জীবনী কোষ/ভারতীয়-ঐতিহাসিক/কপিল
কপিল—মহর্ষি কপিল সম্ভবতঃ খ্রীঃপূঃ ৬৫০—৫৭৫ সালের মধ্যে বর্তমান ছিলেন। তিনি সাংখ্য দর্শনের প্রণেতা। তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করিতেন ন। ‘ঈশ্বরাসিদ্ধেঃ’ কেন না ঈশ্বরের অস্তিত্ব সপ্রমাণ হয় না। তাঁহার গ্রন্থ পাঠ করিলে বিস্ময়ে অভিভূত হইতে হয়। অতি প্রাচীন কালে হিন্দু সভ্যতার ও জ্ঞানের কতদূর উন্নতি হইয়াছিল, তাহা এই সাংখ্য-দর্শন পাঠ করিলেই সুস্পষ্ট অনুভূত হয়। যে বিবর্ত্তন-বাদ (Theory of Evolution) বর্ত্তমান ইউরোপীয় পণ্ডিতের আবিষ্কার বলিয়া আমরা পাঠ করিয়া থাকি, বহু পূর্ব্বে এদেশের কপিল মুনি তাহার উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন। (সাংখ্য প্রবচন ১।৬৪ সূত্র দ্রষ্টব্য)। তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করিতেন না। সুতরাং নাস্তিক। তাহা হইলেও তিনি বেদের প্রাধান্য স্বীকার করিতেন, ইহাই আশ্চর্য্যের বিষয়। কপিলের মতে সমস্ত জগৎ প্রকৃতি (জড় প্রকৃতি) হইতে উদ্ভূত। পরমাত্মা ও প্রকৃতি উভয়ই অনাদি। তিনি সৃষ্টি করেন না, দ্রষ্টা মাত্র। মানবের কর্ম্মফলানুসারে আত্মা দেহান্তর আশ্রয় করে। কর্ম্মক্ষয়ে দেহান্তরে প্রবেশ করে না, পৃথক অবস্থান করে। কপিলের মতে বস্তু মাত্রই সৎ, সৎ হইতে সতের উৎপত্তি। বীজ ভূমিতে উপ্ত হইলে বীজের ধ্বংস হয় বটে কিন্তু ইহার সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় না। বীজের অবয়ব বর্ত্তমান থাকে এই ভাবভূত অবয়ব হইতে অঙ্কুর উৎপন্ন হয়। কপিলের মতে দুঃখ ত্রিবিধ—আধ্যাত্মিক, আধিভৌতিক ও অধিদৈবিক। বাতপিত্তাদির বৈষম্যনিবন্ধন শারীরিক এবং ক্রোধাদিজনিত মানসিক দুঃখকে আধ্যাত্মিক দুঃখ বলে। মনুষ্য-পশ্বাদি হইতে জাত দুঃখ আধিভৌতিক এবং যক্ষ, পিশাচাদি হইতে অথবা ভূমিকম্পাদি প্রভৃতি হইতে জাত দুঃখকে অধিদৈবিক দুঃখ বলে। এই ত্রিবিধ দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তিই মুক্তি। এই মুক্তিলাভের একমাত্র উপায় জ্ঞান লাভ। সাংখ্য মতে জগৎ ব্যক্ত ও অব্যক্ত এই দুই ভাগে বিভক্ত। ব্যক্ত শব্দে প্রতীয়মান জগৎ এবং অব্যক্ত শব্দে প্রকৃতি বুঝায়। সাংখ্য মতে জগৎ সত্য কিন্তু ক্ষণিক। বেদান্ত মতে জগৎ মিথ্যা। বৈদান্তিক মতে রজ্জুতে সর্প জ্ঞানের ন্যায় ভ্রান্তি মাত্র। ইহার উত্তরে সাংখ্য বলেন,—সর্পের স্থানে যেমন রজ্জু, আছে, তদ্রূপ সংসার স্থানে একটা কিছু থাকা চাই এবং ইহাই প্রকৃতি। (২) অগ্নিপুরাণের ৩৯ অধ্যায়ে শিল্প শাস্ত্রকার এক কপিলের উল্লেখ আছে। (৩) কাশ্মীরপতি হর্ষদেব (১০৮৯—১১০২ খ্রীঃ) লোহর প্রদেশের সামন্ত নরপতি উদয়সিংহের মৃত্যুর পরে তাঁহার অন্যতম সেনাপতি ক্ষেমের পৌত্র কপিলকে লোহার রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন। উচ্চল কাশ্মীর সিংহাসন অধিকার করিবার উদ্যোগী হইলে, কপিল উচ্চলের সৈন্যদলকে বাধা দিতে যাইয়া পরাজিত হন। পরে বিদ্রোহী গর্গের সহিত যুদ্ধে তিনি নিহত হন।