জীবনরক্ষক (প্রথম ভাগ)
জীবনরক্ষক।
প্রথম ভাগ ।
শ্রীহরিশ্চন্দ্র শর্মা প্রণীত ।
প্রথম বার মুদ্রিত।
LIFE PRESERVER
IN BENGALEE
PART I
BY
HARRIS CHANDRA SARMA
OF PABNA
কলিকাতা
৯২ নং বহুবাজার ষ্ট্ৰীট।
১২৮২ সাল।
মূল্য ৷৷৹ আনা
Printed and published by R. N. Bandyopadhaya
at the New Indian Press.
জীবনরক্ষক।
প্রথম ভাগ ।
শ্রীহরিশ্চন্দ্র শর্মা প্রণীত ।
প্রথম বার মুদ্রিত।
LIFE PRESERVER
IN BENGALEE
PART I
BY
HARRIS CHANDRA SARMA
OF PABNA
কলিকাতা
৯২ নং বহুবাজার ষ্ট্ৰীট।
১২৮২ সাল।
মূল্য ৷৷৹ আনা
Printed and published by R. N. Bandyopadhaya
at the New Indian Press.
উৎসর্গ।
অপ্রতিহত হিতাকাঙ্ক্ষা
ও অপরিমিত অনুরাগের
নিদর্শনস্বরূপ,
নিরাশ্রয় ভারতসন্তানদিগকে
এই ক্ষুদ্র গ্রন্থ
উৎসর্গীকৃত হইল।
ভূমিকা।
আমি ভারতবাসীগণের স্বাস্থ্য হানীর একটী প্রধান কারণ পুনঃ পুনঃ দর্শন করিয়া নিতান্ত ব্যথিত হইতেছি এবং সেই মনোবেদনাই এই ক্ষুদ্র পুস্তক রচনায় আমাকে আগ্রহের সহিত প্রবৃত্ত করিয়াছে। ইহাব ভাষা বিষয়ে বিশেষ যত্ন করা হয় নাই; ভাষা ভাল হয় নাই বলিয়াই আমার বিশ্বাস। কেবল যুবক ও বালকগণের অনৈসর্গিক উপায়ে রেতঃপাতনের বিষময় ফল যাহাতে অনায়াসে সকলের বোধগম্য হয় তদ্বিষয়ে যথোচিত চেষ্টা করা হইয়াছে। অম্লীল বিষয় বলিয়া উহার আলোচনায় ক্ষান্ত থাকা কখনই উচিত নহে। উপায় হীন ভারতবাসীর এক মাত্র ভরসা যুবকগণ— তাহারা যদি তরুণ বয়সে অন্তঃসারবিহীন হয় তবে আমাদের ভরসা কোথায়? বৃক্ষ তরুণাবস্থায় কীট কর্ত্তৃক নষ্টসার হইলে সে কি কখন হুফল ও ছায়া প্রদান দ্বারা মনুষ্যকে সুখী করিতে সক্ষম হইতে পারে?
এদেশে প্রখর সূর্য্যোত্তাপে বয়ঃপ্রাপ্তির পূর্ব্বেই ইন্দ্রিয় চাঞ্চল্য উপস্থিত হয়, সুতরাং বালকগণ স্বাভাবিক উপায়াভাবে অস্বাভাবিক উপায়ে রেতঃপাতন শিক্ষা করে, অল্প বয়সে স্বাভাবিক উপায়াবলম্বন করাও যদিও স্বাস্থ্যনাশক তথাপি অনৈসর্গিক উপায়ে রেতঃপাতনের ন্যায় ভয়ানক গরল উদগীরণ করিয়া একেবারে মনুষ্যত্ববিহীন করে না! ইন্দ্রিয়সংযম শিক্ষা দেওয়াই স্বাস্থ্য রক্ষার সর্ব্বোৎকৃষ্ট সোপান। অতএব বালকগণের অভিভাবক মহাশয়দিগের নিকট আমার বিনীত প্রার্থন এই যে তাঁহারা বৃথা লজ্জার বশবর্ত্তী না হইয়া হস্তমৈথুনের বিষময় ফল তাহাদিগকে বুঝাইয়া দেন। তাহারা জানে না যে এই কারণে সময়ে তাহাদিগকে মনুষ্য নামের বাহির হইতে হইবে। তাহাদিগের ভাবী দুৰ্গতি স্মরণ করিয়া কোন সহৃদয় ব্যক্তি অশ্রু বিসর্জন না করিয়া থাকিতে পারেন? এই ক্ষুদ্র পুস্তক পাঠে যদি একটা বালকও স্বাস্থ্যবান হয় কিম্বা নষ্ট স্বাস্থ্য পুনঃপ্রাপ্ত হইয়া উদ্যম ও উৎসাহের সহিত সংসার যাত্রা নির্ব্বাহে সমর্থ হয় তাহ হইলেও শ্রম সফল মনে করিব।
১২৮১ সালের ফাল্গুন মাসের আর্য্যদর্শনের সমালোচনা।
জীবনরক্ষক।
সুবিখ্যাত ডাক্তার শ্রীযুক্ত হরিশ্চন্দ্র শর্ম্মা প্রণীত। নূতন ভারতযন্ত্রে মুদ্রিত। হস্তমৈথুন বা অনৈসর্গিক উপায়ে রেতঃপাতনে মনুষ্যের যে সকল ভয়ঙ্কর অনিষ্ট সংঘটিত হয়, সেই সকলের বর্ণন দ্বারা বালক ও যুবকবৃন্দকে সর্ব্বসংহারকারি হস্তমৈথুনের হস্ত হইতে মুক্ত করা এই ক্ষুদ্র গ্রন্থের উদ্দেশ্য। অনেক শান্তশীল সচ্চরিত্র যুবক— যাহারা বেশ্যাগমন নরক গমনের সদৃশ মনে করে— এই ভীষণ অভ্যাসের দাস হইয়া জন্মের মত আত্মসুখে জলাঞ্জলি দেয়। সেই সকল যুবক যদি সময়ে জানিতে পারে যে হস্তমৈথুন বেশ্যাগমন অপেক্ষা সহস্র গুণে গুরুতর পাপ, তাহা হইলে তাহারা অবশ্যই ইহা হইতে বিরত হইতে পারে। বালক ও যুবকবৃন্দ যখন প্রথমে এই ভীষণ অভ্যাসের দাস হয়, তখন তাহারা মনে করে ইহা একটা নির্দ্দোষ আমোদমাত্র। এই সময় যদি তাহাদিগকে বলিয়া দেওয়া যায় যে এই আমোদ হইতে তাহাদিগের ভাবি সুখের আশা সমূলে উন্মূলিত হইবে, তাহা হইলে নিশ্চয়ই তাহারা এই কুঅভ্যাসের অনুসরণ হইতে বিরত হইবে। পিতা মাতা বা অভিভাবকগণ যদি নিজ মুখে এই সকল কথা বলিতে লজ্জা বোধ করেন, তাহা হইলে তাঁহাদিগের অধীন বালক ও যুবকবৃন্দের হস্তে ডাক্তার হরিশ্চন্দ্র শর্ম্মার জীবনরক্ষক অর্পণ করিয়া তাহাদিগকে ঘোরতর ভাবি দুর্গতি হইতে রক্ষা করিবেন। এই কর্ত্তব্যের অকরণে তাঁহারা জগতের শত্রু বলিয়া পরিগণিত হইবেন।
জীবনরক্ষক।
কামেন্দ্রিয়ের অপরিমিত পরিচালন ও অনৈসর্গিক উপায়ে রেতঃপাতন (হস্তমৈথুন) জন্য যে ধাতু-দৌর্ব্বল্য (Sexual debelity) ঘটিয়া থাকে, সে বিষয়ে আজ পর্য্যন্তও বঙ্গভাষায় কেহই কিছু লেখেন নাই। দেশীয় চিকিৎসকদিগের মধ্যে অনেক সুপণ্ডিত ও পারদর্শী ব্যক্তি আছেন বটে, কিন্তু তাঁহাদিগের মধ্যে অনেকেই মনে করেন যে, অনৈসর্গিক উপায়ে রেতঃপাতন (হস্তমৈথুন) ও অপরিমিত স্ত্রীসংসর্গ, অতীব কুৎসিত বিষয়। এ সকল শব্দ অতি অশ্লীল ও অশ্রাব্য, এসমস্ত কার্য্য ঘৃণাকর, এ সমস্ত ভাবও লজ্জাকর। সুতরাং এতৎ সম্বন্ধীয় দুর্ঘটনার বিষয় লিখিয়া পুস্তকাকারে পরিণত করা কোন ক্রমে বিবেচনাসিদ্ধ নহে।
যে কার্য্য সর্ব্বপ্রকারে কুৎসিত তাহার আলোচনা করাও অবৈধ! যাঁহারা এ বিষয়ের আলোচনা করা উচিত বোধ করেন, তাঁহাদিগের মধ্যেও অনেকে মনে করেন যে এ বিষয়ে পুস্তক প্রকাশ করিলে লোকে নিন্দা করিবে এবং সে পুস্তক ভদ্রের অপাঠ্য হইবে। বাস্তবিকও এপ্রকার বিষয় সংক্রান্ত পুস্তকে যে প্রকার কথক গুলি শব্দ প্রয়োগ অনিবার্য্য তাহাতে অধুনাতন সভ্যতা ও লজ্জাশীলতার বশবর্ত্তী পিতা পুত্রের, বা শিক্ষক ছাত্রের একত্রে পাঠ করা দুরূহ। কিন্তু প্রয়োজন বুঝিয়া কার্য্যের কর্তব্যাকর্ত্তব্যতা স্থির করা উচিত। যে জ্ঞান লাভ দ্বারা ভাবি মহাবিপদ্ হইতে উত্তীর্ণ হওয়া যায় এবং যাহার উপদেশ দ্বারা বালক ও যুবাদিগের মহোপকার সম্পাদিত হয়, দুই চারিটী অশ্লীল শব্দ আছে বলিয়া, তদ্বিষয়ক পুস্তক প্রণয়ন অশ্লীল মনে করা বা সেই বিষয় সংক্রান্ত পুস্তকাদি পাঠে বিরত হওয়া ও অধীনস্থ বালক ও যুবকদিগের হিতার্থ তাহাদিগকে তদ্বিষয়ে উপদেশ না দেওয়া, যে কতবড় অবিবেচকতা ও নিষ্ঠুরতার কার্য্য তাহা বলা বাহুল্য।
যাঁহারা আমার এই হিতকর ক্ষুদ্র গ্রন্থকে অশ্লীল মনে করিরেন, তাঁহাদিগের প্রতি আমার এই জিজ্ঞাস্য, যে তাঁহারা কখন হস্তমৈথুন করিয়াছেন কি না, এবং তন্নিবন্ধন তাঁহাদিগের শারিরীক ও মানসিক অপকার হইয়াছে কি না? যদি তাঁহারা প্রথমাবস্থায় হস্তমৈথুনের অতীব ভয়ানক ফল অবগত হইতেন তাহা হইলে কি আত্মরক্ষা করিতে পারিতেন না?
কামেন্দ্রিয়ের অপরিমিত পরিচালন ও তন্নিবন্ধন অধিকতর শুক্র-ব্যয় হইলে স্বাস্থ্য একেবারে নষ্ট হয়, নানা প্রকার উৎকট রোগের উৎপত্তি হয়, এবং ক্রমে ক্রমে মনুষ্যকে মনুষ্যত্ব-বিহীন করে।
অপরিমত স্ত্রীসংসর্গ, অনৈসর্গিক উপায়ে রেতঃপাতন (হস্তমৈথুন, পুংমৈথুন ও পশুমৈথুন প্রভৃতি) এবং স্বপ্নদোষ অর্থাৎ নিদ্রাবস্থায় মনের চাঞ্চল্য হেতু শুক্র নিঃসরণ, এই তিন প্রকারে কামেন্দ্রিয়ের অপরিমিত পরিচালন হয়।
যত দিবস মনুষ্যের কঙ্কাল পরিপক্ক না হয়, তত দিবস স্ত্রী-সংসর্গ করিতে আরম্ভ না করিলেই ভাল হয়।
ন্যূনাধিক ২৮ বৎসর বয়ঃক্রমে কঙ্কালের সমস্ত অস্থি পরিপক্ক হয়। হিমপ্রধান দেশের পুরুষেরা প্রায় ২৮ বৎসর বয়ক্রমের পূর্ব্বে বিবাহই করে না। ভারতবর্ষীয় প্রাচীন প্রধানতম ধর্ম্মশাস্ত্র—প্রবর্ত্তক ভগবান্ মনু বলিয়াছেন:—‘ত্রিংশদ্বর্ষো বহেৎ কন্যাং হৃদ্যাং দ্বাদশবার্ষিকীম্। ত্র্যষ্টবর্ষোহষ্টবর্ষাম্বা ধর্ম্মে সীদতি সত্বরঃ॥’
অর্থাৎ “দ্বাদশবর্ষীয়া কন্যার সহিত ৩০ বৎসর বয়স্ক পুরুষের এবং অষ্টমবর্ষীয়া কন্যার সহিত ২৪ বৎসর বয়স্ক পুরুষের বিবাহ হওয়া উচিত। অন্যথা ধর্ম্মহানির সম্ভাবনা।” বোধহয় হিন্দুজাতি ক্রমে ক্রমে এই নিয়মের পরিবর্ত্তন করাতেই এতদূর হীন-বীর্য্য ও নিস্তেজ হইয়াছে।
এ দেশ ক্রমে ক্রমে পূর্ব্বাপেক্ষা অধিকতর উষ্ণপ্রধান হইয়া উঠিয়াছে। উষ্ণপ্রধান দেশে অল্প বয়ঃক্রমেই মনুষ্যের ইন্দ্রিয়াদির চাঞ্চল্য উপস্থিত হয়। এই জন্যই বোধ হয়, অল্প বয়সে বিবাহের প্রথা এদেশে ক্রমে প্রচলিত হইয়া উঠিয়াছে। যাহা হউক এদেশের বর্তমান অবস্থাতেও একবিংশতি বৎসর বয়ঃক্রমের পূর্ব্বে সাধারণতঃ পুরুষের স্ত্রীসংসর্গ করা কোন ক্রমেই উচিত নহে।
দুর্ভাগ্যবশতঃ অল্পবয়ঃক্রমে যাহাদিগের বিবাহ হইয়াছে, তাহাদিগের পিতা মাতা বা অভিভাবক দিগের কর্ত্তব্য, যে স্ত্রী পুরুষের উপযুক্ত বয়ংক্রম না হওয়া পর্যন্ত তাহাদিগকে পরস্পর হইতে বিচ্ছিন্ন রাখেন।
কোন একটী পশ্চিমদেশীয় বীর পুরুষ আপন পুত্র রঘুনাথকে পঞ্চবিংশতি বৎসর বয়ঃক্রম পর্যন্ত স্ত্রীসংসর্গ করিতে দেওয়া অহিতকর মনে করিয়া তাহাকে ও পুত্রবধূ জানকীকে পরস্পর হইতে অতি সাবধানে পৃথক্ রাখিতেন। এ সময়ে রঘুনাথের বয়ঃক্রম ২৪ বৎসর ও জানকীর বয়ঃক্রম ১৬ বৎসর ছিল। রঘুনাথ অতি বলবান্, সুদীর্ঘকায় ও হৃষ্ট পুষ্ট ছিল এবং নানা প্রকার অস্ত্রবিদ্যার সুপটু ছিল। জানকীও সুশ্রী, বলিষ্ঠা ও পূর্ণযৌবনা ছিল। পাছে রঘুনাথ ও জানকী উভয়ের কোন প্রকারে মিলন হয়, এই আশঙ্কায় বীর পুরুষ প্রতি দিবস রজনীতে এক প্রশস্ত শয্যায় আপনি শয়ন করিয়া আপনার বামপার্শ্বে আপন স্ত্রী, ও তাহার বামপার্শ্বে পুত্রবধূ জানকীকে এবং আপনার দক্ষিণ পার্শ্বে পুত্র রঘুনাথকে শয়ান রাখিতেন। সমস্ত রজনী গৃহে প্রদীপ জ্বলিত।
একদা হঠাৎ প্রদীপ নির্ব্বাণ হওয়াতে রঘুনাথ পিতা মাতাকে নিদ্রিত দেখিয়া আপনার দক্ষিণপার্শ্বস্থ ধনুকের এক দিক্ জানকীর নিকটে অর্পণ করিল। জানকী আপন প্রভুর অভিপ্রায় বুঝিয়া ধনুকের উপরে আরোহণ করিল। রঘুনাথ ধনুকারূঢ়া জানকীকে অনায়াসে আপন নিকটে আনিয়া মনোরথ পূর্ণ করিল। জানকী পুনরায় ধনুকে আরোহণ করিলে, পদ্মনাথ ধনুকারূঢ়া জানকীকে পূর্ব্বপ্রণালীতে, নিদ্রিত পিতামাতাকে লঙ্ঘন করিয়া, স্বস্থানে সংস্থাপন করিবার চেষ্টা করিল। কিন্তু জানকী স্বস্থানে উপস্থিত হইবার পূর্ব্বেই ধনুক রঘুনাথের নিদ্রিত পিতামাতার গাত্রোপরি পতিত হইল। বীর পুরুষ ও তাঁহার পত্নী জাগ্রত হইলেন। বীর পুরুষ জাগ্রত হইয়া সমস্তই বুঝিতে পারিলেন, এবং অতিশয় আক্ষেপ করিয়া রঘুনাথকে কহিলেন, “রে বাচ্চা আউর্ বর্ছ্ রোজ্ ছবুর্ কর্তে, তব্ ধনুক্ পর্ লেনে বি ছক্তে ও দেনেবি ছক্তে, থোড়া রোজ্ কে ওয়াছ তে ছব্ বর্বাদ্, কিয়া?”
উপযুক্ত বয়ঃক্রমে বিবাহ এবং স্ত্রী-সংসর্গ করা— অদ্যাপিও উত্তর পশ্চিম দেশের স্থানে স্থানে প্রচলিত আছে।
অত্যল্প বয়সে বিবাহে এবং অপরিমিত স্ত্রীসংসর্গে বঙ্গভূমি যে প্রকার কলঙ্কিত, বোধ হয় জগতে অধুনাতন আর কোন দেশই এ প্রকার কলঙ্কিত নহে।
অল্প বয়ঃক্রমে ও অপরিমিতরূপে স্ত্রী-সংসর্গ অপেক্ষা শত সহস্র গুণে ভয়ানক মহাপাপ হস্তমৈথুন— পৃথিবীকে আরও কলঙ্কিত করিতেছে। কত দিন হইতে যে এ মহাপাপ রূপ কালসর্প মনুষ্য জাতিকে দংশন করিতেছে তাহা নিশ্চয় করা কঠিন। এদেশে প্রবাদ আছে যে ভগবান বিশ্বামিত্র ঋষি হস্তমৈথুন ক্রিয়া প্রথম সৃষ্টি করেন। কিন্তু প্রাচীন শাস্ত্রাদিতে তাহার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। স্মৃতিশাস্ত্রে ইহার প্রায়শ্চিত্তের বিধান আছে। ইহাতেই বোধ হয় যে পুরাকাল হইতেই ইহা প্রচলিত আছে। মিষ্ট আম্রের অভ্যন্তরে কীট জন্মিয়া যে প্রকার তাহার মধ্য দেশকে সারবিহীন করে সেই প্রকার এই কুৎসিত অভ্যাস মনুষ্যকে অন্তঃসার-বিহীন করে।
বালকেরা সাধারণতঃ ১২৷১৪ বৎসর বয়ঃক্রমেই হস্তমৈথুন করা আরম্ভ করে। কেহ কেহ ৮৷৯ বৎসর বয়সেও কুসসংর্গ হেতু ইহার শিক্ষা পায়। প্রথমে কি হেতুতে মনুষ্য জাতির হস্তমৈথুনে প্রবৃত্তি হয় তাহা নির্ণয় করা কঠিন।
বোধ হয় কোন বয়ঃপ্রাপ্ত ব্যক্তির উপস্থ দেশে, হঠাৎ কোন দ্রব্যের ঘর্ষণে, কিঞ্চিৎ শুরশুরি ও সুস্থ বোধ হওয়াতে, হস্তদ্বারা নাড়াচাড়া করায় সে গরম ও কামাশক্ত হইল। তখন হস্তদ্বারা শিশ্নের অগ্রভাগ খুলিতে ও বন্দ করিতে তাহার ইচ্ছা হইতে লাগিল। কিছুকাল এই প্রকার করাতে শুরু নির্গত হইল। নির্গত হইবার অব্যবহিত পূর্ব্বে সুখানুভব হইয়া পরে সমুদয় চঞ্চলতা নিবৃত্তি হইল। একার্য্যে আরাম বোধ হয়, এবং ইচ্ছানুরূপ সুখ লাভ অনায়াসে করা যায় বলিয়া সে পুনরায় হস্তমৈথুনে প্রবৃত্ত হইয়া কামরিপুর চাঞ্চল্য নিবারণ করিল। তখন সে ইহাতে বড় আরাম, মনে করিয়া ক্রমে ইহা অভ্যাস করিল। এসুখের কার্য্য যে তাহার ভাবি সর্ব্বনাশের মূল হইল তাহা সে জানিতে পারিল না। তাহার শরীর ক্রমে ক্ষীণ ও বলবীর্য্য-বিহীন হইবে, তাহার রমন-শক্তির হ্রাসতা হইবে, তাহার মন উদ্যম-বিহীন ও নিস্তেজ হইবে, সে মনুষ্যত্ব-বিহীন হইবে, তাহার সন্তান-উৎপাদিকা শক্তি বিনষ্ট হইবে, বুদ্ধি হ্রাস হইবে, শারীরিক ও মানসিক স্ফূর্ত্তি নষ্ট হইবে এবং তাহাকে পৃথিবীতে জড় পদার্থের ন্যায় হইয়া জীবনের ভার বহন করিতে হইবে, এসমুদয় সে কিছুই জানিতে পারিল না। জানিতে পারিলে বোধ হয় এ অপকারি বৃথাসুখাস্বাদনে কখনই প্রবৃত্ত হইত না। এই অনায়াসলব্ধ সুখের বিষয় হয় ত যে অন্য ব্যক্তির নিকট প্রকাশ করিল। যে ব্যক্তির নিকট প্রকাশ করিল সে ব্যক্তিও ইহা শুনিয়া হয় ত নিজে পরীক্ষা করত, সুখানুভব করিয়া, ক্রমে অভ্যাস করিল এবং ক্রমে অন্যান্যকে বলাতে তাহারাও, ইহা প্রথমে পরীক্ষা করিয়া দেখিয়া আপনার অভ্যাস করিল। বোধ হয় এইরূপে একুৎসিত পাপ পরস্পর পরস্পরের নিকট শুনিয়া শুনিয়াই অভ্যাস করিতে লাগিল। প্রথমে সুখানুভব হয়, এবং ভাবি বিষময় ফল প্রথমে অনুভব করা যায় না বলিয়াই ক্রমে ক্রমে এ মহাপাপ জনসমাজে বিস্তারিত হইল।এখন সংসর্গ দোষেই ইহার বিস্তৃতি হইতেছে শিশুকাল হইতে শিশুদিগকে দুঃসংসর্গ হইতে রক্ষা করিলে হয়ত তাহাদিগের একেবারে এটী শিক্ষাই হইবে না। যদি কেহ এটী কোন প্রকারে শিক্ষা করে তবে তাহাকে ইহার ভাবি বিষময় ফল বিস্তারিত রূপে বুঝাইয়া দিলে সে ক্ষান্ত হইবে যাহাদিগের এটী বিশেষ রূপে। অভ্যাস হইয়াছে তাহাদিগের পক্ষে ছাড়া অতি কঠিন। বিবাহ করা তাহাদিগের পক্ষে এক প্রধান সদুপায়। সুস্থকাজয়া অল্পবয়স্কা স্ত্রীর সংসর্গ পরিমিত পরিমাণে শ্রেয়। বালক, যুবা, ও প্রৌঢ় ব্যক্তি, সকলেই সময়ে সময়ে হস্তমৈথুনাশক্ত হইতে পারে। বালক ও যুবারাই ইহাতে অতিশয় আশক্ত হয়। এদেশে ১৪/১৫ বৎসর বয়ঃক্রম পর্য্যন্ত বাবলকাবস্থা। ২৮ বৎসর পর্য্যন্ত যুবাবস্থা এবং ৪৯ বৎসর বয়স পর্য্যন্ত প্রৌঢ়াবস্থা তাহার পরেই বৃদ্ধাবস্থা। বালকেরা প্রায়ই হস্তমৈথুনাসক্ত। সসংর্গ দোষে বালকদিগের হস্তমৈথুন শিক্ষা হয়। তখনই তাহারদিগের নির্দ্দোষ অবস্থা হইতে অধঃপতন হয়। পিতা মাতা অভিভাবক গুরুজন ও শিক্ষকের নিকট তাহারা সলজ্জ হয়। কাহারো মুখের দিকে আর স্পষ্ট চাহিয়া আলাপ করিতে পারে না। এইটী পাপ-স্পর্শের প্রথম লক্ষণ। পিতা মাতা, শিক্ষক ও অভিভাবকগণ যেন এবিষয়ে সর্ব্বদা সচৈতন্য থাকেন। সর্ব্বদা যেন এ লক্ষণটী অবলোকন করিতে চেষ্টা করেন। যখন এই লক্ষণ প্রথম দৃষ্টি করিবেন তখনই যেন তাহার প্রতিবিধান করিতে চেষ্টা করেন।
হস্তমৈথুন কিছু দিবস অভ্যাস করিলে শুক্রমেহ (এস্পারম্যাটোরিয়া) রোগের উৎপত্তি হয়। তখন প্রস্রাবের সহিত এবং শৌচে বসিয়া কোথানি দিলে শুক্র নিঃসৃত হয় ও নিদ্রিতাবস্থায় স্বপ্নদোষ হয়। এবং মানসিক চাঞ্চল্য হেতু কখন কখন জাগ্রতাবস্থায়ও শুক্র স্খলিত হয়। এ অবস্থা ঘটিলে মনের ভাবের অনেক পরিবর্ত্তন হয়। স্বভাব খিট্ খিটে্ হয়। অল্প কারণেই অসন্তোষ উপস্থিত হয়, এবং শ্রী অসন্তোষ-ব্যঞ্জক হয়। সাহস কম হইয়া যায়। বিশেষ রাগের উদ্রেক ব্যতীতও তাহারা ভীরু এবং চিন্তা-যুক্ত হয় এবং অন্যের অত্যাচারে ক্রোধান্বিত হইতে সাহসী না হইয়া ক্ষমা-শীল হয়। এ সকল রোগী গুরুতর কার্য্যভার গ্রহণে সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত হয়। গাঢ়রূপে কোন বিষয় চিন্তা করিতে অক্ষম হয় এবং আপনার ও অন্যের প্রতি সর্ব্বদা বিরক্তি প্রকাশ করে ও আপনার দুরবস্থা ও পীড়ার বিষয় সর্ববদা চিন্তা করিয়া স্ফূর্ত্তি-বিহীন হইয়া কালযাপন করে। প্রথমতঃ অধিক শুক্র ব্যয় জন্য ক্ষুধার আতিশয্য হয়। সুতরাং তাহাদের অতিভোজনে ইচ্ছা হয়। কিন্তু ক্রমে পরিপাক-শক্তির হ্রাসতা হওয়ায় ক্ষুধা কমিয়া যায়। অপরিপাক জন্য উদর মধ্যে বায়ু জন্মে এবং সর্ব্বদা সেই জন্য তাহাদের মন স্ফূর্ত্তি-বিহীন হইয়া থাকে। ভালরূপ কোষ্ট পরিষ্কার হয় না, এবং তজ্জন্য উদরে কখন কখন বেদনা হয়। পরিপাকের ঔষধে এবং উত্তেজক ঔষধে কখন কখন ক্ষণিক শান্তি বিধান করে বটে, কিন্তু তাহাতে বিশেষ উপকার না হইয়া ক্রমে ক্রমে কোষ্ট আরও বদ্ধ হয়। তখন নিদ্রাবস্থায় অধিক পরিমাণে শুক্র নির্গত হয়। এ সময় আত্মীয় বন্ধু বান্ধবে যদি তাহাদিগের এই শোচনীয় অবস্থার কারণ জিজ্ঞাসা করেন, তখন লজ্জাবশতঃ তাহার প্রকৃত উত্তর দিতে না পারিয়া তাহারা অতিশয় দুঃখ প্রকাশ করে।
পীড়া ক্রমে অধিক হইলে কপালে প্রায় বামদিক্ হইতে দক্ষিণদিক্ ব্যাপিয়া লম্বা দাগ হয়। কপালের চর্ম্ম টান থাকে না, সঙ্কুচিত হইয়া যায়। ক্রমে ক্রমে স্থানে স্থানে শিরাসকল কোঁকড়ান হয় এবং অণ্ডকোষ মধ্যে কথকগুলিন কঠিন গ্রন্থি দৃষ্ট হইতে থাকে। পুনঃ পুনঃ প্রশ্রাব ত্যাগ করিতে ইচ্ছা হয়, এবং প্রশ্রাব-ত্যাগের সময় সমস্ত প্রশ্রাব মূত্র-কোষ হইতে নির্গত হয় না। সে সময় অতিশয় কষ্ট বোধ হয়। কখন কখন কোষ্ট অত্যন্ত বন্ধ হয় এবং গুহ্য দ্বার হইতে রক্ত নিঃসরণ হয়।
অল্প বয়ঃসে হস্থমৈথুন অভ্যাস করিলে ক্রমে চক্ষের চতুর্দ্দিকে কৃষ্ণবর্ণ রেখা পড়ে। বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে দাড়ি গোঁপ ভালরূপ প্রকাশ পায় না, অতি নরম ও পাতলা হইয়া উঠে। মাথার চুলও ক্রমে পাতলা হয়। যদি চিকিৎসা বা অন্য কারণে শুক্রব্যয় বন্ধ হয় তবে চুল পুষ্ট ও ঘন হয় এবং চুলের গোড়াতে সারভাগ অধিক বিতরিত হয় বলিয়া চুল ক্রমে স্বাভাবিক অবস্থা প্রাপ্ত হয়।
হস্তমৈথুনে একান্ত অনুরক্ত হইলে কোন কোন যুবা ব্যক্তি তোতলা হইয়া পড়ে। তাহাদিগের স্বাভাবিক স্বর বিকৃতাবস্থা প্রাপ্ত হয়। স্বরের গভীরতার ও শক্তির হ্রাস হয় এবং ক্রমে স্ত্রীলোকের স্বরের ন্যায় মৃদু হইয়া পড়ে। নিদ্রাবস্থায় এ সকল রোগীর কখন কখন অল্প অল্প প্রশ্রাব নিঃসরণ হয়। কখন কখন শুক্রের সহিত রক্ত নিঃসরণ হয়। ইহাদিগের প্রশ্রাব অতি পাতলা ও পরিমাণে অধিক হয় এবং ইহারা বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে স্ত্রীলোকের সংসর্গ ভালবাসে না এবং ক্রমে ক্রমে প্রায় পুরুষত্ব-বিহীন হইয়া পড়ে। ইহারা স্ত্রীসংসর্গ করিতে গেলে শিশ্নের বল অতি কম হয় এবং অতি অল্প কাল মধ্যেই শুক্র নির্গত হইয়া যায়। এজন্য ইহারা স্ত্রী-সংসর্গ অপেক্ষা হস্তমৈথুনে অধিকতর আরাম পায়। কিন্তু হায়! ইহার বিষময় ফল ইহারা তখনও ভাল রূপ জানিতে পারে না। যে সকল পীড়া ও অসুখ তাহাদিগকে সদা সর্ব্বদা আক্রমণ করে, তাহারা মনে করে যে এ সমস্ত অন্য কারণে উৎপন্ন হইতেছে। কোন প্রকার চিকিৎসা দ্বারা শান্তি প্রাপ্ত না হইয়া তাহারা ক্রমেই নিরাশ হইতে থাকে। এদিকে চিকিৎসকদের নিকটও হস্তমৈথুনের কথা ব্যক্ত করিতে পারে না। অনভিজ্ঞ চিকিৎসকও হস্তমৈথুনের বিষয় অনুসন্ধান করেন না। কখন জিজ্ঞাসা করিয়া সদুত্তর না পাইয়া রোগের মূল কারণের প্রতি অনুধাবন না করিয়া কেবল রোগের উপস্থিত লক্ষণাদিরই প্রতিকার করিতে চেষ্টা করেন।
রোগী হস্তমৈথুন করে কি না একথা পুনঃ পুনঃ জিজ্ঞাসা করা লজ্জাকর মনে করিয়া, চিকিৎসক তাহার বিষয় বিস্তারিতরূপে জিজ্ঞাসা করিতে ক্ষান্ত হয়েন। এবং চিকিৎসকের নিকট এ প্রকার কদর্য্য অভ্যাসের কথা বলিলে পাছে চিকিৎসক অবজ্ঞা করেন, এই বিবেচনায় রোগীও কোন ক্রমে এ বিষয় ব্যক্ত করিতে চাহেন না। এই রূপে চিকিৎসকও রোগের কারণ বিশেষ করিয়া নির্দ্দেশ করিতে পারেন না। এবং রোগীও চিকিংসকের আনুমানিক চিকিৎসায় শান্তি প্রাপ্ত না হইয়া, দিন দিন হতাশ হইয়া পড়ে। কখন কখন রোগীর শ্রবণ-শক্তিরও হ্রাস হয়। অনেক রোগীর বিষয়ে এ প্রকার দেখা গিয়াছে, যে চিকিৎসার দ্বারা শুক্র-নির্গমন বন্ধ হইলে শ্রবণ-শক্তির দোষও ক্রমে ক্রমে সংশোধিত হইয়া যায়।
শুক্র ক্রমে পাত্লা হইয়া পড়ে! এমন কি জল যে প্রকার বস্ত্রে লাগিয়া শুষ্ক হইয়া যায় এবং কাপড়ে পরে কোন চড়্চড়ে দাগ থাকে না; সেই প্রকার পাত্লা শুক্র কাপড়ে পড়িয়া শুকাইলে কোন প্রকার দাগই থাকে না। যাহার শুক্র এত পাত্লা হয়, তাহার সন্তান-উৎপদিকা শক্তিও নষ্ট হয়। কিন্তু চিকিৎসার দ্বারা এ প্রকার শুক্রও গাঢ় হইতে দেখাগিয়াছে এবং এ প্রকার রোগীকেও আরোগ্য লাভ করিয়া সন্তান উৎপাদন করিতে দেখা গিয়াছে।
হস্তমৈথুনে ধারণা-শক্তি একেবারে কমিয়া যায়। এমন কি স্ত্রীলোক স্পর্শ মাত্রেই শুক্র কাপড়ে নির্গত হয়। শুক্র পাতলা হইবার সঙ্গে সঙ্গেই ধারণাশক্তির হ্রাস হয়। এ প্রকার রোগীও অনেক দৃষ্ট হইয়াছে, যাহাদিগের স্ত্রীলোকের নিকট গেলে সংসর্গ হইবার পূর্ব্বেই স্পর্শ মাত্র জলবৎ শুক্র নির্গত হইয়াছে। অনেক বৎসর যাবৎ তাহাদিগের সন্তানাদি হয় নাই। কিন্তু চিকিৎসার পর তাঁহাদিগের স্ত্রীরা তাহাদিগের সহিত সংসর্গে অতিশয় ক্লান্ত হইতেন, এবং অল্পকাল মধ্যেই অন্তঃস্বত্ত্বা হইয়া উপযুক্ত সময়ে সর্ব্বাবয়ব-সম্পন্ন সুশ্রী সন্তান প্রসব করিয়াছেন।
দীর্ঘকাল হস্তমৈথুনের দ্বারা শরীর কাতর হইলে কখন কখন যুবকদিগকে মৃগি (Epilepsy) রোগাক্রান্ত হইতে দেখাগিয়াছে। মৃগি একারণ হইতে উৎপন্ন হইয়াছে কি না, রোগীর প্রশ্রাব পরীক্ষা করিলে জানা যাইবে। তদ্বিষয় বিস্তারিত রূপে পরে প্রকাশ হইবে। কখন কখন এক প্রকার মেহ (Bastard clap) এই প্রকার রোগীদিগকে আক্রমণ করে। ইহা হইলে মূত্র-প্রণালীতে জ্বালা, বেদনা ও টাটানি উপস্থিত হয় এবং ঘন ঘন প্রশ্রাব করিবার ইচ্ছা হয়।
কখন কখন নিম্নের অর্দ্ধাঙ্গের (Paraplogia) অবসন্নতা উপস্থিত হয়। অন্য কারণে যে অর্দ্ধাঙ্গের অবসন্নতা উপস্থিত হয় তাহাতে ও ইহাতে বিশেষ এই যে— এ প্রকার অর্দ্ধাঙ্গের অবসাদ-গ্রস্ত রোগী লোক দেখিলে অধিক খোঁড়াইয়া চলে, এবং চলিবার সময় যষ্টির আবশ্যক হয়। কিন্তু যখন একাকী বা হৃদয়ের বন্ধু বান্ধবদিগের সহিত চলে, তখন অপেক্ষাকৃত ভাল রূপ চলে।
একাদিক্রমে দীর্ঘকাল অধিক পরিমাণে শুক্র ব্যয় হইলে দৃষ্টিশক্তির হ্রাসতা জন্মে। চক্ষু দেখিতে জলযুক্ত এবং জ্যোতির্বিহীন বোধ হয়। এবং বোধ হয় যেন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পোকা সম্মুখে সর্ব্বদা উড়িতেছে। চক্ষুর তারা প্রশস্ত হয়। অপরিচিত ব্যক্তির মুখের দিকে স্পষ্ট রূপে চাহিয়া কথোপকথন করিতে পারে না। দৃষ্টি-শক্তির হ্রাসতা হইলেই রোগী ভীত হয়। তখন তাহার দিগের মনে হয় যে হস্তমৈথুন করাতেই এ বিপদ ঘটিয়াছে। হস্তমৈথুন ত্যাগ করিলেই দৃষ্টি শক্তি পুনরায় ক্রমে ভাল হয়। যে সকল লক্ষণ বিরতি করা গেল, সে সকল ধাতু-দৌর্ব্বল্যের সঙ্গে সঙ্গে প্রায়ই থাকে। কিন্তু তন্মধ্যে কতকগুলি লক্ষণ অন্য রোগের সঙ্গেও থাকে। এজন্য কতকগুলি লক্ষণ হইলেই তাহা ধাতু-দৌর্ব্বল্য-রোগ বলিয়া নিঃসংশয়-রূপে নির্ণয় করা উচিত নহে।
সুদীর্ঘকাল হস্তমৈথুনে আসক্ত থাকিলে ক্রমে পুরুষত্বের হানি হয়। প্রশ্রাব করিবার সময়ে, শৌঁচে যাইবার সময়ে, কোঁথানি দিলে এবং সুশ্রী স্ত্রীলোক দেখিলে, শিশ্ন-দ্বার হইতে এক প্রকার লালাযুক্ত শাদা রঙ্গের জলীয় পদার্থ নিঃসরণ হইতে থাকে। তাহাতে সর্ব্বদা কাপড়ে দাগ লাগে।
অনুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা দেখিলে তাহা যে পাতলা শুক্র তাহা নিঃসংশয় রূপে প্রমাণ হয়। শুক্রের মধ্যে যে অতি ক্ষুদ্রতম কীটাণু থাকে, তাহার দুই অংশ, অণ্ডাকৃতি এক মস্তক, ও লম্বা সূত্রবৎ লাঙ্গূল। ১ম চিত্র
১ম চিত্র
এস্পারমেটাজোয়ার প্রকৃতাবস্থা
দেখ। ইংরাজীতে ইহাকে “এস্পারমেটাযোয়া” বলে। ইহা ইচ্ছা মতে নড়ে এবং ইহার একটি জরায়ু মধ্যে শোণিত দ্বারা প্রতিপালিত হইয়া ভবিষ্যতে জীব-রূপে পরিণত হয়। ইহা সর্ব্বাবয়ব-সম্পন্ন হইলেই সন্তান সুস্থ বলিষ্ঠ ও দীর্ঘজীবী হয়। ইহার অবয়বের দোষ থাকিলেই সন্তান রুগ্ন ও ক্ষীণজীবী হয়।
বহুকাল হস্তমৈথুনে শুক্রের স্বভাবের অনেক পরিবর্ত্তন হয়, সুতরাং উহার মধ্যস্থ ক্ষুদ্র কীটাণুর অবয়রের অনেক পরিবর্তন হয়। কাহারও লাঙ্গূল ছিন্ন হইয়া যায়। কাহারও বা মস্তকের আকৃতির পরিবর্ত্তন হয়, কাহারও বা মস্তক ছোট ও শুষ্কপ্রায় হইয়া যায়। ২য় চিত্র দেখ।
২য় চিত্র
এস্পারমেটাজোয়ার বিকৃতাবস্থা
অধিক শুক্র ব্যয় জনিত মন দুর্ব্বল হইলে আত্মহত্যা করিবার ইচ্ছা কখন কখন বলবতী হইয়া পড়ে। কখন কখন সংন্যাস রোগের বাহ্যিক লক্ষণাদি বর্ত্তমান থাকে কিন্তু মস্তিষ্করাশিতে তাহার কোন চিহ্ন দেখা যায় না।
শিশু ক্রমে ক্রমে আকারে ছোট ও শিথিল হইয়া যায়। অণ্ডও ছোট হয়, মূত্র-কোষ ছোট হয়, ও তাহার অভ্যন্তরস্থ পরদা রক্ত-যুক্ত হয় ও তাহার গোলাপি রং হয়। শুক্রকোষের নিকটস্থ মূত্রকোষের পরদা সঙ্কুচিত হয়। এবং উপস্থ স্থানে স্থানে কঠিন হয়। কাটিলে রক্ত-হীন বোধ হয়। ফলতঃ ভালরূপ পরীক্ষা করিয়া দেখিলে জননেন্দ্রিয়ের শিথিলতা ও বিকৃতাবস্থা প্রতিপন্ন হয়।
মেরুদণ্ড ও মস্তিস্করাশির আকৃতিতে বিশেষ পরিবর্ত্তন বোধ হয় না, কিন্তু ক্রিয়াতে সময়ে সময়ে এত পরিবর্ত্তন বোধ হয় যে তাহা দেখিয়া বহুদর্শন-বিহীন চিকিৎসক মস্তিষ্কের ও মেরুদণ্ডের গুরুতর বিকৃতি অনুভব করিয়া রোগির প্রতি কঠিন ঔষধ ব্যবহারে প্রবৃত্ত হয়েন।
সুদীর্ঘ কাল হস্তমৈথুনের দ্বারা শুক্রব্যয় করিলে উন্মাদ রোগের আবির্ভাব হয়। এবং অনভিজ্ঞ চিকিৎসক বিশেষ কারণ নির্দ্দেশ করিতে না পারিয়া সাধারণ উন্মাদ রোগের চিকিৎসায় প্রবৃত্ত হয়েন। কিন্তু রোগী তাহাতে কোন শান্তি প্রাপ্ত না হইয়া, ক্রমে ক্রমে দুবল হইয়া অকালে কাল-গ্রাসে পতিত হয়েন। স্মৃতি-শক্তি হ্রাস হয়। রোগী পূর্ব্বে যাহা দেখিয়াছিল বা শুনিয়াছিল তাহা একপ্রকার ভালরূপ স্মরণ থাকে; কিন্তু অধুনা যাহা দেখে, শ্রবণ করে বা অধ্যয়ন করে তাহা ভালরূপ স্মরণ থাকে না। কথোপকথনের সময় কোন কথা মনে হইয়াও হয় না। রোগী তখন মনে মনে অতিশয় ব্যাকুল হয়।
রোগী ক্রমে অন্যমনস্ক হয়। এক বিষয় শ্রবণ করিতে করিতে অন্য বিষয় ভাবিতে আরম্ভ করে। কোন এক বিষয়ে নিপুণ হইতে পারে না। মন এক বিষয় হইতে অন্য বিষয়ে ভাসিয়া বেড়ায়। যদি কখন কোন বিষয় কাহারো নিকট বর্ণন করিতে আরম্ভ করে, তখন কিয়দংশ বলিতে বলিতে কিয়দংশ ভুলিয়া যায় এবং শ্রোতাকে জিজ্ঞাসা করে “তার পর আমি কি বলিতেছিলাম?” যদি শ্রোতা মনে করিয়া দিতে পারেন তখন পুনরায় কাহিনী বর্ণন করিতে আরম্ভ করে। নতুবা সেই স্থানেই বর্ণন করায় ক্ষান্ত হইতে বাধ্য হয়। মন সর্ব্বদা বিষণ্ন ভাব ধারণ করিয়া থাকে। কোন কার্য্যই ভাল লাগে না। কোন কার্য্যেই মন ভালরূপে নিবিষ্ট হয় না। কোন অবস্থাতেই সুখবোধ হয় না। নিত্য ক্রিয়াও অসুখ-কর বোধ হয়, জীবন ভার বোধ হয়, পৃথিবী অসার ও দুঃখের আগার বলিয়া বোধ হয়, সংসার হইতে অপসৃত হওয়াই ভাল মনে হয়। মরিতে ইচ্ছা হয় এবং কখন কখন আত্ম-হত্যা করিয়া প্রাণত্যাগ করিতে ইচ্ছা হয়।
অল্প উত্ত্যক্তিতেও বিরক্তি উপস্থিত হয়। অল্পতেই রাগ জন্মে এবং অধীনস্থ ব্যক্তিদিগের অল্প অপরাধেও গুরুতর দণ্ড দেওয়া হয়। তখন সকলেই বিষণ্ন ও সশঙ্ক ভাবে থাকে। কেহই সন্তুষ্ট করিতে পারে না। আজ যেটী সন্তুষ্টির কারণ, কল্য সেটী অসন্তোষের কারণ বলিয়া পরিগণিত হয়। মনের অবস্থা ঠিক থাকে না। তুষ্টি ও রুষ্টি প্রতিক্ষণে হয়। চিত্ত অব্যবস্থিত হইয়া পড়ে। বিবেচনার, মতলবের ও প্রতিজ্ঞার স্থিরতা থাকে না। শারীরিক সামান্য অসুখও গুরুতর মনে হয়।
পরিপাক ভাল হয় না। পেটের মধ্যে সামান্য ভুট্ ভাট্ করিলেও মন সেই দিকে যায়, এবং পেটে হাত বুলাইয়া পেটের দুরবস্থা চিন্তাতে অনেক সময় নষ্ট হয়। কোষ্ট পরিষ্কার হয় না। পুনঃ পুনঃ শৌচে যাইতে হয় এবং কোষ্ট পরিষ্কার হইল না এই চিন্তাতেও অনেক কাল অতিবাহিত হয়। কিসে পরিপাক হইবে, কিসে কোষ্ট ভাল পরিষ্কার হইবে, এও এক প্রধান দুর্ভাবনা হইয় উঠে এবং মন অনেক সময় অপ্রফুল্ল থাকে। হস্ত পদ চক্ষু মুখ কখন কখন জ্বালা করে। ব্রহ্মরন্ধ্র জ্বালা করে। এবং মস্তক অবসন্ন ও গরম বোধ হয়। শীতল দ্রব্যাদি—যথা—গোলাপ-জল ইত্যাদি—ব্যবহার করিলে শরীর ভাল বোধ হয়।
চলিতে গা ও মাথা টলে, বোধ হয় যেন পড়িয়া গেলাম। উচ্চ স্থানে আরোহণ করা এবং উচ্চ স্থান হইতে অবতরণ করা উভয়ই কষ্টকর বোধ হয়। কিছু পরিশ্রম করিলেই বুক ধড়্ পড়্ করে। বোধ হয় যেন কোন কঠিন হৃৎরোগ হইয়াছে। সময়ে সময়ে ওষ্ঠ শুষ্ক বোধ হয়। জলপিপাসা হয় এবং সময়ে সময়ে জল পান না করিয়া থাকা যায় না।
মানসিক চিন্তা করা অতীব ক্লেশকর বোধ হয়। কিছুকাল চিন্তায় নিমগ্ন থাকিলে মস্তক ঘূর্ণায়মান হয়, মন অবসন্ন হয়, চক্ষু অন্ধকার দেখায়, এবং শরীর দুর্ব্বল বোধ হয়। তখন বিশ্রাম করিতে ইচ্ছা হয়, এবং শরীর অলস হইয়া পড়ে। বিশ্রাম না করিলে শরীর আরাম প্রাপ্ত হয় না। মন সর্ব্বদা ভয় ভয় করে। জনসমাজে যাইতে রোগী লজ্জা বোধ করে। মন খুলিয়া কথোপকথন করা কষ্টসাধ্য হয়। “গোপনে আমি যে কুকর্ম্ম করি বুঝি কেহ তাহা টের পাইল, বুঝি আমি লজ্জা পাইলাম” ইত্যাদি চিন্তা সর্ব্বদা মনে জাগরুক থাকে এবং এই জন্যই সর্ব্বদা জনাকীর্ণ স্থানে যাইয়া কথোপকথন করা প্রীতিকর বোধ হয় না। নির্জ্জনে একাকী থাকিতে ভাল বোধ হয়। সকলের সহিত মাথা তুলিয়া চক্ষু মেলিয়া কথা বলা কষ্টকর বোধ হয়। মনের সাহস নষ্ট হয়। দৃঢ়তা যায়, আস্পর্দ্ধা ও স্থির-প্রতিজ্ঞতা সকলই যায়। ধীশক্তি নষ্ট হয়। ধর্ম্ম-বুদ্ধি ক্রমে দুর্ব্বল হয়। ক্ষুদ্রাশয়তা জন্মে ও বীরত্ব নষ্ট হয়। উচ্চাভিলাষ বিনষ্ট হয়। উদ্যম-শীলতা চলিয়া যায়। জীবনের চাঞ্চল্য একেবারে বিনষ্ট হয়। মন যতদূর সম্ভব ততদূর নিস্তেজ হইয়া মনুষ্যকে জন-সমাজের অনুপযুক্ত করে, এবং মনুষ্যত্ব নষ্ট করে।
যে কার্য করিতে ক্ষমতা থাকে তাহাতে ও সাহস হয় না। হিতাহিত জ্ঞান মলিন হইয়া পড়ে। পরিস্কার রূপে কোন বিষয় বুঝিবার বা প্রকাশ করিবার ক্ষমতা হ্রাস হয়। স্ত্রীলোকের নিকট যাইতে লজ্জা ও ভয় হয় এবং কথোপকথন করিতে ভাল বোধ হয় না। পাছে তাহাদিগের দুষ্কর্মের বিষয় জানিতে পারিয়া তাহাদিগকে কেহ ঘৃণা করে এই আশঙ্কায় তাহারা সতত ভীত থাকে। লোকের নিকট বিনয় ভাবে সৌজন্য প্রকাশ করিতে তাহারা প্রায় অনিচ্ছুক হয়। আত্মাদর কমিয়। যায়। নীচ-সংসর্গে কোন অসুখ বোধ হয় না, বরং আমোদ বোধ হয়।
শরীর পুষ্ট বলিষ্ঠ ও দৃঢ় হয় না, দুর্ব্বল পীড়াযুক্ত রক্তহীন ফ্যাকাসে হয়। চক্ষু বসিয়া যায়। বল কমিয়া যায়। মুখ-শ্রীতে সাহস, মনুষ্যত্ব, স্থৈর্য্য এবং বল বিক্রম প্রতীয়মান হয় না। চুল দাড়ি গোঁপ পাতলা হয়। অসময়ে চুল পাকিয়া যায়। আশু বার্দ্ধক্য উপস্থিত হয়। যদি রোগী হস্তমৈথুন-জনিত দৌর্ব্বল্যের সহিত অতিশয় মানসিক চিন্তায় বা অধ্যয়নে নিযুক্ত হইয়া মস্তিষ্ক-রাশিকে প্রপীড়ন করে, তবে যে তাহা হইতে কি বিষময় ফল উৎপন্ন হয় তাহা নিশ্চয় অনুভব করা কঠিন।
পিতা মাতা, অভিভাবকগণ ও শিক্ষকগণের নিতান্ত কর্ত্তব্য যে তাঁহারা সর্ব্বদা বালকদিগের স্বাস্থ্য বিষয়ে অনুসন্ধান করেন। সামান্য অসুখ বা রোগ উপস্থিত হইলে তাহার নিগূঢ় কারণ অনুসন্ধান করেন। হস্তমৈথুন আরম্ভ করিলে প্রথমে যে যে লক্ষণাদি দ্বারা তাহা অনুমান করা যায় তাহার প্রতি যেন দৃষ্টি রাখেন। হস্তমৈথুনের বিষময় ফল না জানিয়া অধি কাংশ বালক হস্তমৈথুন আরম্ভ করে এবং যখন কথক গুলি গুরুতর রোগের উৎপত্তি হয়, তখন অনুসন্ধান দ্বারা জানিতে পারে যে হস্তমৈথুনই ইহার এক প্রধান কারণ। তখন অভ্যাস বলবান্ হইয়াছে বলিয়া ছাড়া কঠিন হয়, এবং কষ্ট-কল্পনা করিয়া ছাড়িলেও যে গুরুতর শারীরিক ও মানসিক অনিষ্ট হইয়া গিয়াছে, তাহার আর কোন ক্রমেই সংশোধন হয় না।
সহস্রবার অনুতাপ করিলেও অমূল্য স্বাস্থ্য আর পুনঃপ্রাপ্ত হওয়া যায় না। ‘কেন এমৎ দুষ্কর্ম্ম করিয়াছিলাম, পরিণামে এত অনিষ্ট ঘটিবে আগে জানিলে ইহাতে প্রবৃত্ত হইতাম না,— ইত্যাদি অনুতাপে তখন আর সারে না। সজীব সবল ও কার্য্যক্ষম মন, সর্ব্ব-শাস্ত্র-প্রবেশিনী তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, উদ্যম-শীল ও অধ্যবসায়যুক্ত আত্মা, উচ্চাভিলাষ, ক্ষমা, দয়া, সংযমশক্তি, স্বাধীনতা, উল্লাস, স্ফূর্ত্তি এবং বিপদে অটলতা ও অসামান্য সাহস, বল, বীর্য্য, স্থৈর্য্য, ও ঔদার্য্য আর ফিরিয়া আসে না।
হস্তমৈথুন-কারীরা কখন কখন শরীরের নানা স্থানে বেদনা অনুভব করে। বুকে পিঠে উরুতে ও মস্তকেই সচরাচর বেদনা অনুভূত হয়। বেদনা কখন কখন এত কষ্ট-দায়ক হয় যে বোধ হয় যেন শরীরের অভ্যন্তরে কোন গুরুতর রোগ জন্মিয়াছে, কিন্তু বাস্তবিক তাহা নহে। চক্ষু, হাত পায়ের চেটো, নাকমুখ ও সর্ব্বাঙ্গ কখন কখন জ্বালা মুখে কখন তিক্ত আম্বাদ, কখন মিষ্ট আস্বাদ, কখন কটু আস্বাদ ও দুর্গন্ধ অনুভব হয়।
মুখের লালা কখন কখন ঘন ও পরিমাণে অল্প হইয়া যায়। শরীরের স্থানে স্থানে— বিশেষতঃ উরুতে ও পায়ে যেন কেহ চিমটি কাটিতেছে বোধ হয়।
শরীরের স্থানে স্থানে—বিশেষতঃ মস্তকে কখন কখন দব্দব্ করে। শরীর স্থানে স্থানে সময়ে সময়ে সঙ্কোচিত হয়, এবং নাচে (অর্থাৎ মাংশপেশি সময়ে সময়ে নড়ে)। ইহাকে সাধারণতঃ স্পন্দন কহে। বুকের পার্শ্ব, বাহু, উরু, পা, এবং চক্ষুই সাধারণতঃ নড়ে।
কখন কখন পেটের দক্ষিণ পার্শ্বে সঙ্কোচ ভাব ও ঈষৎ বেদনা উপস্থিত হয়। বুকের সম্মুখের অস্থির নিম্নে পেটে কখন কখন বেদনা উপস্থিত হয়। টিপিলে বা চাপ দিলে সে বেদনার বৃদ্ধি হয়। রোগী, এ বেদনা ও পেটের দক্ষিণপার্শ্বস্থ সঙ্কোচ ভাবের জন্য চিত হইয়া শয়ন করিতে পারে না। চিত হইয়া শয়ন করিলে উক্ত বেদনা ও সঙ্কোচ ভাব উভয়ই কষ্টদায়ক হয়। এসমস্ত বেদনা ও সঙ্কোচ ভাব সময়ে সময়ে— বিশেষ আহারের পরে— বৃদ্ধি পায়। এবং তজ্জন্য নিশ্বাস প্রশ্বাসও ঘন ঘন বহে। ইহাও রোগীর অসুখের এক কারণ হয়। দৃষ্টি-শক্তি ও শ্রবণ-শক্তি দুর্ব্বল হুইয়া পড়ে। চক্ষুতে বেদনা ও কাণে শোঁ শোঁ, ভোঁ ভোঁ শব্দ অনুভূত হয়।
মস্তক অবসন্ন বোধ হয়, এবং ঘোরে। নিম্নে দৃষ্টি করিলে— যথা শিঁড়ির উপরে দাঁড়াইয়া, নীচের দিকে চাহিলে,— বোধ হয় যেন মাথা ঘুরিয়া পড়িয়া গেলাম। এই আশঙ্কায় কোন কোন রোগী দোতালা হইতে বহুদিবস পর্য্যন্ত নীচের তালায় নামিতে পারে না। বুক ধুক্ ধুক্ ও কখন কখন ধড়্ পড়্ করে এবং মনও ধু ধু করে। মনে ভরসা থাকে না এবং সাহসও থাকে না।
নিদ্রা ভাল-রূপ হয় না। নিদ্রাবস্থায় নানাপ্রকার স্বপ্ন দর্শন হয় এই জন্য সময়ে সময়ে নিদ্রা ভঙ্গ হয়। স্বপ্ন প্রায়ই ভয়ানক। যেন সর্প ব্যাঘ্র প্রভৃতি আক্রমণ করিতেছে। কাটাকাটি মারামারি ও রক্তারক্তি দৃষ্টিগোচর হইতেছে। ভয়ানক জন্তু ও দৃশ্য দেখিয়া পলায়নে চেষ্টা করা হইতেছে। কিন্তু দ্রুত দৌড়াইবার শক্তি হইতেছে না, পা উঠিতেছে না, মন হতবুদ্ধি ও হতাশ হইতেছে, মনের উদ্বেগ ক্রমেই বৃদ্ধি হইতেছে। বুক তখন ধড় পড় করিতে আরম্ভ হয়। এই প্রকার ঘোর অসুখের অবস্থায় কিছু কাল যাপন করিয়া হটাৎ নিদ্রা ভঙ্গ হয়। তখন অসুখের অনেক শান্তি বোধ হয়। এ সমস্ত মিথ্যা, কিছুই নহে, স্বপ্ন মাত্র এই সংস্কার মনে স্থির হয়, কিন্তু বুক তড়পানি প্রকৃতই উপস্থিত হয়,এবং কিছু কাল ঐ অবস্থাতে থাকিয়া ক্রমে ক্রমে নিবৃত্ত হয়। রোগের প্রারম্ভে যে সকল স্বপ্ন দেখা যায় তাহার স্বভাব এ প্রকার ভয়ানক ও কষ্ট-দায়ক নহে। সে সময় বোধ হয় যেন কোন স্ত্রীলোকের সহিত কথোপকথন হইতেছে, বা আলিঙ্গনের উপক্রম হইতেছে, বা আলিঙ্গন বা সংসর্গ হইতেছে কিন্তু সংসর্গ হইবার অব্যবহিত পূর্ব্বেই হউক বা সংস্পর্শ মাত্রেই হউক শিশ্না সবল হয় এবং শুক্র কাপড়ে লাগে নির্গত হইয়া তখনই চৈতন্য জন্মে। নির্গত হইবার পূর্ব্বে বা তৎ সময়ে চৈতন্য জন্মিলে। তাহাতে সচরাচর শুক্র নির্গত হওয়ার কোন বাধা ঘটে না। কখন কখন নির্গত হয় না। এ অবস্থাতে অনেক প্রকার অসুখ জন্মে। শিশ্নের গোড়া টন্ টন্ করে ও তথায় বেদনা বোধ হয়। মূত্র ত্যাগের সময় মূত্র নালীতে (Urethra) জ্বালা বোধ হয়। যে পর্য্যন্ত অন্য কোন উপায়ে ঐ নির্গমোম্মুখ শুক্র নির্গত না হয় সে পর্য্যন্ত নানা প্রকার অসুখ অনুভুত হইতে থাকে।
কখন কখন স্বপ্নে এরূপ বোধ হয় যে, পশুর বা পুরুষের অথবা অপ্রাপ্ত বয়স্কা বালিকার সহিত সংসর্গ হইতেছে। স্ত্রী সংসর্গে যে পরিমাণে শুক্র নির্গত হয় স্বপ্নাবস্থায় তদপেক্ষা অধিক পরিমাণে শুক্র নির্গত হয় এবং স্ত্রী সংসর্গের পর যে পরিমাণে শারীরিক দৌর্ব্বল্য ও মানসিক নিস্তেজস্কতা হয়, স্বপ্নদোষের পরে শরীর তদপেক্ষা অধিক দুর্ব্বল এবং মন অধিকতর নিস্তেজ হয়।পরীক্ষা ও অনুসন্ধান দ্বারা দেখা গিয়াছে যে হস্তমৈথুনে স্বপ্নদোষ[১] অপেক্ষা অধিকতর শুত্রু নির্গত হয় এবং তাহার পর শারীরিক দৌর্ব্বল্য ও মানসিক নিস্তেজস্কতা অধিকতর হয়। হস্তমৈথুনে শুক্র নির্গত হইবার সময় সর্ব্বাঙ্গে বিশেষ মেরুদণ্ডে ও মস্তিষ্করাশিতে যে ঝাঁকি লাগে তাহাতে মেরুদণ্ড ও মস্তিষ্ক রাশি বিশেষ ক্লিষ্ট হয় এবং ইহারা বিশেষ রূপে ক্লিষ্ট হইলে শরীরের সকল যন্ত্র বিকৃতাবস্থা প্রাপ্ত হয়। তজ্জন্যই দেহে ক্রমে নানা প্রকার গুরুতর রোগের উৎপত্তি হয় এবং সেই সমস্ত রোগের প্রতীকার না হইলেই দেহের গৌরব ও মনুষ্যের মনুষ্যত্ব একেবারে নষ্ট হয়। অণ্ডকোষ মধ্যে এতজল জমিয়া স্ফীত তা (Hydrocele) উপস্থিত হয় যে প্রথমত এক দিগে পরে দুই দিগেই স্ফীততা (Hydrocele) জন্মে। এ অবস্থায় কোষ সমান থাকে না, একটা ছোট ও একটা বড় হইয়া পড়ে।
অণ্ডকোষের স্ফীততা জন্মিলে শিশ্নের দৈর্ঘ্য কমিয়া যায়। অণ্ড (বিচি) জল দ্বারা প্রপীড়িত হইয়া আপনক্রিয়া “শুক্র প্রস্তুত করণ” উপযুক্ত মত সম্পাদন করিতে পারে না এবং তন্নিবন্ধন কামের চৈতন্য ও শিশ্নের বল জমে কমিয়া যায়।
কোন কোন সময়ে কেবল অণ্ড বিচি ছোট হইতে দেখা যায়। এ অবস্থাতে ও অণ্ড আপন ক্রিয়া সম্পাদন করিতে পারে না সুতরাং কামের চৈতন্য ও শিশ্নের শক্তি ক্রমে কমিয়া যায়। কখন কখন অণ্ডকোষ ও শিশ্ন ঠাণ্ডা বোধ হয়। এবং শিশ্ন খর্ব্ব, দুর্ব্বল এবং নেকড়ার (বস্ত্রখণ্ড) মত শিথিল হইয়া যায়। যুবা পুরুষ ও মধ্যবয়স্কব্যক্তিদিগের শিশ্নের বালকের শিশ্নের মত দেখায়! এ অবস্থাতে পুরুষ প্রায়ই স্ত্রী সংসর্গে অক্ষম হইয়া পড়ে। যোনি মধ্যে প্রবেশ করিবার শক্তি বিহীন হইয়া পড়ে। মনের ইচ্ছা থাকে এজন্য স্ত্রীসংসর্গের নিমিত্ত ব্যাকুল হইয়া ব্যাগ্র ভাবে স্ত্রীকে আলিঙ্গন করে কিন্তু মনের চাঞ্চল্য হেতু কাপড়েই শুক্র নির্গত হইয়া যায়। তখন লজ্জা, বিবাদ, ক্ষোভে, একেবারে মনকে আচ্ছন্ন করে। এ অবস্থাতে পুরুষ আপনাকে ঘৃণিত বোধে পৃথিবী পরিত্যাগেও পরিত্যাগেও ইচ্ছা করে। কখন কখন মূত্র নালী (Urethra) তে সুড় সুড়ি বোধ হয়। এসুড় সুড়ি নিরর্থক নহে। কিছু কাল সুড় সুড় করিয়াই শুক্র ফোটা ফোটা করিয়া বা চোয়াইয়া নির্গত হয়। শুক্র নির্গত হইলেই সুড় সুড়ির নিবৃত্তি হয়। ধাতু দুর্ব্বল হইলে তৎ সঙ্গে সঙ্গে জনেনন্দ্রিয়ের সমস্ত যন্ত্রই দুর্ব্বল ও বিকৃতাবস্থা প্রাপ্ত হয়। স্বপ্নদোষ সাধারণত ইহার একটী ফল। স্বপ্ন দোষের বিষয় পূর্ব্বে কিছু বিবৃত হইয়াছে। দৌর্ব্বল্যের অবস্থার প্রথমে নিদ্রাবস্থায় স্ত্রীসংসর্গের স্বপ্ন দৃষ্ট হয়, পরে অন্যপ্রকার কুৎসিত সংসর্গের স্বপ্ন দৃষ্ট হইয়া থাকে। অবশেষে বিনা স্বপ্নে নিদ্রাবস্থায় শুক্র নির্গত হয় এবং শুক্র নির্গত হইবার সময় বা অব্যবহিত পূর্ব্বে বা পরে যে প্রকার নিদ্রা ভঙ্গ হইত, আর সেপ্রকার নিদ্রা ভঙ্গ হয় না। রজনীতে নিদ্রাবস্থায় যে শুক্র নির্গত হয়, পর দিবস প্রাতে কাপড়ের দাগ দেখিয়া ও শারীরিক দৌর্ব্বল্য ও মানসিক নিস্তেজস্কতা অনুভব করিয়া, তদ্বিষয় জানা যায়। দিবা ভাগে নিদ্রাবস্থায়ও এ প্রকার ঘটনা হয়। ক্রমে কুৎসিত অভ্যাসে ধাতু অধিকতর দুর্ব্বল হইলে অর্দ্ধ নিদ্রাবস্থায়[২] শুক্র নির্গত হয়। ইহাতে নিদ্রার ব্যাঘাত জন্মে। ইহা অতীব ভয়ানক অবস্থা। হস্তমৈথুন ও অতিশয় শুক্রব্যয়ে যে মনুষ্যের, কত বড় ভয়ানক দুরবস্থা হয় তাহা লিখিয়া শেষ করা দূরে থাকুক মনেতেও ধারণা করা যায়না। দৌর্ব্বল্য অতিশয় গুরুতর হইলে জাগ্রতাবস্থায় মানসিক চাঞ্চল্য হেতু শিশ্ন যদি সবল হইয়া উঠে, তাহা হইলে শয়নের দ্রব্য যথা কাপড়, বালিস বিছানা বা হস্ত পদাদির ঘর্ষণে শুক্র নির্গত হয়। জননেন্দ্রিয় এত শিথিল হয় যে সাধারণ ঘর্ষণেও শুক্র ধারণ করা যায় না। পরে শিশ্নের অগ্রভাগ সর্ব্বদা সিক্ত ও পিচ্ছল থাকে, সততই পাতলা শুক্র নির্গত হইতে থাকে। প্রস্রাবের সময় ফোটা ফোটা বা সূত্রবং শুক্র নির্গত হয় এবং শৌচে বসিয়া বেগ দিলে ফোটা ফোটা বা সূত্রবৎ শুক্র নির্গত হয় বা শিশ্নের অগ্রভাগ দিয়া চোঁয়াইয়া পড়ে। প্রস্রাবের সহিত ও শৌচে বসিয়া বেগ দিলে, ও সাধারণতঃ সময় সময় বা সর্ব্বদা পাতলা শুক্র নির্গত হওয়াকে শুক্রমেহ (Spermatorrhoea) রোগ বলে। ইহা ধাতু দৌর্ব্বল্যের ফল। কেহ কেহ ইহাকে স্বতন্ত্র ব্যাধি বলিয়া স্বীকার করেন না। ধাতু দৌর্ব্বল্য ব্যাধি এবং শুক্রমেহ (Spermatorrhoea) তাহার এক প্রধান লক্ষণ বা ফল মাত্র। কেহ বলেন যে শুক্রমেহ (Spermatorrhoea) স্বতন্ত্র ব্যাধি। হস্তমৈথুন, অতিশয় শুক্র ব্যয়, ধাতুর পীড়া বা গরমির পীড়া জন্য ধাতু দৌর্ব্বল্য তাহার এক প্রধান কারণ।
আমার মতে স্বপ্নদোষ যেপ্রকার স্বতন্ত্র পীড়া নহে, ধাতু দৌর্ব্বল্য ও ইন্দ্রিয় সিথিলতার এক প্রধান লক্ষণ, সেই প্রকার শুক্রমেহ (Spermatorrhoea) ধাতু-দৌর্ব্বল্যের এক প্রধান লক্ষণ ও ফল মাত্র। যাহা হউক এবিষয় লইয়া বাদানুবাদ করিয়া কাল ক্ষেপণ করা আমার উদ্দেশ্য নহে। আমি ইহাকে শুক্রমেহ (Spermatorrhoea) কে ধাতু-দৌর্ব্বল্যের এক প্রধান লক্ষণ ও ফল বলিয়া নির্দ্দেশ করিলাম।—ধাতু দৌর্ব্বল্য গভীর হইলে সর্ব্বদা আস্তে আস্তে শুক্র নির্গত হয় এবং তাহা অধিক টের পাওয়া যায় না, ও জননেন্দ্রিয় এরূপ শিথিল হয় যে শুক্র নিঃসরণ টের পাওয়া কঠিন। কখন কখন একেবারে অধিক পরিমাণে শুক্র নির্গত হওয়াও রোগী টের পায়না। কখন কখন রোগির বুদ্ধির এত ভ্রংশ হয় যে ঘৃণা লজ্জা একেবারে যায়। লোকের সাক্ষাতেও হস্তমৈথুন করিতে ঘৃণা বা লজ্জা বোধ করে না। যদি নিষেধ করা যায় তাহা হইলে সে বিরক্ত হয় এবং নিষেধ মানে না। এ অবস্থায় দুই হাত রজ্জু দ্বারা সক্ত করিয়া না বাঁধিলে তাহাকে দুষ্কর্ম হইতে ক্ষান্ত রাখা যায়না। হাতের দড়ি কোন প্রকারে খুলিতে পারিলে তৎক্ষণাৎ সে হস্তমৈথুন করিতে আরম্ভ করে। যে দুষ্কর্ম্ম দ্বারা মনুষ্য এত নিস্তেজ হয়, যাহাতে মনুষ্যের এত নিকৃষ্টাবস্থা প্রাপ্তি হয়, যাহাতে ধীশক্তি একেবারে জরাগ্রস্ত হয়, যাহাতে মনুষ্য একেবারে পশুসমান হইয়া উঠে, যাহাতে মনুষ্যের সবল কর্ম্মক্ষম দেহ একেবারে বল-বিহীন হইয়া সাংসারিক সাধারণ কার্য্যেরও অনুপযুক্ত হইয়া পড়ে, সে দুষ্কর্ম্ম নিবারণ বিষয়ে যে কাহারই বিশেষ মনোযোগ নাই এ অতীব আশ্চর্য্য।
এ বিষয়ে পুস্তকাদিও সচরাচর দেখিতে পাওয়া যায় না। যদিও কেহ কদাচ এবিষয় লিখেন, তবে কুৎসিত লেখা বলিয়া অনেকেই পাঠ করিতে প্রবৃত্তই হয়েন না। যদি কেহ পাঠ করেন তবে তিনি আপন সন্তানদিগকে ও অধীনস্থ শিশুদিগকে এবিষয় উপদেশ ও সাবধান করিতে লজ্জাবোধ করেন। অনেক দিবস অমনোযোগে অতিবাহিত হইয়াছে। এ দুষ্ক্রিয়া ক্রমশঃই বাড়িতেছে। হে বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ! আর বিলম্ব করা বিধেয় নহে। শরীররক্ষা বিষয়ে ছাত্রদিগকে উপদেশ করিতে আর লজ্জা বোধ করা উচিত নহে। ছাত্রদিগের কার্য্যে মনোযোগ রাখা উচিত। ছাত্রদিগের বাহ্য, শ্রী, বাক্য ও ভাব-ভঙ্গীর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখা উচিত। সময়ে সময়ে স্পষ্ট-রূপে হস্তমৈথুনের বিষময় ফলের বিষয় ভাল করিয়া উপদেশ করা উচিত। যে অভ্যাস করিয়াছে, সে উপদেশ পাইলে অবশ্যই পরিত্যাগ করিবে এবং যে অভ্যাস করে নাই সে ও উপদেশ পাইলে করিবে না। অনেকে মনে করেন যে যাহারা হস্তমৈথুন কি তাহা জানে না এবং যাহাদিগের মনে পাপস্পর্শ হয় নাই তাহারা —সাবধান করিলে—পাছে কুকর্ম্ম অভ্যাস করে এজন্য তাহাদিগের নিকট এবিষয় উপস্থিত করা হিতকর নহে। এটী সম্পূর্ণ ভ্রম কেন না কোমল অন্তঃকরণে যে উপদেশ দেওয়া যায় সে দৃঢ় হইয়া প্রবেশ করে। শিক্ষকের প্রতি ছাত্রদিগের যখন বিশেষ শ্রদ্ধা দেখিতে পাওয়া যায় শিক্ষকের উপদেশই যখন ছাত্রেরা বিশেষ করিয়া মানে, তখন শিক্ষক অজ্ঞাত বিষয় উপদেশ করিলে কেন ছাত্রেরা বিপরীত আচরণ করিবে? হস্তমৈথুনে যে কি কি অনিষ্ট হয়, শরীর ও বুদ্ধি যে একেবারে নিস্তেজ হয়, মনুষ্যের মনুষ্যত্ব নষ্ট হয়, সস্তানোৎপাদিকা শক্তি নষ্ট হইয়া যায় এবং নানা প্রকার ভয়ানক উৎকট রোগে দেহ ও মনকে অধিকার করে এবিষয়ে সর্ব্বদাই ছাত্রদিগকে বিস্তারিত রূপে উপদেশ করা হিতাকাঙ্ক্ষী শিক্ষকের কর্ত্তব্য। হিতাকাঙ্ক্ষী শিক্ষকের ন্যায় অভিভাবক ও পিতা মাতা সর্ব্বদা সতর্ক থাকিবেন। বালকের দৈহিক বা আন্তরিক কিছু পরিবর্ত্তন দেখিলেই সন্দিহান হইবেন। অনুসন্ধানে ব্যাকুলতা প্রকাশ করিবেন। এবং অশুভ ঘটনার সূত্রপাত বুঝিতে পারিলে সাবধান হইবেন। মনের ভাব প্রয়োজন মত ব্যক্ত করিতে লজ্জা করিবেন না। সামান্য লজ্জার বশবর্ত্তী হইয়া উপদেশ করিতে ক্ষান্ত থাকিলে নিরাশ্রয় বালকের সর্বনাশের সূত্রপাত হইবে।
জগদীশ্বর নিরাশ্রয় সন্তানের প্রতিপালনের ভার যাহাদিগের প্রতি অপর্ণ করিয়াছেন, তাহারা যেন কেবল মাত্র অন্ন বস্ত্র ও প্রয়োজনোপযোগী দ্রব্যাদি প্রদান করিয়া এবং সাধারণ শিক্ষার্থ শিক্ষকের হস্তে ন্যস্ত করিয়া ক্ষান্ত না হয়েন। সন্তান শারীরিক নিয়ম কত দূর পালন করিতেছে এবং তাহার শরীর কত পরিমাণে বর্দ্ধিত বলিষ্ঠ ও পুষ্ট হইতেছে এবং তন্নিবন্ধন মনও উপযুক্তরূপে বর্দ্ধিত হইতেছে কি না, তাহার প্রতি বিশেষ মনোযোগ রাখা উচিত।
কোন পাপ নির্দ্দোষ সন্তানকে স্পর্শ করিবার চেষ্টা করিতেছে কিনা, বা স্পর্শ করিয়া শারীরিক ও মানসিক অবনতি সিদ্ধ করিবার চেষ্টা করিতেছে কি না এ বিষয়ে সর্ব্বদা বিশেষ অনুসন্ধান করিবেন।
যে যে লক্ষণ দ্বারা এ সমস্ত জানা যায়, এবং কোন্ বিষয়ে কি উপায়ে সতর্ক হইতে হয়, কি নিয়মে রাখিলে, কি প্রকার আহার দিলে, কোন্ সংসর্গে সহবাস করাইলে এবং কি প্রকার শিক্ষা বিষয়ের ব্যবস্থা করিলে শরীর ও মন নির্দ্দোষরূপে প্রকৃতাবস্থায় পরিবর্দ্ধিত হইতে পারে, এবং দুর্ভাগ্যক্রমে বালকের সর্ব্বনাশের সূত্রপাত হইলেই বা কি কি উপায় অবলম্বন করিলে পাপাসক্ত বালকের শরীর ও মন পুনরায় প্রকৃতাবস্থা প্রাপ্ত হইতে পারে এ সমস্ত বিষয় পরে ক্রমে বিবৃত হইবে।
ক্রমে সন্তানোৎপাদিকা শক্তির হ্রাস হয়। দুষ্কর্ম্ম ত্যাগ না করিলে সন্তানোৎপাদিকাশক্তি একেবারে বিনষ্ট হয়।
সময়ে সময়ে অণ্ডকোষ ঝুলিয়া পড়ে এবং কুচ্কি অতিশয় দুর্গন্ধ হয় ও সর্ব্বাঙ্গে বিলক্ষণ দুর্গন্ধ অনুভূত হয়। এবং কুচ্কিতে ও তন্নিকটস্থ স্থানে দদ্রূরোগ উপস্থিত হয়। শিশ্নের অগ্রভাগ অধিকপরিমাণে দুর্গন্ধ হয়। সময়ে সময়ে অণ্ডকোষের চামড়ার উপর নানা প্রকার চর্ম্মরোগের উৎপত্তি হয়।
সর্বাঙ্গের চর্ম্ম শুষ্ক ও লাবণ্যবিহীন হয় ও অপেক্ষাকৃত পিঙ্গলবর্ণ হয়। ওষ্ঠে ও দাঁতে রস থাকে। রোগী সময়ে সময়ে শিরঃপীড়াতে কাতর হয়, এবং শরীরে অতিশয় রুক্ষি বোধ করে, গলার আওয়াজ কখন কখন ভারও নিস্তেজ হয়। শরীর কখন কখন এমন মোটা হয় দেখিলে বোধ হয় যে কোন পীড়াই নাই, কিন্তু রোগী বলে যে তাহার শরীরে কিছুমাত্র বল নাই। আহার কমিয়া যায়। মাংসাদি কিছুমাত্র সহ্য হয় না। খাইলে গরম হয় সর্ব্বাঙ্গে কখন কখন জ্বালা হয় এমন কি শীতকালেও লেপ গায়ে দিবার আবশ্যক হয় না।
শিশ্ন শক্ত হয়, কিন্তু অধিকক্ষণ থাকে না! এবং সহজে শুক্রও নির্গত হয় না। অনেক চেষ্টায় অতি অল্প পরিমাণ জলবৎ শুক্র নির্গত হয়। তদুৎপত্তির কারণ ধাতুদৌর্ব্বল্য ও নানা কারণ উপস্থিত হইতে পারে।
অনেক দিবস পর্য্যন্ত কোষ্টবদ্ধ থাকিলেও অনাহুত শুক্র নিঃসরণ (Spermatorrhea) উপস্থিত হয়। অনাহুত শুক্র নিঃসরণ (Spermatorrhea) নিবারণ জন্য সময়ে সময়ে অজ্ঞ চিকিৎসকেরা কঠিন ও তীব্র ঔষধ প্রয়োগ করে। সেই সমস্ত ঔষধ কখন কখন রোগ প্রতীকার না করিয়া বরং রোগ বদ্ধমূল করে। ক্যাণ্ড্যাবাইতিস, সোরা, সিড্লিট্জ পাউডার দুর্ব্বল জননেন্দ্রিয়কে উত্তেজিত করিয়া আরো দুর্ব্বল করে।
তীব্র বিরেচক যথা—এলোয্ কলোসিত্থ, এস্ক্যামনি ইত্যাদি নাড়ীর নিম্নভাগকে উত্তেজিত করে এবং তাহার নিকটবর্ত্তী জননেন্দ্রিয়ও তৎসঙ্গে উত্তেজিত হইলে অনাহুত শুক্র নিঃসরণ-রোগের (Spermatorrhea) বৃদ্ধি পায়।
নাড়ীর নিম্নদেশবাসী সূক্ষ্ম ও শ্বেতবর্ণ ক্ষুদ্র কৃমি কখন কখন জননেন্দ্রিয়কে এপ্রকার উত্তেজিত করে যে অনাহুত শুক্র নিঃসরণ (Spermatorrhea) রোগের উৎপত্তি হয়।
বহুদিন স্থায়ী অর্শরোগ, মূত্রকৃচ্ছ্র রোগ (Stricture of Urethra), ধাতুর পীড়া, মেহ, (Gonorrhea), মধুমেহ (Diabetes), গরমির পীড়া, অতিশয় পারদ সংযুক্ত ঔষধ সেবন, মুদো (Phymosis), মস্তিষ্করাশির নিম্ন পশ্চাৎভাগের উত্যক্তি বা আসক্তি, অপরিমিত আহার, যাহাতে সর্ব্বদা অজীর্ণ রোগ হয়, অপরিমিত তামাক সেবন, অপরিমিত লঙ্কা মরিচ সেবন, অপরিমিত নিম্ব, কর্পূর, গরম মশলা, মদ্য অহিফেণ ইত্যাদির সেবনেও সময়ে সময়ে ধাতুদৌর্ব্বল্য রোগ উপস্থিত হয়। এদেশে সন্ন্যাসিগণ নিম্ব বা লঙ্কামরিচ সেবন করিয়া পুরুষত্ব নষ্ট করিবার চেষ্টা করেন। তাঁহারা বলেন যে, ইন্দ্রিয়চাঞ্চল্য, বিশেষতঃ জননেন্দ্রিয়ের চাঞ্চল্য থাকিলে, যোগ, যাগ, তপস্যা, ব্রত, নিয়ম, ইত্যাদিতে মনোযোগ হয় না।
এদেশীয় ইন্দ্রিয়পরায়ণ পুরুষগণ কখন কখন দ্বিতীয় সংসারের অনুরোধে কামেন্দ্রিয়ের চাঞ্চল্য সম্পাদন জন্য অহিফেণ সেবন আরম্ভ করেন। তাঁহাদিগের সাধারণ সংস্কার এই যে অহিফেণ সেবন করিলে ধারণাশক্তির বৃদ্ধি হয়। বাস্তবিকও অহিফেন সেবন আরম্ভ করিলে প্রথম দিন কতক ধারণাশক্তির বৃদ্ধি হয়; কিন্তু ক্রমে ক্রমে পুরুষত্ব একেবারে পূর্ণদৌর্ব্বল্যে উপস্থিত হয়।
অধিককাল গরম স্থানে বাস বা গরম শয্যায় শয়ন করিলে, কখন কখন স্বপ্নদোষ ও অনাহুত শুক্র-নিঃসরণ (Spermatorrhoea) উপস্থিত হয়।
এদেশের প্রাচীন পণ্ডিতগণ বসন্তকালে কামরিপু দমনের চারিপ্রকার উপায় স্থির করিয়াছেন। তাঁহাদিগের মতে বসন্তকালই কামরিপুর চাঞ্চল্যের সময়।
“বসন্তে ভ্রমণং কুর্য্যা-
দথবা বহ্নি-সেবনম্।
অথবা যুবতী নারী,
অথবা নিম্বভোজনম্॥
অতিরিক্ত সংসর্গ ধাতুদৌর্ব্বল্যের এক প্রধান কারণ। আপন স্ত্রীতে অনুরক্ত হইয়া পুনঃপুনঃ স্ত্রীসংসর্গে যে প্রকার দৌর্ব্বল্য জন্মে, পরস্ত্রীতে অনুরক্ত হইলে তদপেক্ষা অধিকতর দৌর্ব্বল্য অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ের মধ্যে উপস্থিত হয়। নির্দ্দিষ্ট এক উপপত্নীতে অনুরক্ত হইয়া পুনঃপুনঃ স্ত্রীসংসর্গে যে প্রকার দৌর্ব্বল্য উপস্থিত হয়, সাধারণ্যে বহুস্ত্রী-পুরুষ-গামী স্ত্রীদিগের সহিত সেই পরিমাণে সংসর্গ হইলে অধিকতর দৌর্ব্বল্য উপস্থিত হয়; এবং সন্তানোৎপাদিকা শক্তির অনেক হ্রাস হয় এবং অনেক উৎকট ব্যাধির সূত্রপাত হয়। একজন সুবিখ্যাত ইউরোপীয় চিকিৎসাব্দি পণ্ডিত লিখিয়াছেন যে,—
“Excessive indulgence in sexual intercourse is another important cause of gonorhœa.
I must confess, however, that I regard excess as consisting more in the circumstances of a very promiscuous intercourse, than in what abstractedly might be considered. Such a promiscuous intercourse debelitates much more effectually than fidelity to one and the same person; although the gratification may be frequent. We know that with the other sex, barrenness— or if fertility exists, it remains dormant and inactive—is the most inseperable concommitant of promiscuous indulgence. Hence we find that women of a certain class seldom conceive. Even young females, who engage, at their first outset, in general and unrestricted prostitution, prove sterile during the period of indulgence; yet there is reason to believe that in these cases the procreative facutly is rather suspended than destroyed Indeed, we know that in many cases this is the fact, as we often find, that these women being married, and becoming more continent and faithful to one individual, have healthy children, and even large families.”
প্রথমক্ষণে অবিবেক ব্যক্তিদিগের নিকট স্পষ্ট বোধ হইবে যে সকল প্রকার স্ত্রীসংসর্গেরই সমান ফল। কিন্তু কিছুকাল বিবেচনা করিয়া দেখিলে চিন্তাশীল ব্যক্তিরা অনায়াসেই বুঝিতে পারিবেন, যে কামরিপু চরিতার্থ করিবার পূর্ব্বে মনের অধিকতর চাঞ্চল্য জন্মিলে অধিক পরিমাণে শুক্র নির্গত হয়। যখন কোন স্ত্রীর প্রতি অতি আসক্তি জন্মে, তখন তাহাকে স্পর্শ করিলে বা দেখিলেই কাপড়ে শুক্র নির্গত হইয়া যায়। অনায়াসলব্ধ দ্রব্যের বিষয়ে কেহ অধিক চিন্তা করেন না। কারণ তাহা মনে করিলেই পাওয়া যায়। যাহা পাইতে কষ্ট বা নিকটে পাওয়া যায় না, তাহার বিষয়ে স্বভাবতঃই অধিক চিন্তা উপস্থিত হয়। যে সময় হইতে তাহার বিষয় চিন্তা করিতে আরম্ভ করা হয়, সেই সময় হইতে মন উত্তেজিত হইতে থাকে। মন কামবিষয়ে অধিক উত্তেজিত হইলেই সংসর্গের সময়ে অল্পকাল মধ্যেই অধিক পরিমাণে শুক্র নির্গত হয়।
শুক্রাশয়ে শুক্র সদাসর্ব্বদা প্রস্তুত থাকে না। যখন মনে কামবিষয়ের চিন্তা উপস্থিত হয় বা স্ত্রীকে আলিঙ্গন বা আলিঙ্গনের উদ্যোগ করা হয়, তখন হইতে শুক্রাশয়ে শুক্র প্রস্তুত হইতে আরম্ভ হয়, এবং মনের চাঞ্চল্য যত অধিক হয় তত শীঘ্র শুক্র প্রস্তুত হইয়া নির্গত হয়। পরস্ত্রীতে বা বেশ্যাগমনে মনের যতদূর চাঞ্চল্য উপস্থিত হয় অনায়াসলব্ধ স্বস্ত্রীগমনোদ্যোগের সময়ে তত হয় না। এজন্য যাহাতে মনের চাঞ্চল্য অধিকতর হয়, তাহাতেই, অধিক পরিমাণে শুক্র নির্গত হয়। অধিকতর শুক্র নির্গত হইলেই শরীর ও মন অধিকতর দুর্ব্বল ও নিস্তেজ হয়, উপর্য্যুপরি কয়েক দিন এইপ্রকার হইলেই ধাতুদৌর্ব্বল্যের সূত্রপাত হয় এবং সুদীর্ঘ কালে ধাতুদৌর্ব্বল্য রোগ সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায়। অন্যান্য উৎকট রোগের আবির্ভাব হয় এবং সন্তানোৎপাদিকা শক্তির হ্রাস হয়। পূর্ব্বেই বলা হইয়াছে যে, স্ত্রীসংসর্গ অপেক্ষ| স্বপ্নদোষে অধিক পরিমাণে শুক্র নির্গত হয়। তাহার কারণ এই যে স্বপ্নদোষ সাধারণতঃ কেবলমাত্র মনের চাঞ্চল্য এবং জননেন্দ্রিয়দৌর্ব্বল্য হেতু হয়। পূর্ব্বেই বলা হইয়াছে যে মনের চাঞ্চল্য যত অধিক হইবে শুক্রও তত অধিক পরিমাণে নির্গত হইবে। স্বপ্নদোষসময়ে সম্যক্ মনের চাঞ্চল্য হয়, এজন্য সে সময়ে অধিকপরিমাণে শুক্র বিনির্গত হয়। হস্তমৈথুন দ্বারা সর্ব্বাপেক্ষা অধিকপরিমাণে শুক্র নির্গত হয়, তাহার কারণ এই যে ইহাতেও সম্যক্ মনের চাঞ্চল্য উপস্থিত হয়; এবং স্ত্রীসংসর্গ অপেক্ষা হস্ত অধিকতর দ্রুত সঞ্চালিত হয়। তাহাতে জননেন্দ্রিয়ের ক্রিয়া অল্প সময়ের মধ্যে অধিকপরিমাণে সম্পাদিত হয়। এজন্যই সর্ব্বাপেক্ষা অধিক পরিমাণে শুক্র ইহাতে বিনির্গত হয়। ইহাতে যে প্রকার জোরে ও দ্রুতবেগে শুক্র প্রস্তুত ও বিনির্গত হয়, তাহাতে জননেন্দ্রিয়ের প্রত্যেক যন্ত্র অতিশয় সন্তপ্ত হয়। মেরুদণ্ড ও মস্তিষ্করাশি অতিশয় আঘাত প্রাপ্ত হয় ও চমকিয়া যায়। এজন্য পরিণামে তাহাদিগের সকলেরই দৌর্ব্বল্য উপস্থিত হয়। অধিক দিবস পর্য্যন্ত এই প্রকার আঘাত পাইলে একান্ত দৌর্ব্বল্য উপস্থিত হয়, এবং তজ্জনিত নানাপ্রকার শারীরিক রোগ ও মানসিক দৌর্ব্বল্য উপস্থিত হইয়া মানুষের মনুষ্যত্ব নষ্ট করে। ইপিডিডিমিস্ কখন কখন রোগবশতঃ কঠিন হয় ও শুক্রপ্রণালীর মূলভাগও দৌর্ব্বল্য উপস্থিত হয়। যে সকল ব্যক্তি অতিশয় কঠিন শাস্ত্রাদি চর্চ্চার অধিকতর নিপুণ, তাঁহাদের কখন কখন ধাতুদৌর্ব্বল্য জন্মে। বৃদ্ধাবস্থাতেও ধাতুদৌর্ব্বল্য জন্মে, কিন্তু প্রায়ই প্রথম বয়সের অত্যাচারে বৃদ্ধাবস্থায় ধাতুদৌর্ব্বল্য প্রকাশ পায়। প্রথম বয়সের অত্যাচারই আবার বৃদ্ধাবস্থায় ধাতুদৌর্ব্বল্যের প্রধান কারণ। কেবল বৃদ্ধাবস্থাই পুরুষত্বনাশের প্রধান কারণ নহে। দেখা গিয়াছে যে অনেক ব্যক্তি বৃদ্ধাবস্থায় বিবাহ করিয়া অনেক সন্তান উৎপাদন করিয়াছেন। হস্তমৈথুনজন্য ধাতুদৌর্ব্বল্য এবং শারীরিক ও মানসিক নিস্তেজস্কতা, যতদূর গভীর অনিষ্টোৎপাদক, অন্যকারণজন্য যে ধাতুদৌর্ব্বল্য জন্মে, তাহা তত নহে। ধাতুদৌর্ব্বল্য হইলে যে সকল গুরুতর রোগের উৎপত্তি হয় তাহারা অধিকাংশই হস্ত মৈথুন-জন্য ধাতুদৌর্ব্বল্যের ফল।
চিকিৎসা।
কি কি উপায় অবলম্বন করিলে বালক হস্তমৈথুন একেবারে অভ্যাস করিতেই পারে না, যদি দুঃর্ভাগ্য বশতঃ দুঃসঙ্গে পড়িয়া অভ্যাস করে তবে তাহাকে কি উপায়ে শীঘ্র ধরা যায় ও এ কুঅভ্যাস হইতে বিরত করা যায় এবং যদি কোন রোগ উপস্থিত হইয়া থাকে, তবে উচিত সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা দ্বারা তাহার প্রতিকার করা যায়, এসকল বিষয় সকলেরই জানা উচিত। পূর্ব্বেই উল্লেখ করা হইয়াছে যে, বালক নির্দ্দোষ অবস্থা হইতে পতিত হইলে সলজ্জ, অলস, অপেক্ষাকৃত ভীরু নিরুদ্দম ও চঞ্চলতাবিহীন হয় এবং ক্রমে তাহার পরিপাকশক্তি, নিদ্রা কোষ্ঠশুদ্ধি, ও মনের স্ফূর্তির ব্যতিক্রম হয়। চক্ষের তারা প্রশস্ত হয় এবং কপালের চর্ম্মে কোঁচকানী হয়। এই সমস্ত লক্ষণের প্রতি যেন পিতা মাতা, অভিভাবক ও শিক্ষকগণ বিলক্ষণ লক্ষ্য রাখেন। বালকের সজীবতা চঞ্চলতা স্মরণশক্তি ও উদ্দমশীলতার ব্যতিক্রম দেখিলেই যেন সন্দিহান হয়েন। যত দিন বালক দুঃসঙ্গে পতিত না হয় ততদিন অস্বাভাবিক উপায়ে রেতঃপাতন[৩] শিক্ষা হয় না। যে সকল বালকের দুষ্ক্রিয়া অভ্যাস হইয়াছে তাহাদিগের সংসর্গে বালক দিগকে যাইতে দেওয়াই উচিত নহে। কোন্ বালকের দুষ্ক্রিয়া অভ্যাস হইয়াছে তাহাও জানা কঠিন।
রাজপথে যে সকল বালকেরা দলে দলে সর্ব্বদা স্বাধীন রূপে বিচরণ করে তাহারা প্রায় সকল প্রকার অপকর্ম্মে সুপটু হয়। তাহারদিগের সংসর্গে বালক দিগকে যাইতে দেওয়া অনুচিত। এখানকার প্রায় বিদ্যালয়ই অস্বাভাবিক উপায়ে রেতঃপাতন (হস্তমৈথুন ও পুংমৈথুনাদি) শিক্ষা করিবার বিশিষ্ট স্থান। বালককে শিক্ষার্থ বিদ্যালয়ে প্রেরণ করিতে হইলে বিশেষ রূপে বিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদিগের স্বভাব জানা উচিত। কোন কোন বিদ্যালয়ের কোন কোন শিক্ষকও অস্বাভাবিক উপায়ে রেতঃপাতনে পরাঙ্মুখ নহেন। বালকগণ তাঁহাদিগের হস্তে অধিক নষ্ট-স্বভাব-যুক্ত হয়। বিদ্যালয়ে নানাপ্রকার প্রকৃতি ও অবস্থার ছাত্র থাকে তন্মধ্যে অনেক ছাত্র কুৎসিত অভ্যাসের বশবর্ত্তী। তাহাদিগের সংসর্গে নির্দ্দোষ বালকের স্বভাব নষ্ট হইবার বিশেষ সম্ভাবনা। কতকগুলি নির্দ্দোষ বালকের সংসর্গে কুৎসিত-অভ্যাস-যুক্ত বালকের স্বভাব সংস্কৃত হওয়ার যত সম্ভাবনা, কতকগুলি নষ্ট-স্বভাবযুক্ত বালকের সংসর্গে একজন নির্দোষ বালকের অধঃপতনের অধিকতর সম্ভাবনা। নির্দ্দোষ বালককে বিদ্যালয়ে প্রেরণের পূর্ব্বে এই গুলি বিবেচনা করা উচিত। দাস দাসীর সংসর্গেও বালকদিগের স্বভাব নষ্ট হয়। দাস দাসী প্রায়ই দুশ্চরিত্র হয়। তাহাদিগের সহিত কুৎসিত আলাপে নির্দ্দোষ স্বভাব কলুষিত হওয়া অসম্ভব নহে। এজন্য তাহাদিগের সহিত স্বতন্ত্রতা রক্ষা করিয়া চলা নিতান্ত কর্ত্তব্য। ইতর লোক, বাচাল ও অশ্লীলভাষীদিগের সংসর্গ নির্দ্দোষিতাপহারক সুতরাং অবশ্য পরিহার্য্য। ধার্ম্মিক, সাবধান ও সরল-হৃদয়যুক্ত লোকের সংসর্গ প্রিয় ও হিতকর।
বালকেরা অশ্লীল, কুৎসিত ও কামোদ্দীপক মিথ্যা গল্প যাহাতে শ্রবণ করিতে না পারে এ প্রকার করা আবশ্যক। সহজেই বালকেরা গল্পপ্রিয়, ঐতিহাসিক বা উপদেশসূচক গল্প দ্বারা তাহাদিগের অবকাশ সময়ে মনোরঞ্জন করা বিধেয়। স্ত্রীলোকদিগের নিকট সাবধানে ও বিবেচনা পূর্ব্বক কথোপকথন করা যে প্রকার আবশ্যক বালকদিগের নিকটেও সেই প্রকার আবশ্যক। যে সকল বালক বা মনুষ্য কুক্রিয়া দ্বারা আপনস্বভাবকে কলুষিত করিয়াছে তাহাদিগের সহিত বালকদিগের হৃদর খুলিয়া বা নির্জ্জনে আলাপ করিতে দেওয়া উচিত নহে। যাহাতে একাকী কাহারও সহিত আলাপ করিতে না পারে এ প্রকার বিধান করা নিতান্ত প্রয়োজন। নির্দ্দোষস্বভাবের বালক বা বালিকাদিগকে ইতর লোকের নিকট উপবেশন করিতে দেওয়াও অনুচিত, কেননা ইতর কথা শ্রবণে তাহারদিগের স্বভাব কলঙ্কিত পারে।
বালকেরা যখন পায়খানায় যায় তখন পায়খানার দ্বার উন্মুক্ত রাখা উচিত। দ্বার বন্ধ থাকিলে নির্জ্জন স্থান পাইয়া শিশ্নাদি পুনঃ পুনঃ দৃষ্ট করা বা হস্ত দ্বারা নাড়াচাড়া করা বা উহা পুনঃপুন খোলা ও বন্ধ করা বা হস্তমৈথুন অভ্যাস করার সম্ভাবনা। রজনী যোগে অঙ্ককার স্থানে শৌচ প্রস্রাব করিতে দেওয়া উচিত নহে। নির্জ্জন ও অন্ধকার স্থানের বিপদ প্রায় সমান।
নির্জ্জন ও অন্ধকার স্থান সাধু ও সৎবুদ্ধিশালী ব্যক্তির পক্ষে যে প্রকার দুষ্পাঠ্য কারী, বালক, অসাবধান, অল্পবুদ্ধি ও দুর্ব্বলের পক্ষে সে প্রকার নহে। নানাপ্রকার আশঙ্কা ও অপকারের উপযোগী। বালককে অন্ধকার ঘরে বা এক শয্যায় একাকী বা একলেপের মধ্যে অন্য বালকের সহিত শয়ন করিতে দেওয়া উচিত নহে। চাকর চাকরাণী বা ইতর লোকের নিকট শয়ন করিতে দেওয়াও অবৈধ। স্বাস্থ্যবান্ প্রবীণ ব্যক্তির নিকট বালককে শয়ন করিতে দেওয়া আবশ্যক। দিবসে জাগ্রত অবস্থায় বালককে যে প্রকার সাবধান রাখা উচিত রজনীতে শয়ান অবস্থাতেও সেই প্রকার রাখা অতীব কত্তব্য।
অতিশয় কোমল ও গরম শয্যা, যাহাতে শরীর গরম হয় এ প্রকার বিছানা বালকের উপযোগী নহে। প্রথমত শিমল তুলার উচ্চ গদী তদুপরি ঐ প্রকার পাতলা গদি, তদুপরি দোহারা তোসক এই প্রকার বিছানাতে শয়ন করিলে সহজেই শরীর গরম হয়, মনের চাঞ্চল্য উপস্থিত হয়, এবং জননেন্দ্রিয় উত্তেজিত হয়। কঠিন ও উষ্ণ-উৎপাদক দ্রব্যে নির্ম্মিত নয় যে শয্যা তাহাতে শয়ন করিতে দেওয়া বিধেয়। নারিকেলের ছোবড়া নির্ম্মিত নদী ও পাতলা তোষক শয্যার উপযোগী।
বালকের আহারের বিষয় মনোযোগ রাখা নিতান্ত আবশ্যক। গরম ও কামোৎপাদক দ্রব্যাদি যথা লঙ্কা মরিচ, গরম মসলা ও প্যাজ রসুন এদেশে বালকদিগের পক্ষে সেবন করা অপকারী। অধিক পরিমাণে মৎস্য মাংস মাদকদ্রব্য বিশেষ য়্যালকোহল যুক্ত মাদক ব্যবহার অতি অবৈধ। পুষ্টিকর অথচ গরম উত্তেজক নহে এমত দ্রব্য আহার বালকের পক্ষে বৈধ। দাইল ভাতছোলা গোধূম ঘৃত দুগ্ধ ও অল্প পরিমাণে চর্ব্বিবিহীন মাংস ও মৎস্য ইত্যাদি বালকদিগের বৈধ আহার। সহ্য হইলে শীতল জলে স্নান করা বালকদিগের বিশেষ উপকারী। জলের অর্থ জীবন বাস্তবিক ও শীতল জল ব্যবহার জীবন বৃদ্ধিকর। দিবসে ২৷৪ বার অধিক পরিমাণ শীতল জলে হস্তমুখ প্রক্ষালন করা অতীব উপকারী। অনেক বালক শীতল জল দেখিয়া ভীত হয়। সে ভয় পরিহার করা আবশ্যক।
প্রতিদিবস ২ বেলা বায়ুসেবন, স্বভাব দর্শন, বেড়ান ও ব্যায়াম একান্ত আবশ্যক। এ সকলের প্রতি অবহেলা করিয়া কেবল মানসিক বৃত্তি পরিচালন অর্থাৎ সর্ব্বদা পড়া শুনা করিয়া মস্তিষ্ক রাশিকে উত্যক্ত করা অতীব অপকারী। ইহাতে উপকার না দর্শিয়া বরং বালকের শরীর ও মন দুর্ব্বল হইয়া সুদীর্ঘকাল অধ্যয়ন ও অধ্যবসায়ের সহিত কোন হিতকর কার্য্যে নিযুক্ত হইবার শক্তিকে নষ্ট করে। অধ্যয়নের প্রতি মনোযোগ না করিয়া কেবল স্বাস্থ্যদায়ক নানা প্রকার কার্য্যে নিযূক্ত রাখা আমার অভিপ্রায় নয়। যথাযোগ্যরূপে স্বাস্থ্য রক্ষা করিয়া কর্ত্তব্য সাধন করাই আমার অভিপ্রায় কেন না স্বাস্থ্য অবহেলা করিলে, শরীর ও মন দুর্ব্বল হয় সুতরাং দুর্ব্বল মন নানা প্রকার কুৎসিত আমোদের দিকে সহজেই ধাবিত হয়। স্বাভাবিক ক্রিয়াতে মন অপারক হইলে নানা প্রকার অস্বাভাবিক ক্রিয়ার দিকে ধাবিত হওয়া সম্ভব। যাহাতে মন স্বাস্থ্যবান ও সবল থাকে এ প্রকার বিধান করিলে উপযুক্ত রূপে সকল কার্য্য করিবার ক্ষমতা হয়। ভাল শিক্ষক, সৎপ্রবৃত্তি-যুক্ত বালক সাবধান মাতা পিতা ও সজ্জনের সংসর্গে নির্দোষিতা রক্ষা হইবে। নতুবা একেবারে সর্ব্বনাশ। হে পিতা মাতা অভিভাবকগণ! হে পরোপকারী ধর্ম্মোপদেশক মহাশয়গণ! হে সমুদয় ভারতবাসিগণ! জাগ্রত হও, তোমার দিগের ভাবী অমঙ্গল হইতে রক্ষা করিবার নিমিত্ত আমি বিনীতভাবে প্রার্থনা করিতেছি যে সন্তানদিগকে সাবধান কর। বৃথা লজ্জার বশবত্তী হইয়া অস্বাভাবিক উপায়ে রেতঃপাতনের বিষময় ফলের বিষয়ে উপদেশ দিতে ক্ষান্ত হইও না। হিতকর, প্রাণ-রক্ষক ও ভবিষ্যৎ সর্ব্বনাশ হইতে বাঁচিবার জন্য ২।১ টী সামান্য অশ্লীল ভাষা উচ্চারণ করিয়া সদভিপ্রায়ে নির্দোষ ও নিরাশ্রয় বালকদিগকে হস্তমৈথুনে বিরত কর। হস্তমৈথুন কালসর্প আমার দিগকে বহুকালাবধি দংশন করিতেছে। আমারদিগের মনের স্ফূর্তি, শারীরিক ও মানসিক বল, অধ্যবসায়, দৃঢ়তা, পরস্পরের ঐক্যতা, সাহস, কর্ত্তব্য বোধ, শাস্ত্র প্রবেশিকা শক্তি ইত্যাদি সমস্তই অপহরণ করিয়াছে। ক্ষুদ্রাশয়তা, পরস্পর ঈর্ষা ও অনৈক্য অদূরদর্শিতা লইয়া আমরা জীবনের ভার বহন করিতেছি। আমারদিগের যা হইবার হইয়াছে, এখন বালকদিগকে সাবধান কর এখনও সময় আছে। সৎশিক্ষা দিবার প্রথম অধ্যায়েই স্বাস্থ্য রক্ষা শিক্ষা দাও। স্নান আহার গাত্র মার্জ্জন শিক্ষা দিয়া স্বাস্থ্য রক্ষার উপদেশ শেষ হইল মনে করিও না। প্রথমেই যাহাতে কুঅভ্যাস না হইতে পারে বা যদি হইয়া থাকে তাহা পরিত্যাগ করে এমত উপদেশ দাও এবং মনোযোগ করিয়া প্রতিদিবস দেখ যে সে উপদেশ অনুরূপ কার্য্য করে কি না। ম্যাপ দেখাইল, অঙ্ক কসিল, ব্যাকরণে বিদ্যার পরিচয় দিল, কেবল ইহা দেখিয়া সন্তোষ সাগরে মগ্ন হইওনা, দেখ, অনুধাবন কর, ক্লেশ স্বীকার করিয়া মনোযোগী হইয়া অনুসন্ধান কর, যে বালক গোপনে হস্তমৈথুন অভ্যাস করিতেছে কিনা, তাহার ভবিষ্যতের সর্ব্বনাশের সোপান প্রস্তুত হইতেছে কি না, যদি জানিতে পার যে দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে তবে তাহাকে প্রাণপনে উপদেশ দাও আর বৃথা লজ্জা করিও না। সাবধান কর, দুঃসঙ্গ হইতে রক্ষা কর। স্বাস্থ্য রক্ষার উপযোগী উপায় অবলম্বন কর কদাচ কোন স্থানে একাকী যাইতে, একাকী বসিয়া বা শয়ন করিয়া থাকিতে আর দিও না। হস্তমৈথুনের অবসর দিও না। তাহার পিটে পিটে থাক, তাহাকে চক্ষে চক্ষে দেখ, সর্ব্বদা সাবধান কর, তাহা হইলেই তাহার মন্দ অভ্যাস দূর হইবে তাহা হইলেই সে পুনর্জ্জীবিত হইয়া সংসারের উপযোগী হইবে।
কেন আমারদিগের ঐক্য নাই। কেন আমরা স্বাধীনতা হারাইলাম, কেন আমরা কোন প্রকার হিতকর কার্য্যে নিযুক্ত হইয়া সুদীর্ঘকাল উৎসাহবান্ থাকিতে পারিনা। কেন আমাদিগের বন্ধুর প্রতিও যৎপরোনাস্তি অনুরাগ নাই এবং শত্রুর প্রতিও বিশেষ বিরক্তি নাই, কেন আমাদিগের কোন হিতকর ব্রতে সাফল্য লাভ হয় না; কেনই বা আমাদিগের কি বিদ্যা কি ধর্ম্ম কি অন্য কোন সৎকার্য্য কিছুতেই অধ্যবসায় দৃঢ় হয় না, কেন আমাদিগের ইতর প্রবৃত্তিই অধিক স্ফূর্ত্তি যুক্ত ও উন্নত প্রবৃত্তি সমূহ অপেক্ষাকৃত নিস্তেজ; এসমস্ত দুর্ঘটনার মূলে শারীরিক ও মানসিক অস্বাস্থ্যই লক্ষিত হয় ও তন্মূলে অপরিমিত ও অস্বাভাবিক উপায়ে রেতঃপাতন, যথা হস্তমৈথুন। ইন্দ্রিয় সংযম করিতে পারিলে শরীর ও মন স্বাস্থ্যবান্ হইবে। ইন্দ্রিয় সংযম কেবল রাজভয়ে বা ধর্ম্মভয়ে হয় না। প্রণালী পূর্ব্বক কতকগুলি কার্য্য অভ্যাস করিতে হইবে, কতকগুলি দ্রব্য আহার করা ত্যাগ করিতে হইবে এবং শরীর ও মনকে কতকগুলি হিতকর নিয়মের অধীন করিতে হইবে, তবে ইন্দ্রিয় সংযম করা যাইবে।
অপরিমিত ইন্দ্রিয় চালন ও অনৈসর্গিক উপায়ে রেতঃপাতন জন্য ইন্দ্রিয়দৌর্ব্বল্য ও এতদ্সম্বন্ধীয় অন্যান্য রোগের ঔষধ দ্বারা বিস্তারিত চিকিৎসা দ্বিতীয় খণ্ডে প্রকাশিত হইবে।
প্রথম খণ্ড সমাপ্ত।
শুদ্ধিপত্র।
পৃষ্ঠা | পংক্তি | অশুদ্ধ | শুদ্ধ |
১ | ৩ | আটিয়া | আটিয়া |
২ | ১০ | কথক | কতক |
২ | ১৬ | ভাবি | ভাবী |
৩ | ১১ | শারিরীক | শারীরিক |
৯ | ১ | বিস্বামিত্র | বিশ্বামিত্র |
১০ | ১৪ | রমন | রমণ |
১০ | ১৮ | স্ফর্ত্তি | স্ফূর্ত্তি |
১১ | ৪ | করত | করতঃ |
১২ | ৮ | একটী ফুলষ্টপ আছে সেটী তুলিয়া দিতে হইবে। | |
১৫ | ৩ | কোষ্ট | কোষ্ঠ |
১৬ | ১ | কথকগুলিন | কথকগুলী |
১২ | ৯ | বিবৃতি | বিবৃত |
২৮ | ১৫ | কোষ্ট | কোষ্ঠ |
২৯ | ১৮ | ঘর্ণায়মান | ঘূর্ণায়মান |
৩৮ | ১ | একটী ফুলষ্টপ আছে সেটা তুলিয়া দিতে হইবে। | |
৪২ | ১৪ | একটী কমা আছে সেটা তুলিয়া দিতে হইবে। | |
৪৮ | ১০ | লজ্জ্বা | লজ্জা |
এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পর (স্বনামে ও জীবদ্দশায় প্রকাশিত) বা প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর (বেনামে বা ছদ্মনামে এবং মরণোত্তর প্রকাশিত) পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে তাঁর সকল রচনার কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত (বা পূর্বে মৃত লেখকের) সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।