চয়নিকা (১৯৪১)/বর্ষার দিনে

বর্ষার দিনে

এমন দিনে তারে বলা যায়,
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
এমন মেঘস্বরে বাদল ঝরঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়।

সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারিধার।
দু-জনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখী;
আকাশে জল ঝরে অনিবার,
জগতে কেহ যেন নাহি আর।

সমাজ সংসার মিছে সব,
মিছে এ জীবনের কলরব।

কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব,
আঁধারে মিশে গেছে আর সব।

বলিতে বাজিবে না নিজ কানে,
চমক লাগিবে না নিজ প্রাণে।
সে কথা আঁখি-নীরে মিশিয়া যাবে ধীরে
এ ভরা বাদলের মাঝখানে।
সে কথা মিশে যাবে দুটি প্রাণে।

তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার,
নামাতে পারি যদি মনোভার।
শ্রাবণ বরিষনে একদা গৃহকোণে
দু-কথা যদি বলি কাছে তার
তাহাতে আসে যাবে কী বা কার।

আছে তো তার পরে বারো মাস,
উঠিবে কত কথা কত হাস।
আসিবে কত লোক কত না দুখশোক,
সে কথা কোনখানে পাবে নাশ।
জগত চলে যাবে বারো মাস।

ব্যাকুল বেগে আজি বহে বায়,
বিজুলি থেকে থেকে চমকায়।
যে-কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে-কথা আজি যেন বলা যায়,
এমন ঘনঘোর বরিষায়।

রোজব্যাঙ্ক, খিরকি
৩ জ্যৈষ্ঠ, ১২৯৬
—মানসী