জীবনী কোষ/ভারতীয়-ঐতিহাসিক/কণাদ
কণাদ— (১) বৈশেষিক দর্শনকার কণাদ ঋষি খ্রীঃ পূঃ ১২শ শতাব্দীতে বর্ত্তমান ছিলেন। তিনি তণ্ডুলকণা ভক্ষণ করিতেন বলিয়া তাঁহার নাম কণাদ হইয়াছিল বলিয়া মনে হয়। তাঁহার প্রকৃত নাম উলুক বলিয়। তাঁহার প্রণীত দর্শন ‘ঔলুক্যদর্শন’ নামে খ্যাত। তিনি প্রভাসক্ষেত্রে বাস করিতেন এবং তাঁহার গুরুর নাম সোমশর্ম্মা ছিল। কনাদের মতে ভাব-পদার্থ—দ্রব্য, গুণ, কর্ম্ম, সামান্য, বিশেষ ও সমবায়—এই ছয়টী। তাঁহার মতে এই ষট্-পদার্থ সম্বন্ধে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করিতে পরিলেই মুক্তি লাভ হয়। কণাদ পরমাণু-বাদী ছিলেন। তাঁহার মতে—অদৃষ্ট কারণ বিশেষ দ্বারা পরমাণুর সংযোগ বিয়োগের দ্বারাই জগতের উৎপত্তি। তেজঃ ও আলো একই মূল পদার্থের বিভিন্ন অবস্থা মাত্র। ইহা তিনিই প্রথম আবিস্কার করেন। বর্ত্তমান সময়ে ইউরোপে পরমাণুবাদ সর্ব্বত্র গৃহীত। এই পরমাণুবাদ আমাদের দেশেই সর্ব্ব প্রথমে আবিষ্কৃত হইয়াছে। মহর্ষি কণাদই ইহার আবিষ্কর্ত্তা। মহর্ষি কণাদের জড়পদার্থের জ্ঞান সম্বন্ধে সমধিক দৃষ্টি ছিল। সেই জন্যই তিনি পরমাণুবাদ স্থাপন করেন। মেঘ, বিদ্যুৎ, বজ্রাঘাত, ভূমিকম্প, করকা, হিমশীলা, বৃক্ষের রস সঞ্চার, চুম্বক ও চুম্বকার্ষণ, গতি, জড়ের সংযোগ ও বিয়োগাদি গুণ ইত্যাদি বিবিধ বিষয়ে তাঁহার চিন্তা ধারা ধাবিত হইয়াছিল। বড়ইদুঃখের বিষয় যে পরবর্ত্তীকালে আর কোনও পণ্ডিতের দৃষ্টি এইদিকে আকৃষ্ট হয় নাই। সুতরাং জড়বিজ্ঞানের উন্নতি ভারতবর্ষে আর হইল না। গ্রীসদেশীয় পণ্ডিত ডেমক্রিটাস ইউরোপে প্রথম পরমাণুবাদ আবিষ্কার করেন। তিনি কণাদের পরবর্তী।
(২) জৈনদর্শনাচার্য্য। তিনি জৈনমতে বৈশেষিকদর্শন প্রণয়ন করেন। তাঁহার গুরুর নাম রোহ গুপ্ত। তিনি খ্রীঃ পূঃ ৭১ অব্দে বর্ত্তমান ছিলেন।
(৩) কণাদ নামে এক জন জ্যোতিষ সংহিতার রচয়িত ও ছিলেন।
(৪) তিনি নবদ্বীপের প্রসিদ্ধ পণ্ডিত বাসুদেব সার্ব্বভৌমের অন্যতম ছাত্র। তিনি ‘অনুমান মণি ব্যাখ্যা’ গ্রন্থের রচয়িতা। খ্রীঃ চতুর্দ্দশ শতাব্দীর শেষভাগে তিনি বর্ত্তমান ছিলেন।