ছিন্নপত্র (১৯১২)/১২৩
বোয়ালিয়া,
২৪শে সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪
আমি অনেক সময় ভেবে দেখেছি সুখী হলুম কি দুঃখী হলুম সেইটে আমার পক্ষে শেষ কথা নয়। আমাদের অন্তরতম প্রকৃতি সমস্ত সুখদুঃখের ভিতরে নিজের একটা প্রসার অনুভব করতে থাকে। আমাদের ক্ষণিক জীবন এবং চিরজীবন দুটো একত্র সংলগ্ন হয়ে আছে মাত্র কিন্তু দুটো এক নয় এ আমি স্পষ্ট উপলব্ধি করি। আমাদের ক্ষণিক জীবনই সুখ-দুঃখ ভোগ করে, আমাদের চিরজীবন সেই সুখ দুঃখ নেয় না, তার থেকে একটা তেজ সঞ্চয় করে। গাছের পাতা প্রতিদিন রৌদ্রে প্রসারিত হয়ে শুষ্ক হয়ে ঝরে যাচ্চে, আবার নতুন পাতা গজাচ্চে; গাছের ক্ষণিক জীবন কেবল রৌদ্র ভোগ করচে এবং সেই উত্তাপেই শুকিয়ে পড়ে যাচ্চে, আর গাছের চিরজীবন তার ভিতর থেকে দাহহীন চির অগ্নি সঞ্চয় করচে। আমাদেরও প্রতিদিনের প্রতিমুহূর্ত্তের পল্লবরাশি চতুর্দ্দিকে প্রসারিত হয়ে জগতের সমস্ত প্রবহমান সুখ দুঃখ ভোগ করচে এবং সেই সুখ দুঃখের উত্তাপেই শুষ্ক হয়ে দগ্ধ হয়ে ঝরে ঝরে পড়ে যাচ্চে কিন্তু আমাদের চিরজীবনকে সেই প্রতিমুহূর্ত্তের দাহ স্পর্শ করতে পারচেনা অথচ তার তেজটুকু সে ক্রমাগতই গ্রহণ করছে। যে মানুষের প্রতিমুহূর্ত্তের সুখদুঃখভোগশক্তি সামান্য, তার দাহও অল্প, তেমনি তার চিরপ্রাণের সঞ্চয়ও অকিঞ্চিৎকর। সুখদুঃখের তাপ থেকে সংরক্ষিত হয়ে তাদের ক্ষণিক জীবনটা অনেকদিন স্থির থাকে, তারা অচেতনতার আবরণে ক্ষণিককে অপেক্ষাকৃত স্থায়ী করে রাখে; দুদিনকে এমনি তাজা রেখে দেয় যে হঠাৎ মনে হয় তা চিরদিনের; সংসারের সামান্য ব্যাপারকে এমনি করে তোলে যেন তা অসামান্য।