তীর্থরেণু/সঙ্গীত-মিস্ত্রির নিবেদন

সঙ্গীত-মিস্ত্রির নিবেদন

(মাত্রাবৃত্ত অমিত্রাক্ষর)

ইংলণ্ড্‌! ইংলণ্ড্‌!
সিন্ধুর প্রহরী!
রাষ্ট্রের স্রষ্টা!
মানুষের ধাত্রী!

সঙ্গীত শুনিবার
অবসর আছে কি?—
সঙ্গীত-মিস্ত্রির
অপরূপ কীর্ত্তি?
গোলমাল দিনরাত,
কেমনে বা শুনিবে?
নানা দলে কলহের
চীৎকার তুলিছে;—
ভিক্ষুক ক্ষুধিত,
খনিজীবি খুসী নয়,
‘শ্রম’ নামে রাক্ষস
বন্ধনে অস্থির।
তবু, কবি-কর্ম্ম
কারেদের নেহায়ে
পড়িতেছে হাতুড়ি,—
গড়িতেছে ছন্দ;—
তন্ময় মুখ সব,
উজ্জল, রক্তিম,
হাপরের তাপে, হায়,
ঝলসায় চক্ষু!
সত্য কি?—শুনিছ?
তুমি সব দেখিছ?

তবে বুঝি নয় ইহা
পণ্ড ও নিষ্ফল।
ওগো এই সঙ্গীত-
অনুরাগ, মানবের
স্বভাবেতে, শাশ্বত
রহিয়াছে লগ্ন,—
জীবনের খাদ্যে
প্রণয়ের পানীয়ে
পুষ্ট সে, হৃষ্ট সে
মৃত্যুর অতীত।
বিশ্বের সুগভীর।
মর্ম্মেতে ভিত্তি,
যমজ সে নিখিলের
সকলের সঙ্গে;
শুধু তাই? কিবা এই
প্রকৃতির তত্ত্ব?
ছন্দে সে প্রকাশের
নিরবধি চেষ্টা!
তরুলতা-পুষ্পে,
তারা—উদয়ান্তে,
নদী—ভাঁটা জোয়ারে
সঙ্গীতে বেপমান!

রাজরাজ ব্রহ্মণ
কবিদের জ্যেষ্ঠ,
তাঁরি মহাছন্দে
চরাচর চলিছে।
তাই কহি, বিদ্রুপ
কবিতারে করো না,
মা আমার! মা আমার!
মানবের ধাত্রী!
ধনজন, বৈভব,
সবই ক্ষণভঙ্গুর,
ছেড়ে যায় লক্ষ্মী,
ধ্রুব শুধু বাণী গো!
গান ঘিরে রাখে সব,
গান কভু মরে না,
মানুষ রচিবে গান
শুনিবে তা’ মানুষে।
সৃষ্টির একতান
সঙ্গীত যতদিন
ঝরি’ ঝরি’ অবিরাম
নাহি হয় নিঃশেষ,
ততদিন আমরাও
তারি সাথে গাহিব;

যে গানের ছন্দে
নর্ত্তিত বিশ্ব!

তবে, কবি-কর্ম্ম-
কার দিক্ কবিতায়
উপহার তোরে গো!
মানবের ধাত্রী!
বয়সের চিহ্ন
মুখে তোর পড়িছে,
স্বপ্নের মত ছায়
সময়ের ছায়া গো।
গান সেই ঔষধ—
যাহে ফিরে যৌবন,
উৎস সে নবতার,
প্রভাতের নির্ঝর।
তাঁতশালে জগতের
ভাগ্য তো বুনিছ;—
শ্রম লঘু হয় কিসে
গান নাহি গাহিলে?
ভেবেছ কি দুনিয়ায়
সার শুধু খাটুনি?
পূজিবার,—বুঝিবার
আছে শোভা, হর্ষ;

কবি নহে তুচ্ছ,
হীন নহে কবিতা,
মা আমার! মা আমার!
মানবের ধাত্রী।

ওয়াট্‌সন্‌।