গ্রহ-নক্ষত্র (১৯১৫)/আমাদের জ্যোতিষ
আমাদের জ্যোতিষ
নক্ষত্র চেনা সম্বন্ধে যাহা লিখিলাম, তাহা পড়িয়া তোমরা হয় ত মনে করিতেছ, নক্ষত্রদের চিনিবার এতই কি দরকার! পৃথিবীর খবর না লইলে আমাদের চলে না, তাই ভূগোল পড়া দরকার; কারণ দেশ বিদেশে চলা-ফেরা করিতে হয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য চিঠি-পত্র লিখিতে হয়, কিন্তু আমরা ত আকাশের গ্রহনক্ষত্রে বেড়াইতে যাই না, তবে কেন আকাশকে এত ভাগ করিয়া তাহাদের চিনিয়া রাখা হয়?
এই রকম প্রশ্ন তোমাদের মনে হওয়া আশ্চর্য্য নয়। কিন্তু আকাশের গ্রহনক্ষত্র চন্দ্রসূর্য্যের গতিবিধি লইয়া সংসারের যে-সব কাজ-কর্ম্ম চলে, তাহার কথা শুনিলে তোমরা বুঝিবে নক্ষত্র-মণ্ডলকে না চিনিলে একবারেই চলে না।
আজকাল আমরা সমস্ত দিনটাকে কত রকমে ভাগ করি মনে করিয়া দেখ। আমাদের সেকেণ্ড আছে, মিনিট আছে, ঘণ্টা আছে। তার পরে আবার প্রহর, দণ্ড, পল, বিপল, কত কি আছে। অল্প দামের ঘড়ি এখন যেখানে সেখানে পাওয়া যায়, কাজেই সময়ের হিসাব করিতে আমাদের কষ্ট হয় না। কিন্তু অতি প্রাচীনকালে আমাদের পূর্ব্বপুরুষদিগের এ সুবিধা ছিল না। কাজেই চন্দ্রসূর্য্যের চলাফেরা দেখিয়াই তাঁহাদের সময় ঠিক্ করিতে হইত। আবার চন্দ্র সূর্য্যের গতি ঠিক্ করিবার জন্য নক্ষত্র চেনার দরকার হইত। এই সকল কারণেই বিশেষ প্রয়োজনে পড়িয়া তাঁহারা নক্ষত্রদের ভাগ করিয়াছিলেন।
এক ঘণ্টা সময় কি রকমে নির্ণয় করা হইয়াছে, তোমরা বোধ হয় জান। পৃথিবী যে সময়ে নিজের মেরুদণ্ডের চারিদিকে একবার ঘুরপাক খায়, তাহাকে সমান চব্বিশ ভাগে ভাগ করা হয় এবং প্রত্যেক ভাগের সময়টুকুকে এক এক ঘণ্টা বলা হয়। কিন্তু আমাদের পূর্ব্বপুরুষেরা এরকমে সময় ভাগ করিতেন না; তাঁহারা চাঁদের গতিবিধি দেখিয়াই সময় ভাগ করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন। ইঁহারা হিসাব করিয়াছিলেন, এক পূর্ণিমার পর আর এক পূর্ণিমা আসিতে সাড়ে ঊনত্রিশ দিন সময় লাগে। এই সময়কেই তাঁহারা মাস নাম দিয়াছিলেন। তার পরে দিনে দিনে পশ্চিম হইতে পূর্ব্বে আসিতে চাঁদ কোন্ কোন্ নক্ষত্রের ভিতর দিয়া যায়, তাহারো হিাসাব করা তাঁহাদের দরকার হইয়াছিল। তাঁহারা চাঁদের পথের উপরকার নক্ষত্রগুলিকে চিনিয়া রাখিতে লাগিলেন এবং যে সব নক্ষত্রদের মাঝে চাঁদের একবার পূর্ণিমা হইল, একমাস পরে আবার সেখানেই পূর্ণিমা হয় কি না, তাঁহারা লক্ষ্য করিতে লাগিলেন। দেখা গেল তাহা হয় না। আজ আকাশের যে জায়গায় পূর্ণিমার চাঁদকে দেখা গেল, চাঁদ সাতাইশ দিনে ঠিক সেই জায়গায় আবার আসিয়া দাঁড়ায়, ইহাই ধরা পড়িয়া গেল। কাজেই স্থির করিতে হইল, সাড়ে ঊনত্রিশ দিন অন্তর পূর্ণিমা হইলেও সাতাইশ দিনেই চাঁদ সমস্ত আকাশকে চক্র দিয়া আসে।
এই রকমে গতি ঠিক্ করা হইলে চাঁদ কোন্ নক্ষত্র হইতে কোন্ নক্ষত্রের কাছে এক দিনে আগাইতে থাকে, তাহা ঠিক্ করা দরকার হইল। কাজেই আমাদের দেশের প্রাচীন জ্যোতিষীরা চাঁদের পথের উপরকার সব তারাকে সাতাইশটা ভাগে ভাগ করিয়া ফেলিলেন এবং প্রত্যেক ভাগের তারাগুলি একত্র হইয়া কি রকম আকৃতি পাইয়াছে, তাহাও ঠিক্ করিলেন। অশ্বিনী, ভরণী, কৃত্তিকা, রোহিণী, মৃগশিরা, আর্দ্রা, পুনর্ব্বসু, পুষ্যা, অশ্লেষা, মঘা, পূর্ব্বফল্গুনী, উত্তরফল্গুনী, হস্তা, চিত্রা, স্বাতি, বিশাখা, অনুরাধা, জ্যেষ্ঠা, মূলা, পূর্ব্বাষাঢ়া, উত্তরাষাঢ়া, শ্রবণা, ধনিষ্ঠা, শতভিষা, পূর্ব্ব-ভাদ্রপদা, উত্তরভাদ্রপদা এবং রেবতী—এই সাতাইশটি নাম তোমরা বোধ হয় বাংলা পাঁজিতে দেখিয়াছ। এগুলিই চাঁদের সাতাইশ দিনের পথের সাতাইশটি নক্ষত্র-মণ্ডলের নাম। সাধারণতঃ ইহাদিগকে “নক্ষত্র” বলা হয়।
আমাদের প্রাচীন জ্যোতিষীরা এই রকম নাম দিয়াই ছাড়েন নাই, প্রত্যেক নক্ষত্রের তারাগুলি একত্র হইয়া কিরকম আকৃতি পাইয়াছে তাঁহারা আঁকিয়া লোকদের বুঝাইয়াছেন এবং এক একটা নক্ষত্রের অধিকারে চাঁদ প্রতিদিন কতক্ষণ করিয়া থাকে, তাহাও পাঁজিতে লিখিয়া রাখিবার ব্যবস্থা করিয়াছেন।
মনে কর, ১৩২১ সালের পাঁজিতে ৭ই পৌষ তারিখের বিবরণটা আমরা দেখিতেছি। পাঁজিতে লেখা আছে, সে দিন রাত্রি চারিটা চৌত্রিশ মিনিট পর্য্যন্ত শতভিষা নক্ষত্র। ইহা দেখিলেই বুঝিতে হইবে, ৭ই পৌষে চাঁদ আকাশের শতভিষা নক্ষত্রমণ্ডলে চারিটা চৌত্রিশ মিনিট পর্য্যন্ত ছিল এবং তাহার পরেই সে পূর্ব্বভাদ্রপদা নক্ষত্রে পা দিয়াছিল।
তাহা হইলে দেখ,—অশ্বিনী, ভরণী প্রভৃতি নামগুলা পাঁজিতে বৃথা লেখা হয় নাই। নামের অর্থ যাহাই হউক, নামগুলি চাঁদের পথের তারাদের আকৃতি চিনাইয়া দেয়। যদি জ্যোতিষ-জানা কাহাকে কাছে পাও, তবে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি তোমাদিগকে চাঁদের পথটি আকাশের গায়ে ঠিক্ দেখাইয়া দিতে পারিবেন; তখন অশ্বিনী, ভরণী প্রভৃতি নক্ষত্রেরা কোথায় আছে তোমরা চিনিতে পারিবে।
সাধারণ লোকে এই সাতাইশটি নক্ষত্রকে কি বলে, বোধ হয় তোমরা জান না। লোকে বলে, দক্ষ রাজার সাতাইশটি কন্যা ছিলেন, এবং তাঁহাদেরি নাম ছিল অশ্বিনী, ভরণী, কৃত্তিকা, রোহিণী, ইত্যাদি। দক্ষ রাজা সাতাইশ রাজকন্যার জন্য সাতাইশটি জামাইয়ের সন্ধান করিতে না পারিয়া, এক চাঁদের সঙ্গেই সাতাইশ কন্যার বিবাহ দিয়াছিলেন। তাঁহারাই এখন সাতাইশ নক্ষত্রের আকারে আকাশে ছড়াইয়া রহিয়াছেন। চাঁদ সাতাইশ দিনে ইঁহাদেরি এক একবার দেখা দিয়া ঘুরিয়া বেড়ায়।
বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় প্রভৃতি যে বারোটা মাসের নাম আছে, সেগুলি আমাদের পূর্ব্বপুরুষেরা কোথা হইতে পাইয়াছিলেন, তাহা বোধ হয় তোমরা জান না। এই সব নামের সঙ্গেও জ্যোতিষের কথা জড়ানো আছে। প্রতিমাসেই একবার অমাবস্যা এবং একবার পূর্ণিমা হয়, ইহা তোমরা জান। প্রত্যেক পূর্ণিমায় চাঁদ আকাশের কোন্ নক্ষত্র-মণ্ডলে থাকে, আমাদের পূর্ব্বপুরুষেরা ভাল করিয়া দেখিতেন এবং সেই নক্ষত্রের নামে মাসের নাম দিতেন। বৎসরের যে মাসটিকে আমরা বৈশাখ বলি, সেই সময়ে চাঁদ বিশাখা নক্ষত্রে আসিয়া পূর্ণিমা দেখাইত; তাই ঐ মাসের নাম বৈশাখ হইয়াছিল। ইহার পরের পূর্ণিমা জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রে হইত, তাই বৈশাখের পরের মাসটির নাম জ্যৈষ্ঠ হইয়াছিল। এই রকমে আষাঢ়, ভাদ্র, আশ্বিন প্রভৃতি বাকি সব মাসেরই নামের সঙ্গে এক একটা নক্ষত্র-মণ্ডলের নাম জড়াইয়া ছিল। এখন অবশ্য বৈশাখের পূর্ণিমা বিশাখা নক্ষত্রে হয় না এবং জ্যৈষ্ঠের পূর্ণিমাও জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রে হয় না; তথাপি আমরা আজও পূর্ব্বপুরুষদিগের দেওয়া নামগুলিকে লইয়া বৎসরের বারোটা মাসকে বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ আষাঢ় ইত্যাদি বলি।
তাহা হইলে দেখ, আমাদের পূর্ব্বপুরুষেরা সময়-বিভাগ, নক্ষত্র-বিভাগ, ইত্যাদি যাহা কিছু করিতেন, তাহার মধ্যে একটুও মিথ্যা বা আজগবী ব্যাপার থাকিত না। খাঁটি সত্য ঘটনা লইয়াই তাঁহাদের কারবার ছিল এবং সত্যগুলিকে আবিষ্কার করিবার জন্য তাঁহাদিগকে বৎসরের পর বৎসর চন্দ্রসূর্য্যগ্রহতারার গতি দেখিতে হইত এবং অনেক হিসাবপত্র করিতে হইত। আজকালকার পাঁজিতে তোমরা তিথি নক্ষত্র সংক্রান্তি প্রভৃতি যে কথাগুলি দেখিতে পাও, সেগুলি অর্থশূন্য নয়। আমাদের প্রাচীন জ্যোতিষীরা যে-সব তত্ত্ব বহু পরিশ্রমে আবিষ্কার করিয়াছিলেন, তাহাই ঐ সব কথার মধ্যে লুকান আছে।
যাহা হউক এপর্য্যন্ত যাহা বলিলাম তাহা হইতে তিথিনক্ষত্রের মধ্যে নক্ষত্রের কথাটা বোধ হয় তোমরা বুঝিতে পারিয়াছ। এখন তিথির কথাটা তোমাদিগকে বলিব।
ইহা বুঝিতে হইলে আমাদের প্রাচীন জ্যোতিষীরা দিন মাস ও বৎসরের যেরকম গণনা করিতেন তাহা আগে জানা প্রয়োজন। ইংরাজি হিসাবে দিন মাস ও বৎসরের কি রকম গণনা চলে, তাহা বোধ হয় তোমরা জান। এই গণনা পৃথিবীর গতি দেখিয়াই করা হয়। পৃথিবী চব্বিশ ঘণ্টায় নিজের মেরুদণ্ডের চারিদিকে একবার ঘুরপাক্ খায়, এজন্য আমাদের চলিত দিনের পরিমাণ চব্বিশ ঘণ্টা। এই রকম তিন শত পঁইষট্টি দিন ছয় ঘণ্টায় পৃথিবী সূর্য্যকে একবার ঘুরিয়া আসে, এজন্য চলিত বৎসরের পরিমাণ তিন শত পঁইষট্টি দিন। বাকি যে ছয় ঘণ্টা থাকে তাহা বংসরের মধ্যে ধরা হয় না। এই ছয় ঘণ্টা চারি বৎসরে জমা হইয়া যখন চব্বিশ ঘণ্টা অর্থাৎ এক দিন হইয়া দাঁড়ায়, তখন তাহা সেই বৎসরের ফেব্রুয়ারি মাসে যোগ করা হয়। ইহাতে চারি বৎসর অন্তরে আটাশ দিনের ফেব্রুয়ারি মাস ঊনত্রিশ দিনে শেষ হইতে থাকে। কাজেই হিসাব ঠিক্ থাকিয়া যায়।
কিন্তু আমাদের জ্যোতিষীরা পৃথিবীর ঘোরাঘুরি দেখিয়া মাস বৎসর বা দিনের হিসাব করিতেন না। চাঁদকেই তাঁরা ভাল করিয়া চিনিতেন এবং চাঁদের গতি লইয়াই সময় ভাগ করিতেন।
এক পূর্ণিমা হইতে আার এক পূর্ণিমা আসিতে, সাড়ে ঊনত্রিশ দিন সময় লাগে, একথা আগেই তোমাদিগকে বলিয়াছি। ইহাই আমাদের “চান্দ্র মাসের” পরিমাণ। এই মাসকে যদি ত্রিশটি সমান ভাগে ভাগ করা যায়, তাহা হইলে যে এক একটু সময় পাওয়া যায়, তাহাই আমাদের তিথি বা “চান্দ্রদিন”। বারো “চান্দ্রমাসে” অর্থাৎ তিন শত ষাইট্ তিথিতে আমাদের এক চান্দ্র বৎসর।
ত্রিশ দিনকে যদি ত্রিশটা সমান ভাগে ভাগ করা যায়, তাহা হইলে এক একটা ভাগে চব্বিশ ঘণ্টা অর্থাৎ এক দিন করিয়া পড়ে, তাহা হইলে দেখ,—আমাদের চান্দ্রদিন অর্থাৎ তিথিগুলা একদিনের চেয়ে এক একটু ছোট। ষাইট্ দণ্ডে এক দিন হয়, কিন্তু তিথি হয় ঊনষাট্ দণ্ডে। এই জন্যই এক পূর্ণিমা হইতে আর এক পূর্ণিমা পর্য্যন্ত যে সাড়ে ঊনত্রিশ দিন সময় পাওয়া যায়, তাহার মধ্যে দুইটা প্রতিপদ, দুইটা দ্বিতীয়া, দুইটা তৃতীয়া প্রভৃতি ত্রিশটা তিথি খাপ খাইয়া যায়।
আমরা চব্বিশ ঘণ্টায় এক দিন গণনা করিয়া থাকি। কিন্তু যদি কেহ এই নিয়ম না মানিয়া তেইশ ঘণ্টায় দিন গুণিতে আরম্ভ করে, তাহা হইলে মাসের ও বৎসরের হিসাবে কি রকম গোলযোগ উপস্থিত হয় ভাবিয়া দেখ দেখি। যে সময়ে চব্বিশ ঘণ্টার এক দিন শেষ হইবে, সেই সময়ে তেইশ ঘণ্টার এক দিন শেষ হইয়া আরো এক ঘণ্টা বেশি হইবে না কি? আমাদের চান্দ্র বৎসর ও প্রচলিত বৎসরের মধ্যে ঠিক এই রকমেরই গোলযোগ আসিয়া পড়ে।
বারো চান্দ্র-মাসে তিন শত ষাইট্টি তিথি থাকে, কিন্তু তিথিগুলি এক দিনের চেয়ে কিছু ছোট। এজন্য দিনের হিসাব করিলে দেখা যায়, বারো চান্দ্র মাসে তিন শত চুয়ান্নটির বেশি দিন থাকে না। কাজেই বলিতে হয়, আমাদের তিথির বৎসর অর্থাৎ চান্দ্র-বৎসর তিন শত চুয়ান্ন দিনে শেষ হইয়া পড়ে। কিন্তু প্রচলিত বৎসর শেষ হইতে তিন শত পঁইষট্টি দিন ছয় ঘণ্টা সময় লয়। কাজেই চান্দ্র-বৎসর প্রত্যেক প্রচলিত বংসরে এগারো দিন ছয় ঘণ্টা করিয়া আগে চলে।
অমিল জিনিসটাই খারাপ। তার পরে যদি সেই অমিল বৎসরের পর বৎসর জমিয়া খুব বড় হইয়া দাঁড়ায়, তখন তাহা আরো খারাপ দেখায়।
মনে কর, তোমাদের বাড়ীতে রোজ যে দুই টাকার বাজার করা হয়, বাড়ীর কর্ত্তা তোমাকেই তাহার হিসাব রাখিতে বলিলেন। শাক, বেগুন, ঘি তেল সকলেরি হিসাব তুমি খাতায় লিখিয়া ঠিক্ দিলে, কিন্তু দুই পয়সার যে লবণ কেনা হইয়াছিল তাহা লিখিতে ভুলিয়া গেলে। তাহা হইলে দেখ,—দুই টাকার হিসাব লিখিতে গিয়া তোমার দুই পয়সার অমিল হইল। কর্ত্তা হিসাব দেখিলেন এবং বলিলেন, দুই টাকার মধ্যে দুই পয়সার ভুল বেশি কিছুই নয়। কিন্তু তুমি যদি এক বৎসরের তিন শত পঁইষট্টি দিন ধরিয়া এই রকমে দুই পয়সার অমিল করিতে থাক, বৎসরের শেষে কত অমিল হয় ভাবিয়া দেখ দেখি। সাত শত ত্রিশ পয়সা অর্থাৎ এগারো টাকা সাড়ে ছয় আনার হিসাব বাদ পড়িয়া যায়। এই অমিলকে কখনই কম বলা যায় না। সেই রকম প্রচলিত বৎসর ও চান্দ্রবৎসরের মধ্যে যে এগারো দিনের তফাৎ আছে, তাহা যদি কেবল এক বৎসরের জন্য হইত তাহা হইলে ক্ষতি ছিল না। কিন্তু তিন বৎসরে যখন ঐ এগারো দিন বাড়িতে বাড়িতে তেত্রিশ দিন এবং পাঁচ বৎসরে পঞ্চান্ন দিন হইয়া দাঁড়ায়, তখন তাহা নজরে পড়ে। এই সময়ে এই তফাৎ ঘুচাইবার জন্য চেষ্টা না করিলে চলে না।
তোমরা হয় ত ভাবিতেছ, প্রচলিত বৎসর ও চান্দ্রবৎসরের এই তফাৎ থাকিলে ক্ষতি কি! কিন্তু ক্ষতি যথেষ্ট আছে।
তোমরা বোধ হয় জান, আমাদের পূজাপার্ব্বণ ব্রতউপবাস শ্রাদ্ধশান্তি সকলি চান্দ্র-দিনের হিসাবে অর্থাৎ তিথি লইয়া স্থির করিতে হয়। কিন্তু প্রচলিত দিনের চেয়ে তিথির দিন ছোট। কাজেই ইংরাজদের বড়দিন ইত্যাদি উৎসব যেমন প্রতিবৎসরেরই এক একটা বাঁধা তারিখে হয়, আমাদের দুর্গাপূজা বা অপর পূজাপার্ব্বণ বৎসরের কোনো একটা বাঁধা তারিখে হইতে পারে না। প্রতি বৎসরেই পূজাপার্ব্বণের দিন আগেকার বৎসরের দিনের তুলনায় এগারো দিন করিয়া তফাৎ হইয়া পড়ে। কিন্তু এই তফাৎকে কখনই চারি পাঁচ বৎসর ধরিয়া জমিতে দেওয়া যায় না। জমিতে দিলে, আমাদের দুর্গাপূজা হয় ত পৌষ মাসে, দোলযাত্রা হয় ত আষাঢ় মাসে আসিয়া পড়ে। শরৎকালের শারদীয়পূজা এবং বসন্তের দোলযাত্রাকে কি শীতকালে ও বর্ষাকালে ফেলা কর্ত্তব্য? কখনই নয়। কাজেই প্রচলিত বৎসরের সহিত চান্দ্রবৎসরের তফাৎটাকে মাঝে মাঝে ঘুচাইয়া দেওয়া আবশ্যক।
তাই আমাদের দেশের নিয়ম এই যে, চান্দ্র বৎসর এগারো দিন করিয়া বাড়িতে বাড়িতে যখন তিন বৎসরে তেত্রিশ দিন বেশি হইয়া পড়ে, তখন একটা চান্দ্র-মাসকে হিসাব হইতে একবারে বাদ দিতে হয়। কাজেই তেত্রিশ দিনের তফাতের পর হঠাৎ চান্দ্র-মাস ও প্রচলিত মাসের মধ্যে প্রায় মিল হইয়া পড়ে।
এই রকমে বাদ-দেওয়া মাসকে কি বলে, তাহা বোধ হয় তোমরা জান না। ইহাকে মল-মাস বলে। এই মাসটিকে হিন্দুরা মাসের মধ্যেই ধরেন না। কোনো যাগ-যজ্ঞ পূজা-হোম বা শুভ কার্য্য এই মাসে করা হয় না।
কেবল হিন্দুরাই যে এই রকমে চন্দ্রের গতি দেখিয়া বৎসর ঠিক করেন, তাহা নয়। মুসলমানেরাও ঠিক এই হিসাবে বৎসর ও মাস ভাগ করেন এবং তাঁহাদেরও পূজাপার্ব্বণ সেই হিসাবে চলে। কিন্তু আমরা যেমন তিন বৎসর অন্তর এক একটা চান্দ্র-মাসকে বাদ দিই, মুসলমানেরা তাহা করেন না। এই জন্য ইঁহাদের পূজাপার্ব্বণ ঠিক্ একই ঋতুতে হয় না। ইদ্ ও মহরম মুসলমানদের বড় পার্ব্বণ। চান্দ্র-মাস হিসাবে দিন স্থির করা হয় বলিয়া এ গুলি বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ প্রভৃতি সকল মাসের মধ্যেই ঘুরিয়া বেড়ায়।
তাহা হইলে বোধ হয় বুঝিতে পারিলে, আমাদের পাঁজিতে প্রতিপদ দ্বিতীয় তৃতীয়া প্রভৃতি যে সকল তিথির কথা লেখা আছে, তাহা অর্থশূন্য নয় এবং মলমাস বলিয়া যে একটা কথা আছে, তাহাও একবারে নিরর্থক নয়। আকাশের নক্ষত্রদের মধ্যে চন্দ্রের গতি লইয়াই এ গুলির হিসাবপত্র করিতে হইয়াছিল।
আমাদের প্রাচীন জ্যোতিষীরা চাঁদের গতিবিধি সম্বন্ধে যাহা আবিষ্কার করিয়াছিলেন, তাহার একটু আভাস দিলাম। সূর্য্য-সম্বন্ধে তাঁহাদের কি জানা ছিল এখন তাহারি কথা তোমাদিগকে কিছু বলিব। সূর্য্য আকাশে স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া আছে এবং পৃথিবী প্রায় তিন শত পঁইষট্টি দিনে তাহাকে ঘুরিয়া আসিতেছে, একথা তোমরা বার বার শুনিয়াছ। সূর্য্যের উদয়-অস্ত কি রকমে হয় তাহাও তোমরা জান। পৃথিবী চব্বিশ ঘণ্টায় নিজের মেরুদণ্ডের চারিদিকে একবার ঘুরপাক্ খায়, তাই মনে হয় যেন সূর্য্য পূর্ব্বদিকে উঠিয়া পশ্চিমে অস্ত যায়।
কিন্তু সূর্য্য কি বারো মাসই আকাশের উপরকার ঠিক্ এক পথ দিয়াই পূর্ব্ব হইতে পশ্চিমে যায়? তাহা কখনই যায় না। গ্রীষ্মকালে সূর্য্য ঠিক্ মাথার উপর দিয়া চলে এবং শীতকালে সেই সূর্য্যই দক্ষিণ আকাশের দিকে হেলিয়া পশ্চিম দিকে যায়। ইহা কি তোমরা দেখ নাই? তোমাদের বাড়িতে যদি দক্ষিণ দিকে খোলা বারান্দা থাকে, তবে দেখিতে পাইবে শীতকালে বারান্দার ভিতরে রৌদ্র আসে। তখন ভোর বেলায় রৌদ্রে পিঠ দিয়া তোমরা বারান্দায় বসিয়াই হয় ত রোদ্ পোহাইতে পারিবে। কিন্তু চৈত্র বৈশাখ মাসে রোদ বারান্দায় পড়িবে না, তখন সূর্য্যকে ঠিক্ মাথার উপর দিয়া পশ্চিমে যাইতে দেখিবে।
তাহা হইলে বুঝা যাইতেছে, চাঁদ যেমন অমাবস্যার পর হইতে দিনে দিনে আকাশের নক্ষত্রদের ভিতর দিয়া চলে, সূর্য্যও সেই রকম আাকাশের নানা স্থানে জায়গা বদ্লাইতে বদ্লাইতে চলে। দিনের আলোতে নক্ষত্রদের দেখা যায় না;—দেখা গেলে স্পষ্ট বুঝিতে পারিতে সূর্য্য চাঁদের মতই নানা নক্ষত্রমণ্ডলের ভিতর দিয়া চলা-ফেরা করে।
তাহা হইলে বুঝা যাইতেছে, আকাশের নক্ষত্র-মণ্ডলদের উপর দিয়া চাঁদের যেমন একটা পথ আছে, সূর্য্যেরও সেই রকম পথ আছে। তফাতের মধ্যে এই যে, চাঁদ সাতাইশ নক্ষত্রদের উপর দিয়া সাতাইশ দিনে একবার চক্র দেয়, সূর্য্য ঐ রকম একটা চক্র দিতে এক বৎসর অর্থাৎ তিনশত পঁইষট্টি দিন সময় লয়।
তোমরা এই কথা শুনিয়া বোধ হয়, একটু গোলযোগে পড়িতেছ। চাঁদ সাতাইশ দিনে পৃথিবীকে ঘুরিয়া আসে, কাজেই সে ঐ সময়ে সাতাইশ নক্ষত্রদের উপর দিয়া চলে। একথা বেশ বুঝা যায়। কিন্তু সূর্য্য ত পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরপাক্ খায় না; তবে কেন তাহাকে আকাশের নক্ষত্রদের উপর দিয়া তিনশত পঁইষট্টি দিনে চক্র দিতে দেখা যাইবে?
এই প্রশ্ন তোমাদের মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক। যখন তোমাদের মত ছোট ছিলাম, তখন আমরাও ব্যাপারটি ভাল করিয়া বুঝিতাম না। একটা উদাহরণ দিলে বোধ হয় বুঝিবে।
পর পৃষ্ঠায় একটা ছবি দিলাম। দেখ, ছবির মাঝে একটা ছোট মন্দির রহিয়াছে এবং মন্দিরটিকে ঘিরিয়া একটা গোল রাস্তা আছে। ঘরবাড়ী গাছপালা সবই রাস্তার বাহিরে দূরে দূরে আছে।
এখন মনে কর, তুমি যেন ছবির বট গাছের কাছ হইতে গোলাকার রাস্তা ধরিয়া ডানদিকে চলিতে আরম্ভ করিলে এবং মাঝে মাঝে মন্দিরটার দিকে তাকাইতে লাগিলে। বট গাছের কাছে দাঁড়াইয়া তুমি যদি মন্দিরটিকে দেখ, তবে মন্দিরের পিছনে কি দেখিবে? রাস্তার ধারের ঐ তালগাছটিকে মন্দিরের পিছনে দেখা যাইবে না কি? মন্দির যদি রাস্তা হইতে একটু দূরে থাকে, তাহা হইলে উহাকে তালগাছটার একবারে গায়ে লাগানো দেখা যাইবে।
এখন মনে কর, তুমি রাস্তায় একটু চলিয়া ছবির সাঁকোর কাছে দাঁড়াইয়াছ। এখন তুমি মন্দিরের পিছনে কি দেখিবে? আর তালগাছটিকে দেখিবে না; বোধ হইবে যেন, ঐ ছোট কুঁড়ে ঘরটির গায়ে মন্দির লাগিয়া আছে। রাস্তার উঁচু ঢিবিটার কাছে গিয়া দাঁড়াইলে, কুঁড়ে ঘরটিকেও মন্দিরের পিছনে দেখা যাইবে না, তখন ঐ নিশানটির গায়ে মন্দির আসিয়া দাঁড়াইবে।
তাহা হইলে বুঝিতে পারিতেছ, তুমি যেমন বট গাছ এবং সাঁকো প্রভৃতি জায়গা পার হইয়া রাস্তায় চলিতে অরম্ভ করিবে, তেমনি প্রথমে তালগাছ, তার পরে কুঁড়ে ঘর, তার পরে নিশান, ধানের ক্ষেত ইত্যাদি বারোটা জিনিসের গায়ে মন্দিরকে একে একে দেখিতে পাইবে।
এই উদাহরণের কথাটা যদি বুঝিয়া থাক, তাহা হইলে নক্ষত্রদের ভিতর দিয়া সূর্য্যের গতির কথাও তোমরা বুঝিবে। তুমি যেমন গোল রাস্তায় চলিয়া মন্দির প্রদক্ষিণ করিলে, আমাদের পৃথিবীও তেমনি আকাশের উপরকার এক গোল রাস্তায় চলিয়া সূর্য্যকে প্রদক্ষিণ করিয়া আসে। পৃথিবীর রাস্তার বাহিরে অবশ্য গাছপালা ঘরবাড়ী কিছুই থাকে না; থাকে কেবল নক্ষত্রমণ্ডল। কাজেই তুমি যেমন মন্দিরটিকে একবার তালগাছের গায়ে, তার পরে কুঁড়ে ঘরের উপরে একে একে দেখিলে, পৃথিবী হইতে সূর্য্যকে ঠিক্ তেমনি করিয়া একবার এক নক্ষত্রমণ্ডলে, তার পর আর এক নূতন নক্ষত্রমণ্ডলে পরে পরে দেখা যায়।
তুমি কতক্ষণে ছবির গোল রাস্তা দিয়া মন্দিরকে ঘুরিয়া আসিতে পার জানি না। কিন্তু পৃথিবী এক বৎসরে তাহার গোল রাস্তা দিয়া সূর্য্যকে ঘুরিয়া আসে। কাজেই আমরা পৃথিবীতে থাকিয়া আকাশের নানা নক্ষত্র-মণ্ডলের উপর দিয়া সূর্য্যকে এক বৎসরে ঘুরিয়া আসিতে দেখি। নক্ষত্র-মণ্ডলের উপর দিয়া সূর্য্যের এই পথটাকে রাশিচক্র বলা হয়।
জ্যোতিষীরা রাশিচক্র অর্থাৎ সূর্য্যের রাস্তার উপরকার সব নক্ষত্রদের চিনিয়া রাখিয়াছেন এবং রাস্তাটিকে বারোটা ভাগ করিয়া প্রত্যেক ভাগের নক্ষত্রমণ্ডলের এক-একটা নামও দিয়াছেন। বৈশাখ মাসে সূর্য্য রাশিচক্রের যে অংশটুকু ধরিয়া চলে তাহার নাম মেষ রাশি, জ্যৈষ্ঠ মাসের অংশ বৃষ রাশি, আষাঢ় মাসের অংশ মিথুন রাশি ইত্যাদি।
তাহা হইলে বুঝিতে পারিতেছ, গাড়ীর চাকার মত ছবি আঁকিয়া তাহাতে মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ, কন্যা, তুলা, বিছা, ধনু, মকর, কুম্ভ, মীন নাম দিয়া যে বারোটা ছবি দেওয়া হয়, তাহার গভীর অর্থ আছে। ঐ চাকাটি সূর্য্যের ভ্রমণ-পথেরই ছবি। নামগুলি তাহারি উপরকার নক্ষত্রমণ্ডলের নাম এবং আকৃতিগুলি ঐ সকল নক্ষত্রমণ্ডলেরই আকৃতি। এই বারোটা নক্ষত্রমণ্ডলের প্রত্যেকটাকে এক একটা রাশি বলা হয়।
তোমরা মেষ দেথিয়াছ এবং বৃষও অনেক দেখিয়াছ। মেষ ও বৃষরাশিতে নক্ষত্র দিয়া আকাশে একটা বড় ভেড়া এবং একটা মোটা ষাঁড় আঁকা আছে, একথা তোমরা মনে করিয়ো না। বারোটা রাশির মধ্যে হয় ত দুই তিনটির আকৃতি ঠিক নামেরই মত দেখিতে পাইবে; বাকি গুলিতে নামের সহিত আকৃতির মিল খুঁজিয়া পাইবে না।
আমরা এখানে সিংহ, বৃশ্চিক ও মকর এই তিনটি রাশির ছবি দিলাম। মেষ প্রথম রাশি, এই হিসাবে সিংহ পঞ্চম রাশি, বৃশ্চিক অষ্টম রাশি এবং মকর দশমরাশি। এই জন্য পঞ্চম মাসে অর্থাৎ ভাদ্রে সূর্য্য সিংহ রাশিতে পৌঁছায়, অষ্টম মাসে অর্থাৎ অগ্রহায়ণে সূর্য্য বৃশ্চিক রাশিতে থাকে এবং বৎসরের দশম মাসে অর্থাৎ মাঘে সূর্য্য মকর রাশিতে আসিয়া দাঁড়ায়।
সিংহ রাশির যে ছবি দিলাম, তাহাহইতে হয়ত তোমরা ইহাকে চিনিয়া লইতে পারিবে। চৈত্র মাসের প্রথমে সন্ধ্যার সময়ে ইহাকে প্রায় মাথার উপরে দেখা যায়। সিংহের পায়ের গোড়ায় যে উজ্জ্বল নক্ষত্রটি রহিয়াছে এইটিকেই মঘা বলে। এই রাশির নক্ষত্রদের আকৃতির সহিত সিংহের আকৃতির কতকটা মিল দেখিতে পাইবে।
বৃশ্চিক রাশিটাও দেখিতে কতকটা বিছার মত। আষাঢ় মাসের
বৃশ্চিক রাশি
সন্ধ্যার সময়ে ইহাকে দক্ষিণ আকাশে সুস্পষ্ট দেখিতে পাইবে। ছায়াপথের উপরে ইহার খানিকটা থাকে, এজন্য বৃশ্চিকে চিনিয়া লওয়া শক্ত হয় না।
মকররাশির যে ছবিটা দিলাম তাহার সহিত মকরের একটুও মিল নাই। ইহাতে কতকগুলি ছোট ছোট তারাই আছে। আশ্বিন মাসের সন্ধ্যার সময়ে এই রাশিকে দক্ষিণ আকাশের খুব উপরে দেখা যায়।
তোমরা এই কয়েকটা রাশিকে যদি চিনিয়া লইতে পার, তাহা হইলে রাশিচক্রটা আকাশের উপর দিয়া কি রকমে চলিয়াছে বুঝিতে পারিবে।
যদি সূর্য্যের ভ্রমণ ও রাশিচক্রের কথা তোমরা বুঝিয়া থাকে, তাহা হইলে আমাদের পাঁজিতে যে সংক্রান্তির কথা লেখা দেখিতে পাও তাহার গোড়ারও খবর বুঝিতে পারিবে। মাসের শেষ তারিখকেই
মকর রাশি
সাধারণতঃ সংক্রান্তি বলে, ইহা বোধ হয় তোমরা জান। ঐদিনে সূর্য্য তাহার পথের এক রাশি হইতে আর এক রাশিতে “সংক্রমণ” অর্থাৎ গমন করে বলিয়াই উহাকে সংক্রান্তি বলে।
১৩২১ সালের কার্ত্তিক মাস ত্রিশ দিনে শেষ হইয়াছে। কার্ত্তিক মাসটা বৎসরের অষ্টম মাস, এজন্য রাশিচক্রের অষ্টম স্থান অর্থাৎ তুলারাশিতে সূর্য্য সমস্ত কার্ত্তিক মাস কাটাইয়াছিল। ৩০শে কার্ত্তিক সে তুলা ছাড়িয়া বৃশ্চিকে পা দিয়াছিল, এজন্য ঐ দিনটা একটি সংক্রান্তি হইয়া পড়িয়াছিল। এই রকমে বারো মাসে বারোটা রাশিতে পা দিবার সময়ে মোটামুটি বারোটা সংক্রান্তি হয়।
তাহা হইলে দেখ, আমাদের পাঁজিতে রাশিচক্র এবং মেষ বৃষ ইত্যাদি বারোটা ছবি দেখিতে যতই অদ্ভুত হউক, এগুলির গোড়ায় গভীর অর্থ আছে।