চয়নিকা (১৯৪১)/উৎসর্গ
(পৃ. ১৭৪-১৭৫)
উৎসর্গ
আজি মোর দ্রাক্ষাকুঞ্জবনে
গুচ্ছ গুচ্ছ ধরিয়াছে ফল।
পরিপূর্ণ বেদনার ভরে
মুহূর্তেই বুঝি ফেটে পড়ে,
বসন্তের দুরন্ত বাতাসে
হয়ে বুঝি নামিবে ভূতল,
রসভরে অসহ উচ্ছ্বাসে
থরে থরে ফলিয়াছে ফল॥
তুমি এসো নিকুঞ্জ নিবাসে,
এসো মোর সার্থক-সাধন।
লুটে লও ভরিয়া অঞ্চল
জীবনের সকল সম্বল,
নীরবে নিতান্ত অবনত
বসন্তের সর্ব সমর্পণ;
হাসিমুখে নিয়ে যাও যত
বনের বেদন-নিবেদন॥
শুক্তিরক্ত নখরে বিক্ষত
ছিন্ন করি’ ফেলো বৃন্তগুলি,
সুখাবেশে বসি’ লতামূলে
সারাবেলা অলস অঙ্গুলে
বৃথা কাজে যেন অন্যমনে
খেলাচ্ছলে লহ তুলি’ তুলি’,
তব ওষ্ঠে দশন-দংশনে
টুটে যাক পূর্ণ ফলগুলি॥
আজি মোর দ্রাক্ষাকুঞ্জবনে
গুঞ্জরিছে ভ্রমর চঞ্চল।
সারাদিন অশান্ত বাতাস
ফেলিতেছে মর্মর নিঃশ্বাস,
বনের বুকের আন্দোলনে
কাঁপিতেছে পল্লব-অঞ্চল।
আজি মোর দ্রাক্ষাকুঞ্জবনে
পুঞ্জ পুঞ্জ ধরিয়াছে ফল॥
— চৈতালি
১৩ চৈত্র, ১৩০২