চিত্ত-প্রদীপ/রবীন্দ্র-বন্দনা

রবীন্দ্র-বন্দনা

নিতি নিতি তব নব নব দানে,
পূর্ণ যদিও প্রাণ।
তথাপি হে কবি! বন্দিতে তোমা
সঙ্কোচে ম্রিয়মান॥
কতনা অযুত ভকত তোমায়
কত অভিনব ছন্দে।
নিত্য নিয়ত বন্দনা গাহে
নিখিলে পরমানন্দে॥
কি আছে আমার বিশ্বকবিরে
দিয়ে অন্তর দৃষ্টি।
মহিমা তাঁহার প্রকাশিবো
করি নূতন কাব্য সৃষ্টি॥
আমি নগন্যা তৃণাদপি তৃণা
শ্রদ্ধা ভক্তি অর্ঘে।
তোমার চরণে অঞ্জলি দিতে
প্রেরণার সুখ গর্বে।
হৃদি শতদল পুলকি ঝরিল
যে দু'টা পাপড়ি পাতা।
চিরঋণী জন ধন্য হইল
তাই দিয়ে সাজি দাতা॥

ওগো সুন্দর পূজারী!
যুগে যুগে দিবে বিজয় মাল্য
যে পথেতে যাও দু'ধারি॥
দীন বাঙলার গৌরব-রবি
ক্ষীণ বাঙ্গালীর উৎস।
ক্ষণেকেরও তরে দাও ভুলাইয়ে
মোরা যে কতই নিঃস্ব॥
কল্প-লোকের স্বর্গ ছায়ায়
কত শত হত ভাগ্য কায়ায়
আবরিত করি বাঁচায়েছে তব
অনুপম সুর সৃষ্টি।
"তোমারি তুলনা তুমি” কর তাই
নিতি নব সুধা বৃষ্টি॥
তোমার কিরণে সবুজ জীবনে
রামধনু লীলা খেলে।
যে ভাবে যখন সাথী খোঁজে মন
সে ভাবে তোমায় মেলে॥
ওগো শিশু ভোলানাথ!
অভূতপূর্ব সুবাসে তোমার
জগত করেছ মাত॥
থাক সবুজের চোখে চিরবিস্ময়
চির রহস্যময়।
দীন বাঙ্গলার মণিকোঠা ভরি
গৌরব-খনি জয়॥

তোমাকে পাইয়া ধন্য বঙ্গ
ওগো বাঙ্গালীর গর্ব।
তোমার কীর্ত্তি-ময়ুখ মালায়
ঝল্‌কিত দিক্‌ সর্ব॥
কভু শ্রদ্ধা ভক্তি স্নেহ প্রেম দিয়া
রচেছ মন্দাকিনী।
কভু অশ্রু কণার ঢেউ খেলে পুনঃ
খণে খণে ছিনিমিনি।
ওগো ও খেয়ালী ভরায়েছ ঝুলি
হাস্য বিলাপ দ্বন্দ্বে।
মূর্চ্ছনা ঘায় আছ রাঙা পায়
মিশাইয়া নব ছন্দে॥
নব নব রূপে নব নব ভাবে
নিত্য দিতেছ ধরা।
স্বর্গ সভার শ্রেষ্ঠ কবি হে
মর্তেরো মনোহরা।
দীন ধরাতল কিবা পারে বল
রাখিতে স্বরগ মান॥
অকৃতী অধম ভকতের লহ
শ্রদ্ধা অর্ঘ দান॥