শনির চক্র

এখন আমরা শনির চাকার কথা বলিব। তোমরা যদি আগেকার ছবিটিকে ভাল করিয়া দেখ, তাহা হইলে স্পষ্ট বুঝিতে পারিবে, শনির চাকা একটা নয়, পর পর তিনটি চাকা সাজানো আছে। গ্যালিলিয়ো যখন তাঁহার নিজের হাতে-গড়া দূরবীণ দিয়া শনিকে দেখিয়াছিলেন, তখন তিনি চাকাগুলিকে স্পষ্ট দেখিতে পান নাই। শনির একটা কিম্ভুতকিমাকার চেহারা দেখিয়াই আশ্চর্য্য হইয়া পড়িয়াছিলেন। চাকাগুলির খুঁটিনাটি সকল খবর আমরা আজকালকার জ্যোতিষীদের কাছেই জানিতে পারিয়াছি। বড় বড় দূরবীণ দিয়া বহুকাল শনিকে দেখিয়া এবং কত হিসাবপত্র করিয়া তাঁহারা শনির চাকার খবর বাহির করিয়াছেন।

 তোমরা বোধ হয় ভাবিতেছ, এত হিসাবপত্রের দরকার কি? গাড়ীর চাকা যেমন কাঠ দিয়া গড়া হয়, শনির চাকা না হয় মাটি-পাথর দিয়া গড়া। তার জন্য আবার হিসাব-পত্র কেন? তোমরা যেমন ভাবনা চিন্তা কর, জ্যোতিষীরা সে-রকম চিন্তা করিয়া স্থির থাকিতে পারেন না। চাকাগুলি কি রকমে শূন্যে দাঁড়াইয়া আছে এবং শনির টানে তাহা ভাঙিয়া চুরিয়া কেন শনির উপরে গিয়া পড়ে না,—এই সব বিষয় তাঁহাদিগকে তর্ক-বিতর্ক করিয়া আলোচনা করিতে হইয়াছিল।

 যাহা হউক তোমাদের কাছে সেই সব কঠিন হিসাব-পত্রের কথা বলিব না। যখন বড় বড় অঙ্কের বই পড়িবে, তখন ঐসব হিসাবের কথা জানিতে পারিবে। জ্যোতিষীরা বলেন, শনির চাকাগুলি কখনই মাটি-পাথরের মত জমাট জিনিস দিয়া প্রস্তুত নয়। লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি ছোট-বড় জড়পিণ্ড দলে দলে উপগ্রহের মত শনির চারিদিকে পাক্ খাইতেছে; আমরা দূর হইতে সেই জড়পিণ্ডগুলিকেই নিরেট চাকার মত দেখি।

 বোধ হয় কথাটা ভাল করিয়া বুঝিলে না। মনে কর, তোমাদের গ্রামে যে মন্দিরটি আছে, তাহাকে ঘিরিয়া যেন দলে দলে কাক চিল প্রভৃতি পাখী উড়িয়া বেড়াইতেছে। এক দলের পর আর এক দল সার্কাসের ঘোড়ার মত এক গোলাকার পথে ঘুরিতেছে, তাহাদের পরস্পরের মধ্যে যেন একটুও ফাঁক নাই। দূর হইতে এই পাখীর দলকে তোমরা কি রকম দেখিবে ভাবিয়া দেখ। কাক-চিলদিগকে তোমরা কখনই পৃথক্ পৃথক্ দেখিতে পাইবে না,—মনে হইবে যেন একটা কালো নিরেট্ চাকা মন্দিরকে ঘিরিয়া শূন্যে দাঁড়াইয়া আছে।

 আমরা শনির চাকাকে ঠিক্ ঐরকমেই নিরেট বলিয়া মনে করি। কোটিকোটি জড়পিণ্ড কাক-চিলদের মত ঘুরিতেছে, কাজেই আমরা দূর হইতে সেগুলিকে নিরেট চাকার মত দেখিতেছি।

 শনির চাকা মোটামুটি তিনটা, সুতরাং বলা যাইতে পারে ঐ জড়পিণ্ডগুলি তিনটা পৃথক্ পথে গাদাগাদি করিয়া চলিয়া তিনটি চাকার সৃষ্টি করিয়াছে। জ্যোতিষীরা ঠিক এই কথাই বলেন।

 তোমরা হয় ত জানিতে চাহিতেছ, যে-সকল পিণ্ড শনির চারিদিকে ঘুরিতেছে, তাহারা কত বড়। জ্যোতিষীদের কাছে এই প্রশ্নের ঠিক্ জবাব পাওয়া যায় না; কারণ এখনকার খুব বড় দূরবীণেও চাকার পিণ্ডগুলিকে পৃথক পৃথক দেখা যায় নাই। তবে সেগুলি যে, খুব ছোট জিনিস তাহাতে আর সন্দেহ নাই। তোমাদের ফুট্‌বলগুলির মত বড় হইতে পারে এবং ক্রিকেট্ খেলার বলের মত ছোট হইতেও পারে। কিন্তু সকলেই যে, ছোট ছোট চাঁদের মত অবিরাম শনির চারিদিকে ঘুরিতেছে ইহা নিশ্চিত, এবং ঘুরিতেছে বলিয়াই যে, শনি তাহাদিগকে টানিয়া নিজের দেহের উপরে ফেলিতে পারে না, তাহাও জানা কথা।