শিলাইদা,
৪ঠা অক্টোবর, ১৮৯৫।

 একটা ব্যাঘাতের সম্ভাবনা আসন্ন হওয়াতেই আজকের এই নিভৃত নিস্তব্ধ উপভোগটি মনের মধ্যে এমন নিবিড়তর হয়ে এসেছে। যেন আমার কাছে আমার এই অভিমানিনী প্রবাসসঙ্গিনী করুণ অনিমেষ নেত্রে বিদায় নিতে এসেছে; আমাকে যেন বল্‌চে, কিসের তোমার ঘরকর্‌না, এবং আত্মীয়তার বন্ধন——আমি যে তোমার চিরদিনের সাধনা, তোমার সহস্র জন্মপূর্ব্বের প্রিয়তমা, অনন্ত জীবনের অসংখ্য খণ্ড পরিচয়ের মধ্যে তোমার একমাত্র চিরপরিচিতা। কিন্তু বর্ত্তমানের কর্ম্মক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ সংসারে এ সব কথা অলীক শোনাবে। তা হোক্, এই শরতের অপর্য্যাপ্ত শান্তির মধ্যে আমার আত্মাকে স্তরে স্তরে সিক্ত করে নেওয়া আমার পক্ষে কম ব্যাপার নয়। এ জীবনে আমার যা-কিছু গভীরতম তৃপ্তি ও প্রীতি সে কেবল এই রকম নির্জ্জন সুন্দর মুহূর্ত্তে পুঞ্জীভূতভাবে আমার কাছে ধরা দেয়। আমার জীবনের অন্তস্তলে ক্রমশই যেন একটা নূতন সত্যের উন্মেষ হচ্চে; কেবল তার আভাস পাই, যে, আমার পক্ষে সে একটা স্থায়ী নিত্য সম্বল, আমার সমস্ত জীবন-খনিজ-গলানো খাঁটি সোনাটুকু, আমার সমস্ত দুঃখকষ্টের তুষের ভিতরকার অমৃত শস্যকণা; সেটাকে যদি কখনো পরিস্ফুট করে পাই তাহলে সে আমার টাকাকড়ি খ্যাতি প্রতিপত্তি সব চেয়ে বেশি হয়—যদি সম্পূর্ণ নাও পাই তবু সেই দিকে চিত্তের অনিবার্য্য স্বাভাবিক প্রবাহ সেও একটা পরম লাভ।