কলিকাতা
৯ই এপ্রিল, ১৮৯৫।

 ঢং ঢং করে দশটা বাজ্‌ল। চৈত্র মাসের দশটা নিতান্ত কম বেলা নয়। রৌদ্র ঝাঁ ঝাঁ করে উঠেছে, কাকগুলো কেন যে এত ডাকাডাকি করচে জানিনে, লকেট কমলালেবু এবং কাঁচামিঠে আমওয়ালা চুপড়ি মাথায় উচ্চস্বরে সুর করে আমাদের দেউড়ির কাছ দিয়ে ডেকে যাচ্চে।

 ইচ্ছা করচে কোনো একটা বিদেশে যেতে—বেশ একটি ছবির মত দেশ—পাহাড় আছে, ঝরণা আছে, পাথরের গায়ে খুব ঘন শৈবাল হয়েছে, দূরে পাহাড়ের ঢালুর উপরে গোরু চরচে, আকাশের নীল রংটি খুব স্নিগ্ধ এবং সুগভীর, পাখী পতঙ্গ পল্লব এবং জলধারার একটা বিচিত্র মৃদু শব্দমিশ্র উঠে মস্তিষ্কের মধ্যে ধীরে ধীরে তরঙ্গাভিঘাত করচে। দূর হোক্‌গে ছাই, আজ আর কিছুতে হাত না দিয়ে দক্ষিণের ঘরে একলাটি হাত পা ছড়িয়ে একটা কোনো ভ্রমণবৃত্তান্তের বই নিয়ে পড়ব মনে করচি—বেশ অনেকগুলো ছবিওয়ালা নতুন-পাতকাটা বই। আলোচনা করবার মত, মনের উন্নতি সাধন করবার মত বই পৃথিবীতে অসংখ্য আছে কিন্তু কুঁড়েমি করবার মত বই ভারি কম; সেই রকম বই লিখ্‌তে অসামান্য ক্ষমতার দরকার। অবকাশের অবকাশত্ব কিছুমাত্র নষ্ট করবেনা বরং তাকে রঙীন ও রসালো করে তুল্‌বে, অথচ তাকে মন দিয়ে পড়বারও খোরাক দেবে এই দুই দিক বাঁচিয়ে লেখা শক্ত। ষ্টীল্‌পেনে লিখে মনের উপর দাগ কেটে দিয়ে যাবে না, পালকের কলমে লিখে লেখাটা মনের উপর দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে যাবে এমন পুষ্পকরথের সারথী পাওয়া যায় কোথায়?