ছন্দ/বাংলা ছন্দে যুক্তাক্ষর

বিবিধ

বাংলা ছন্দে যুক্তাক্ষর

 এই গ্রন্থের অনেকগুলি কবিতায় যুক্তাক্ষরকে দুই অক্ষর স্বরূপ গণ্য করা হইয়াছে।[] সেরূপ স্থলে সংস্কৃত ছন্দের নিয়মানুসারে যুক্তাক্ষরকে দীর্ঘ করিয়া না পড়িলে ছন্দ রক্ষা করা অসম্ভব হইবে।[] যথা—

নিম্নে যমুনা বহে স্বচ্ছ শীতল;
ঊর্ধ্বে পাষাণতট, শ্যাম শিলাতল।[]

 ‘নিম্নে, স্বচ্ছ এবং উর্ধ্ব’ এই কয়েকটি শব্দে তিন মাত্রা গণনা না করিলে পয়ার ছন্দ থাকে না। আমার বিশ্বাস যুক্তাক্ষরকে দুই অক্ষর স্বরূপ গণনা করাই স্বাভাবিক এবং তাহাতে ছন্দের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, কেবল বাংলা ছন্দ পাঠ করিয়া বিকৃত অভ্যাস হওয়াতেই সহসা তাহা দুঃসাধ্য মনে হইতে পারে। শব্দের আরম্ভ-অক্ষয় যুক্ত হইলেও তাহাকে যুক্তাক্ষর স্বরূপে গণনা করা যায় নাই।[] পাঠকেরা এইরূপ আরো দুই-একটি ব্যতিক্রম দেখিতে পাইবেন।

 মানসী (প্রথম সং), ভূমিকা — ১২৯৭ পৌষ
  1. দ্রষ্টব্য পৃ ৫, ৬৭, ১২৩। ‘মানসী’ কাব্যে প্রবর্তিত এই নূতন ছন্দোরীতির নাম ‘মাত্রাবৃত্ত’। গ্রন্থপরিচয় দ্রষ্টব্য।
  2. সংস্কৃত ছন্দের নিয়মে যুক্তাক্ষরকে নয়, যুক্তাক্ষরের পূর্ববর্তী অক্ষরকে, দীর্ঘ (অর্থাৎ দ্বিমাত্রক) বলে গণ্য করা হয়: দ্রষ্টব্য পৃ ১৮৬ পাদটীকা ৪। সেজন্যই ‘শব্দের আরম্ভ-অক্ষর’ যুক্ত হলেও দ্বিমাত্রক হয় না। উক্ত নিয়ম অনুসারে ‘নিম্ন’ ও ‘স্বচ্ছ’ শব্দের ‘নি’ ও ‘স্ব’ দ্বিমাত্রক। আসলে ও দুই শব্দের ‘নিম্’ ও ‘স্বচ্’ এই দুটি যুগ্মধ্বনি দ্বিমাত্রক বলে গণনীয়। এই নূতন ছন্দে ঐ, ঔ প্রভৃতি যুগ্মস্বরও দ্বিমাত্রক বলে স্বীকৃত হয়।
  3. ‘নিম্ফল উপহার’ থেকে উদ্ধৃত। এর ছন্দ মাত্রাবৃত্ত পয়ার। পরে এটি সাধারণ পয়ার ছন্দে রূপান্তরিত হয়: দ্রষ্টব্য ‘কথা ও কাহিনী’।
  4. সংস্কৃত ছন্দের নিয়মে যুক্তাক্ষরকে নয়, যুক্তাক্ষরের পূর্ববর্তী অক্ষরকে, দীর্ঘ (অর্থাৎ দ্বিমাত্রক) বলে গণ্য করা হয়: দ্রষ্টব্য পৃ ১৮৬ পাদটীকা ৪। সেজন্যই ‘শব্দের আরম্ভ-অক্ষর’ যুক্ত হলেও দ্বিমাত্রক হয় না। উক্ত নিয়ম অনুসারে ‘নিম্ন’ ও ‘স্বচ্ছ’ শব্দের ‘নি’ ও ‘স্ব’ দ্বিমাত্রক। আসলে ও দুই শব্দের ‘নিম্’ ও ‘স্বচ্’ এই দুটি যুগ্মধ্বনি দ্বিমাত্রক বলে গণনীয়। এই নূতন ছন্দে ঐ, ঔ প্রভৃতি যুগ্মস্বরও দ্বিমাত্রক বলে স্বীকৃত হয়।