৬ই অক্টোবর, ১৮৯৫

 আমার দিনগুলিকে রথীর কাগজের নৌকার মত একটি একটি করে ভাসিয়ে দিচ্চি। কেবল মাঝে মাঝে একটি আধটি গান তৈরি করচি এবং শরৎকালের প্রহরগুলির মধ্যে কুণ্ডলায়িত হয়ে পড়ে আছি। এই অপর্য্যাপ্ত জ্যোতির্ম্ময় নীলাকাশ আমার হৃদয়ের মধ্যে অবনত হয়ে পড়েছে, আলোক রক্তের মধ্যে প্রবেশ করচে, সর্ব্বব্যাপী স্তব্ধতা আমার বক্ষকে দুই হাতে বেষ্টন করে ধরেছে, একটি সকরুণ শান্তি আমার ললাটের উপর চুম্বন করচে। পূজার ছুটিতে সবাই কাজকর্ম্ম ছেড়ে বাড়িতে এসেছে—আমারো এই বাড়ি;—আমার বাড়ির লোকটি আমার সমস্ত খাতাপত্র কেড়েকুড়ে নিয়ে বল্‌চে তুমি কাজ ঢের করেচ, এখন একটুখানি থাম। আমিও তাই নিরাপত্তিতে থেমে আছি,,—এর পরে কর্ম্ম যখন আবার আমাকে একবার হাতে পাবেন তখন টুঁটি চেপে ধরবেন—তখন আমার এই ঘরের লোকটি, আমার এই ছুটির কর্ত্রী, কোথায় থাকবেন তাঁর আর উদ্দেশ পাওয়া যাবে না। প্রায় মাঝে মাঝে মনে করি সাধনার লেখার ঝুড়ি পদ্মার জলে ভাসিয়ে দেব—কিন্তু জানি, ভাসিয়ে দিলেও সে আমাকে তার পিছন পিছন টেনে নিয়ে চল্‌বে।