চয়নিকা (১৯৪১)/মরণ

মরণ

মরণ রে 
তুঁহুঁ মম শ্যামসমান।
মেঘ বরন তুঝ, মেঘ জটাজূট,
রক্ত কমল কর, রক্ত অধর-পুট,
তাপবিমোচন করুণ কোর তব
মৃত্যু-অমৃত করে দান।
তুঁহুঁ মম শ্যাম সমান।

মরণ রে, 
শ্যাম তোঁহারই নাম।
চির বিসরল যব নিরদয় মাধব
তুঁহুঁ ন ভইবি মোয় বাম।
আকুল রাধা-রিঝ অতি জরজর,
ঝরই নয়ন-দউ অনুখন ঝরঝর,
তুঁহুঁ মম মাধব, তুঁহুঁ মম দোসর,
তুঁহুঁ মম তাপ ঘুচাও ৷
মরণ তু আও রে আও।
ভুজপাশে তব লহ সম্বোধয়ি,
আঁখিপাত মঝু আসব মোদয়ি,
কোর-উপর তুঝ রোদয়ি রোদয়ি
নীঁদ ভরব সব দেহ।
তুঁহুঁ নহি বিসরবি, তুঁহুঁ নহি ছোড়বি, 
রাধা-হৃদয় তু কবহুঁ ন তোড়বি, 

হিয় হিয় রাখবি অনুদিন অনুখন
অতুলন তোঁঁহার লেহ।
দূর সঙে তুঁহুঁ বাঁশি বজাওসি,
অনুখন ডাকসি অনুখন ডাকসি
রাধা রাধা রাধা,
দিবস ফুরাওল, অবহুঁ ম যাওব,
বিরহ-তাপ তব অবহুঁ ঘুচাওব,
কুঞ্জ-বাট-পর অবহুঁ ম ধাওব
সব-কছু টুটইব বাধা।

গগন সঘন অব, তিমির মগন ভব,
তড়িত চকিত অতি, ঘোর মেঘ রব,
শাল তাল তরু সভয় তবধ সব,
পন্থ বিজন অতি ঘোর,
একলি যাওব তুঝ অভিসারে,
যা’কো পিয়া তুঁহুঁ কী ভয় তাহারে,
ভয় বাধা সব অভয় মুরতি ধরি’,
পন্থ দেখাওব মোর।
ভানুসিংহ কহে, “ছিয়ে ছিয়ে রাধা, 
চঞ্চল হৃদয় তোহারি,
মাধব পহু মম, পিয় স মরণসে 
অব তুঁহুঁ দেখ বিচারি।”

—ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী