ছড়া/সুবলদাদা আনল টেনে আদমদিঘির পাড়ে
ছড়া: সংক্ষিপ্ত পুর্বপাঠের পাণ্ডুলিপি-চিত্র
১
সুবলদাদা আনল টেনে আদমদিঘির পাড়ে,
লাল বাঁদরের নাচন সেথায় রামছাগলের ঘাড়ে।
বাঁদরওয়ালা বাঁদরটাকে খাওয়ায় শালিধান্য,
রামছাগলের গম্ভীরতা কেউ করে না মান্য।
দাড়িটা তার নড়ে কেবল, বাজে রে ডুগ্ডুগি।
কাৎলা মারে লেজের ঝাপট, জল ওঠে বুগ্বুগি।
রামছাগলের ভারী গলায় ভ্যা ভ্যা রবের ডাকে
সুড়সুড়ি দেয় থেকে থেকে চৌকিদারের নাকে।
হাঁচির পরে বারে বারে যতই হাঁচি ছাড়ে
বাতাসেতে ঘন ঘন কোদাল যেন পাড়ে।
হাঁচির পরে সারি সারি হাঁচি নামার চোটে
তেঁতুলবনে ঝড়ের দমক যেন মাথা কোটে,
গাছের থেকে হঁচড়গুলাে খসে খসে পড়ে,
তালের পাতা ডাইনে বাঁয়ে পাখার মতাে নড়ে।
দত্তবাড়ির ঘাটের কাছে যেমনি হাঁচি পড়া,
আঁৎকে উঠে কাখের থেকে বউ ফেলে দেয় ঘড়া।
কাকেরা হয় হতবুদ্ধি, বকের ভাঙে ধ্যান,
এজলাসেতে চমকে ওঠেন হরিমােহন সেন।
টেবিলেতে তুফান ওঠে চা-পেয়ালার তলে,
বিষম লেগে শৌখিনদের চোখ ভেসে যায় জলে।
বিদ্যালয়ের মঞ্চ-’পরে টাক-পড়া শির টলে―
পিঠ পেতে দেয়, চড়ে বসে টেরিকাটার দলে।
গুতাে মেরে চালায় তারে, সেলাম করে আদায়,
একটু এদিক-ওদিক হলে বিষম দাঙ্গা বাধায়।
লােকে বলে, কলঙ্কদল সূর্যলােকের আলাে
দখল করে জ্যোতিলোকের নাম করেছে কালাে।
তাই তাে সবই উলট-পালট, উপর-নামন নীচে,
ভয়ে ভয়ে নিচু মাথায় সমুখটা যায় পিছে।
হাঁচির ধাক্কা এতখানি এটা গুজব মিথ্যে―
এই নিয়ে সব কলেজ-পড়া বিজ্ঞানীদের চিত্তে
অল্প কিছু লাগল ধোঁকা; রাগল অপর পক্ষে―
বললে, পড়াশুনােয় কেবল ধুলাে লাগায় চক্ষে।
অন্য দেশে অসম্ভব যা পুণ্য ভারতবর্ষে
সম্ভব নয় বলিস যদি প্রায়শ্চিত্ত কর্-সে।
এর পরে দুই দলে মিলে ইট-পাটকেল ছোড়া,
চক্ষে দেখায় সর্ষের ফুল, কেউ বা হল খোঁড়া―
পুণ্য ভারতবর্ষে ওঠে বীরপুরুষের বড়াই,
সমুদ্দুরের এ পারেতে একেই বলে লড়াই।
সিন্ধুপারে মৃত্যুনাটে চলছে নাচানাচি,
বাংলাদেশের তেঁতুলবনে চৌকিদারের হাঁচি।
সত্য হােক বা মিথ্যে হােক তা আদমদিঘির পাড়ে
বাঁদর চ’ড়ে বসে আছে রামছাগলের ঘাড়ে।
রামছাগলের দাড়ি নড়ে, বাজে রে ডুগ্ডুগি,
কাৎলা মারে লেজের ঝাপট, জল ওঠে বুগ্বুগি।
কালিম্পং
১৫ মে ১৯৪০