ছিন্নপত্র (১৯১২)/১৫১

নাগর নদীর ঘাট,

১৬ই ডিসেম্বর, ১৮৯৫।

 কাল অনেকদিন পরে সূর্য্যাস্তের পর ওপারের পাড়ের উপর বেড়াতে গিয়েছিলুম। সেখানে উঠেই হঠাৎ যেন এই প্রথম দেখ্‌লুম, আকাশের আদিঅন্ত নেই—জনহীন মাঠ দিগ্‌দিগন্ত ব্যাপ্ত করে হাহা করচে—কোথায় দুটি ক্ষুদ্র গ্রাম কোথায় একপ্রান্তে সঙ্কীর্ণ একটু জলের রেখা! কেবল নীল আকাশ এবং ধূসর পৃথিবী—আর তারই মাঝখানে একটি সঙ্গীহীন গৃহহীন অসীম সন্ধ্যা,—মনে হয় যেন একটি সোনার চেলিপরা বধু অনন্ত প্রাস্তরের মধ্যে মাথায় একটুখানি ঘোমটা টেনে একলা চলেচে; ধীরে ধীরে কত শত সহস্র গ্রাম নদী প্রান্তর পর্ব্বত নগর বনের উপর দিয়ে যুগযুগান্তর কাল সমস্ত পৃথিবীমণ্ডলকে একাকিনী ম্লাননেত্রে, মৌনমুখে, শ্রান্তপদে প্রদক্ষিণ করে আস্‌চে। তার বর যদি কোথাও নেই তবে তাকে এমন সোনার বিবাহবেশে কে সাজিয়ে দিলে! কোন্‌ অন্তহীন পশ্চিমের দিকে তার পতিগৃহ?