গ্রহ-নক্ষত্র (১৯১৫)/যমক নক্ষত্র
যমক নক্ষত্র
তোমরা গল্পে শুনিয়াছ, মহাপ্রলয়ের দিনে আকাশে দ্বাদশ সূর্য্যের উদয় হইবে এবং আমাদের পৃথিবীখানি নাকি সেই বারোটা সূর্য্যের তাপে ভস্ম হইয়া যাইবে। গল্পটি কতদূর সত্য জানি না। কিন্তু আমরা দূরবীণ দিয়া আজও দ্বাদশ সূর্য্যের খবর জানিতে পারি নাই। তোমরা হয় ত বলিবে, আকাশের কোনো কোনো জায়গায় ছোট বড় গাদা গাদা নক্ষত্রকে জড় হইয়া থাকিতে দেখা যায়, ইহার কি দ্বাদশ সূর্য্যের চেয়ে সংখ্যায় বেশি নয়? জ্যোতিষীরা কিন্তু একথা স্বীকার করেন না। তাঁহারা বলেন, ছায়াপথের উপরে বা অন্য কোনো জায়গায় নক্ষত্রদিগকে জড় হইয়া থাকিতে দেখা যায় বটে, কিন্তু বাস্তবিক তাহারা কাছাকাছি থাকে না।
একটা উদাহরণ দিলে জ্যোতিষীদের কথা তোমরা বুঝিতে পারিবে। মনে কর, তুমি একটা মাঠের মাঝে দাঁড়াইয়া আছ; আধ্ মাইল দূরে একটা তাল-গাছ আছে এবং তার ঠিক্ পিছনে এক মাইল দূরে একটি বাড়ি দেখা যাইতেছে। এখন তুমি যদি বাড়িখানি ও তাল গাছটির দিকে তাকাইতে থাক, তাহা হইলে উহাদিগকে কি রকম দেখিবে? তাল গাছটিকে বাড়ির গায়ে লাগানো দেখা যাইবে না কি? জ্যোতিষীর বলেন, গাছ ও বাড়ির মধ্যে এক মাইল তফাৎ থাকিলেও আমরা দূর হইতে যেমন তাহাদিগকে গায়ে গায়ে লাগানো দেখি,—নক্ষত্রদের মধ্যে কোটি কোটি মাইল তফাৎ থাকিলেও আমরা সাম্নে দাঁড়াইয়া উহাদিগকে ঠিক ঐ রকমেই কাছাকাছি দেখি।
তাহা হইলে বুঝা যাইতেছে, দূরবীণ দিয়া যদি আমরা কোনো জায়গায় হাজারটি নক্ষত্রকে দেখিতে পাই, তাহা হইলে উহারা যে কাছাকাছি আছে, একথা বলা যায় না।
কাছাকাছি হাজার সূর্য্যের সন্ধান আকাশে পাওয়া যায় না এবং দ্বাদশ সূর্য্যদেরও খুঁজিয়া বাহির করা যায় না। কিন্তু জ্যোতিষীরা অনেক জোড়া জোড়া সূর্য্যের সন্ধান পাইয়াছেন এবং কোনো কোনে স্থানে তিন চারিটি সূর্য্যকেও একত্র থাকিতে দেখিয়াছেন। যদি দূরবীণ দিয়া আকাশ দেখিবার সুবিধা হয়, তাহা হইলে একবার দূরবীণে এগুলিকে দেখিয়া লইয়ো। খালি চোখে ইহাদিগকে জোড়া বলিয়া বোধ হয় না, দূরবীণে যুগল-মূর্ত্তি বাহির হইয়া পড়ে। তখন একটি নক্ষত্রই যমক ভাইয়ের মত দুইটি কাছাকাছি নক্ষত্র হইয়া পড়ে। ইহারা সত্যই কাছাকাছি থাকে এবং একটি অপরটিকে ঘুরিয়া বেড়ায়। যে জগতে এই রকম জোড়া জোড়া সূর্য্য পরস্পরকে ঘুরিয়া বেড়ায় সেখানকার গ্রহ-উপগ্রহেরা কত আলো ও তাপ পায় একবার ভাবিয়া দেখ। প্রত্যেক দিনই আকাশে জোড়া সূর্য্যের উদয়-অস্ত হইতেছে, এ-রকম ব্যাপার বড়ই অদ্ভুত নয় কি? কিন্তু অদ্ভুত হইলেও জগদীশ্বরের এই প্রকাণ্ড সৃষ্টির মধ্যে হাজার হাজার যমক সূর্য্য আছে। জ্যোতিষীরা ইতিমধ্যে ইহাদের প্রায় বারো হাজারের সন্ধান পাইয়াছেন।