তরুণের আহ্বান/তরুণের আহ্বান
তরুণের আহ্বান
শ্রদ্ধাস্পদ ভদ্রমণ্ডলী ও প্রীতিভাজন তরুণ বন্ধুগণ—
আমার পরম সৌভাগ্য, আজ আমি আপনাদের সাদর সম্বর্ধনা জানাবার সুযোগ পেয়েছি। আমার এই সৌভাগ্য সম্ভাবনার মধ্যে একটা বৈচিত্র্য আছে, সেটা এই যে আমি আপনাদের আহ্বান করছি বাংলার আনন্দ-উৎসবের মধ্যে নয়, সুখ-ঐশ্বর্যের মধ্যে নয়, বিত্তমানের মধ্যে নয়, শান্তিশৃঙ্খলার মধ্যে নয়, আমি আপনাদের আহ্বান করছি। দঃখ, দারিদ্র্য, নির্যাতনের মধ্যে, অভাব, অজ্ঞানতা, অবসাদের মধ্যে, অত্যাচার, অবিচার অনাচারের মধ্যে- সবার উপর মনুষ্যত্বের পদে পদে অপমানের মধ্যে। এই তো আমাদের সাধনার ক্ষেত্র, এখানে মাধুর্য কিছু নাই, কিন্তু সৌন্দর্য আছে, এইখানে নিষ্ঠুর দুঃসহ আবির্ভাবের মধ্যে আমাদের যোগসাধনার জন্য দাঁড়াতে হবে। আনন্দ এই যে এখানে ভোলাবার কিছু নেই, অপরিসীম রিক্ততা আর অপরিমেয় ত্যাগের মধ্যে আমাদের নিজের পথ নিজে করে নিতে হবে- পশুশক্তির সাধনায় নয়, কাপরুষের ভেদনীতিতে নয়— এখানে সমাহিত আত্মসাধনার দ্বারা, সর্বস্পৃহাশূন্য পূণ্য প্রচেষ্টার দ্বারা, নরনারায়ণের নিঃস্বার্থ সেবার দ্বারা মূহ্যমান জাতির উদ্বোধন করতে হবে।
তাই বলছিলাম এত বড়ো দুশ্চর্য সাধনায় আপনাদের আহ্বান করবার সুযোগ যে আমি পেয়েছি— এ আমার পরম সৌভাগ্য, আর আমার পরম আনন্দের কথা এই যে— আমি এই কঠিন তপস্যার জন্য সত্যের পথে আহ্বান করছি বাংলার তরণ সম্প্রদায়কে। আমি আজ দেহে, মনে, আদশে ও উদ্দেশ্যে এক হয়ে তাদের কাছে আমার প্রীতির অর্ঘ্য উপহার দিয়ে তাদের সম্বোধন করে বলি— হে আমার তরুণ জীবনের দল, তোমরাই তো যুগে ষুগে, দেশে দেশে মুক্তির ইতিহাস রচনা করে এসেছ, মুক্তিপথের নিশানধারী তোমরাই তো চিরদিন অগ্রগামী হয়ে পথ দেখিয়ে এসেছ। তোমরা যে জেগেছ, অলস বিলাস পরিহার করে তোমরা যে আজ আত্মভোলা হয়ে পথে চলবার জন্য দাঁড়িয়েছ তা আমি জানি— জানি বলেই তো তোমাদের আহ্বান করার সাহস আমার হয়েছে।
প্রলয়ের ঝড় আমাদের মাথার উপর দিয়ে চলে গেল, বর্ষার দুর্যোগকে মাথায় করেও আমরা সমান দাঁড়িয়ে আছি। সুযোগ যখন এসেছে, ভাগ্যবিধাতা মুখ তুলে চেয়েছেন, তখন তো আর বসে বসে তর্কযুদ্ধ করে জাতির লজ্জা, দেশের দৈন্য, মনুষ্যত্বের অপমানকে দিন দিন বাড়ালে চলবে না।
চেয়ে দেখো, যেখানে আমাদের সত্যকার দেশ, যেখানে আমাদের জীবনের আশা, ভরসা, উৎসাহ, মান, সম্পদ, সেখানে আমরা নাই। সেখানে—
"গভীর আঁধার ঘেরা চারিধার নিঝুম দিবস রাতি,
বুকের আড়ালে মিটি মিটি জ্বলে তৈলবিহীন বাতি।
গম ধরে আছে পাতাটি কাঁপে না, ছম ছম করে দেহ,
দেবতাবিহীন দেবালয় আজ, জনহীন সব গেহ।
মানষের দেহে প্রেতের নিত্য-রণতাণ্ডব সম,
আপন রক্ত আপনি শুষিছে নিষ্ঠুর নির্মম।”
তাই আমাদের দেশের বেদনাময়ী মাতৃমূর্তি নয়ন জলে ছিন্ন অঞ্চল ভিজিয়ে আমাদেরই আশায় বসে আছেন।
যেখানে জীবনের লীলাখেলার আনন্দের লুঠ হত, যেখানে সুখস্বাচছন্দ্যের উৎসগুলি প্রাচুর্যে আমাদের ভাণ্ডারে উপচে পড়ত, যেখানে জলে সুধা, ফলে অমৃত, শস্যে অনন্ত দেশের অনন্ত প্রাণদায়িনী শক্তি ছিল—সেখানে আজ বিরাট শ্মশান খাঁ খাঁ করছে— প্রেতের ছায়া দেখে অর্ধমৃত প্রাণ শিউরে উঠছে, লক্ষ লক্ষ চুলি দাউ দাউ করে জ্বলে যাচ্ছে— এক বিন্দু, জল নাই, এতটুকু জীবন নাই।
তোমরা জাগো ভাই, মায়ের পূজার শঙ্খ বেজেছে, আর তোমরা তুচ্ছ দীনতা নিয়ে ঘরের কোণে বসে থেকে না।
এমন সুন্দর দেশ, এমন আলো, এমন বাতাস, এমন গান, এমন প্রাণ, আজি মা সত্যই বুঝি ডেকেছেন। ভাই, একবার ধ্যাননেত্রে চেয়ে দেখো, চারি দিকে ধ্বংসের স্তূপীভূত ভস্মরাশির উপর এক জ্যোতির্ময়ী মূর্তি। কী বিরাট! কী মহিমময়!
শ্যামায়মান বনশ্রীতে নিবিড়কুন্তলা, নদীমেখলা, নীলাম্ববর-পরিধানা, বরাভয়বিধায়িনী সর্বাণী, সদা হাস্যময়ী, সেই তো আমার জননী। শারদ জ্যোৎস্নামৌলি মালিনী, শরদিন্দু নিভানিনা, অসুর-দর্প-খর্ব-কারিণী, মহাশক্তি, চৈতন্যরূপিণী জ্যোতির্ময়ী আজ আমাদের হৃদয়-পাদপীঠে তাঁর অলক্তরাগরঞ্জিত পা দু’খানি রেখে বলছেন— “মাভৈঃ— জাগৃহি।”
জাগো মায়ের সন্তান, দূর করো তোমাদের বৃথা তর্ক, ধার করা কথার মালা, ধূলায় ছুড়ে ফেলে দাও তোমাদের বিলাস ব্যসন, মুছে ফেলো তোমাদের ললাট হতে যুগযুগান্তরের সঞ্চিত ঐ দাসত্ব-কালিমার রেখা।
নবীন সৃষ্টির গুরু দায়িত্ব মাথায় করে আমরা আজ কর্মক্ষেত্রে অবতীর্ণ হব। বিধাতা আমাদের তরুণ প্রাণে সৃষ্টিশক্তির প্রেরণা দিয়েছেন। আমাদের জীবনের সমস্ত উন্মাদনা সকল ভাবুকতার মধ্যে আমরা যেন আজ এই কথা মর্মে মর্মে অনুভব করতে পারি যে, আমরা ছোটো নই আমরা বড়ো, নইলে সমস্ত ম্রিয়মাণ ধ্বংসোন্মুখ উপাদানের উপর এই নব সৃষ্টির দুরূহ ভার বিধাতা আমাদের উপর দিলেন কেন?
মনুষ্যজীবনেব পরম সার্থকতা সৃষ্টির আনন্দে। আমরা আজ সেই সৃষ্টির আনন্দ উপলব্ধি করবার জন্য আমাদের সমস্ত কর্মশক্তিকে নিয়ন্ত্রিত করব।
পরোপিকারের হীন আত্মপ্রসাদ লাভের জন্য নয়, পতিত জাতির উদ্ধারের অহংকারের জন্য নয়, কর্ম-কর্তৃত্বের আত্মম্ভরী জ্ঞান হইতে নয়— আমরা আমাদের মিলিত শক্তির দ্বারা, সমবেত চেষ্টার দ্বারা যে সেবাব্রত উদ্যাপন করব, তা শুধু নিজেদের মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধনের জন্য, আত্মবিস্মৃত পুরুষ-সিংহের জাগরণের জন্য মথিত নর-নারায়ণের উদ্বোধনের জন্য। অনাদি কাল হতে ভারতবর্ষের যে মহান্ আদর্শ পরসেবাব্রতেই প্রারম্ভ হয়েছে, তা এই সেবাব্রতেই উদ্যাপিত হয়ে আমাদের সিদ্ধির পথে অগ্রসর করে দেবে।
আমি জানি এই দুর্দিনে আমাদের এই সাধনা কঠোর, অতি ভয়ংকর—
“পিছনে উঠিছে ঝড়, সম্মুখেতে অন্ধকার বন
নামমাত্র পথরেখা, তাও আজ হয়েছে নির্জন,
চরণ চলে না আর, দেহলতা কাঁপে থর থর,
কণ্টকে সংকট পথ, চোখ দুটি জলে ভর ভর।
তবু যে গো যেতে হবে, থেমে থাকা মরণের দায়,
কেন মিছে থেমে যাও, হে পথিক, ঘরের মায়ায়?
সর্বহারা মহাপ্রাণ, তাহারে কে রাখে বন্ধ করে,
আলোর ইশারা আসে, প্রতিদিন তারই অন্ধ ঘরে।
মৃতদেহ আগুলিয়া, সেই আছে নিশিদিনমান
কে জানে আসিবে কবে, এক বিন্দু অমৃতের দান।”
এই অমৃতের দানের আশায় আমরা থাকিব, নিশ্চেষ্ট হয়ে নয়, অদৃষ্টবাদীর মতো নয়, দুর্বল পরমুখাপেক্ষীর মতো নয়— আমরা আমাদের স্বাধীন, আত্মস্বতন্ত্র কর্মঠ শত শত অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সদা জাগ্রত থাকব। সমগ্র বাংলায় এইরূপ অসংখ্যা কর্মকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। যেখানে কোনো কর্মকেন্দ্র নাই, সেখানে উৎসাহী কর্মী দলকে সংঘবদ্ধ করে নূতন কর্মপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। যে-সকল স্থানে কর্মকেন্দ্র পূর্ব হতে জাগ্রত অথবা মৃতপ্রায় হয়ে রয়েছে সে-সবগুলিকে বর্তমানের কর্মোপযোগী করে, নূতন প্রেরণা দিয়ে, নূতন আদর্শে সঞ্জীবিত করে, একটা বিরাট কর্মকেন্দ্রের অঙ্গীভাূত করতে হবে। আমাদের আদর্শ যদি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়, তা হলে নানাভাবে বিস্তৃত বা বিক্ষিপ্ত সকল কর্মকেন্দ্রের মধ্যে একই দুর্লঙ্ঘ্য অনিবার্য শক্তি আমাদের সমস্ত কর্মসাধনাকে সেই একই পরম লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যাবে। এইরূপে আমরা ‘এক’ হইতে ‘বহুতে’ এবং ‘বহু’ হইতে ‘একের’ মধ্যে একটা সহজ, সরল স্বাভাবিক সংযোগের সৃষ্টি করে, আমাদের সাধনার ক্ষেত্রকে আন্তরিক ঔদার্যের দ্বারা সর্বজনগ্রাহ্য এবং সকলের পক্ষে সুলভ করে আমাদের কর্ম বাহুল্যের মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্য বিধান করতে পারব।
সেখানে রাজনীতিক মতদ্বৈবধের কোনো স্থান থাকবে না, সমাজপদ্ধতির কোনো বিশিষ্ট আচার-অনুষ্ঠানকে গোঁড়ামির দ্বারা বড়ো করে দেখা হবে না, বিভিন্ন ধর্মের পার্থক্য কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না- সেখানে সমস্ত দেশবাসী জাতিধৰ্ম নির্বিশেষে একই আদর্শ অনুসরণ করে, একই লক্ষ্যে, একই পথে আপনি আপন মনুষ্যত্বকে পাথেয় রূপে গ্রহণ করে আমরণ চলতে থাকবে।
জনশিক্ষার বহুল প্রচার দ্বারা দেশের আত্মমর্যাদাবৃদ্ধি জাগিয়ে তুলতে হবে। নষ্ট শিল্পের পুনরুদ্ধার করে তাকে গড়ে তুলতে হবে। ধ্বংসোন্মুখ পল্লীসমূহের সংস্কার দ্বারা দেশের লুপ্ত সৌন্দর্যকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এই-সব বিভিন্ন কর্মের ভার আমাদের কর্মকেন্দ্রগুলিকেই গ্রহণ করতে হবে। আমাদের কর্মকেন্দ্র ক্ষুদ্রই হউক আর বিরাটই হউক, যেখানে সহকর্মীর সহায়তা, সহানুভূতি ও কর্মকুশলতার অভাব, সেখানে কোনো কাজে সাফল্য লাভ করা যায় না। যেখানে সুখে-দুঃখের ভাগাভাগি আছে, হাসিকান্নার অংশ হিসাব আছে, সেখানে সাহচর্য অযাচিত ভাবে এসে উপস্থিত হয়। সেখানে সকল কর্ম সফলতায় গৌরবে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। যে কাজে সাধারণের হৃদয় বিনিয়োগ হয়, তা অসাধ্য হলেও সমবেত ইচ্ছাশন্তি ও প্রেরণার বলে সহজসাধ্য হয়ে পড়ে। আন্তরিকতাবিহীন অনষ্ঠান বিধাতার অভিশাপে দৃষ্ট— কাজেই আত্মনাম-ঘোষণার চেষ্টার মধ্যে কর্মজীবনের শ্রেষ্ঠত্ব নাই, বাগাড়ম্বরপূর্ণ কাজের মধ্যে সার্থকতা নাই। তাই বলি, আমাদের হৃদয় দিয়ে কাজ করতে হবে, ‘ছুৎমার্গ’ পরিহার করে অস্পৃশ্যতা-ভূতকে ঝেড়ে ফেলে সবাইকে আপনার বলে আলিঙ্গন করতে হবে। মনকে ফাঁকি দিলে চলবে না, বিবেকের গলা টিপে ধরলে কুকর্ম আরো জোর গলায় প্রচারিত হবে।
অন্তর থেকে যে কর্ম-শক্তি আমাদের উদ্বুধ করবে, যে নৈতিক বল আমাদের সত্য ও ন্যায়ের পথে চালিত করবে। সেই শক্তি, সেই বলকে আহুতির অগ্নির মতো চিরন্তনের জন্য উদ্দীপ্ত রাখতে হবে।—আশা চাই, উৎসাহ চাই, সহানুভূতি চাই, প্রেম চাই, অনুকম্পা চাই— সবার উপরে মানুষ হওয়া চাই। মানুষের মধ্যে দেবতার প্রতিষ্ঠাই আমাদের সাধনা— জীবনব্যাপী এই সাধনার মধ্যে আমাদের মুক্তি নান্য পন্থা।
মিলনের এই পূণ্য দিনে, এই কল্যাণকর্মের অনুষ্ঠানকল্পে, প্রারম্ভেই আমি আপনাদের আহ্বান করছি। এ আহ্বান তাঁর, যিনি আমাদের শতাব্দীর পর শতাব্দী, বর্ষের পর বর্ষ, দিনের পর দিন, আহ্বান করেছেন— ভোগ থেকে বিরত হয়ে ত্যাগ করবার জন্য, অবসাদ থেকে জেগে উঠে কর্ম করবার জন্য, বিস্মৃতিকে বিসর্জন দিয়ে আমাদের জাতির ইতিহাস-লব্ধ আত্মাকে অনুভব করবার জন্য। নরনারায়ণের এই আহ্বান উপেক্ষা করবার নয়। রোগে যারা অবসন্ন, দারিদ্র্যে নির্যাতনে যারা কাতর, তাদের মধ্যে আমি সে আহ্বান, সে আদেশ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি— সে আদেশ আজ দেশের কানে পৌঁচেছে, তাই আজ আমাদের নিদ্রিত নারায়ণ জেগে উঠেছেন— ভোগবিলাস ও আরামের মাঝখানে নয়— যেখানে দারিদ্র্য, যেখানে দুভির্ক্ষ, যেখানে নির্যাতন, যেখানে অপমান— সেখানে গিয়ে আজ তাঁকে পূজা করতে হবে। পুরাতন পুঁথি পড়া মন্ত্র আওড়ালে চলবে না, আশার গান গেয়ে তাকে শুনাতে হবে— যে আশার গানে রোগী বিছানা থেকে বল পেয়ে উঠে দাঁড়াবে, ঋণ-ভার-জর্জরিত কৃষক সাহস করে কাঁধে লাঙ্গল তুলবে, অশীতিপর বৃদ্ধ বহুবর্ষ সঞ্চিত দুঃখের গুরুভার লাঘব হয়েছে বলে মনে করবে।
আজ পৃথিবীর সমস্ত আলো, সমস্ত বাতাস থেকে আমাদের প্রাণে সেই অফুরন্ত সংগীতের আনন্দধ্বনি আসছে, আমাদের বুকের মধ্যে আবেগের উল্লাস নিত্য আজি সেই সুরের সঙ্গে পা ফেলে চলেছে। এ কী উৎসাহ। এ কী আনন্দ। আমার মনে হয় এই আনন্দই আমার জাতির আনন্দ, আমার নারায়ণের আনন্দ। তিনি কোন্ ওপার থেকে আনন্দে এক সোনার সুতায় কাটনা কেটে আসছেন— যা আজ রবির কিরণ হয়ে গাছের শ্যামলতায় চিকমিকিয়ে উঠছে— ভরা নদীর উচ্ছ্বসিত জলে শতধা বিভক্ত হয়ে আনন্দস্রোতে ভেসে চলেছে, আবার সেই সোনার সুতাই যেন আজ আমাদের হাতের রাঙা রাখী হয়ে, আমাদের সকলকে সকলের সঙ্গে মিলিয়ে দিচ্ছে ভোগীর সঙ্গে ত্যাগীকে, বার্ধক্যের সঙ্গে যৌবনকে, কর্মীর সঙ্গে ভাবুককে। এই সুরের জাল যখন সমগ্র দেশকে বেড়ে ফেলবে, তখন আজকার এই পূণ্য দিনের ভরসার কিরণ-সম্পাত আসন্ন ভবিষ্যতের সার্থকতায় সমুজ্জ্বল হয়ে উঠবে।— আর তখন, যিনি ও পারে দ্যুলোকে আকাশের চরকায় আলোকবৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করছেন— এবং ভূলোকে কালের চরকায় কত বিভিন্ন জাতির বিচিত্র ইতিহাসের সুবর্ণসূত্রের সষ্টি করছেন—তাঁকে আমরা পরম বিষ্ণু বলে নয়—জাতির ভাগ্যবিধাতা বলে বরণ করব।
ডিসেম্বর ১৯২২