চয়নিকা (১৯৪১)/চিত্রা

চিত্রা

জগতের মাঝে কত বিচিত্র তুমি হে
তুমি বিচিত্ররূপিণী।
অযুত আলোকে ঝলসিছ নীল গগনে
আকুল পুলকে উলসিছ ফুল-কাননে,
দ্যুলোকে ভূলোকে বিলসিছ চল-চরণে
তুমি চঞ্চল-গামিনী।
মুখর নূপুর বাজিছে সুদূর আকাশে,
অলক-গন্ধ উড়িছে মন্দ বাতাসে,
মধুর নৃত্যে নিখিল-চিত্তে বিকাশে,
কত মঞ্জুল রাগিণী।
কত না বর্ণে কত না স্বর্ণে গঠিত,
কত-যে ছন্দে কত সংগীতে রটিত,

কত না গ্রন্থে কত না কণ্ঠে পঠিত,
তব অসংখ্য কাহিনী।
জগতের মাঝে কত বিচিত্র তুমি হে
তুমি বিচিত্ররূপিণী।
অন্তর মাঝে শুধু তুমি একা একাকী
তুমি অন্তর-ব্যাপিনী।
একটি স্বপ্ন মুগ্ধ সজল নয়নে,
একটি পদ্ম-হৃদয়-বৃন্ত-শয়নে,
একটি চন্দ্র অসীম চিত্ত-গগনে,
চারিদিকে চির-যামিনী।
অকূল শাস্তি, সেথায় বিপুল বিরতি,
একটি ভক্ত করিছে নিত্য আরতি,
নাহি কাল দেশ, তুমি অনিমেষ মুরতি,
তুমি অচপল দামিনী।
ধীর গম্ভীর গভীর মৌন-মহিমা
স্বচ্ছ অতল স্নিগ্ধ নয়ন-নীলিমা,
স্থির হাসিখানি উষালোক-সম অসীমা
অয়ি প্রশান্ত-হাসিনী।
অন্তর মাঝে তুমি শুধু একা একাকী
তুমি অন্তরবাসিনী।

—চিত্রা

১৮ অগ্রহায়ণ, ১৩০২