টম্ খুড়ো/ফুল লইয়া ইভার নিকট টপসির গমন
এক্ষণে টপসি উদ্যান হইতে কতকণ্ডলিন পুষ্প চয়ন করিয়া ইভার নিকট উপস্থিত হইল তৎকালে ইভা অত্যন্ত গ্রীষ্ম প্রযুক্ত এবং পীড়ায় অভিভৃত হইয়া শয্যাগত তদীয় অবয়ব অতি ম্লান ও দুর্ব্বল স্বরও অতি মৃদু যেন মৃত্যু প্রায় হইয়াছিল, কিন্তু তিনি মৃত্যুকে অনুমাত্র ভয় করিতেন না, যে হেতুক তিনি বিশেষ অবগত ছিলেন, যে এই ক্ষণভঙ্গুর কলেবর পরিহারান্তে এমত উত্তম স্থানে গমন করিবেন, যথায় রোগ, শোক, একেবারে শান্তি হইয়া অনন্ত সুখ ভোগে কালযাপন হইবে। অপিচ সুস্থাবস্থায় সর্ব্বদাই ধর্ম্মপুস্তক পাঠ করিতেন, এবং তাহাতে যাহা যাহা লিখিত আছে, তাহা সত্য বলিয়া তাহার প্রতীয়মান হইত। ধরাতলের সকল বস্তু অপেক্ষায় প্রভু যিশুকে সাতিশয় ভাল বাসিতেন, আত্মবৎ সকলকেই দেখিতেন, বিশেষ টপসির প্রতি অত্যন্ত দয়া প্রকাশ করিতেন, কিন্তু অপরাপর লোকে তাহাকে কৃষ্ণবর্ণ বলিয়া ঘৃণা করিত, তন্নিমিত্তে তাহার চরিত্র সংশোধন করণে যত্নবান হইয়া তাহার নিকট প্রভু খৃষ্ট পৃথিবীতে আগমন করত স্বীয় শোণিতপাতে যেরূপে পাপি মানবগণকে উদ্ধার করিলেন, সেই সকল কথা সর্ব্বদাই বলিতেন, যদিও টপসি পূর্ব্বে লেখা পড়া শিক্ষা করেন নাই, তথাচ এরূপ উপদেশ প্রদান করাতে তিনি তন্মর্ম্মাবরোধে যত্নশীল হইয়াছিলেন। এবং কৃতজ্ঞতা জন্য উদ্যান হইতে পুষ্প চয়ন করত ইভার সমীপে আগমন করিলেন, ইহা ব্যতীত আর সেই বা কি করিতে পারে? পরন্তু ইভার জননী অতি অহঙ্কারিণী টপসিকে তথায় সন্দর্শন করিয়া ক্রোধপরবশ হইয়া দূর দূর বলিয়া তাড়াইয়া দিতে প্রস্তুত হইলেন, রে পাপিয়সি! তুই কেন এ স্থানে আসিয়াছিস? তাহাতে ইভা কহিলেন, হে মাত! এক্ষণে টপসি আপন চরিত্র সংশোধনে অতিশয় সচেষ্টিত হইয়াছে, আপনি উহাকে কিছু বলিবেন না, দেখুন আমার জন্য কেমন পুষ্প আনয়ন করিয়াছে। মাত! বোধ করি আমি ত্বরায় এমত স্থানে গমন করিব যথায় টপসির সহিত আমার কোন ভেদাভেদ রহিবে না, এবং জগদীশ্বর কৃপা করিয়া সকল পাপ মার্জ্জনা করিবেন। তখন হইতে পারে, সেই অনন্ত সুখধামে আমরা টপসির কারণ পুষ্পানয়ন করিব।