জীবনী কোষ/ভারতীয়-ঐতিহাসিক/কচুরায়


কচুরায়—ইহার প্রকৃত নাম রাঘব রায়। তিনি যশোহরের স্বাধীন নরপতি প্রতাপাদিত্যের পিতৃব্যপুত্র। প্রতাপের পিতামহ ভবানন্দের শ্রীহরি ও জানকী বল্লভ নামে দুই পুত্র ছিল। প্রতাপাদিত্যের পিতা শ্রীহরি গুহ (নামান্তর বিক্রমাদিত্য রায়) ও পিতৃব্য জানকী বল্লভ গুহ (নামান্তর বসন্ত রায়) নবাব সরকারে সেনাপতির কাজ করিয়া প্রভূত ধন সঞ্চয় করেন। নবাব সুলেমান শাহ কররাণী (১৫৬৪-১৫৭৩ খ্রীঃ) শ্রীহরি ও জানকী বল্লভকে বিক্রমাদিত্য ও বসন্তরায় উপাধি প্রদান করেন। রাজা প্রতাপাদিত্য কোন কারণে ক্রুদ্ধ হইয়া পিতৃব্য বসন্তরায় ও তাঁহার সাত পুত্রকে অসিমুখে অর্পণ করেন। কেবল একমাত্র শিশুপুত্র রাঘবকে লইয়া তাঁহার জননী কচুবনে পলায়ন পূর্ব্বক আত্মরক্ষা করেন। তদবধি তিনি কচুরায় নামেই খ্যাত হন। বয়ঃপ্রাপ্ত হইয়া কচুরায় বিশ্বস্ত কর্ম্মচারী রূপরামের সহিত দিল্লীতে উপস্থিত হন। তখনকার দিল্লীর সম্রাট জাহাঙ্গীর শাহের সেনাপতি মানসিংহ তাঁহাকে সাদরে গ্রহণ করেন। তৎপূর্ব্বেই প্রতাপাদিত্য দিল্লীর সম্রাটের রাজস্ব প্রেরণ বন্ধ করিয়া দিয়া স্বয়ং স্বাধীন নরপতি বলিয়া ঘোষণা করিয়াছিলেন। তিনি কয়েক স্থানে মুঘল সৈন্যকে পরাস্ত করিয়া স্বীয় ক্ষমতা আরও বর্দ্ধিত করেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর প্রতাপের দর্প খর্ব্ব করিবার জন্য মানসিংহকে বঙ্গে প্রেরণ করেন। এই সময়ে কচুরায় প্রতিশোধ লইবার জন্য মানসিংহের পক্ষাবলম্বন করেন। মানসিংহ তাঁহারই সাহায্যে প্রতাপাদিত্যকে পরাস্ত করিয়া বন্দী করেন এবং পরে দিল্লীতে প্রেরণ করেন। কিন্তু পথেই বন্দী অবস্থায় কাশীতে প্রতাপের মৃত্যু হয়। তৎপরে সম্রাট জাহাঙ্গীর শাহ কচুরায়কে যশোহরজিৎ উপাধি প্রদানপূর্ব্বক যশোহরের সিংহাসনে স্থাপন করেন।