঙ্গলবার দিনা রাজার এজরি কাড়াল॥
ফের মঙ্গলবার দিনা বিধাতা তলপ চিঠি নেখিল।
তলপ চিঠি নেখি গোদাক ফেলি দিল॥
তলপ চিঠি নিগা গোদা আঞ্চলে বান্দিয়া।
মানিকচান রাজার জিউ আনেক বান্দিয়া॥[]৮৫

বিধাতার হুকুম গোদা জম ব্রথা না করিল।
মানিকচান রাজার রাজধানি বুলি গমন করিল॥
তলপ চিঠি নিলে অঞ্চলে বান্দিয়া।
মানিকচান রাজার সিতানে জাএয়া বসিল ভিড়িয়া॥

মানিকচান রাজার সিতানে ভিড়িয়া বসিল। ৯০
ফেরুসাতে থাকিয়া মএনা শিউরিয়া উঠিল॥
ধিয়ানের বুড়ি মএনা ধিয়ান করিল।
ধিয়ানত বসিয়া মএনা জমক দেখিল॥

হাতে মাথে বুড়ি মএনা চমকিয়া উঠিল।
সাজ সাজ বলি মএনা সাজিতে নাগিল॥ ৯৫
ধবল বস্ত্র নিল মএনা পরিধান করিয়া।
হেমতালের নাঠি নিল হস্তেতে করিয়া॥

রাজার দরবারক নাগি জাএছে চলিয়া।
বাওছঞ্চরে গ্যাল রাজার দরবার নাগিয়া॥
জখন ধম্মি রাজা মএনাক দেখিল। ১০০
কপালে মারিয়া চড় রাজা কান্দিতে নাগিল॥
মএনা বলে শুন রাজা করি নিবেদন।
ভয় না খাও মহারাজ প্রানে না খাও ডর।
আমি মএনা থাকিতে ভাবনা কি কারন।
উঠ উঠ প্রানপ্রিয় শিতল মন্দির জাই। ১০৫
আমার শরিলের জ্ঞান তোমাকে শিখাই॥
ছাচা করি দেই জ্ঞান তুমি মিছা করি ধরো।
সুখে সুখ্‌খে ধম্মি রাজা তোকে রাজাই করাবো।
রাজা কয় শুন মএনা কার প্রানে চাও॥
অমনি মানিকচন্দ্র রাজাক জমে নইয়া জাবে। ১১০
তবু তো তোর তিরির জ্ঞান মোর গব্বে না সোন্দাবে॥
আইজ তিরির জ্ঞান জদি মুই ন্যাও শিখিয়া।
ক্যামন করি তোক ভক্তি করিম গুরুমা বলিয়া॥
তিরির ঘরের জ্ঞান দেখি রাজা জ্ঞান কইলে হেলা।
ঐ দিনে ভাড়ুয়া জন্ম পাতি গ্যাল খ্যালা॥ ১১৫
মএনা বোলে হায় বিধি মোর কন্মের ফল।
ক্যামন বুদ্ধি করি মএনা সুন্দর॥

চাইট্টা মোমের বাতি দিলে ধরাইয়া।
দিবা রাতি ঘর রাখিলে জালাইয়া॥
চাইর কলসী জল থুইলে বিরসে ভরিয়া। ১২০
জেই রোগের জেই দাওআ আনিলে ধরিয়া॥
দাওআ প্রকার থুইলে বিস্তর করিয়া।
রাজার পইথানত বসিল ধেয়ান করিয়া॥
ধেয়ানে মএনামতি ধেয়ান করি চায়।
ধেয়ানের মধ্যে মএনা জমের নাগাল পায়॥ ১২৫
এত দিনে না আসিস বেটা দরবারক নাগিয়া।
আইজ ক্যানে আমার সোয়ামির সিতানে বসছিস্ ভিড়িয়া॥
জন বলে শুনেক মএনা হামি বলি তোরে।
তোর সোয়ামির তলপ চিঠি আনছি বান্দিয়া॥ ১৩০
আইজ তোর সোয়ামির জিউ নিগাব বান্দিয়।॥
জখন গোদা জম একথা বলিল।
করুনা করিয়া মএনা কান্দিতে নাগিল।
আপনার টাঙ্গন জমকে আনি দিল॥
জাও জাও জম বেটা মোর টাঙ্গন ধরিয়া।
আমার সোয়ামির জিউ জা আমার ঠে থৈরত করিয়া॥১৩৫
ও দিনে গ্যাল যম টাঙ্গন ধরিয়া।
ফের দিনে আসে জম দুই ভাই সাজিয়া।
সিতানে পৈতানে রাজার বসিল ভিড়িয়া॥
আইজ মএনার প্যাংটা থুমু এক দিক করিয়া।
তলপ চিঠি আনছি রাজার জিউ নিগাব বান্দিয়॥। ১৪০
ধিয়ানের বুড়ি মত্রনা ধিয়ান করিল।
সিতানে পৈতানে দুই জন জমক দেখিল॥
কালি টাঙ্গন দিয়া দিলু গোদা জমক বিদায় করিয়া!
আইজ আরো আইছে বেটা দুই ভাই সাজিয়া॥
কান্দি কাটি বুড়ি মএনা জমের কাছে গ্যাল। ১৪৫

জমের তরে কথা বলিতে নাগিল॥
আপনার সোয়ামির বদল দিনু টাঙ্গন সাজাএয়া।
আইজ আরও ক্যানে আইছেন বেটা দুই ভাই সাজিয়া॥
গোদা বলে শুনেক মএনা মএনামন্তি মাই।
তোমার সোয়ামির তলপ চিঠি আনছি বান্দিয়া।১৫০
তোর সোয়ামির জিউ নিগাব বান্দিয়া॥
জ্যান কালে গোদা জম একথা বলিল।
কান্দি কাটি বুড়ি মএনা হস্তি ঘরে গ্যাল।
আপনার হস্তি আনি গোদার হস্তে দিল॥
জ্যান কালে গোদা জম একথা শুনিল।১৫৫
কোর্‌দ হএয়া কোরদ্দে জলিয়া গ্যাল॥
বিধাতার হুকুমে রাজার জিউ নিগাব বান্দিয়া।
হস্তি ঘোড়া বুড়ি মএনা মোগ দ্যায় সাজাএয়া॥
ওদিনা গ্যাল জম হস্তি ধরিয়া।
ফের দিনা আসিল্‌ জম তিন ভাই সাজিয়া।১৬০
সিতানে পৈতানে পাঞ্জারে বসিল্ ভিড়িয়া॥
জখন মএনা বুড়ি তিন জন জমক দেখিল।
করুনা করি বুড়ি মএনা কান্দিতে নাগিল॥
দুই জন বান্দিক নিলেক সঙ্গে করিয়।
সোয়ামির পালঙ্গ নাগি জাএছে ঢলিয়া॥১৬৫
সোয়ামির চরন ধরি মএনা কান্দিতে নাগিল॥
আইস আইস প্রানপতি ভিতর অন্দর জাই।
আমার শরিলের তামর গিয়ান কিঞ্চিৎ তোমাক শিখাই।
স্ত্রী পুরুসে বুদ্ধি কৈরে জমের হাত এড়াই॥
রাজা বলে শুন মএনা মএনামন্তি বাই।১৭০
এমনি জদি আমার জাহান জায় মোগ ছাড়িয়া।
তবু মাইয়ার গিয়ান না নিমু শিখিয়া॥
আইজ জদি তোমার গিয়ান নেই শিখিয়া।

কাইলকে ডাকাবেন হামাক শিস্য বেটা বলিয়া॥
জখনে ধম্মি রাজা একথা বলিল।১৭৫
আপনার বান্দিক নিগি জমের হস্তে দিল॥
জাও জারে জম বেটা বান্দিক ধরিয়া।
আমার সোয়ামির জিউ আমার ঠে জা তুই খইরাত্ করিয়া॥
ওদিনে গ্যাল গোদা জম বান্দিক ধরিয়া।
ফের দিন আসিল্ জম চাইর ভাই সাজিয়া॥১৮০
পালঙ্গের চতুদ্দিগে বসিল্ ভিড়িয়া।
ধিয়ানের বুড়ি মএনা ধিয়ান করিল।
ধিয়ানেতে বুড়ি মএনা চাইর ঝন জমক দেখিল।
আপনার ভাই নিগি জমের হস্তে দিল॥
জা জারে জম বেটা তুই আমার ভাইকে ধরিয়া।১৮৫
আমার সোয়ামির জিউ জা আমার কাছে খইরাত্ করিয়া॥
ওদিনে গ্যাল গোদা জম ওয়ার ভাইকে ধরিয়া।
ফের দিনে আসিল গোদা পাচ ভাই সাজিয়া॥
পালঙ্কের চক্রদিগে বসিল ভিড়িয়া॥
ধিয়ানের বুড়ি মএনা ধিয়ান করিল।১৯০
ধিয়ানতে বুড়ি মএনা পাচ ঝন জমক দেখিল।
করুনা করি বুড়ি মএনা কান্দিতে নাগিল॥
এক জিবের বদল কত জিব দিলাম সাজেয়া।
আইজ আরো বেটা আইচ্ছে পাচ ভাই সাজিয়॥
পাশ্‌শ টাকা নিলে মএনা অঞ্চলে বান্দিয়া।১৯৫
রাজার দরবারে জাএছে কান্দিয়। কাটিয়া॥
রাজার পালঙ্কক কাছে রুপস্থিত হৈল।
কান্দি কাটি জমক কথা বলিতে নাগিল॥
এক জিবের বদল কত জিব দিলাম সাজেয়া।
আইজ আরো আইস্‌ছেন বেটা পাচ ভাই সাজিয়া॥২০০
জম বোলে—থো মএনা তোর প্যাংটা এক দিক করিয়া।

মানিকচন্দ্র রাজার জিউ নিগাব বান্দিয়া॥
জখন গোদা জম একথা বলিল।
পতির চরন ধরি মএনা কান্দিতে নাগিল॥
আইস আইস প্রানপতি ভিতর অন্দর জাই।২০৫
আমার শরিলের অমর গিয়ান তোমাক শিখাই।
স্ত্রী পুরুসে বুদ্ধি করি জমের দায় এড়াই॥
রাজা বোলে—এমনি জদি আমার প্রান জায় ছাড়িয়া।
তবুতো মাইয়ার গিয়ান আমি না নিব শিখিয়া॥
জখনে ধম্মিরাজ একথা বলিল।২১০
করুনা করি বুড়ি মএনা কান্দিতে নাগিল॥
পাশ্‌শ টাকা নিগিয়া জমের হস্তে দিল।
পাশ্‌শ টাকা দিলাম বেটা তোক নাড়ু খাইবার॥
ঝা ঝা গোদা বেটা তুই পাশ্‌শ টাকা ধরিয়া।
আমার সোয়ামির জিউ আমার ঠে জা তুই খইরাত্‌ করিয়া॥২১৫
জখন গোদা জম টাকা দেখিল।
থর থর করি গোদা জম কাপিয়া উঠিল॥
য়্যাক্কে ন্যাদে মত্রনার ধন ন্যাদেয়ে ফেলিল।
থর থর করি মএনা কাপিয়া উঠিল।
ক্রোদ্দমান হএআ মএনা ক্রোদ্দে জলি গেল॥[১০]২২০

মহামন্ত্র গিয়ান নইল হৃদএ জপিয়া।
চণ্ডি কালি রূপ্প হৈল কায়া বদলিয়া॥
তৈল পাটের খাড়া নিল হস্তে করিয়া।
মার মার করি জমক নিগায় পিট্টিয়া॥

প্রানের ভয়ে জম বেটা জায়তো পালাএয়া।২২৫
একখান ময়দানতে ডাহিনি মএনা আইল ফিরিয়া॥
সোয়ামির চরন ধরি মএনা কান্দিতে নাগিল।
এইতো জমক প্রানপতি থুইলাম পিট্টিয়া॥

এখনো আইস প্রানপতি ভিতর অন্দর জাই।
আমার শরিলের গিয়ান তোমাকে শিখাই॥২৩০
স্ত্রী পুরুসে বুদ্ধি করি জমের দায় এড়াই॥
কান্দি কাটি বুড়ি মএনা বলিতে নাগিল॥
ডাঙ্গাত বসি জমের ঘর ভাবিতে নাগিল॥
গোদা বলে শোনেক দাদা আবাল প্রানের ভাই।
কি চাকরি দিলে বিধাতা ভোলা মহেশ্বর।২৩৫
মাইয়া হএয়া পিট্টিয়া আন্‌লে ময়দানের উপর॥
এলায় জদি রাজার জিউ না নিজাই বান্দিয়া।
চাকরি খারিজ করবে বিধাতা পাটত বসিয়া॥
কি বুদ্ধি করি দাদা কিবা চরিত্তর।
কড়াটিকের বুদ্ধি নাই শরিলের ভিতর॥২৪০
মহাদেবের কাছে জাএয়া জমের ঘর দরশন দিল।
জোড়হস্ত হএয়া কথা বলিতে নাগিল॥
মহাদেব, অইত মএন গেয়ানে ডাঙ্গর।
কেমন করি আইন্‌বেন রাজাক জমপুরির ভিতর॥
বাওথুকরা জম জাও বা বাওনুরি হএয়া।২8৫
চাইট্টা প্রদীপ রাজার ফ্যালান নিবিয়া॥
চাইর কলসি জল তার ফ্যালান ঢালিয়া॥[১১]
কোন জম জান বিড়াল রূপ্প হইয়া।

জত জনে দাওআ থুইছে তুই ফ্যালান খাইয়া॥
নলুআ জম জা তুই ই নল ধরিয়া।২৫০
ইন্দিরার জল তুই ফ্যালাক চুসিয়া।
শেত কুয়ার জল চোসো ব্রহ্ম নল দিয়া॥[১২]
হুতাশন জম জা তুই হুতাশন হৈয়া।
বজ্জর তিরসা রাজাক মারো তুলিয়া॥
জল জল বলি রাজা উঠিলে কান্দিয়া।২৫৫
বুদ্ধি জম জাএয়া রাজাক বুদ্ধি দাও শিখাইয়া॥
একশত বান্দি দাসি আছে মহলে বসিয়া।
তার হাতে জল খাবো না পালঙ্গে বসিয়া॥
হাতে ঝাড়ি নিয়া মএনা বাহিরে বেরাবে।
নিশ্চয় করি ধম্মি রাজাক জমপুরিত আনিবে॥২৬০
মরন তিরিশ ঘড়িকে নাগাইল।[১৩]
জল জল বলিয়া রাজা কান্দিতে নাগিল॥
হাত ধরি ডাহিনি মএনা পাও ধরি তোর।
এক ঝাড়ি জল দিয়া প্রান রক্‌খা কর॥
রাজার কান্দন দেখিয়া মএনার দয়া হৈল।২৬৫
সোনার ঝাড়ি নিয়া মএনা শেত কুয়ার পার গ্যাল॥

ওখানেতে বুড়ি মএনা জল না পাই কান্দিতে নাগিল।[১৪]
ঐঠে হৈতে বুড়ি মএনা দলানে সন্দাইল॥
দ্যাখেছে গঙ্গার জল ব্যাড়ায় ঢৌ খাএয়া।
কান্দি কাটি গেল মএনা রাজার পালঙ্গক নাগিয়া॥২৭০
ওহে প্রানপতি,—জম বেটা শেত কুয়া আর
ফটিকের জল ফেলাইছে ঢালিয়া॥
এলায় জদি জল ভরিবার জাই আমি বৈতরনি নাগিয়া।
এপাক দিয়া জম বেটা তোমার জিউ নিজাবে বান্দিয়া॥
একশত বান্দি দাসি[১৫] আছে মহলর ভিতর।২৭৫
তার হাতে জল খাও রাজ রাজেশ্বর॥
রাজা বোলে শোন মএনা আমি বলি তোরে।
এমনি জদি আমার প্রান জায় চলিয়া।
তবু বান্দির হাতের জল খাব না পালঙ্গে শুতিয়া॥

আইস আইস প্রানপতি ভিতর অন্দর জাই।
আমার শরিলের অমর গিয়ান তোমাকে শিখাই॥
জত জল চায়েন তত জল খাওআই॥
জল ভরিবার জাই জদি আমি বৈতরনি নাগিয়া।
এপাক দিয়া জম বেটা তোমার জিউ নিজাবে বান্দিয়া॥
তবু আরো মহারাজ কান্দিতে নাগিল।২৮৫
রাজার কান্দন দেখি মএনার দয়া হৈল॥
সোনার ঝাড়ি নিলে মএনা হস্তে করিয়া।
জল ভরিবার জায় মএনা বৈতরনি নাগিয়া॥
আজপুরি ছাড়িয়া মএনা আস্তাএ পাও দিল।
খানিক খানিক করি জমের ঘর কাছাইতে নাগিল॥২৯০
রাজার পালঙ্ক জম বসিল ভিড়িয়া।
ভগবানের হুকুম রাজাক দিলেক শুনাইয়া॥
বিদাতার তলপ চিঠি আনছোঁ বান্দিয়া।
আইজ তোমার জিউ আমরা নিগাব বান্দিয়া॥
জখন গোদা জম একথা বলিল।২৯৫
কান্দি কাটি জমকে কথা বলিতে নাগিল॥
এক দণ্ড থাকরে জম ধৈরন ধরিয়া।
আমার মএনা জল ভরিবার গেইছে বৈতরনি নাগিয়া॥
এক ঝাড়ি জল খাবো সন্তোস করিয়া।
তার পর জম আমাক নিজাইস বান্দিয়া॥৩০০
জম বোলে শুন রাজা বচনে মোর হিয়া।
জত জল খায়েন খোআব আমি বৈতরনি নিগিয়া।

একথা বলিয়া জম কোন কাজ করিল।
লোহার মুদ্গর নিলে জম হস্তে করিয়া॥
চামের দড়ি দিয়া জম বান্দিলে ভিড়িয়া।৩০৫
বার মোকামে বার ডাঙ্গ দিল মুগ্দর তুলিয়া॥
মরননুরি দিয়া রাজাক দুই ডাঙ্গ দিল।
রাজার জিউ গোদা জম লাংটিত বান্দি নিল॥
রাজার জিউ নিল লাংটিত বান্দিয়া।
সোনার ভোমরা হৈল জম কায়া বদলিয়া॥
সোনার ভোমরা হৈল জম কায়া বদলিয়া।৩১০
জমপুরি নাগিয়া জম জাএছে চলিয়া॥
জে ঘাটতে জল ভরে মএনা হ্যাটমুণ্ড হৈয়া।
মাথার উপর দিয়া জিউ নিগ্যাল বান্দিয়া॥
চাক্‌থসে গাঙ্গি জমক দেখিল।
মএনার তরে একথা গাঙ্গি বলিতে নাগিল॥৩১৫
ওগো মা!—জার জন্যে জল ভরো তুমি হ্যাটমুণ্ড হৈয়া।
সে তোর দুলাল সোয়ামি গ্যাল পার হৈয়া॥[১৬]

জ্যান কালে বুড়ি মানা একথা শুনিল।
সোনার ঝাড়ি ডাঙ্গি মএনা কপালে ভাঙ্গিল॥৩২০
শিশের সিন্দুর হাতের শাঙ্খা মৈলান দেখিল।
কপালত চড়িয়া মএনা কান্দন জুড়িল॥
একটা রামের পল্লব হস্তে করিয়া।
সোয়ামি সোয়ামি বলিয়া চলিল কান্দিয়া॥
আপনার মহলক নাগি গমন করিল॥৩২৫
মানিকচন্দর রাজার জ্ঞাত সক্কল আনিল ডাক দিয়া।
এক দণ্ড থাক আমার সামি আগুরিয়া॥
ডাহিনি মএনা জাই আমি জমপুরি নাগিয়া।
ঘাটাএ পথে নাগাল পাইলে জিউ আনি ছিনিয়া॥
জ্ঞাত সক্কল রাজাক থাকলো আগুরিয়া।৩৩০
ডাহিনী মএন। জাএছে তবে জমপুরি নাগিয়া॥

কতেক দুর জাএয়া মএনা কতেক পন্থ পাইল।
বৈতরনির ঘাটে জাএয়া রুপস্থিত হৈল॥[১৭]
মহামন্ত্র গিয়ান নৈল বুড়ি মএনা হৃদএ জপিয়া।
সোনার ভোমরা হৈল কায়া বদলিয়া॥৩৩৫

উড়াও দিয়া বুড়ি মএনা ওপারে পড়িল।
ওপারেতে জাএয়া বুড়ি মএনা বুদ্ধি আলয় হৈল॥[১৮]
জিউ নিগিয়া জম বেটা আছেত বসিয়া।
হ্যান কালে বুড়ি মএনা গ্যাল ঢলিয়া॥

জমপুরিতে জাএয়া মএনা পাতি গেল ধুম।৩৪০
জত জমের ঘরে উঠিল্ মাথার বিস কারও উঠিল্ ঘুম॥
ওঝা বৈদ্য হৈয়া কেহ ঝাড়িবার নাগিল।
ঔসধ করিবার আলে জম জন জন পালাইল॥

হাতের দোআদশ নাগি হুঙ্কার ছাড়িল।
ডাক মধ্যে দোআদশ আসিয়া খাড়া হৈল॥[১৯]৩৪৫
চামের দড়ি দিয়া গোদা জমক ভিড়িয়া বান্দিল।
নোহার মুদ্গর দিয়া জমক ডাঙ্গাইতে নাগিল॥

এক জিবের বদল কত জিব দিলাম সাজেয়া।
তবুও আমার সোআমির জিউ আনছিস বান্দিয়া॥
কোদ্দ হএয়া বুড়ি মএনা ডাঙ্গাইতে নাগিল।৩৫০
মাও দায় দিয়া কবুল করিল॥

আর না ডাঙ্গাইস আমাক বিস্তর করিয়া।
আইস আইস জাই জমের বাজারত নাগিয়া॥
কোন্‌টা হইছে তোর সামির জিউ নেইক চিনিয়া॥
জমক ধরি ডাহিনি মএনা জমের বাজার গ্যাল।৩৫৫
হস্তি ঘোড়া দেখি মএনা কান্দিতে নাগিল॥
আমার সামির বদল হস্তি ঘোড়া দিলাম সাজেয়া।
তবু ও আমার সামির জিউ আন্‌লু বান্দিয়া॥
এই গলি হৈতে মএনা ওগলি গেল।
ভাই বান্দিকে দেখি মএনা কান্দিতে নাগিল॥৩৬০
আপনার বান্দি ভাইকে দিলাম সাজেয়া।
তবুও আমার সামির জিউ বেটা গোদা আন্‌লেক বান্দিয়া॥
সৈন্য সেনার গলা ধরি মএনা কান্দিতে নাগিল।
হাত হস্‌কিয়া গোদা জন পলায়ন হৈল॥
আপনার মহালে গোদা জম গেল পালেয়া।৩৬৫
জমরানিকে গোদা দ্যাএছে বলিয়া॥

হাত ধরি জমরানি পাও ধরি তোর।
তোমার ধর্ম্মের দোহাই নাগে আমার প্রান রক্‌খা কর।
মানিকচন্দ্র রাজার জিউ আমি আনছি বান্দিয়া।
ডাহিনি মএনা ধরিবার কারন আইছে জনপুরি নাগিয়া॥৩৭০
ক্যানে জম কান্দিস জংলানি করিয়া।
বিলাদ্ হৈতে যদি আচ্ছিস ঢলিয়া॥
এক কল্‌কি তামু জদি আমি নাই দেই সাজেয়া।
তার জন্যে মারছিস আমাক নোহার মুদ্গর দিয়া॥
তার সাজা দেউক এখন ডাহিনি মএনা আসিয়া॥৩৭৫
তবু আরো গোদা জম কান্দিতে নাগিল।
গোদার কান্দন দেখি জমরানির দয়া হৈল॥
বিছানার খ্যাড় দিয়া জমকে কোনা বাড়িত ঢাকিয়া রাখিল॥
জখন গোদা জম পলায়ন হৈল।
তখনে বুড়ি মএনা ধিয়ান করিল॥
ধিয়ানতে বুড়ি মএনা জমক কোনাতে নাগাল পাইল॥
সৈন্যে সেনা হস্তি ঘোড়া রাখিলেক রাস্তার ডাড়েয়া।
জংলানি রূপ্প হৈল কায়া বদলিয়া॥
মায়া করি জাএছে গোদা জমের মহলক নাগিয়া॥
বৈন ভগ্নি বলি মএনা ডাকাইতে নাগিল।৩৮৫
কোনা বাড়ী থাকি জম কাপিতে নাগিল॥
এক ডাক দুই ডাক তিন ডাক দিল।
গোদার স্ত্রি জমরানি বাহির বেরাইল।
জংলানি তরে কথা মএনা বলিতে নাগিল॥
ওগো দিদি—বালক কালে বাপ মায়ে বেছেয়া খাইছে অন্য ঘরে।৩৯০
বৈনে বৈনে দেখা নাহি হয় এ ভব সংসারে॥
অবোধ কালে তোমার ভগ্নিপতি গেইছে মরিয়া।
গএনা পত্র নি বেড়াই আমি ঝোলঙ্গাত ভরিয়া॥
বৈনের মত মানুষ না পাই তাক দেই ফ্যালেয়া॥

জখন জংলানি গএনার নাম শুনিল।৩৯৫
মএনাক নি গিয়া ভিতর আন্দরে আগিনাত বসিবার দিল॥
জখন বুড়ি মএনা আগিনাত বসিল।
ধিয়ানত গোদা জমক বিছানার খ্যাড়ত দেখিল॥
মহামন্ত্র গিয়ান নিল হৃদএ জপিয়া।
চ্যাঙ্গা বোড়া সাপ হৈল বুড়ি মএনা কায়া বদলিয়া॥[২০]৪০০

চ্যাঙ্গা বোড়া হইয়া মএন। এক ঝম্প দিল।
চটকি জাএয়া গোদা জমর ঘাড়তে বসিল॥
এন্দুর হৈয়া গোদা জম খালতে সোন্দাইল।
এঠে বুড়ি মএনা দিশাহার। হৈল॥

ধিয়ানের বুড়ি মত্রনা ধিয়ান করিল।৪০৫
ধিয়ানতে বুড়ি মএনা এন্দুরের লাগ্য পাইল॥
মহামন্ত্র গিয়ান নিল বুড়ি মএনা রিদএ জপিয়া।
লৈক্‌ক গোণ্ডা বার বিলই হৈল কায়া বদলিয়া॥

এক এক করি খালের এন্দুর জাএছে গিলিয়া॥
মুঞি জ্যাখন এন্দুর বেটাক ফ্যালানু গিলিয়া।
বাম গাল্‌সি দিয়া বেটা পড়িল হস্‌কিয়া॥৪১০

কইতর হএয়া গোদা জম সগ্‌গে উড়াইল।
ওঠে মএনা বুড়ি দিশাহারা হৈল॥
মহামন্ত্র গিয়ান নিলে মএনা রিদএ জপিয়া।
লৈক্‌ক গোণ্ডা হাড়িয়া বাজ হৈল কায়া বদলিয়া॥
এক্‌কে টালে কৈতর বেটাক মিতিঙ্গাএ ফ্যালাইল।৪১৫
সইস্যা হৈয়া গোদা জম দুবুলায় লুকাইল॥
ওঠে বুড়ি মত্রনা দিশাহারা হৈল।
ধিয়ানের বুড়ি মএনা ধিয়ান করিল।
ধিয়ানতে মএনা বুড়ি সইস্যার লাগ্য পাইল॥
মহামন্ত্র গিয়ান নিলে রিদএ জপিয়া।৪২০
লৈক্‌ক গোণ্ডা ঘুঘু কৈতর হৈল কায়া বদলিয়া॥
এক এক করিয়া সইস্যা জাএছে গিলিয়া।
আবার বাম গাল্‌সি দিয়া গোদা পড়িল হস্‌কিয়া॥
ইচিলা মাছ হএয়া গোদা খারবাড়িত লুকাইল।

ওঠে মএনা বুড়ি দিশাহারা হৈল॥৪২৫
ধিয়ানতে বুড়ি মএনা ধিয়ান করিল।
ধিয়ানতে বুড়ি মএনা ইচিলার লাগ্য পাইল॥
মুনিমন্ত্র গিয়ান নিলে রিদএ জপিয়া।
লৈক্‌ক গোণ্ডা মইস হৈল কায়া বদলিয়া॥
এগ্ এগ্ করি খার জাবুরাক জাএছে গিলিয়া।৪৩০
এই বার বেটা গোদাক ফ্যালানু গিলিয়া॥
আবার বাম গাল্‌সি দিয়া গোদা পড়িল হস্কিয়া॥
বাম গাল্‌সি দিয়া গোদা হস্‌কিয়া পড়িল।

পুটি মাছ হৈয়া গোদা দরিয়াত চিলকিতে নাগিল॥
ওঠে বুড়ি মএনা দিশাহারা হৈল॥৪৩৫
মুনিমন্ত্র গিয়ান নিলে রিদএ জপিয়া।
লৈক্‌ক গোণ্ডা জটিয়া বক হৈল কায়া বদলিয়া॥
এগ্ এগ্ করি পুটি মাছক ফ্যালাছে গিলিয়া॥
বাম গাল্‌সি দিয়া গোদা হস্‌কিয়া পড়িল।
টোরা গছি মাছ হএয়া ভ্যারোতে সোন্দাইল॥৪৪০
ওঠে বুড়ি মএনা দিশাহারা হৈল॥
ধিয়ানের বুড়ি মএনা ধিয়ান করিল।
ধিয়ানতে বুড়ি মএনা টোরা গছির লাগ্য পাইল॥
মুনিমন্ত্র গিয়ান নৈল বুড়ি গএনা রিদএ জপিয়া।
লৈক্‌ক গোণ্ডা পানিকৌড়ী বানোয়ার হৈল কায়া বদলিয়া॥৪৪৫
এগ্ এগ্ করি ভ্যারোত্ মাছক জাএছে গিলিয়া॥
বাম গাল্‌সি দিয়া গোদা হস‌কিয়া পড়িল।
কুড়িয়া নাতুর বৈষ্ণব হএয়া ডাঙ্গাত উঠিল৷
গায়ের মাংস গোদা জমের পড়েছে হস্‌কিয়া।
সরা পচার গোন্দোতে জাএছে পালাএয়া॥৪৫০
ডালি ডালি মাছি জাএছে পাছোতে উড়িয়া।
দুইটা আমের পল্লব নিছে দুই হস্তে করিয়া॥
জাএছে এখন গোদা জম মাছি খ্যাদাইয়৷॥
ওঠে বুড়ি মএনা দিশাহারা হৈল।
ধিয়ানের বুড়ি মত্রনা ধিয়ান করিল॥৪৫৫
খট্ খট্ করি বুড়ি মএনা হাসিয়া উঠিল॥
ত্যামনিয়া বুড়ি মএনা এই নাও পাড়াবো।
মাছি রূপে বেটা গোদাক আস্তায় ধরিব॥
মুনিমন্ত্র গিয়ান নিলে মএনা রিদএ জপিয়া।
ঢন ঢনিয়া মাছি হৈল দুইটা কায়া বদলিয়া॥৪৬০
ঢন ঢনিয়া মাছি হএয়া উড়াও করিল।

আস্তার মধ্যে জাএয়া বেটার ঘাড়তে বসিল।
গায়ের রোমা গোদা জয়ের শিংরিয়া উঠিল॥
এতগুলা মাছি পড়ছে আমার গায়ে সোলাতে পাতল।
ইয়াও ক্যামন মাছি উড়ি পৈল বাইশ মোন পাথর॥৪৬৫
মাছি নয় মাছি নয় মএনার চক্‌কোর।
মায়া করি ধৈল্লে আমাক পথের উপর॥
জখনে গোদা জম মএনার নাম নিল।
নিজ মুত্তি ধারন করি জমক এ ধরিল॥
চামের দড়ি দিয়া বেটাক ভিড়িয়া বান্দিল।৪৭০
নোয়ার মুদ্গর দিয়া বেটাক ডাঙ্গাইতে নাগিল॥
ঘোড়ার নাগাম দিলে বেটার মুক্‌খে তুলিয়া।
এক নম্ফ দিয়া গোদার পিঠেতে চড়িল।
নোয়ার মুগর দিয়া ডাঙ্গাইতে নাগিল॥
এক ডাঙ্গ দুই ডাঙ্গ তিন ডাঙ্গ দিল।৪৭৫
মাও দায় দিয়া গোদা কান্দিতে নাগিল॥
আর না ডাঙ্গাইস না মোগ্ বিস্তর করিয়া।
লাংটিত আছে তোর সোআমির জিউ দেওছোঁ হস্‌কিয়া॥
এক কোশ দুই কোশ তিন কোশ গ্যাল।
গুরু গুরু বলিয়া গোদা কান্দিতে নাগিল॥৪৮০
কৈল্লাস হোতে শিব গোরেকনাথ মঞ্চকে নামিল।
আস্তার মধ্যে ধরিয়া মএনাক বুঝাতে নাগিল॥
দ্যাবগন কএছে মএনাক—ওগো মা
আমার গুলার হুকুমে রাজার জিউ আনলে বান্দিয়া।
এলায় জদি তোর সোআমির জিউ নিগাইস ছিনিয়া॥৪৮৫
এই মতো নর লোকে নিগাবে ছিনিয়া॥
একটি আশিব্বাদ দেই মা পতে আসিয়া।
তোমার সোআমির জিউ জা মা তুই খইরাত্ করিয়া॥
একটি সন্তান আছে মা তোর হিরিদের ভিতরে।

তাহার অশিব্বাদ নিকি আানি দেই বিধাতার বরাবরে॥৪৯০
নারদক নাগিয়া শিব গোরেকনাথ হুঙ্কার ছাড়িল।
ডাকমধ্যে নারদ মুনি আসিয়া হাজির হৈল॥
গোদার বন্দন নারদ মুনি খালাস করি দিল।
আপনার মহলক নাগি গোদা জম পলাইতে নাগিল॥
এক খান দোলার মাঝে জাএয়া গোদা জম ভিড়িয়া বসিল।৪৯৫
কাকড়া মইচ্চের খালোতে পাদ্য করিল॥
পাতালতে ছিল কাকড়া কাকড়ানী চম্‌কিয়া উঠিল॥
কাকড়া বোলে শোন কাকড়ানী বচন মোর হিয়া।
টুনিব্যাং চ্যাচাইলো আমার খালোতে আসিয়া॥
চল চল জাই সগ্‌গোক নাগিয়া॥৫০০
পাতালর কাকড়া সগ্‌গোতে উঠিল।
খালের মুখে জাএয়া গোদার টিক্‌রার নাগ্য পাইল॥
ডাবুয়া দিয়া গোদার টিক্‌রা ধইল্লো চিম্‌টাইয়া।
পাতালক নাগিয়া গোদাক নিগায় টানিয়া॥
জাবৎ আরো গোদা নড়ে আর চড়ে।৫০৫
ডাবুয়। দিয়া কাকড়া কাকড়ানী কচলে কচলে ধরে॥
গোদা কএছে,— 
হায় হায়রে বুড়ি শালি তুই গিয়ানে ডাঙ্গর।
কাকড়া মইচ্চ হইয়া শালি টিক্‌রায় কামড়॥
জখনে গোদা জম একথা বলিল।
কাকড়া কাকড়ানি পাতালে ভাবিতে নাগিল॥৫১০
কাকড়া বলে শোন কাকড়ানি বচন মোর হিয়া।
গোদা শালা আস্‌ছে আমার খালোতে নাগিয়া॥
তেমনি কাকড়া মুনি এই নাও পাড়াবো।
মানিকচান রাজার জিউ এইঠে ছিনিয়া নিব॥
কচলান সবার না পারিয়া গোদা জম কান্দিতে নাগিল।৫১৫
রাজার জিউ হস্‌কিয়া বাম হস্তে নিল॥
গুরু গুরু বলি গোদা জম রোদন করিল।

ধিয়ানের শিব গোরেকনাথ ধিয়ানে দেখিল॥
গোরেকনাথ বলে জয় বিধি কম্মের বোঝোঁ ফল।
কাকড়া বেটা বৈরি হইছে খালের উপর॥৫২০
জখনে শিব গোরেকনাথ কাকড়ার নাম নিল।
পট্ করি কাকড়ার ডাবুয়া টিক্‌রায় ভাঙ্গি গেল॥
খালাস পাএয়া গোদা জম এ দৌড় ধরিল॥
আগে আগে জায় গোদা দৌড়িয়া দৌড়িয়া।
কাকড়ার ডাবুয়া জায় ঢুলানি খ্যালেয়া॥৫২৫
আপনার মহলক জাএয়া গোদা খাড়া হৈল।
জম রানির তরে গোদা বলিতে নাগিল॥
হাত ধরোঁ জম রানি পাও ধরোঁ তোর।
তোর ধম্মের দোহাই নাগে আমার হেউনালি কাটা খোল॥
গোদার কান্দন দেখিয়া জম রানির দয়া হৈল।৫৩০
আদ্দুর হোতে টিকার চামড়। কাটিয়া নামাইল॥
আদ্দুর হোতে টিকার চামড়া নামাইল কাটিয়া।
কাটা ঘাতে দিল জম রানি নুন জাময়র চিপিয়া॥
ঝালা সবার না পারি গোদা দরিয়া ঝাপ দিল।
দরিয়ার ছেবলাই মাছ কাটা ঘাত ঠোকাইতে নাগিল॥৫৩৫
গোদা বলে বুড়ি মএনা গিয়ানে ডাঙ্গর।
ছেবলাই মইচ্চ হএয়া শালি মোর টিক্‌রায় কামড়॥
দরিয়া হৈতে গোদা জম ডাঙ্গাত উঠিল।
খ্যাড়বাড়ি জাএয়া গোদা ভিড়িয়া বসিল॥
খ্যাড়বাড়ির ফুক্‌টি গুনা বিন্দাইতে নাগিল।৫৪০
ভগবানের নিকট গোদা গমন করিল॥
মানিকচান রাজার জিউ দিলে দাখিল করিয়া।
আপনার মহলক নাগিয়া গোদা গ্যাল চলিয়া॥
গুরুর বাক্য নারদ মুনি ব্রথা না করিল।
আশিব্বাদের লিখন আনিয়া জোগাইল॥৫৪৫

জখন ডাহিনি মএনা লিখন পাইল।
রক্‌খর ধরিয়া মএনা রক্‌খর চিনিল॥
লিখন পড়িয়া মএনা নামঞ্জুর হৈল॥
মএনা বলিছে গুরু— 
আঠারো জনম ছেইলার উনিশে মরন।
দোকলম করিয়া জদি দ্যায় বিধাতা পাঠত বসিয়া।৫৫০
তবে সে ডাহিনি মএনা জাবো ফিরিয়া॥
শিব গোরেকনাথ মএনাক বলিছে,—ওগো মা
বিধাতার কলম খণ্ডান না জায়।
ভাঙ্গা জোড়া দুইটি কম্ম বিধাতা করায়॥
আড়াই মাসের সন্তান আছে তোর গব্বের মাজারে।৫৫৫
তাহার আশিব্বাদ দেই দ্যাবগন পথের মাজারে॥
আঠারো জনম ছেইলার উনিশে মরন।
শিঘ্র নেগি ভজাইস সিদ্ধা হাড়ির চরণ॥
ঐ সিদ্ধাক ভজাইলে তোমার ছেইলার না হবে মরন॥
জখন মএনামতি আশিব্বাদ পাইল।৫৬০
হস্তি ঘোড়া নিয়া মত্রনা আপনার মহলক গ্যাল।
আপনার মহলে মএনা দরশন দিল।
হেমাই পাত্র বলি মএনা ডাকিবার নাগিল॥
কি কর হেমাই পাত্র কার পানে চাও।
জত মোনে কিত্তনিয়াক আইস ধরিয়া।৫৬৫
সোআমিক শস্ করিব গঙ্গাক নিগিয়া॥
কি কর গিয়াস্তা সকল নিচন্তে বসিয়া।
দখিন দুআরি বাঙ্গলা ফ্যালাও ভাঙ্গিয়া।
জত মোনে খুটা খড়ি নি জাও ধরিয়া॥[২১]

রাম খুডা চন্দন খুডা ব্যাল খুডা ন্যাও সাইঙ্গ নাগাএয়া।৫৭০
তিল সরিসা ত্যাল ঘি ন্যাও কোডোরায় ভরিয়া॥
রাজাক শস্ করিবার জাই গঙ্গাক নাগিয়া।
চন্দন খুড়ার মছলি ন্যাও তৈয়ার করিয়া॥

সাইঙ্গ করিয়া ন্যাও রাজাক কান্দে করিয়া।
শস্ করিবার জাই গঙ্গাক নাগিয়া॥৫৭৫
গঙ্গাক নাগিয়া জ্ঞাতা সক্কল গমন করিল।
গঙ্গার কুলে জাএয়া রুপস্থিত হৈল॥

জখন গিয়াস্তা সকল সংবাদ শুনিল।
ভারে ভারে খুটা খরি উঠাইবার নাগিল॥
মএনা বলে হায় বিধি মোর করমের ফল॥৫৮০
পাচ নোটা গঙ্গার জলে রাজাক ছিনান করাইল।
ধৌত বস্ত্র রাজাক পরিধান করাইল॥

রাজাক নৈল জ্ঞাতা চৌঢালে করিয়া।
কিন্তুনিয়া জায় কিত্তন করিয়া॥
একটা রামের পল্লব মএনা হস্তে করিয়া।৫৮৫
সোআমির পাছে পাছে মএনা জাএছে চলিয়া॥

রাজাক শস্ করিবার মএনা জাগা না পাইল।
জ্ঞাতার তরে কথা মএনা বলিতে নাগিল॥
আমার সোআমিকে নেই কোলাএ করিয়া।
গঙ্গার মধ্যে আমি থাকি দাড়াইয়া॥৫৯০
কাট খুডা দ্যাও চত্র‌ুদিগে ফ্যালায়া।
সোআমিকে শস্ করি আমি গঙ্গাএ দাড়ায়া॥

মএনার বাক্য জ্ঞাতা সকল ব্রথা না করিল।
কাষ্ট খুড়া চত্র‌ুদিগে ফ্যালায়া দিল॥
তিল সরিসা তৈল্ল ঘি দিল চুলিতে ফ্যালায়া। ৫৯৫
আপনে ডাহিনি মএনা দিলে আনল নাগেয়া॥
বহ বহ করিয়া আনল উঠিল জলিয়া॥
কোলাতে পুড়েছে রাজাক সরগে উঠে ধুমা।
ব্রহ্মার ভেতর বসি থাকিল্ যেমন কাঞ্চা সোনা॥
কোলাতে পুড়িয়া রাজাক কোলাতে কৈল্ল ছাই। ৬০০
ব্রহ্মার ভেতর বসি থাকল মএনা লোহার কলাই॥
কোলাএ পুড়িয়া মএনা আঙ্গার দিল ভাটি।
ব্রহ্মাএ বসিয়া থাকল জ্যান লোহার খাটি॥
দুখান একান করি খড়ি দিল চিতার উপর।
সাত দিন জলে আনল শিরের উপর॥৬০৫
রাজাকে শস্ করিয়া মএনা পাহাড়ে পাও দিল।
গুপিচন্দ্র রাজার জন্ম চুলির মাঝে হৈল॥
ছাইলাক দেখিয়া মএনা বড় খুসি হৈল।
গঙ্গাতে এক ডুব দিয়া ছেইলা কোলে নিল॥
হরি ধ্বনি দিয়া জ্ঞাতা সকল গমন করিল॥৬১০
মানিকচন্দ্র মরি গ্যাল গোপিচন্দ্র হৈল।
হেমাই পাত্র বলি মএনা ডাকিবার নাগিল॥[২২]

কি কর হেমাই পাত্র কার পানে চাও।
শিঘ্রগতি সোনা দাইক আনিয়া জোগাও॥
জখন হেমাই পাত্র ছাইলাক দেখিল।৬১৫
দেখিয়া হেমাই খুসি ভাল হৈল॥
সোনা দাইর বাড়ি নাগি গমন করিল।
সোনা দাইর বাড়ি জাএয়া দরশন দিল॥

সোনা সোনা বলি হেমাই ডাকিতে নাগিল।
হেমাইকে বসিবার দিল দিব্য সিংগাসন।৬২০
কর্ফুল তাম্বুল দিয়া জিগ্‌গায় বচন॥
ক্যানে ক্যানে হেমাই পাত্র হরসিত মন।
কি বাদে আসিলেন তার কও বিবরন॥
হেমাই কয় শুন সোনা করি নিবেদন॥
মানিকচন্দ্র মরি গ্যাল গোপিচন্দ্র হৈল।৬২৫
নাড়িছেদ করিতে সোনা শিঘ্রগতি চল॥
জখন সোনা দাই একথা শুনিল।
রাম ত্যাল বিষ্ণু ত্যাল ক্যাশেতে মাখিল॥
সোনার নও কড়া কড়ি ন্যায় অঞ্চলে বান্দিয়া।
গুআ খোআ বিশি নিলে কমরে বান্দিয়া॥৬৩০
সবন্নের খঞ্চনি নিলে খোপাত্র গুঞ্জিয়া।
দরিয়াক নাগিয়া দাই চলিল হাটিয়া॥
দরিয়ার কুলে জাএয়া দরশন দিল।
তখন মএনামতি সোনা দাইক দেখিল॥
মুখত কাপড় দিয়া মএনা হাসিতে নাগিল।৬৩৫
ছাইলা দেখিয়া সোনা বড় আনন্দিত হৈল॥
কি কর হেমাই পাত্র কার পানে চাও॥
এক খান কলার নেউজ পাত আইস তো ধরিয়া।
নাড়িছেদ করব আমি এখানে বসিয়া॥
জখন হেমাই পাত্র একথা শুনিল।৬৪০
শিঘ্রগতি আনিয়া জোগাইল॥

লও কড়া কড়ি দিল পাতোত বিছিয়া।
তিন আঙ্গুল জুখিয়া রাজার নাড়িছেদ করিল॥[২৩]
নাড়িছেদ করিয়া সোনার হরসিত মন।
দরিয়ার জল দিয়া করিল ছেনান॥৬৪৫
ছেনান করিয়া সোনা দাইর হরসিত মন।
হাসিয়া খেলিয়া দিলে মত্রনার কোলাত তুলিয়া॥
ছাইলা পাইয়া মএনার হরসিত মন।
আপনার মহলক নাগি করিল গমন॥
আগে আগে মএনামতি জাএছে চলিয়া।৬৫০
পাছে পাছে হেমাই পাত্র জাএছে চলিয়া॥
কতেক দুর জায় মএনা কতেক পন্থ পায়।
আর কত দুর জাএয়া আর এক ছাইলার পথে নাগাল পায়॥
রাজাক নিলে মএনা পিষ্ঠে করিয়া।
ছাইলাটাক নিলে মএনা কোলাত করিয়া॥৬৫৫
কাখে আর কোলে নিয়া গ্যাল চলিয়া।
আপনার মহলে জাএয়া মএনার হরসিত মন॥
তিন দিন অন্তরে রাজাক তিন কামান করিল।
চাইর দিন অন্তরে রাজার চতুর্থা করাইল॥
পঞ্চজন আনিয়া তার বেদ বিধি করাইল।৬৬০
আজি আজি কালি কালি দশ দিন হৈল॥
দশ দিন অন্তর রাজার দশা করিল।[২৪]

আজি কালি করিয়া ত্রিশ দিন পুরিল॥
ত্রিশ দিন অন্তরে রাজার ক্রিয়া সুদু হৈল।
জত মোনে জ্ঞাস্তা ভোজন করাইল॥৬৬৫
ক্রিয়া সুদু করিয়া মএনার হরসিত মন।
রাজ্য করি খায় মএনা আপনার মহল॥
আজি আজি কালি কালি ছয় মাস হৈল।
ছয় মাস অন্তরে রাজার নাম কলম রাখিল॥
মএনার গুরু শিব গোরেকনাথক আন্‌লে ডাক দিয়া।৬৭০
গোপিচন্দ্র নাম থুইল পাটত বসিয়া॥
বছরেকের ছেলে আমি রাজাই করাব।
গুরুর পাঠালয়ে মহারাজাক সম্বলব করিব॥
বিদ্দা পড়িয়া রাজার হরসিত মন।
আপনার মহলক নাগি করিল গমন॥৬৭৫

সাত বছরকার বয়স হৈল পাটত বসিয়া।
এখন পাত্রি দ্যাখে বুড়ি মএনা ধিয়ানত বসিয়॥
ধিয়ানত বসি মএনা পাত্রি দেখিল।
হরিচন্দ্র রাজার কন্যা রদুনাক পদুনাক সতি দেখিল॥
নারদক নাগিয়া বুড়ি মএনা হুঙ্কার ছাড়িল।৬৮০
ডাক মধ্যে নারদ মুনি আসিয়া হাজির হৈল॥
কিবা কর নারদ মুনি নিছন্তে বসিয়া।
হরিচন্দর রাজার মহলক নাগি জাক চলিয়া॥
মএনার বাক্য নারদ মুনি ব্রথা না করিল।
হরিচন্দ্র রাজার মহলক নাগি গমন করিল॥৬৮৫
পাত্রি দেখিয়া আসি নারদ মুনি মএনাক বলিতে নাগিল॥
ভাল পাত্রি মএনা মাই আসিলাম দেখিয়া।
তোমার ছাইলাক বিবাও দ্যান পুষ্প সেঞেরা দিয়া॥
জখন বুড়ি মএনা একথা শুনিল।
একথা শুনিয়া মএনা বড় খুসি হৈল॥৬৯০
এক মঙ্গলবারে শুবাশুব বুঝিল।
ফের মঙ্গলবার দিনা দরগুআ করিল॥
ফের মঙ্গলবার দিনা বিবাহ সাজাইল॥
রদুনাক বিবাও কৈল্লে পহুনাক পাইল দানে।
এক শত বান্দি পাইল ব্যাবারের কারনে॥[২৫]৬৯৫

এখন রাজা রাজাই করে পাটত বসিয়া।
জত রাজার আইয়ত প্রজা গ্যাল মহালে চলিয়া॥
ছাইলাক পাট দিতে মএনার হরসিত মন।
নানা বাদ্য ভাণ্ড করিল আরম্ভ॥
বন্দুকের জয় জয় ধোআয় অন্ধকার।৭০০
বাপে বেটায় চিনা না জায় ডাকা ডাকি সার॥

বার গছি গুআ রাজার ত্যার গাছি তাল।
তাহার তলে বৈসে দরবার আজার ছাওআল॥
পাট হস্তি নিলে মএনা সাজন করিয়া।
পাচ নোটা গঙ্গার জলে পাট সেনান করিয়া॥৭০৫
জখন পাটহস্তি রাজাক দেখিল।
সুর তুলিয়া হস্তি রাজাক প্রনাম করিল॥
জয়ধ্বনি দিয়া রাজাক পাটে বসাইল॥
দরবারে থাকিয়া রাজার হরসিত মন।
আপনার মহলের নাগি করিল গমন॥৭১০

জখন মএনামতি ছাইলাক দেখিল।
পাচ নোটা কুআর জলে ছিনান করিয়া।
পাক শালার ঘর নিলে পোস্কার করিয়া॥
এক ভাত পঞ্চাশ ব্যান্নন রন্ধন করিয়া।
সবন্নের থালে রন্ন দিলে পারশ করিয়া॥৭১৫
আইস আইস জাদু রন্ন খাওসে আসিয়া।
রন্ন জল খাইলে রাজা বদন ভরিয়া॥
রন্ন জল খাইয়া রাজা মুক্‌খে দিলে পান।
মায় পুতে কয় কথা ভর পুন্নিমার চান॥


  1. নিম্নলিখিত রূপ একটী বিশ্লিষ্ট পাঠ প্রচলিত দেখা যায়—

    মএনামতি সিন্দুরমতি তিলকচন্দ্রের বেটি
    মএনামতির বিআও হইল মানিকচন্দ্রের ঘরে।
    সিন্দুরমতির বিআও হইল নিলমনি রাজার ঘরে॥
    মএনাক বিআও করি রাজা পঞ্চাশ বিআও করে।
    বুড়া দেখি মএনামতিক ব্যাগল করি দিলে
    মহারাজা রাজ্য করি খায় পাটের উপর।
    মএনার ঘর বান্দি দিলে ফেরুসার বন্দর॥
    মহারাজা রাজ্য করি খায় পাটের উপর।
    মএনামতি চরখা কাটি ভাত খায় বন্দরের ভিতর॥

  2. ডাক্তার গ্রীয়ার্সন সাহেব কর্ত্তৃক এসিয়াটিক সোসাইটীর পত্রিকায় (১৮৭৮ সাল, ১ম ভাগ, ৩য় সংখ্যা) যে মানিকচন্দ্র রাজার গান প্রকাশিত হইয়াছিল, তাহাতে এই চরণের পরিবর্ত্তে

    হাল থানায় মাসড়া সাথে দেড় বুড়ি কড়ি॥

    এইরূপ পাঠান্তর দৃষ্ট হয় এবং ইহার পরে নিম্নলিখিত কয়েক চরণ পাওয়া যায়—

    দেড় বুড়ী কড়ী লোকে খাজনা যোগায়।
    অষ্টমি পুজার দিনে পাঁঠা গোঠে লয়॥
    খড়ীবেচা হৈয়ে যে খড়ী ভার যোগায়।
    তার বদলী ছয় মাস পাল খায়॥
    পাতবেচা হৈয়ে যে পাত আটি যোগায়।
    তারে বদলী ছয় মাস পাল খায়॥

  3. পাঠান্তর—

    সুখ্‌খ সএ রাইয়ত জন দুক্‌খ নাহি পায়।

  4. পাঠান্তর—

    সোনার কুমড়া গুলা গড়াগড়ি বয়।

  5. গ্রীয়ার্সন সাহেবের প্রকাশিত পাঠ—

    ঐত মানিকচন্দ্র রাজা সরুয়া নালের বেড়া।
    একতন যেকতন কৈরে যে থাইছে তার দুয়ারত ঘোড়া॥

  6. গ্রীয়ার্সন সাহেবের প্রকাশিত গাথায় ‘ভাটি হইতে’।
  7. গ্রীয়ার্সন সাহেবের প্রকাশিত গাথায় ‘রাঁড়ী কাঙ্গাল দুঃখির বড় দুষ্ক হইল’।
  8. এই স্থানে এবং ইহার পরবর্ত্তী অংশে গ্রীয়ার্সন সাহেবের প্রকাশিত পাঠে কিছু বিশেষত্ব আছে—

    ছোট রায়ত উঠে বলে বড় রায়ত ভাই।
    প্রধানের বরাবর সবে চল যাই॥
    কি আজ্ঞা বলে প্রধান সকল।
    যেত রায়ত পরামস করিয়া প্রধানের বাড়ী বৈলে চৈলে গেল॥
    কেমন বুদ্ধি করি ভাই কেমন সমাচার।

    অসতি রাজা হইল রাজ্যের ভিতর॥

    প্রধান বলে রায়ত সকল এ বুদ্ধি নাই আমার বরাবর।
    চল যাই সিবের বরাবর কি আজ্ঞা বলে বোলা মহেশ্বর॥
    যত রায়ত পরামস করিয়া গেল সিবের বরাবর।
    সিব ঠাকুর বৈলে তোলে ছাড়ে রাও।
    ঘরে ছিল সিবঠাকুর বাহিরে দিলে পাও॥
    সিবকে দেখিয়া রায়ত জন করে পরনাম
    গলে বস্ত্র বান্ধিয়া করে পরনাম॥
    জীও জীও রায়ত ধর্ম্ম দেউক বর।
    ষত গুটি সাগরের বালা এত আরিব্বল॥
    কেনে কেনে রায়ত সকল আইলেন কি কারন॥
    কেমন বুদ্ধি করি কেমন চরিচর।
    অসতি রাজা হইল রাজ্যের ভিতর।
    ধেয়ানে বুড়া সিব ধেয়ান কৈরে চায়।
    ছয় মাসের পরমাই রাজার কপালে নাগাল পায়॥
    মোর কথা কন যদি ময়নার বরাবর।
    কৈলাশ ভুবন মোর কৈর্ব্বে নণ্ড ভণ্ড॥
    এক সত্য দুই সত্য তিন সত্য হরি।
    তোমার কথা যদি কওঁ মহাপাপে মরি॥
    যেত রায়ত জন পরামস করিয়া।
    স্রীকলের হাঠত নাগিয়া যান চলিয়া॥
    ধুপ সিন্দুর নেন পাতিল ভরিয়া।
    হাঁস কৈতর নেন খাঞ্চা ভরিয়া॥
    ধওলা পাঁঠা নেন রসী সাইঙ্গ করিয়া।
    রবিবার দিন নিরা থাকিয়া পারনী গঙ্গা যান চলিয়া।
    ধর্ম্মরে থান গঙ্গা কিনারে বান্ধিয়া।
    ধওলা পাটা দেন বালু ছেদ করিয়া॥

    হাঁস কত গুলা দেন ঘাটে উছরগিয়া॥
    ধূপ সিন্দুর দেন ঘাটে জ্বালাইয়া॥
    অফিন্না বিন্নার থোপ আনে উপারিয়া।
    নাংটি চিপিয়া সাপ দেন ছাড়িয়া।
    ঐ সাপ নিলে অঞ্চল পাহিয়া॥
    পাঠান্তর:— ছোট রাইয়ত বলে দাদা বড় রাইয়ত ভাই।
    চল সকল মেলি জুক্তি করি পরামানিকের বাড়ি জাই॥
    চল চল জাই দাদা পরামানিকের নাগিয়া।
    কি বুদ্ধি যায় পরামানিক আমাকে নাগিয়া॥
    এক রাজ্ঞা না পাইয়া রাইয়ত পরজা দুইও রাজ্ঞা পাইল।
    পরামানিক মহলক নাগি গমন করিল॥
    এক জন বেরায় দুই জন বেরায় বেরায় হল্‌কে হল্‌কে।
    এইঠে হতে ঠ্যাং নাগ্‌লো পরামানিকের মহালে॥
    বসিয়াছে পরামানিক দিব সিঙ্গাসনে।
    হ্যান কালে রাইয়ত পরজা রূপস্থিত হৈল॥
    গৈরমুণ্ড হএয়া পরামানিকক পরনাম জানাইল।
    হাতে মাতে পরামানিক চমকিয়া উঠিল॥
    পরামানিক বলে শুন পরজাগন বচন মোর হিয়া।
    এত দিন না আইস আমার মহাল চলিয়া।
    আইজ বা ক্যানে আইলেন আমার মহালক নাগিয়া॥
    সুখিতা রাইয়ত আমরা দুস্‌কু নাহি পাই।
    কারো পুস্কনির জল আমরা কেহ নাহি খাই।
    কারো মারলি দিয়া কেহ নাহি জাই॥
    সোনার ভ্যাটা দিয়া আমার ছাওআলে খ্যালায়।
    হ্যান দুক্‌খি কাঙ্গাল নাই ধরিয়া পালায়॥
    এক দক্‌খিন দেশি বাঙ্গাল আমিন চলিয়া।
    দেওয়ানগিরি চাক্‌রি নিলে রাজার দরবাবে আসিয়া॥

    নাঙ্গল বেছানু জোঙ্গাল বেছানু আরো বেছানু কাল।
    খাজনার তাপত বেছেয়া দিনু দুধের ছাওআল॥
    দুধের পুত্র বেছেয়া খাজানা দিলাম জোগাএয়া।
    ইহার বিচার করিয়া দ্যাও মহালে বসিয়া॥
    পরামানিক বোলে শুন রাইয়ত প্রজা বচন মোর হিয়া।
    একটা করি টাকা ন্যাও অঞ্চলে বান্দিয়া।
    কলিঙ্কার বাজার বুলি জাএন চলিয়া॥
    ধুপ ধুনা ঘৃত কলা ন্যান কিনিয়া।
    ধবল ধবল কৈতর ন্যান খাঞ্চাত ভরিয়া॥
    ধবল ধবল পাঠা ন্যান রশি-সাং করিয়া।
    একটা করি বিন্না-থোপ ন্যান উপারিয়া॥
    মঙ্গলবার দিনে জান বৈথানি বলিয়া।
    ধুপ ধুনা ঘৃত কলা স্থান ধরাএয়া॥
    ধবল ধবল কৈতর ধম্মের নাঞা ছাড়িয়া।
    ধবল ধবল পাঠা দ্যান গাঙ্গিক ছাড়িয়া॥
    একটা করি বালুর পিণ্ড ন্যান তৈয়ার করিয়া
    তাতে একটা করি বিন্নার থোপ দ্যান গাড়িয়া॥
    গাঙ্গিক পুজেন রাইয়ত পরজা হরিধ্বনি দিয়া॥
    লাংটি চিপিয়া শাও যান মানিকচান বলিয়া॥
    যখন পরামানিক একথা বলিল।
    আপনার মহালক নাগি গমন করিল॥
    আত্রি করে ঝিকি মিকি কোকিলা করে রাও
    শেত কাউআ বলে রাত্রি প্রোহাও প্রোহাও॥
    এক দণ্ড দুই দণ্ড তিন দণ্ড হৈল।
    একটা করি টাকা অঞ্চলে বান্ধিয়া নিল।
    স্রীকলার বাজার নাগি গমন করিল॥।

  9. পাঠান্তর— 

    মঙ্গলবার দিন রাইয়ত শাওবর দিল।
    বুধবার দিন রাজার বুদ্ধহারা হৈল॥
    বৃসুদ্‌বার দিন রাজার গাএ জরি হৈল।
    শুক্কুরবার দিন রাজার সমুদ্র শুকাইল॥
    শনিবার দিন রাজার শনি পিছা নৈল।
    রবিবার দিন রাজা পালঙ্কে ঢলিল॥
    সমবার দিনে রাজার জমে পিছা নৈল।
    আজি আজি কালি কালি ছয় মাস হৈল॥
    গ্রীয়ার্সন সাহেবের প্রকাশিত পাঠে— 
    রবিবার দিন লোকে সাঁও দিল।
    সোমবার দিন রাজার এ জ্বরি করিল॥
    মঙ্গলবার দিন রাজা কাহিলা পড়িল।
    বুধবারে রাজ। অন্ন পানি ছাড়িল॥
    বিসুদ্‌বারে রাজা এ গুর ছাড়িল।
    ফির মঙ্গল বারে চিত্রগোবিন্দ দফ্‌তর খুলিল॥
    মানিকচন্দ্র রাজার ছয় মাস পরমাই দফ্‌তর নাগাইল পাইল।
    বেন্না মুখ হৈয়ে সমন রাজাক বলিবার লাগিল॥
    অসতি রাজা হইল রাজ্যের ভিতর।
    সেই রাজাক লৈয়া আইস যমালয়ের ভিতর।
    আবাল যমকে ডাকিবার লাগিল।
    গোদা যমের নামে চিঠি হাওলাত কৈরে দিল॥
    তোক বলো গোদা যম বাক্য মোর ধর।

    হাতে গলে মানিকচন্দ্র রাজাক বান্ধিয়া হাজির কর॥

    চামের দড়ি লোহার ডাঙ্গ নৈলে গিরো দিয়া।
    তখনে গোদা যম চলিল হাঠিয়া॥
    কত দুরে যেয়ে গোদা কত পাছা পায়।
    কতক যাইতে মানিকচন্দ্র রাজার বাড়ী পায়॥
    ছয় মাসের কাহিলা রাজা মহলের ভিতর।
    তওত খবর নাহি করে হয়না সুন্দর॥
    তোক বলো যে নেঙ্গা পাত্র বাক্য মোর ধর।
    এই কথা জানাও গিয়ে ময়নার বরাবর॥
    ছয় মাসের কাহিলা রাজা মহলের ভিতর।
    দেখা কৈরবার চায় রাজ রাজেশ্বর॥
    একথা শুনিয়া নেঙ্গা না থাকিল রৈয়া।
    ময়নার মহলে চলিল হাঁটিয়া॥
    আগ দুয়ারে ময়নামতি পসার খেলায়।
    থিরকির দুয়ারে দিয়া পরনাম জানায়॥
    কেনে কেনে নেঙ্গা আইলেন কি কারন॥
    নেঙ্গা বলে সোন না সোন সমাচার।
    ছয় মাসের কাহিলা রাজা মহলের ভিতর॥
    দেখা কৈরবার চায় রাজ রাজেশ্বর॥
    ধেয়ানে ময়নামতি ধেয়ান কৈরে চায়।
    ধেয়ানের মধ্যে যমের নাগাল পায়॥
    আনিল বাঙ্গলা গুয়া মিঠা ভরি পান।
    ঐ বাঙ্গলা গুরা কাটাইর দিয়া করে দুই খান॥
    পানের বুকে চুনের নেওয়া দিয়া।
    হেট খিলি উপর খিলি মাইল্লে তুলিয়া॥
    শোল পুটি জ্ঞান দিলে খিলিত ভরিয়া।
    পানের বাটা বান্দির মাথায় দিয়া॥

    নিকলিল ময়নামতি যাত্রা করিয়া।
    ঐ রাজার মহালে উত্তরিল গিয়া॥
    কেনে কেনে মহারাজা ডাকিলে কি কারন॥
    ছয় মাসের কাহিলা রাজা মহলের ভিভর।
    তত্ত খবর না করেন ময়না সুন্দর॥
    ময়না বলে সোন রাজা রাজ রাজেশ্বর।
    আমার সরীরের জ্ঞান নেও বোল সিকিয়া।
    আমার বসের নদী কন্দে যাবে সুখাইয়া॥
    আমার বয়সে বড় বৃক্ষ যাবে মরিয়া।
    দুই জনে রাজাকি করিম ঘর জুয়ান হইয়া॥
    রাজা বলে সুন ময়না বাক্য মোর ধর।
    এখনি মোর মানিকচন্দ্র যমে লইয়া যাউক।
    তাহাতেও স্ত্রীর জ্ঞান গরবে না সুনাউক॥
    নারীর জ্ঞান দেখিয়া জ্ঞানে করিল হেলা।
    ঠিক দুপর ভাড়ুয়া যম করিয়া গেল মেলা॥
    পাঠান্তর— 
    ছয় মাসিয়া কাহিলা রাজা মহলের ভিতর।
    তত্ত খবর না পাইল মএনা সুন্দর॥
    আইজ মরে কাইল মরে বাঁচিবার আশা নাই।
    নাক দিয়া পবন বেটা করে আমি জাই॥
    হেমাই পাত্র বলি তখন ডাকে ঘনে ঘন।
    ডাক মধ্যে হেমাই পাত্র দিল দরশন॥
    রাজা বলে শুন হেমাই কার প্রানে চাও॥
    এই খবর তুমি ধরি জাও মএনার বরাবর।
    ছয় মাসিয়া রোগী রাজা মহলের ভিতর।
    দ্যাখা করিতে চায় রাজার কুঙর॥

    জখন হেমাই পাত্র একথা শুনিল।
    মএনার মহলক নাগি গমন করিল॥
    জখন মএনামতি হেমাই পাত্রক দেখিল।
    বসিবার দিলে হেমাইক দিব্ব সিঙ্গাসন।
    কোরফুল তাম্বুল দিয়া জিগ্‌গায় বচন॥
    ক্যানে ক্যানে হেমাই পাত্র হরসিত মন।
    হস্তি ঘোড়া ছাড়িয়া ক্যান তোর মৃত্তিকায় গমন!
    কি বাদে আসিলু তার কও বিবরন॥
    হেমাই বলে শুন মএনা কার প্রানে চাও।
    ছয় মাসিয়া রোগী রাজা মহালের ভিতর।
    বাচে কিনা বাচে রাজার কোঙর॥
    মএনা বলে হেমাই পাত্র কার প্রানে চাও।
    এক শত রানি আছে রাজার মহালের ভিতর।
    তারে সাতে দ্যাখা করুক রাজার কোঙর।
    কি কারনে জাইম মুই মএনা সুন্দর॥
    জখন হেমাই পাত্র একথা শুনিল!
    আপনার মহলক নাগি গমন করিল।
    রাজার সাকখাত্ জাইয়া দরশন দিল॥
    হেমাই বলে শুন রাজা বিলাতের নাগর।
    একশত রানি আছে তোমার মহলের ভিতর॥
    তার সাতে তুমি দ্যাখা কর রাজার কোঙর।
    কি কারনে আসিবে তোমার মএনা সুন্দর।
    রাজা কইছে হেমাই পাত্র করে প্রানে চাও।
    এই খবর ফির ধরি জাও মত্রনার বরাবর।
    তোমার বিআত টাকা কড়ি খরচ বিস্তর।
    এক ঝাড়ি জলে রাজার প্রান রকখা কর॥

    জখন হেমাই পাত্র সংবাদ শুনিল।
    মএনার মহলক নাগি ফের গমন করিল।
    মত্রনার মহলে গিয়া দরশন দিল।
    হেমাই বলে শুন মএনা কার প্রানে চাও॥
    তোমার বিআত বোলে টাকা কড়ি খরচ বিস্তর।
    এক ঝাড়ি জলে রাজার প্রান রকখা কর॥
    জখন নএনামতি একথা শুনিল।
    রাজার দরশনক নাগি গমন করিল॥

  10. পাঠান্তর— 

    জখন মএনামতি জমকে দেখিল।
    পাচটা গুয়া নেগি জমক ভোট দিল॥
    সেউ বেলা গ্যাল জম গুয়াক ধরিয়া।
    ফির বেলা আসিল্ দুই ভাই সাজিয়া॥
    জখন মএনামতি জমক দেখিল।
    জল থোয়া ঝাড়ি রাজার জমকে ভেটি দিল।

    হাতে ঝাড়ি নিয়া জনের ঘর গমন করিল॥

    ফির বেলা আসিল জমের ঘর চাইর ভাই সাজিয়া।
    এই বার তোর ধম্মি রাজাক না জামু ছাড়িয়া॥
    জখন মএনামতি জমকে দেখিল।
    রাজার থাকিবার পালঙ্ক জমক ভেটি দিল॥
    পালঙ্ক মাথাএ নিয়া জম গমন করিল।
    জমপুরিতে জাএয়া জমের ঘর ভাবিতে নাগিল॥
    এই মএনামতি গিয়ানে ডাঙ্গর।
    কেমনে আনিব রাজাক জমপুরির ভিতর॥
    ফির বেলা জমের ঘর সাজিবার নাগিল।
    আট জন জম সাজিয়া বেরাইল॥
    সারা ঘাটা আসে ক্রম দৈত্য দান হৈয়া।
    এবার তোর ধম্মি রাজাক না জামু ছাড়িয়া॥
    উলুক ভুলুক করে জমের ঘর দুআরত আসিয়া।
    এমন কারো সাদ্দি নাই রাজাক নিয়া জায় বান্দিয়া॥
    জখন মএনামতি জমক দেখিল।
    আপনার রাজার বান্দি নিগি জমক ভেটি দিল॥
    বান্দি নগে নিয়া জমের ঘর গমন করিল।
    জমপুরিতে জাএয়া জমের ঘর ভাবিবার নাগিল॥
    সাজ সাজ বলি জমের ঘর সাজিবার নাগিল॥
    সকল জম সাজি গ্যাল আবাল জমের বাড়ি।
    আবাল জম বেরিয়া খাড়া হৈল মাটিত পৈল দাড়ি॥
    সোল জন জম জাওতো সাজিয়া।
    নিশ্চয় করি ধম্মি রাজাক আইসন ধরিয়া॥
    সোলজন জম তখন আসিল সাজিয়া।
    এমন কারো সাদ্দি নাই জে রাজাক নিয়া জায় বান্দিয়া॥

    জখন মএনামতি ধেয়ানত বসিল।
    ধেয়ানের মএনামতি ধেয়ান করি চায়।
    ধেয়ানের মধ্যে জমের নাগাল পায়়়॥
    জখন মএনামতি জমক দেখিল।
    আপনার পাটহস্তি জমক ভেটি দিল।
    হস্তিত চড়ি জমের ঘর গমন করিল।
    জমপুরিতে জাইয়া দরশন দিল॥
    গোদা বলে আরে জমের ঘর কার প্রানে চাও॥
    বারে বারে জাও মএনার মহলক নাগিয়া।
    কি কারনে মহারাজাক না আইসেন ধরিয়া॥
    কুড়ি জন জম জাওতো সাজিয়া।
    এইবার রাজাক তোরা না আইসেন ছাড়িয়া॥
    কুড়ি জন জম আইসে দৈত্য দানা হৈয়া।
    এই বার মএনা তোর সোয়ামিক না জামু ছাড়িয়া॥
    ধেয়ানে মএনামতি ধেয়ান করি চায়।
    ধেয়ানের মধ্যে জমকে নাগাল পায়॥
    জম গুলা দেখিয়া মএনা ভয়ঙ্কর হৈল।
    হাতের ইসারা দিয়া বান্দিক ডাকাইল॥
    কি কর বান্দির বেটি কার প্রানে চাও।
    বহুৎ গুলা জম আইস্‌ছে মহলক নাগিয়া।
    এই বার তো ধম্মি রাজাক না জাইবে ছাড়িয়া॥
    কি কর বান্দির বেটি কার প্রানে চাও।
    চাইর খান নোয়ার খাড়া অনিয়া জোগাও॥
    এক ঘড়ি ঠিক থাক বান্দির বেটি পাহারাত বসিয়া।
    কত গুলা জম আইস্‌ছে মুই আসোঁ দেখিয়া॥

    ওরূপ্প খুইলে নএন একতর করিয়া।
    নাঙ্গাকালি হৈল মএনা কারা বদলিয়া॥
    চাইর হাতে চাইর খান খাড়া নইলে তুলিয়া।
    জমের মধ্যত পৈল জাইয়া আলগ্‌চিত্ দিয়া।
    মার মার বলিয়া জমক নিগায় পিট্টিয়া॥

  11. পাঠান্তর—


    এক জন জাও বাওনুরি রূপ হএয়া।
    ফটিকের হিড়াএ আছে গঙ্গাজল ফ্যালান ঢালিয়া॥

  12. পাঠান্তর—

    এক জম জাও এন্দুর রূপ হএয়া।
    শেত কুয়ার জল ফ্যালান মঞ্জিয়া॥

  13. এক পাঠে পাই—

    নিশা জম জাএয়া রাজার গব্বে বসিল।


    গ্রীয়ার্সন সাহেবের প্রকাশিত পাঠে পাই—


    মরন তৃসা মারিল তুলিয়া।
    জল জল বলিয়া রাজা উঠিল কান্দিয়া॥
    জল খোআও খোআও ময়না সুন্দর।
    এক ঝাড়ি জল দিয়া প্রান রক্ষা কর॥

  14. পাঠান্তর—


    শেতকুয়ার জল দ্যাখে শেত কুয়াত নাই।
    ইন্দিরার জল দ্যাখে ইন্দিরাতে নাই॥
    দরিয়ার নাগি মএনা গমন করিল।
    দরিয়ার ঘাটে জাইয়া দরশন দিল।

  15. গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠে ‘রানী’ এবং পরবর্ত্তী অংশে—

    এক সাত রানীর হস্তের জল আঁইসঠানি গোন্দায়।
    তোমার হাতে জল খাইলে বহু ভাগ্য হয়॥
    এলায় যদি আমি যাই জলক নাগিয়া।
    ঐত ভাড়ুয়া যম তোক লইয়া যাবে বান্ধিয়া॥
    রাজা বলে সুন ময়না বাক্য মোর ধর।
    তৈলপাঠের খাড়া থোও বিছানাত ফেলায়া॥
    যখন আসিবে ভাড়ুয়া যম দৈত্ত দানব হয়া।
    তৈলপাঠের খাড়া দিয়া ফেলামু কাটিয়া॥
    যেন মতে ময়নামতি হস্তে ঝাড়ি লৈল।

    হাঁচি জিঠি বাধা বিস্তর পড়িল॥

    যেন ঘড়ি ময়নামতি চতুরার বাহির হইল।
    সাত দিয়া সাত জন গর্জ্জিয়া সোন্দাইল॥
    চামের দড়া দিয়া বান্ধিল।
    লোহার মুদ্গর দিয়া ডাঙ্গাইবার লাগিল॥

  16. পাঠান্তর— 

    দরিয়ার নাগি মএনা গমন করিল।
    দরিয়ার ঘাটে জাইয়া দরশন দিল॥
    জল ভরিয়া মএনা ডাঙ্গাএ উঠিল॥
    সত্যে ছিল গঙ্গা মাতা সত্যে ছিল ভাও।
    নরদেহা হৈয়া গঙ্গা মাতা কারে পঞ্চ রাও॥
    গঙ্গা বোলে শুন মএনা করে পানে চাও।
    কার বাদে জল ভরি নিজাও বিরসে ভরিয়া।
    জে তোরে রসিয়া কানাই পালাইছে ছাড়িয়া॥
    জখন মএনামতি এ কথা শুনিল।

    ঐঠিকোনা মন্ত্রনামতি ধেয়ানত বসিল॥

    আপনার মহলে আসি দরশন দিল।
    একশত রানি রাজার কান্দন জুড়িল॥
    চরনে ধরিয়া মএনার কান্দন জুড়িল॥
    হেমাই পাত্র বলি মএনা ডাকিবার নাগিল।
    ডাক মধ্যে হেমাই পাত্র দরশন দিল॥
    মএনা বলে শুন হেমাই কার পানে চাও।
    জত মোনে গিয়াস্তা আইস ধরিয়া॥
    জখন হেমাই পাত্র এ কথা শুনিল।
    জত মোনে গিয়াস্তা ডাকিয়া আনিল॥
    গিয়াস্তার তরে মএনা বলিবার নাগিল।
    কি কর গিয়াস্তা সকল কার পানে চাও।
    সোকল গুলা থাকেন পহারা বান্দিয়া।
    যাবৎ আইসোঁ মএনামতি যমপুরিক দেখিয়া॥
    পারেক জদি ধম্মি রাজাক আইসন ধরিয়া॥

  17. মতান্তরে অতিরিক্ত পাঠ—

    সেই জে ঘাটে ঘাটিয়াল শশান মশান।
    এইরূপে জদি জাই ঘাটকে নাগিয়া।
    দেখিলে সে শশান মশান জাইবে পালেয়া॥
    মহামন্ত্র গিয়ান নিলে হৃদএ জপিয়া।
    বিদুআ গোআলনি হৈল কায়া বদলিয়া॥
    দদির পসার নৈল মএনা মস্তকে করিয়া।
    ঘাটকে নাগিয়া মএনা জাএছে চলিয়া॥
    ঘাটের পারে জাএয়া মএনা রুপস্থিত হৈল।
    শশান মশান বলি ডাকাইতে নাগিল॥
    পার কররে ঘাটিয়াল বেটা ব্যালা জায় বৈয়া।
    দদি বেছাবার জাব আমি ওপার নাগিয়া॥
    শশান বলে শোন দাদা মশান প্রানের ভাই।
    এলায় জে নন্দ গোআলের মাইয়া থুইনু পার করিয়া।
    এ কোনঠাকার গোআলনি আসিল্ ঘাটকে নাগিয়া॥
    দাদা ও গোআলনি নয় গোআলনি নয় মএনার চক্কর।
    মায়া করি ছলিবার আইছে ঘাটের উপর॥
    নৌকা খান থুই জলেতে নুকিয়া।
    আপনার মহলক নাগিয়া জাই পালাইয়া॥
    এখন নৌকা থুইল জলেতে নুকাইয়া।
    আপনার মহলক গেল পালাইয়া॥
    ঐখানতে বুড়ি মএনা ধিয়ান করিল।
    বিয়ানতে বুড়ি মএনা পলানের লাগ্য পাইল॥

  18. গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠে আমরা পাই—

    যমালয় লাগিয়া ময়না চলিল হাটিয়া।
    নদীর পারে ময়নামতি গেল চলিয়া॥
    নদী দেখিয়া ময়না ভয়ঙ্কর হইল।
    ছয় মাস ওসার নদী বছরত পড়ে খেওয়া।
    এক এক ঢেউ উঠে পর্ব্বতের চূড়া॥
    বিধি আমার দুঃখের কপাল। যেমন বিন্দার গোপাল॥
    ভাঙ্গা নৌকা ছিড়া কাছি গুরু কেমনে হবে পাড়॥
    যদি আমার গুরু সহায় থাকে॥
    ধরম হাইল ধরে, ভাঙ্গা নৌকা ছিড়া কাছি
    শুরু লাইগাব কিরানে॥ ধুয়া॥
    পরিধানের সাড়ী অর্দ্ধখান ময়নামতী দিল জলত বিছায়া।
    যোগ আসন ধরিল ময়না ধরম সরন করিয়া॥
    তুড়ু তুড়ু করিয়া ময়না হুঙ্কার ছাড়িল।
    ছয় মাসের দরিয়া ছয় দণ্ডে পার হইল॥
    যমপুরি লাগিয়া চলিল হাঁটিয়া।
    অপর একটী পাঠে পাওয়া যায়— 
    পার হৈয়া মএনামতি পাইয়া গেল কুল।
    ঝাড়িয়া বান্দে মএনা মস্তকের চুল॥
    মতান্তরে অতিরিক্ত পাঠ— 
    মএনা বোলে জয় বিধি কর্ম্মের বোঁঝ ফল।
    এইরূপে জদি জাই আমি জমপুরি নাগিয়া।
    আমাক দেখিয়া জম বেটা জাইবে পালেয়া॥
    মহামন্ত্র গিয়ান নিল বুড়ি মএনা হৃদয়ে জপিয়া।

    বিদুআ ব্রাম্মনি হৈল কায়া বদলিয়া॥

    পাঞ্জি পুস্তক নিলেক ঝোলঙ্গা ভরিয়া।
    বামনির রূপে জাএছে মএনা জমপুরি নাগিয়া॥
    জথন জম বামনিক দেখিল।
    হাতে মাথে জন বেটা চমকিয়া উঠিল॥
    জমপুরিতে নরলোক না আইসে চলিয়া।
    আইজ ক্যান কোনঠাকার বাননি আসিল সাজিয়া॥
    এখন জমের ঘর জিজ্ঞান করতেছে—ওগো বৃধুমাতা।
    তুমি কোথায় জাও চলিয়া॥
    কি কারনে আসিলেন আমার জমপুরি নাগিয়া॥
    বামনি বলে শুনরে জম জমের নন্দন।
    আমিতো বিদুআ বামনি গননা করিবার গেছিলাম বিলাতক নাগিয়া।
    ঘুলা নাগি আসিলান তোমার জনপুরিক নাগিয়া॥
    কিছু ভিক্‌খা দ্যাও আমি জাই চলিয়া॥
    সুবুদ্ধ ছিল জমের কুবোধ নাগাল পাইল।
    দশার গননা বামনির কাছে শুনিবার চাইল॥
    একটু গননা শুনান পুস্তক হাতে নিয়া।
    কিছু করি ভিক্‌খা দিব জ্ঞান চলিয়া॥
    তখন মএনা করিল কি;— 
    শুব স্তব বলি পাঞ্জি বাহের করিল টান দিয়া।
    আপনি ধম্মের পাঞ্জি বোলে রাও দিয়া॥
    প্রথমে গনিল জত সগ্‌গর তারা।
    তার পরতে গনিল জত পাতালের বালা॥
    তার পরতে গনিল জত বৃক্‌খের পাত।
    অবশেসে গনিল নএনা ভরন হাড়ির ভাত॥
    গনিতে গনিতে মএনা এক দুফর করিল।

    জমের কথা বলিতে নাগিল॥

    রে জম বেটা তোমার বড় গুজব দেখিতেছি।
    মানিকচন্দর রাজার জিউ আনছেন বান্দিয়া।
    সে ডাহিনি মএনা আসিছে তোমার জমপুরি নাগিয়া॥
    জখনে গোদা জম মএনার নাম শুনিল।
    হাতে মাথে গোদা জম কাপিয়া উঠিল॥

  19. পাঠান্তর— 

    মএনা বোলে ওরে আবাল জম তুমি কার প্রানে চাও।
    ভয় না খাও তুমি প্রানে না খাও ডর।
    আমি মএনা থাকিতে ভয় কর কি কারন॥
    আমার সোআামিক ক্যানে আনলেন জমপুরি নাগিয়া।
    শিঘ্রগতি আমার সোআমিক দ্যাওতো আনিয়া॥
    জদি বলেন আমার সোআমিক তোরা না দিবেন আনিয়া
    জত মোনে জমক আমি ফ্যালাব মারিয়া॥
    শিঘ্রগতি সোআামিক আমার দ্যাওতো আনিয়া।
    আবাল বোলে শুন মএনা কার প্রানে চাও॥
    একটা হাটের জিউ জত মুই দ্যাওতো দেখাইয়া।
    কুণ্ঠি হর তোমার সোআমির জিউ নিজাও ধরিয়া॥
    এ গলি ও গলি মত্রনা বেড়ায় দেখিয়া।
    তবুও রাজার জান না পাইল খুজিয়া॥
    জখন মএনামতি রাজাক না দেখিল।
    দেখিতে দেখিতে মানা বান্দির নাগাল পাইল॥
    বান্দির গলা ধরি কান্দন জুড়িল॥
    দেখিতে দেখিতে মএনা পাটহস্তির নাগাল পাইল।
    পাটহস্তির গলা ধরি কান্দন জুড়িল।

    জখন মএনামতি রাজাক না দেখিল।

    গোদা জমক ধরি মএনা মারিবার নাগিল।
    মাইর ধৈর খাইয়া জম মাও দায় দিল॥
    গোদা বোলে শুন মা জননি লক্‌খি রাই।
    চল দেখি চলি জাই শিবের বরাবর।
    জদি কালে হুকুম করে ভোলা মহেশ্বর॥
    তবে জে ধরি জাও তোমার সোআমিক আপনার মহল॥
    ওঠে থাকি হৈল মএনার হরসিত মন।
    শিবের সাক্‌খাৎ জাইয়া দিল দরশন॥
    শিব বোলে শুন মএনা বাক্য আমার ন্যাও।
    তুমি জ্যামন আইস্‌ছ আমার জমপুরিক নাগিয়া।
    এই মত নরলোক আসিবে সাজিয়া॥
    আপনা আপনি জিউ নি জাইবে ফিরিয়া॥
    পেণ্ঠি জুখিয়া আইয়ত জাগা না আর পাবে।
    তালুকে তালুকে এ হাট বসিবে॥
    একটা কথা বলি মা তোর বরাবর।
    মানেন কি না মানেন বলি তোরে মএনা সুন্দর॥
    একটা আশিব্বাদ দেই মা তোর বরাবর।
    মানেন কি না মানেন বলি তোরে মএনা সুন্দর॥
    মএনা বোলে প্রভু কি আশিব্বাদ দিবেন আমার বরাবর।
    শিব বোলে শুন মএনা বাক্য আমার ন্যাও।
    এই আশিব্বাদ আমি দিবার চাই তোর বরাবর॥
    নও মাসিয়া ছেলে হইবে তোর হিদ্দের ভিতর।
    তাকে নৈয়া তুই রাজ্য করবু পাটের উপর॥
    মানিকচন্দ্র মরি গেল গোপিচন্দ্র হবে।
    নাম কলম লিখিয়া দিনু জমপুরির ভিতর।
    শিব বোলে শুন মএনা সেও ছেইলার কথা তুমি মোর ঠে ন্যাও শুনিয়া।

    আঠার বচ্ছর জনম উনিশে মরন।
    শিঘ্রগতি গুরু ভজে জ্যান ঐ হাড়ির চরন॥
    একিকালে তোর পুত্রের না হবে মরন।
    মত্রনা বোলে শুন শিব ঠাকুর বলি নিবেদন।
    এইত আবাল জমক মুই না দিমু ছাড়িয়া।
    জদি কালে ছাইলা হয় আমার বরাবর।
    তবু নি আসিবে তোমার জমপুরির ভিতর॥
    জদি কালে ছাইলা না হয় আমার বরাবর।
    সোআমির নগতে জমক পাঠামো জমের ঘর॥
    হস্ত গলায় গোদা জমক ফ্যালাইল বান্দিয়া।
    আপনার মহলক নাগি চলিল হাটিয়া॥
    আপনার মহলে মএনা দরশন দিল।
    হেমাই পাত্র বলি মএনা ডাকিবার নাগিল॥

  20. গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত গাঠ—

    যেনমতে গোদা যম ময়নাকে দেখিল।
    আপনকার মহলক লাগিয়া এ দৌড় করিল॥
    আপনকার মহলে যায়া ঘরে নুকাইল।
    ঐটে হইতে ময়নামতি দিসা হারা হইল॥
    ধেয়ানে ময়নামতি ধেয়ান কৈরে চায়।
    ধেয়ানের মধ্যে ঘরত লাগাল পায়॥
    ও রূপ থুইল ময়না একতর করিয়া।
    মাইলানী রূপ হইল মুরত বদলাইয়া॥
    গোদার মহলে চলিল হাঁটিয়া॥
    গোদা গোদা বৈলে ময়না তুলিয়া ছাড়ে রাও।
    যেন মতে গোদা যন মরনাক দেখিল।
    টাটি ভাঙ্গিয়া গোদা যম এ দৌড় করিল॥
    মার মার বলিয়া নয়না নি যায় পিট্টিয়া।
    এক সত হালুয়া হাল বয় নিধুয়া পাথারে॥
    হরিন বলিয়া যমক নি বায় পিট্টিয়া।
    ঐঠে হইতে গোদা যম দিসাহারা হইল।
    ইচলা মাছ হইয়ে দরিয়ায় ঝাপ দিল॥
    ধেয়ানে ময়নামতি ধেয়ান কৈরে চায়।
    ধেয়ানের মধ্যে ইচলার লাগাল পায়॥
    তুড়ু তুড়ু করিয়া ময়না হুঙ্কার ছাড়িল।
    বেয়াল্লিস ভইস হইল মুরত বদলাইয়া।

    ঐ দরিয়া ভইস পড়িল ঝম্প দিয়া॥

    খার খাইতে খাইতে যমক নি যায় পিট্টিয়া।
    মধ্য দরিয়াত যমক ধরিল ঠাসিয়া॥
    ঐত গোদা বহু আটিয়া বজ্জর।
    ডাইন পিড়ের দণ্ড ভাঙ্গিয়া উঠিয়া দিল লড়॥
    ঐটে হইতে গোদা যন দিসা হারা হইল।
    ছেপলাঁ মৎস হইয়া জলত ভাসিবার লাগিল॥
    ও রূপ থুইল ময়না একতর করিয়া।
    পানকাউড়ি বানোয়ার হইল মুরত বদলাইয়া॥
    পাখার সাটতে নি যায় পিট্টিয়া।
    মধ্য দরিয়া গোদা যমক ধরিল ঠোকাইয়া॥
    ঐত গোদা যম আটিয়া বজ্জর।
    ঢেকেয়া ফেলাইয়া মএনাক দিল লহড়॥
    ঐটে হইতে গোদা যম কোন কাম করিল।
    গচি নচ্ছ হয়া কদাত মিসাইল॥
    ঐটে হইতে ময়নামতি ধেয়ান কৈরে চায়।
    ধেয়ানের মধ্যে কাদাত লাগাল পায়॥
    তুড়ু তুড়ু করিয়া ময়না হুঙ্কার ছাড়িল।
    রাজহাঁস হইয়া কাদ জারিতে জারিতে গোদা যমক নি যায় পিট্টিয়া।
    মধ্য দরিয়াত গোদা যমক ধরিল ঠাসিয়া॥
    ঢেকেয়া ফেলায়া ময়নামতিক পালাইল ছাড়িয়া।
    ও রূপ থুইল গোদা যম একতর করিয়া॥
    ঘুগড়ির রূপ হইল মুরত বদলাইয়া।
    পাতালক লাগিয়া গেল চলিয়া॥
    পাতালক যায়া মোচড়ার যম দাড়ি।
    এখন কি চিনিবে মোক ময়নামতি সালী॥

    ধেয়ানে ময়নামতি ধেয়ান কৈরে চায়।
    ধেয়ানের মধ্যে ময়না ঘুগড়ির লাগাল পায়॥
    ও রূপ থুইল ময়না একতর করিয়া।
    তেলঙ্গা রূপ হইল ময়না মুরুত বদলাইয়া।
    পাতাল ভুবনত নাগিয়া গেল চলিয়া॥
    ঐটে যায়া গোদা যমক ধরিল ঠাঁসিয়া।
    ক্ষেনেক ক্ষেনেক করিয়া যমক উঠাইল টানিয়া॥
    ও রূপ থুইল ময়না একতর করিয়া।
    আপনার রূপ হইল মুরুত বদলাইয়া॥
    উপর কৈরে ফেলেয়া ফাক কিলিবার লাগিল।
    কিলাইতে কিলাইতে হাত হাপসাইল॥
    চিতর করিয়া ফেলাইয়া যমক নেদাবার লাগিল॥
    ঐত গোদা যম আঁটিয়া বজ্জর।
    ঘড়ানী কৈতর হইয়ে সর্গে উড়ে গেল॥
    সিকিরা বাজ হইল ময়না মুরত বদলাইয়া।
    আকাস হইতে গোদা যমক ফেলাইল টালিয়া॥
    ঐটা হইতে গোদা যম দিসা হারা হইয়া।
    সলেয়ার রূপ হইল মুরত বদলাইয়া॥
    কঠিয়া তেলীর বাড়ীক নাগিয়া গেল চলিয়া।
    কঠিয়া তেলীর মাচাত থাকিল বসিয়া॥
    ধেয়ানে নয়নামতী ধেয়ান কৈরে চায়।
    ধেয়ানের মধ্যে সলেয়ার নাগাল পায়॥
    ও রূপ থুইল ময়না একতর করিয়া।
    বিলাই রূপ হইল নয়না মুরত বদলাইয়া॥
    এক বিলাইর বদলী বিয়াল্লিস বিলাই হইয়া।
    কঠিয়া তেলীর ঘর লইল ঘেড়িয়া॥

    এক দণ্ড দুই দণ্ড তিন দণ্ড হইল।
    সুবোধিয়া গোদা যমক কুবোধিয়া নাগাল পাইল॥
    মাচা হইতে গোদা যমক মৃত্তিকায় নামাইল।
    টরকিয়া যায়া ময়নামতী গরদানত ধরিল॥
    ঐত গোদা যম আঁটিয়া বজ্জর।
    আঙ্গলের সান্দি দিয়া উঠিয়া দিল লহড়॥
    ও রূপ থুইল যম একতর করিয়া।
    বৈষ্ণব রূপ হইল যম মুরত বদলাইয়া॥
    কাকড়ার মাটিয়া লইল চন্দন করিয়া।
    সাইলের ফল লইল মালা করিয়া॥
    এণ্ডার ঠাল লইল আসা করিয়া।
    সেবার বাড়ীক নাগিয়া গেল চলিয়া॥
    যত বৈষ্ণবের মধ্যত রইল বসিয়া॥
    ধেয়ানে ময়নামতী ধেয়ান কৈরে চায়।
    ধেয়ানের মধ্যে বৈষ্ণবের লাগান পায়॥
    ও রূপ থুইল ময়না একতর করিয়া।
    মৌমাছি হইল ময়না মুরত বদলাইয়া॥
    এক মাছির বদলী বিয়াল্লিস মাছি হয়।
    সেবার বাড়ীক নাগিয়া গেল চলিয়া॥
    যত বৈষ্ণবের মাথার উপর বেড়ার ঘুরিয়া॥
    বৈষ্ণব সঞ্চল বলে ভাই সোন সমাচার।
    কোন বৈষ্ণব অপরাধী আছেন সভার মাঝ।
    যেনমতে গোদা যম নাছি দেখিল।
    বৈষ্ণবের কেঁথার তলত্ সন্দাইল॥
    যেনমতে ময়নামতি সন্দান দেখিল।
    উড়াও দিয়া যমের ঘাড়ত পড়িল॥

    মাচির কামড় সইবার না পারিয়া।
    গোদা যম পালাইল ছাড়িয়া॥
    মাছি রূপ থুইল ময়না একতর করিয়া।
    আপনার রূপ হইল মুরত বদলাইয়া॥
    ঐত গোদা কাক ধরিল পিট্টিয়া।
    এক পাঁজা এলুয়া খেড় আনিল উকড়িয়া॥
    বান পুটি কুচনি পাকায় তেপথীত বসিয়া।
    ময়নার কমড়ে যমের কমড়ে বান্দনে বান্দিয়া॥
    হাতের হেমতালের লাঠি দিয়া নি যায় ডাঙ্গাইয়া॥
    ময়না বলে শুন যম বলি নিবেদন।
    আমার স্যামী ধন দেও আর ছাড়িয়া॥
    তোমার স্যামী ধন আমি না দিব ছাড়িয়া।
    ঐটে হইতে ময়নামতি রোদন কৈরতে নাগিল॥
    আমার পতি নাই ঘরে রে দীননাথ।
    আমি কার লক্ষে রবরে নবিন বসতে॥ ধুয়া॥

    তুড়ু তুড়ু করিয়া ময়না হুঙ্কার ছাড়িল।
    যত মনিগনক হুঙ্কারে নামাইল॥
    পুষ্পরথে গোরক বিদ্যাধর।
    ঢেকি বাহনে নামিল নারদ মুনিবর॥
    বাসারার পিটিত নামিল ভোলা মহেশ্বর।
    ধনুক বানে নামি গেল স্রীরাম লক্ষন॥
    পাঁচ ভাই পাণ্ডব নামিল ঠাঁই ঠাঁই।
    যত সত মুনি নামিল তার লেখা যোখা নাই॥
    মাথার চুল ময়না দুই আধ করিয়া।
    গোরকনাথের চরনত পড়িল ভজিয়া॥
    রক্ষা কর রক্ষা কর গোরক বিদ্যাধর।
    আমার স্যামি ধন আনিছে ধরিয়া॥
    আমার স্যামি ধনক না দেয় ছাড়িয়া।
    গোরকনাথ বলে সোন সোমাচার॥
    যত মুনিগন পরামর্স করিয়া।
    ময়নাক আসীর্ব্বাদ দেয়॥
    যা যা ময়না তোমাক দিলাম বর।
    সাত মাসি ছেলে হৌক উদরের ভিতর॥
    যেন মতে মুনিগন আসীর্ব্বাদ দিল।
    সোলার মত আছিল শরীর ক্রমে ভারি হইয়া গেল॥

  21. গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠে পাই—

    নও কড়া কড়ি নিল হস্তত করিয়া।

    গঙ্গার কুলে গেল চলিয়া॥

    নও কড়া কড়ি দিয়া মৃত্তিকা কিনি নিল।
    আপন মহলক লাগিয়া গমন করিল॥
    বুড়া ঘর ভাঙ্গিয়া বেগারি সাজাইল।
    সাইঙ্গে সাইঙ্গে খড়ী বাইতে লাগিল॥
    তৈল ঘৃত সরিসা তিল যাবার লাগিল।
    যত জ্ঞাতি সগ আনিল রাও দিয়া॥
    কাঁচা বাঁস কাটিয়া মছলি সাজাইল॥
    ধর্ম্মি রাজাক নিল মছলি সাজাইয়া।
    নয়নামতি চড়ে কওয়াইরক লাগাইয়া॥
    হরিগুন গান ময়না গাইবার লাগিল।
    সঙ্কীর্ত্তন করিবার লাগিল নদীর পাহার লাগি গমন করিল॥
    উত্তর দক্ষিনে চিতা আরোপিল।
    খুটি গাড়িয়া মাচান পাতিল॥
    খুটির বগলে বগলে বসাইয়া গেল ঘৃতের হাড়ি।
    তার নিচে বসাইয়া গেল তৈলের হাড়ী।
    সরিসা তিল গুলা দিল ছিটাইয়া॥
    গুরু গুরু বলি ময়না হুঙ্কার ছাড়িল।
    সাক্ষাত গোরকনাথ আসিয়া খাড়া হইল॥
    রক্ষা কর রক্ষা কর গোরক বিদ্যাধর।
    যাও যাও ময়না তোমাক দিনু বর॥
    মাঘ মাসিয়া জার লাগিবে অনলের ভিতর॥
    কপাল ভর্তি সিন্দুর ময়না পরিতে লাগিল।
    পাটের সাড়ী ময়না পরিধান করিয়া।
    সুবর্ন কাটারি আমের ঠাল নিল হস্তেতে করিয়া।
    উত্তর দক্ষিনে রাজাক নিল সোতাইয়া॥
    ময়নার ডাইন হস্তেতে রাজা সিতান দিল।

    রাজার বাম হস্ত ময়না সিতান দিল॥
    একখান করিয়া খড়ী দিল নগরি ঘরে ঘরে।
    আকাস জমিনে খড়ী ঠেক লাগিল॥
    চোয়া চন্দন ছিটাইল চন্দ্র সদাগর।
    অনল লাগাইয়া দিতে নাই এক রতি॥
    দুয়ারের আগত ছিল গুরু পারনের ঘর।
    তাঁয় উকা তুলে দিল হস্তর উপর॥
    যত জ্ঞাস্তা সকল এক হাড়ী জল দিয়া।
    সাইঙ্গত করিয়া এক পাক দুই পাক পাঁচ পাক দিল।
    হরিবোল বলিয়া আনল লাগাইয়া দিল॥
    যত ঘড়ী ব্রহ্মা ঘৃতের বাস পাইল।
    ধাঁ ধাঁ করিয়া অনল জ্বলিবার লাগিল॥
    সাত দিন নও রাইত ময়না অনলের ভিতর।
    পুড়িতে পোড়া না যায় পরিধানের কাপড়॥
    ধর্ম্মি রাজাক পোড়াইয়া ময়না কোলাতে কৈল ছাই।
    ঐত ময়না বৈসে আছে যেন ঘরের গোসাই॥
    ধর্ম্মি রাজাক পোড়াইয়া সর্গে উঠিল ধুয়া৷
    বৈসে আছে ময়নামতি যেন কাঁচা সোনা॥
    ছোট জ্ঞাস্তা উঠে বলে বড় জ্ঞাস্তা ভাই।
    ফিক দেও ফিক দেও জ্ঞান্তা সকল॥
    ময়নামতী বৈসে আছে অনলের ভিতর।
    ময়না বলে সুন জ্ঞাস্তা সাত মাসী ছেলে আছে উদরের ভিতর॥
    ফিক না দেন জ্ঞাস্তা সকল॥
    ছোট জ্ঞাস্তা উঠে বলে বড় জ্ঞাস্তা ভাই।
    চান্দের বরাবর চল চলিয়া যাই॥

    ছোট হইতে জান তোরা চান্দ সদাগর।
    কি জোয়াব দেয় আমার বরাবর॥
    আগ দুয়ারে সদাগর পসার খেলায়।
    খেরকির দুয়ার দিয়া প্রনাম যোগায়॥
    কেনে কেনে জ্ঞাস্তা সকল আইলা কি কারন॥
    সাত দিন নও রাইত ময়না অনলের ভিতর।
    তবু পোড়া নাই যায় ময়না সুন্দর॥
    ঐ ময়না পাইয়াছে গোরকনাথের বর।
    আনলত পোড়া না যায় জ্বলত না হয় তল॥
    তিন ভূবন টলিয়া গেল না যায় যমের ঘর।
    তাক মারিবার চাও জ্ঞাস্তা সকল॥
    বাওয়ান্ন কুটি কোচড়া পাকাও তেপথিত বসিয়া।
    বাইস মোন পলান নেও সাইঙ্গ করিয়া॥
    হুলিয়া গুতিয়া নেও বাহের করিয়া।
    বাইস মোন পাসান দেও বুকত বান্ধিয়া॥
    আঙ্গরার সমতে ময়নাক দেও বোল ভাসাইয়া।
    ছিনান করিয়া যাও মহলত লাগিয়া॥
    ঐ কথা সুনিয়া জ্ঞাস্তা না থাকিল রৈয়া।
    বাইস মোন পাসান লৈল সাইঙ্গ করিয়া॥
    ময়নামতিক বাহির করিল হুলিয়া গুতিয়া।
    বাইস মোন পাসান দিল বুকত বান্ধিয়া॥
    আঙ্গরার সামিল ময়নাক দিল ভাসাইয়া।
    ছিনান করিয়া জ্ঞাস্তা গেল চলিয়া॥

    রাজার সৎকার সংসৃষ্ট নিম্নরূপ বর্ণনাও এক পাঠে পাওয়া যায়—

    গঙ্গামাতা বলিয়া মএনা তুলিয়া ছাড়ে রাও।
    ঘরে ছিল গঙ্গামাতা বাহিরে দিল পাও॥
    কি কর গঙ্গা বহিন নিচন্তে বসিয়া।
    মধ্য দরিয়াএ দ্যাও আমাক বালু চর করিয়া॥
    জখন গঙ্গামাতা একথা শুনিল।
    মধ্য দরিয়াত গঙ্গা বালু চর করি দিল॥
    একইস কড়া কড়ি দি ভুঁই কিনি নিল।
    চাইর দিকে চাইরটা গোজ গারিয়া ফেলিল॥
    তত মোনে খুটা খরি গাথিয়া তুলিল।
    হরি বোল বলিয়া রাজাক চিতাএ তুলি দিল॥
    গিয়াস্তার তরে মএনা বলিতে নাগিল।
    কেউ জ্যান ফিক্ দ্যায় না আমার শরিলের ভিতর।
    নও মাসিয়া ছেইলা আছে আমার হিদ্দের ভিতর॥
    কেউ ফিক্ না দিবেন আমার শরিলটার উপর॥
    সোআমির চরনে মএনা প্রনাম করিয়া।
    রাজার ডাইন দিকে মএনা রহিল শুইয়া॥
    রাজার হস্ত দিয়া মএনা শিওর দিল।
    মত্রনার হস্ত ফির রাজার সিতানে দিল।
    উপরত খুটা খরি গাথিয়া তুলিল।
    হাড়ি হাড়ি তৈল ঘিউ ছিটিবার নাগিল॥
    কি কর বামন সকল কার প্রানে চাও।
    চিতা উছগ্‌গ তোমরা এই সময় করি দ্যাও॥
    চিতা উছগ্‌গ করিয়া বামনের হরসিত মন।
    কি কর গিয়াস্তা সকল নিচন্তে বসিয়া।
    চতুদ্দিকে আগুন দ্যাওতো নাগাএয়া॥

    ধিক্ ধিক্ করিয়া আগুন উঠিল জলিয়া॥
    সাত দিন নও রাইত মএনা আগুনের ভিতর।
    পোড়া না জায় মাথার ক্যাশ পরিধানের কাপড়॥
    মহারাজাক পুড়িয়া মএনা কোলাএ করিল ছাই।
    মএনামতি বসিয়া আছে যেন ঘরের গোসাই॥
    ছোট গিয়ান্তা উঠি বলে বড় গিরাস্তা ভাই।
    সাত দিন নও রাইত ভরি অন্ন নাহি খাই॥
    খিদায় তিষ্টার বড় দুক্‌খ পাই॥
    ফিক্ দিয়া মএনামতিক বের কর টানিয়া।
    বড় একটা কলস দেই ওর গলাত বান্দিয়া॥
    দরিয়াত মএনামতিক দেই ভাসাইয়া।
    ফিক্ দিয়া ফেলিয়া দেই দরিয়াত নাগিয়া॥
    আঙ্গরা ভাসাইয়া জাব মহলক নাগিয়া॥
    ফেক্ দিয়া ফ্যালায়া দিলে দরিয়ার মাঝারে।
    দরিয়াতে পড়ি মএনা হাসে মনে মনে॥
    মএনা বলে শুন গঙ্গা কার প্রানে চাও।
    শূন্য করি ধবল বান দ্যাওতো তুলিয়া।
    জত মোনে আঙ্গারাগিলা জাউক ভাসিয়া॥
    কুঘাটে ডুবিল মএনা সুঘাটে উঠিল।
    আনন্দে ধর্ম্মের নামে প্রনাম করিল॥
    চাউলের পিণ্ড না পাইয়া মএনা বালুর পিণ্ড দিল।
    আপনার সোআমির নামে প্রনাম করিল॥
    হারিয়া কোনের দ্যাওআ জ্যান গর্জ্জিতে নাগিল।
    আইও বাবা বলিয়া মএনা কান্দিতে নাগিল॥

  22. গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠ—
    আঠার মাস আঠার দিন ময়নার গেল পুরিয়া।

    ঐত ধর্ম্মি রাজা করট ফিরিল।
    মৈল্লাম মৈল্লাম বলিয়া ময়না কান্দিবার লাগিল।
    খরুপা জ্ঞান ময়না মারিল তুলিয়া।
    বাওয়ান্ন কুটি কোচড়া ফেলাইল কাটিয়া॥
    মৈল্লাম মৈল্লাম বলিয়া ময়না নিম তরু তলে উঠিল।

    হাড়িয়া কোনে যেন দেওয়া গৰ্জ্জিল॥

    ফুলে জলে মহারাজ মৃত্তিকায় পড়িল।
    ওঁয়া চোয়া করিয়া তিনি রাও কাড়িল॥
    ছোট জ্ঞাস্তা উঠে বলে বড় জ্ঞাস্তা ভাই।
    কিসের ছেলে কান্দে চল দেখিবার যাই॥
    এক পায় দুই পায় আইল চলিয়া।
    ময়না বলে সুন জ্ঞাস্তা মোর বুদ্ধি ধর॥
    বড় রাজার পালকী আন সাজাইয়া।
    ছাওয়াল রাজাক নেও মহলক লাগিয়া॥
    বড় যে পালকী আনাইল সাজাইয়া।
    ধর্ম্মি রাজাক নইল পালকীত চড়াইয়া॥
    ঢাক ঢোল তম্বুরা কাঁসি বাজে ঠাঁই ঠাঁই।
    করতাল ভেঁউড় মুচ্ছর্ল বাজে ঠাঁই ঠাঁই॥
    বন্দুকের ধুরা ধুরি ধুমায় অন্ধকার।
    বাপে পুতক না চিনে ডাকা ডাকি সার॥
    কাঙ্গালের ছেলে হইল রাজ্যের ভিতর।
    অন্ন জল দিবার না পারে মহলের ভিতর॥
    ফুলে জ্বলে ফেলিয়া আইল তেপথির উপর।
    উও ছেলেক নৈল ময়না কোলাত করিয়া।
    মহলক লাগিয়া গেল চলিয়া॥
    তোক বলো বান্দী বাক্য মোর ধর।
    দাইয়ানির মহলক লাগিয়া গেল চলিয়া।
    দাইয়ানিক আনিল ডাক দিয়া॥

    দোন ছেলার নাড়ি ছেদ করিল বসিয়া।
    যত কিছু দান দিল দাইয়ানিক লাগিয়া।
    দাইয়ানি গেল মহলক লাগিয়া॥

  23. পাঠান্তর—

    আপনার মহলক নাগিয়া গমন করিল।
    দাইয়ানিক ডাকায়া নাড়ি ছ্যাদ করিল॥
    পন্দর দিন অন্তর নাপিতক আনাইল ডাক দিয়া।
    মস্তক খেঊরি করিল রাজ পাটে বসিয়া॥

  24. গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠে আমরা পাই—

    আজি আজি কালি কালি করিয়া সাত দিন হইল।

    সাত দিন পর্যন্ত রাজা সাদিনা কোরাইল॥

    আজি আজি কালি কালি করিয়া দস দিন হইল।
    দস দিন পরে রাজা এ দসা করিল॥
    ত্রিস দিনে রাজা ত্রিসা করিল, সংকীর্ত্তন করিবার লাগিল।
    জ্ঞাস্তা সকল আসিয়া যজ্ঞ করিল॥
    যত জ্ঞাতি সকলক ভোজন করাইল।
    তদ ঘড়ি ময়নামতি মৎস পরস করিল॥
    অতঃপর— 
    আজি আজি কালি কালি করিয়া এক বৎসর হইল।
    এক বৎসর বাদে এক দিন আসিল॥
    আজি কালি করিয়া পাঁচ বৎসর হইল।
    গুরুর নিকটে পড়িবার দিল॥
    চারি কলমে রাজাক লিখা সিখাইল।
    আজি কালী করিয়া সাত বৎসর হইল।
    নাম রাজার তখনই রাখিল।
    মানিকচন্দ্র রাজার বেটা গোপিচন্দ্র থুইল॥
    তাহার ছোট ভাইয়ের নাম খেতুয়া লঙ্কেশ্বর॥

  25. ডাঃ গ্রীয়ার্সন ধৃত পাঠ—

    আজি কালী করিয়া নও বৎসর হইল।
    তখনি ময়নানতি কোন কাম করিল॥
    গুরু ব্রাহ্মনের সাইক্ষাত কথা বলিবার লাগিল॥
    যা যা গুরু ব্রাহ্মন বাক্য আমার লও।
    হরিচন্দ্র রাজার কাছে সীঘ্র করিয়া যাও॥
    তার ঘরে আছে অদুনা পদুনা কন্যা দুইজন।
    তার আছে কন্যা দুই জন মহলের ভিতর।

    ঐ কন্যা যুড়িয়া আইস বলিলাম তোমায়॥

    ঐ কথা শুনিয়া ব্রাহ্মন ঠাকুর না থাকিল রৈয়া।
    হরিচন্দ্র রাজার বাড়ী গেল চলিয়া॥
    হরিচন্দ্র রাজা বলিয়া তুলিয়া ছাড়ে রাও।
    ঘরে ছিল হরিচন্দ্র রাজা বাহিরে দিলে পাও॥
    পণ্ডিত ঠাকুর বলিয়া করে প্রনাম॥
    দিব্য সিংহাসন বসিবার দিল।
    কর্পূর তাম্বুল দিয়া জিজ্ঞাসা করিল॥
    কেনে কেনে গুরু ব্রাহ্মন এত দুর গমন॥
    ময়না পাঠাইয়া দিল তোমার বরাবর।
    তোমার ঘরে কন্যা আছে অদুনা পদুনা।
    তাক যুড়িবার চায় ময়না সুন্দর॥
    ময়নার পুত্র আছে মহলের ভিতর।
    তাকে বিয়া দিবার চায় ময়না সুন্দর॥
    বা যা বলিয়া তা হুকুম দিল।
    এ কথা সুনিয়া ব্রাহ্মন ময়নার মহলে গেল॥
    ভারে লইল গুয়া সাইঙ্গে লইল পান।
    গুয়া পান কাটিবার গেল ব্রাহ্মন পঞ্চ জন।
    গুয়া পান কাটিয়া সুভাসুভ বুঝিল।
    বিবাহের দিন তখনই করিল॥
    সনিবার দিনা ময়না অধিবাস দিল।
    রবিবার দিনা বিবাহ করিবার সাজিল॥
    পঞ্চ গাছি কলার গাছ হরিচন্দ্র রাজার মহলত গাড়িল।
    সোনালী চালুন বাতি তখনই ধরাইল॥

    পঞ্চ বৈরাতী তখনই আনিল ডাক দিয়া।
    উলু উলু সব্দ করিবার লাগিল॥
    অদুনাক দিয়া বিবাহ দিল পদুনাক দিল দানে।
    এক সত বান্দী দিলে ব্যাবহার কারনে॥
    এক সত তালুক দিল দানে ধরিয়া।
    এক সত হস্তি দিল দানে ধরিয়া॥
    এক সত ঘোড়া দিল দানে ধরিয়া।
    এক সত গাবি দিল দানে ধরিয়া॥
    বিবাহ দিয়া রাজাক বিদায় দিল।
    তখনই ময়নামতি যত রাজ্যের রাজাক নিমন্ত্রন করিল॥
    সেইত ধর্ম্মি রাজা গোপীচন্দ্র পাট দিল।
    আর একটী পাঠ— 
    আজি আজি কালি কালি বার বছর হৈল।
    বার বছর হৈল রাজার আপনার মহলে॥
    ছাইলাক বিবা দিতে মএনা করি গ্যাল মন।
    হেমাই পাত্র বলি তখন ডাকে ঘনে ঘন॥
    কি কর হেনাই পাত্র নিচন্তে বসিয়া।
    হরিশ্চন্দ্র রাজার বাড়ি নাগি জাওহে চলিয়া॥
    উয়ার ঘরে কন্যা আছে আইস দেখিয়া॥
    জখন হেমাই পাত্র একথা শুনিল।
    হরিশ্চন্দ্র রাজার বাড়ি নাগি গমন করিল॥

    হরিশ্চন্দ্রের বাড়ি জাইয়া দিল দরশন॥
    বসিবার দিলে হেমাইক দিব্ব সিংগাসন।
    কর্ফুর তাম্বুল দিয়া জিগ্‌গায় বচন॥
    হেমাই বোলে মহারাজা বলি নিবেদন।
    তোমার ঘরে বোলে আছে কন্যা দুই জন॥
    তে কারনে পাঠাইলে মোরে মএনা সুন্দর।
    কি রাজ্ঞা হইবে কও বিবরন॥
    রাজা বোলে হেমাই তুমি বড় বুধুমান।
    কিনি আন পান সুপারি কাট গুআ পান॥
    গুআ পান কাটিয়া হেমাইর হরসিত মন।
    মএনার সাক্‌খাতে গিয়া দিল দরশন॥
    পাক পাড়িতে পাক পাড়িতে গুআ আইলে কাটিয়া।
    আছিল ইশ্বরের নিয়ম দিলেক জাচিয়া॥
    বিআও হইয়া গেল রাজা দান পড়িবারে।
    ছোট বইনকে দিল ব্যাভার কারনে।
    রদুনাক নাম খুইলে দাসি দিলে সনে॥
    রাজপাটে বসার পর কোনও মতে অতিরিক্ত পাঠ— 
    শঙ্খ চক্র গদা পদ্দ চতুর্ভুজ ধারি।
    পরিধান পিতাম্বর মুকুন্দ মুরারি॥
    ধর্ম্মি রাজা পাটত বস্‌ল বল হরি হরি॥