চিঠিপত্র (দশম খণ্ড, ১৯৬৭)/দীনেশচন্দ্র সেনকে লিখিত/৪৩
৪৩
[ডিসেম্বর ১৯১৮]
ওঁ
বিনয়সম্ভাষণপূর্ব্বক নিবেদন—
আজ আপনার পত্রখানি পাইয়া আমার মনের একটি ভার নামিয়া গেল। আমার প্রতি আপনার চিত্ত প্রতিকূল এতদিন এই কথাই মনে জানিতাম। এরূপ বিশ্বাস কেবল যে পীড়াজনক তাহা নহে ইহা অনিষ্টজনক। আমাদের পরস্পরের মধ্যে এই সম্বন্ধ বিকার হইতে আপনি মুক্তিলাভের যে চেষ্টা করিয়াছেন তাহাতে আমাকেও মুক্তি দিয়াছেন— সেজন্য আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ রহিলাম আপনার সহিত পরিচয়ের আরম্ভ হইতেই আমি সর্বপ্রযত্নে আপনার সহিত সৌহৃদ্য স্থাপনেরই চেষ্টা করিয়াছি কিন্তু কেমন করিয়া, যে বিপরীত ফল ঘটিয়াছিল তাহা আমার দুর্গ্রহই জানে— আমি এই জানি আমি কখনই স্বেচ্ছাপূর্বক আপনার ক্ষতি বা বিরুদ্ধতা করি নাই। কিন্তু এ সকল কথা বিচার করিবার আর প্রয়োজন নাই। জীবনের অনেক গ্লানি একে একে মুছিবার আছে, অথচ সময় আছে অল্প— এই যে একটা দাগ মন হইতে মিটিল সে বড় কম কথা নহে।
কয়েকদিন হইল আপনার নূতন বইখানি পাইয়াছি। কিছুকাল হইতে এখানকার ছাত্রদের জন্য পাঠ্য রচনায় আমাকে এমন অধিকার করিয়াছে যে সমস্ত দিনে স্নানাহারের সময় ছাড়া সমস্ত সময়ই এই কাজে খাটাইতে হইয়াছে। লেখাপড়া সব বন্ধ ছিল। ইতিমধ্যে আপনার বইখানি এখানকার লাইব্রেরিতে চালান হইয়া হাতে হাতে ফিরিতেছে এইবার তাহাকে উদ্ধার করিয়া লইয়া পড়িব এবং কেমন লাগিল আপনাকে লিখিব।
এবারে কলিকাতায় গিয়া আপনার সঙ্গে এবং আশুবাবুর সঙ্গে দেখা করিয়া এম, এ পরীক্ষায় বাংলা ভাষার ব্যবহার সম্বন্ধে আলোচনা করিব।
আপনি শরীরে মনে স্বাস্থ্য ও শান্তিলাভ করুন অন্তরের সহিত এই কামনা করি। ইতি ১৯ অগ্রহায়ণ ১৩২৫।
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর