গ্রহ-নক্ষত্র (১৯১৫)/নক্ষত্রদের সংখ্যা
নক্ষত্রদের সংখ্যা
যে-সব নক্ষত্রকে আমরা এক-একটা সূর্য্যের চেয়ে বড় বলিলাম, তাহারা সংখ্যায় কত এবং কত দূরে আছে বোধ হয় এই খবরগুলিই তোমরা প্রথমে জানিতে চাহিতেছ।
সংখ্যার কথা আগেই বলিয়াছি,—গুণিয়া শেষ করা যায় না। কিন্তু তাই বলিয়া মনে করিয়ো না, আমরা খালি চোথে যে-সব নক্ষত্র দেখিতে পাই, তাহাদের গুণা যায় না। এই রকম নক্ষত্রের সংখ্যা ঠিক্ করা হইয়াছে। তোমরা হয় ত ভাবিতেছ, এমন অকর্ম্মা লোক কে আছে যে, সমস্ত জীবনটা নক্ষত্র গুণিয়াই কাটাইয়া দিবে! কিন্তু অনেক দিন আগে আমাদেরি মত একজন মানুষ নক্ষত্র গুণিয়াছিলেন, এবং সমস্ত আকাশে ছয় হাজারের বেশি তারা দেখিতে পান নাই। তাহা হইলে ভাবিয়া দেখ, আমরা এক সঙ্গে ছয় হাজারের অর্দ্ধেক অর্থাৎ তিন হাজারের বেশি নক্ষত্র খালি চোখে দেখিতে পাই না। কারণ আমরা এক সঙ্গে অর্দ্ধেক আকাশটাকেই দেখি, আর অর্দ্ধেক পৃথিবীর অন্যদিকে থাকে।
কিন্তু দূরবীণ দিয়া আকাশ দেখিতে আরম্ভ করিলে নক্ষত্রের সংখ্যা অনেক বাড়িয়া যায়। জ্যোতিষীরা এই রকমে পঞ্চাশ কোটি সূর্য্যের সন্ধান পাইয়াছেন। ভাবিয়া দেখ, এই সৃষ্টিখানি কত প্রকাণ্ড। কিন্তু এই সংখ্যার অধিক নক্ষত্র যে আকাশে নাই, একথা কখনই বলা যায় না। যেমন বড় বড় দূরবীণ প্রস্তুত হইতেছে, আমাদের জানা-শুনা নক্ষত্রের সংখ্যাও তেমনি বাড়িয়া চলিয়াছে। ছোট দূরবীণে আকাশের যে জায়গায় আগে একটিও নক্ষত্র দেখা যায় নাই, বড় দূরবীণে চোখ লাগাইয়া এখন জ্যোতিষীরা সেখানেই হাজার হাজার নক্ষত্র খুঁজিয়া পাইতেছেন। বড় দূরবীণে যেখানে কয়েকটি মাত্র নক্ষত্র দেখা গিয়াছিল, দূরবীণ দিয়া সেখানকার ফোটোগ্রাফের ছবি তুলিতে গিয়া, জ্যোতিষীরা ছবিতে হাজার হাজার নূতন নক্ষত্র ফুটিয়া উঠিতে দেখিতেছেন। কাজেই হয় ত কোনো দিন আর এক রকম যন্ত্র দিয়া দেখিয়া জ্যোতিষীরা বলিবেন, নক্ষত্রদের সংখ্যা পঞ্চাশ কোটি নয়,—এক শত কোটি। নক্ষত্রদের সত্যই সংখ্যা হয় না!