দিল্লী চলো/ইউরোপের অবস্থা
ইউরোপের অবস্থা
ভারত এবং আমাদের স্বাধীনতা-সংগ্রামের সঙ্গে ইউরোপীয় পরিস্থিতির যে সম্পর্ক আছে সেই সম্বন্ধে কিছু বলছি। আমি যা বলব তা অন্য কারও মত নয়—আমার ব্যক্তিগত মত। আমার বিশ্বাস এবং আশা আছে, আমি যে বর্ণনা দেব তাতে অন্ততঃ বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবনে আপনাদের কিছু সাহায্য হবে। রাজনৈতিক হোক, আর সামরিক হোক, কোন বিশেষ পরিস্থিতির পরিমাপে সর্ব্বদাই নিজের অজ্ঞাতসারে ইচ্ছানুরূপ চিন্তার আশঙ্কা থাকে। যে বিচার এইভাবে ব্যক্তিগত পছন্দ কিংবা কুসংস্কার কিংবা ইচ্ছানুরূপ চিন্তার দ্বারা দূষিত হয়, তা প্রায়ই বিশ্বাসের অযোগ্য। বর্ত্তমান ক্ষেত্রে ইউরোপীয় পরিস্থিতির পরিমাপে আমি নিজের ইচ্ছানুরূপ চিন্তার বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা করবার যথাসাধ্য প্রয়াস পেয়েছি। বিচারে একপেশে হবার মতো কোন উদ্দেশ্য আমার নেই—কেন না আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছে, ভারতীয় পরিস্থিতি ইউরোপীয় পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল নয় এবং ইউরোপে যাই ঘটুক না কেন, ভারতীয় জনগণ নিজেদের স্বাধীনতা অর্জ্জন করবেই।
এই বিশ্লেষণের যথোপযুক্ত পটভূমি সৃষ্টির জন্যে, গত বিশ্বযুদ্ধে (প্রথম মহাযুদ্ধ) কি ভাবে এবং কেন মিত্রশক্তি জয়লাভ করেছিল ও জার্ম্মানী হেরেছিল, আমি প্রথমে সেই প্রশ্নেরই আলোচনা করব। বিগত যুদ্ধে ফরাসী জনগণ অনুভব করত, তারা নিজেদের গৃহ সম্পদ—জীবনে যা কিছু তাদের প্রিয়—তারই জন্য লড়াই কর্ছে; এবং তারা আলসাসলরেনকে ফরাসী অঞ্চল বলে মনে করত, তার পুনরুদ্ধারও যুদ্ধের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। তাই ফরাসী জনগণ ছিল ঐক্যবদ্ধ এবং তাদের মনে উচ্চশ্রেণীর নৈতিক প্রেরণাও ছিল—যাকে বলা চলে “করব—নয় তো মরব”-মনোবৃত্তি। পক্ষান্তরে জার্ম্মান বাহিনী সুশিক্ষিত, সুসজ্জিত এবং কর্ম্মনিপুণ যন্ত্রের মতো হলেও তাদের মধ্যে অভাব ছিল ফরাসীবাহিনীসুলভ নৈতিক প্রেরণার। মিত্রপক্ষের সেনাবাহিনীর সর্ব্বাধিনায়ক মার্শাল-দলের স্মৃতিকথা পড়লেই এ সত্য বোঝা যায়। অপর কারণ ছিল, জার্ম্মানীর আভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে দুর্ব্বলতা; তারই ফলে জার্ম্মানী দীর্ঘ অবরোধ সইতে পারেনি। বর্ত্তমান যুদ্ধে কিন্তু অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত। জার্ম্মানীর যা ন্যায়সঙ্গত অভিযোগ ও দাবী, জার্ম্মানী তারই জন্যে যুদ্ধ করছে। যুদ্ধারম্ভের পূর্ব্বে সমস্ত জাতিকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা হয়েছিল এবং তাদের প্রত্যেকের মনে এ ধারণা দৃঢ়মূল করে দেয়া হয়েছিল যে, এ যুদ্ধে পরাজয়ের অর্থ জার্ম্মান জনগণের সামগ্রিক বিনাশ। কাজেই বিগত যুদ্ধে মিত্রপক্ষের—বিশেষ করে ফ্রান্সের যে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক প্রেরণা ছিল, বর্ত্তমান যুদ্ধে তা পাচ্ছে জার্ম্মানরা। তার অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি সম্বন্ধে বলতে হয়, বিগত যুদ্ধে লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে জার্ম্মানী চতুর্বার্ষিক পরিকল্পনার সাহায্য তার সমরায়োজনের জন্যে প্রস্তুত হয়েছিল। তা ছাড়া, রাশিয়া ব্যতীত সমগ্র ইউরোপ দখল ও নিয়ন্ত্রণ করে জার্ম্মানী যুদ্ধকালেই তার অর্থনৈতিক অবস্থা দৃঢ়তর করেছে। ফলে বর্ত্তমানে সে দীর্ঘ যুদ্ধের এবং দীর্ঘস্থায়ী সামুদ্রিক অবরোধের ক্লেশ সহ্য করতে পারবে।
বিগত যুদ্ধে ফরাসী এবং ইটালীয় জাতি জার্ম্মানীর বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। ফ্রান্স সম্বন্ধে বলা যায়, এই দেশটি খুব শক্তিশালী ছিল এবং সমগ্র যুদ্ধে নির্ভীক রণনৈপুণ্য দেখিয়েছিল। ফ্রান্স এবং ইটালী সহ ইউরোপের একটা বৃহৎ অঞ্চল ছিল জার্ম্মানীর প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আজ পরিস্থিতি কত ভিন্ন! কার্যতঃ রাশিয়া ছাড়া সমগ্র ইউরোপ জার্ম্মানীর প্রভাব বা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে; জার্ম্মানীর সম্মুখে আজ একটিমাত্র গুরুতর সমস্যা—রাশিয়া। ইটালী ও ফ্রান্সে মিত্রপক্ষের অবতরণ জার্ম্মান জনগণের পক্ষে অতিরিক্ত দুর্ভোগ ও ক্লেশের কারণ হলেও এতে জার্ম্মানদের মনােবল বেড়ে গেছে। এটা সর্ব্বজনবিদিত সত্য যে, ইটালীরা কিংবা ফরাসীরা—কেউই নিজেদের দেশের ভিতরে যুদ্ধ অভ্যর্থনা করবে না। একথাও সর্ব্বজনবিদিত, মিত্রশক্তি ইটালীর রাজা এবং ভূতপূর্ব্ব প্রধান মন্ত্রী বদোগ্লিওর সঙ্গে যে গােপন চুক্তি করেছে, ইটালীর জনগণের মনে তার প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এতে মিত্রশক্তি হতাশ হয়ে পড়েছে। ফ্রান্সে মিত্রশক্তির অভিযান সম্বন্ধেও ফরাসী জাতির উদাসীনতা দেখে মিত্রশক্তি ভয়ানক হতাশ হয়েছে। কেউ যদি আমার এ বিবরণ বিশ্বাস না করেন, তবে তিনি মার্কিন সংবাদপত্রগুলাে এবং ফ্রান্স থেকে প্রেরিত আমেরিকার যুদ্ধ-সংবাদদাতাদের বিবরণ পড়ে দেখুন।
কোন কোন লােক এইরূপ চিন্তায় অভ্যস্ত যে ভাগ্য সর্ব্বদাই বৃটিশদের আনুকূল্য করে এবং শেষ পর্য্যন্ত ইংল্যাণ্ড যে কোন প্রকারে বিজয় লাভ করবেই। শুধু সরলবিশ্বাসী লােকই এরূপ কথা বলতে পারে। ইতিহাস বড় কড়া বিধাতা; ইতিহাসের বড় বড় ঘটনা দৈবক্রমে ঘটে না। প্রত্যেক কার্য্যেরই কারণ আছে। বিগত মহাযুদ্ধে মিত্রপক্ষের বিজয় দৈবঘটনা-জনিত ছিল না—সে বিজয়লাভ সম্ভব হয়েছিল কয়েকটি বিশিষ্ট কারণে। আজকের ইউরােপে ভবিষ্যৎ অনুধাবনের কি কি উপাদান আছে এবং এই সব উপাদান থেকে শেষ পর্য্যন্ত কি ফল দাঁড়াবে—আমাদের তা খুঁজে বের করতে হবে।
আমি সংক্ষেপে ১৯৩৯ থেকে ১৯৪২এর শেষ পর্য্যন্ত পরিস্থিতির আলােচনা করছি; তারপর চলে আসব বর্ত্তমান পরিস্থিতির পর্য্যালােচনায়। ১৯৪৩, ১৯৪১ এবং ১৯৪২-এ বৃটিশরা দারুণ দুর্দ্দশার মধ্যে ছিল, প্রত্যেক রণাঙ্গনে তারা পরাজয়ের পর পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছিল। তখন তারা নিজের জনগণের মনোবল অক্ষুন্ন রাখার জন্যে প্রাণপণ প্রয়াস পেয়েছিল। সেই সময় তারা রোজই মার্কিণ সমরায়োজনের কথা বলত; মার্কিণ সমরায়োজন ও আর্থিক সংস্থান বৃটেনকে যুদ্ধ-জয়ে সাহায্য করবে এই বিশ্বাস উৎপাদনের জন্যে অবাস্তব সংখ্যার প্রচার করত। ভারতের উদ্দেশ্যে তাদের প্রচারকার্য্যে বৃটিশরা অনবরত যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠনের কথা বলত, কমিটি গঠন করত এবং সে উদ্দেশ্যে অর্থাদিও রেখে দিত—যাতে ভারতীয় জনগণের মনে ধারণা জন্মে যে, বৃটিশরা যুদ্ধজয় সম্বন্ধে স্থির বিশ্বাসী। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ণোদ্যমে যুদ্ধে যোগ না দেওয়া পর্য্যন্ত প্রচারে বিশেষ কিছু কাজ হয় নি। তারপর থেকে ইউরোপে অন্ততঃ যুদ্ধের হাওয়া কিছুটা মিত্রপক্ষের অনুকূলে বইতে শুরু করেছে। কিন্তু, ইউরোপে মিত্রশক্তির সাম্প্রতিক সাফল্যকে যদি সযত্নে বিশ্লেষণ করা যায়, দেখা যাবে এসব সাফল্যের অধিকাংশই আমেরিকার সমর-সামর্থ্যের দরুণ। আজ যদি মিত্রপক্ষীয় মনোবল দু-বছর আগেকার চেয়ে উচ্চতর হয়ে থাকে, তবে তা-ও সম্পূর্ণভাবে কিংবা প্রধানতঃ হয়েছে মার্কিণ যুক্তরাষ্টের কার্য্যকারিতার দরুণ। স্বতন্ত্র ভাবে বিবেচনা করলে, বৃটিশ মনোবল আজও অনেক কম। এই জন্যেই বৃটেনের প্রধান মন্ত্রী সম্পূর্ণভাবে প্রেসিডেণ্ট রুজভেল্টের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। প্রত্যেক রণাঙ্গণেই উদ্ধত সাম্রাজ্যবাদী মিঃ উইনস্টন চার্চ্চিল আমেরিকান সেনাধ্যক্ষদের মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন;—দাবী ওঠা মাত্র আমেরিকার কাছে বহু মূল্যবান বৃটিশ অঞ্চল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন—এমন কি যাকে নিজের রাজ্যের অধিকার ছেড়ে দেওয়া (extra-territorial right) বলে, আমেরিকাকে তাও দিতে হয়েছে। আরও মজার ব্যাপার এই যে, মিঃ চার্চ্চিলের পশ্চাদ্বর্ত্তী শাসক-গোষ্ঠী এবং তাঁদের মতের উপাসক ও পরিপোষক বুদ্ধিবাদীরাও খোলাখুলি আমেরিকানদের “মার্কিন শতাব্দীর” মতবাদ স্বীকার করে নিচ্ছেন। অন্য ভাবে বলতে গেলে তাঁরা স্পষ্ট স্বীকার করেন যে, বৃহত্তর রাষ্ট্র হিসাবে মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে বৃটেনকে স্থান ছেড়ে দিতে হবে এবং এ সত্যকে স্বীকার করে নিয়ে আমেরিকার সাহায্য কিংবা সম্মতির সুযোগে বৃটেন তার সাম্রাজ্যের যতখানি পারে রক্ষা করার চেষ্টা করবে। বৃটেন যে ভারতকে কোন সুযোগ দিতে চায় না কিংবা ভারতের স্বাধীনতা দাবীর প্রশ্নে আমেরিকা যে বৃটেনের উপর চাপ দিতে অনিচ্ছুক—তার মূল কারণ এর মধ্যেই নিহিত। বৃটেনের স্পষ্ট উদ্দেশ্য হচ্ছে যুদ্ধশেষে ভারতকে আরও শোষণ করা এবং এইভাবে অন্ততঃ আংশিক ভাবে তার বর্ত্তমান ক্ষতির পরিপূরণ করা। এই উদ্দেশ্যে যুদ্ধশেষে চিরদিনের মতো ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনকে নিষ্পেষিত করার পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই লণ্ডনে রচিত হয়েছে। বৃটিশ রাজনীতিবিদ্রা বোঝেন যে তাঁরা এপর্য্যন্ত ভারতের স্বাধীনতা-আন্দোলনকে দমন করতে পারেননি। এপর্য্যন্ত অনুসৃত ভেদনীতির শাসন এবং ভারতের জাতীয় কংগ্রেসকে হেয় করার জন্যে দেশীয় নৃপতি, মুসলমান এবং তথাকথিত তপশীলী শ্রেণীর প্রতি পার্থক্যময় ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। নিজেদের ধরণে ভারতীয় প্রশ্ন-সমাধানের যে ব্যবস্থা বৃটিশ রাজনীতিবিদরা করে রেখেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকারের। এসম্বন্ধে আমি অন্য কোনদিন বলব।
১৯৪২-এর নবেম্বর থেকে প্রায় সম্পূর্ণতর আমেরিকার সাহায্য ও হস্তক্ষেপের দরুণই এবং আমেরিকার কূটনীতির ফলে মিত্রপক্ষ উত্তরআফ্রিকায় ও পরে ইটালীতে সাফল্য লাভ করতে পেরেছে। আমেরিকার কূটনীতির খেলা সার্থক না হলে ফ্রান্সের অ্যাডমিরাল দাঁর্লার দল মিত্রপক্ষে যোগ দিত না। এবং দাঁর্লার সাহায্য ছাড়া উত্তর-আফ্রিকার যুদ্ধে মিত্রপক্ষের জয়লাভ করা সম্ভব হত কিনা— সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। বৃটিশ গবর্নমেণ্ট কিন্তু দাঁর্লার দলের বিরুদ্ধে জেনারেল দ্য গলকে সমর্থন করছিলেন এবং এখনও করছেন। এই প্রশ্ন সম্বন্ধে বৃটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোন বোঝাপড়া হয় নি—যদিও বৃটিশের জেদের ফলে জেনারেল দ্য গল্ বর্ত্তমানে দাঁর্লার উত্তরাধিকারী জেনারেল জিরোকে পরাজিত করেছেন। এই বোঝাপড়া না থাকার একটা ফল হয়েছে এই যে, সেভিয়েট গবর্নমেণ্ট কূটনৈতিক বিজয়লাভ করেছে এবং ফরাসী উত্তর-আফ্রিকায় নিজেদের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত করেছে। বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এই বোঝাপড়ার অভাবের দরুণ আর একটা ফল হয়েছে, জেনারেল দ্য গল ইউরোপীয় রণাঙ্গনে মিত্রপক্ষের সর্ব্বাধিনায়ক আমেরিকান জেনারেল আইসেনহাওয়ারের বিশ্বাসভাজন ব্যক্তি নন বলে, তিনি কোন স্থানই পাননি। মিত্রপক্ষ ফ্রান্সের কোন অংশ যদি দখল করতে পারে, সে অঞ্চল জেনারেল দ্য গলের কমিটির হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে না—মিত্রপক্ষীয় সামরিক গবর্নমেণ্টই সে অঞ্চল শাসন করবে। পক্ষান্তরে জেনারেল দ্য গলের কর্ত্তৃত্বে যে সামান্য সেনাবাহিনী আছে—তথাকথিত স্বাধীন ফরাসীবাহিনী—ইটালীতে তাদের মিত্রপক্ষের বেতনভোগী সাধারণ সৈন্যের মতোই যুদ্ধে নিযুক্ত করা হয়। সারা পৃথিবীই জানে যে ইউরোপীয় প্রশ্ন সম্পর্কে বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েটের মধ্যে কোন প্রকার বোঝাপড়া নেই। এই তিনটি শক্তির মধ্যে যে মিত্রতা আছে, সে মিত্রতার একমাত্র ভিত্তি হচ্ছে বিরুদ্ধপক্ষীয়দের প্রতি সাধারণ ঘৃণা; তার মধ্যে কোন আভ্যন্তরীণ একতা ও সংহতি নেই। এ ধরণের মিত্রতায় কোন স্থায়ী ফললাভ হতে পারে না, কিম্বা তার দ্বারা যুদ্ধজয়ও সম্ভব নয়। গতযুদ্ধে বৃটিশ, আমেরিকান, বেলজিয়ান ও ফরাসীদের মধ্যে যে দৃঢ়সংবদ্ধ ঐক্য ছিল এ মিত্রতা তার চেয়ে ভিন্ন জিনিস। ১৯১৮ অব্দে ফ্রান্সে মিত্রশক্তির সেনাবাহিনীর সর্ব্বাধিনায়ক মার্সাল ফক ছিলেন সেই ঐক্যের প্রতীক বিশেষ।
ইউরোপে মিত্রপক্ষের অনুপ্রবেশকে আপাতদৃষ্টিতে বিজয় বলে মনে হলেও, তা প্রকৃত বিজয় নয়। এ বিজয় সাময়িক—নেপোলিয়ঁর রাশিয়া-বিজয় ও মস্কো অধিকারের মতো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, জার্ম্মানরা ইংলণ্ড অভিযান করলে বৃটিশরা সিংহের মতো যুদ্ধ করত। দূর মহাদেশের বুকে তারা তেমন যুদ্ধ করতে পারে না—করেও না। সেনাবাহিনী প্রাণহীন যন্ত্রমাত্র নয়। সেনাবাহিনী এমন সব মানুষ নিয়েই গঠিত যাদের অনুভূতি ও হৃদয়াবেগ আছে—যারা বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন প্রকার যুদ্ধ করে। নেপোলিয়ঁ যখন যুবক ও যুদ্ধ-ব্যাপারে অনভিজ্ঞ ছিলেন, তখন অনভিজ্ঞ ফরাসী-বাহিনী যুদ্ধ করে সারা ইউরোপে চমকপ্রদ বিজয়-লাভ করেছিল। সে সময় প্রতিক্রিয়াশীল জগতের আক্রমণ থেকে বিপ্লব ও বিপ্লবী দলকে রক্ষার জন্য সমগ্র ফ্রান্স যুদ্ধ করছিল। কিন্তু সেই একই ফরাসী-বাহিনী পরে শত্রুর হাতে পরাজিত হয়েছিল, অথচ তখন তার অভিজ্ঞতা ছিল বেশী এবং সে বাহিনীর নেতা ছিলেন ইউরোপ-বিজয়ী সম্রাট নেপোলিয়ঁ। বিজয়ের সময় অনভিজ্ঞ ফরাসী-বাহিনী তরুণ নেপোলিয়ঁর অধীনে একটা পবিত্র আদর্শের জন্যে যুদ্ধ করছিল। পরে সেই পবিত্র আদর্শ আর ছিল না—কেন না সম্রাট নেপোলিয়ঁ তখন ইউরোপ-বিজয়ের জন্যে যুদ্ধ করছিলেন। শেষ পর্য্যন্ত সম্রাট নেপোলিয়ঁর নেতৃত্ব সত্ত্বেও ফরাসীবাহিনী পরাজিত হয়েছিল—তার কারণ সে বাহিনীর মনোবল ও যুদ্যোদ্যম নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ইঙ্গ-মার্কিণদের সম্বন্ধেও সেই একই যুক্তি খাটে। তাদের যুদ্ধের পিছনে কোন পবিত্র আদর্শ নেই, তারা শুধু বিশ্ববিজয়ের জন্যে যুদ্ধ করছে—তখন দীর্ঘকাল তাদের মনোবল অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব নয়। কাজেই আমি এই ভবিষ্যদ্বাণী করছি, ইউরোপে যুদ্ধ যতই মন্থর গতিতে চলতে থাকবে, মিত্রপক্ষের মনোবল ততই কমতে থাকবে।
ইতিপূর্ব্বেই আমি মন্তব্য করেছি, বৃটিশের মনোবল এখনও তুলনা মূলক হিসাবে কম। তা সত্ত্বেও ইউরোপে আমেরিকা-বাহিনীর যতদিন রণক্লান্তি না আসে, ততদিন মিত্রপক্ষের মনোবল অক্ষুণ্ণ থাকবে। কিন্তু সে কতদিন? সরকারী হিসাব থেকে দেখা যায়, এ যুদ্ধে আমেরিকার ক্ষতি ইতিমধ্যেই বিগত যুদ্ধে তার ক্ষতিকে ছাড়িয়ে গেছে। মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রে অবশ্য লোকসংখ্যা প্রচুর—তবে আমাদের একথা ভুললে চলবে না, আমেরিকানরা যুদ্ধপ্রিয় জাতি নয়। তারা হচ্ছে ব্যবসায়ী ও কৃষকের জাতি। ইউরোপের যুদ্ধ আমেরিকা থেকে বহু দূরবর্ত্তী; আমেরিকার সমগ্র জাতির কাছে এ যুদ্ধ জনপ্রিয় নয়। ইউরোপের যুদ্ধ বিষয়ে যারা সব চেয়ে উৎসাহী, তারা হচ্ছে প্রেসিডেণ্ট রুজভেল্টের অনুরক্ত সমর্থক—ইহুদীরা এবং ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি মহল। তারা সমগ্র পৃথিবীর উপর অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের স্বপ্ন দেখে। প্রভাবশালী স্বাতন্ত্র্যবাদী দল ইউরোপীয় যুদ্ধ সম্বন্ধে উদাসীন—যদিও প্রশান্ত মহাসাগরের যুদ্ধ সম্বন্ধে তারা উৎসাহশীল। তাছাড়া, ইউরোপীয় রণাঙ্গন ত্যাগ করে প্রশান্ত মহাসাগরে শক্তি সন্নিবদ্ধ করার একটা অবিচ্ছিন্ন পৌনঃপুনিক দাবী মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রে শোনা যাচ্ছে। কাজেই যুদ্ধে মার্কিণ ক্ষতির পরিমাণ যতই বাড়বে, ততই প্রতিবাদ শুরু হবে এবং রণক্লান্তিও বাড়তে থাকবে। তাছাড়া, সমর-কৌশলের দিক থেকে সরবরাহের অঞ্চল যত বিস্তৃততর হবে, ততই অতিরিক্ত অসুবিধার সৃষ্টি হবে; এখন আমেরিকানরা যে অসুবিধা ভোগ করছে নতুন সমস্যা দেখা দিলে তার পরিমাণ বহু গুণ বেড়ে যাবে। আমেরিকানরা যখনই রণক্লান্তি দেখাবে, তখনই তাদের পতনের শুরু হবে এবং ইউরোপে ইঙ্গ-মার্কিণ পরাজয়েরও সূত্রপাত হবে।
অতঃপর সোভিয়েট রাশিয়ার প্রশ্ন। সোভিয়েট কি জার্ম্মাণীতে প্রবেশ করে যুদ্ধের গতি ফেরাতে পারবে? মিত্রপক্ষের প্রচারকদের সদম্ভ প্রচারানুযায়ী তারা কি সত্যিসত্যি বার্লিনে প্রবেশ করতে পারবে? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে আমাদের এ যুদ্ধে রাশিয়ার ক্ষতি এবং তার যুদ্ধপণ্য উৎপাদনের ক্ষমতা বিচার করে দেখতে হবে। সৈন্য ও সমরোপকরণের দিক থেকে রাশিয়ার ক্ষতি হয়েছে অপরিমেয়। কাজেই ভবিষ্যতে তারা সীমাবদ্ধ যুদ্ধ-প্রচেষ্টা করতে পারবে। মার্শাল ষ্টালিনের চমৎকার প্রচারকার্য্যের দরুণ জনগণের মনোবল এত বেড়ে গেছে যে, তারা ক্ষতি সহ্য করে এখনও যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারছে। কিন্তু এতদিন তারা যুদ্ধ করছিল মাতৃভূমির জন্যে— নিজেদের গৃহ-সম্পদ রক্ষার জন্যে। রাশিয়ার বাইরে তাদের সে যুদ্ধ-স্পৃহা থাকবে না। তা ছাড়া জার্ম্মানবাহিনী ষ্টালিনগ্রাড অভিযানের সময় যেসব অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিল, রুশবাহিনীও সেই সব অসুবিধার সম্মুখীন হবে। কাজেই, ১৯৩৯এর সীমারেখায় পৌঁছানোর পর সোভিয়েট-বাহিনী খুব বেশী অগ্রসর হতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। আর একথাও মনে রাখতে হবে, মিত্রপক্ষের যদি জয়ই হয়, তবে ইউরোপের ভাগ্য কি রকম দাঁড়াবে সে সম্বন্ধে ইঙ্গ-মার্কিণ শক্তিদ্বয় এবং সোভিয়েটের মধ্যে কোন বোঝাপড়া হয়নি। কার্য্যতঃ ইউরোপের বহু অঞ্চলে একপক্ষে ইঙ্গ-মার্কিণদের অভিপ্রায় এবং অপরপক্ষে সোভিয়েটের অভিপ্রায় সম্পূর্ণ পরস্পর বিরোধী। এই প্রসঙ্গে আরও উল্লেখযোগ্য এই যে, ইঙ্গ-মার্কিণরা এখন নিজেদের ইউরোপীয় অভিযানকে সরবে প্রচার করছে বটে, কিন্তু সোভিয়েট পররাষ্ট্র-বিভাগের মুখপত্র “ওয়ার এণ্ড ওয়ার্কিং ক্লাস” পত্রিকা তথাকথিত দ্বিতীয় রনাঙ্গণকে ছোট করে দেখছে এবং ইঙ্গ-মার্কিণদের সতর্ক করে দিয়েছে, তারা যদি রণাঙ্গনের বিস্তৃতি সাধন না করে ও ফ্রান্সে আরও সৈন্য ও সমরোপকরণ নিয়োজিত না করে, তবে একদিন জার্ম্মান-বাহিনীর হাতে তাদের অত্যন্ত বিপদে পড়তে হতে পারে।
আরও লক্ষ্য করার বিষয়, ইঙ্গ-মার্কিণ আফ্রিকা ও এশিয়ায় সােভিয়েট গবর্নমেণ্টের রাজনৈতিক অভিযানে আদৌ সন্তুষ্ট নয়। উদাহরণ স্বরূপ উত্তর-আফ্রিকা, সিরিয়া, মিসর ও ইরানের নাম করা যায়। তাছাড়া, পােল্যাণ্ড, ফিনল্যাণ্ড, বাল্টিক ও বল্কান রাজ্যসমূহ এবং দার্দ্দনলেস প্রণালীতে সােভিয়েট গবর্নমেণ্টের যে মনোগত অভিপ্রায়, তাকেও ইঙ্গ-মার্কিণরা আনুকূল্যের চোখে দেখে না। ১৯১২ অব্দে বল্কান-শক্তিপুঞ্জ যখন তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল, তখন তাদের মধ্যে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল, মিত্রপক্ষীয় শিবিরেও অনুরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব একেবারে অসম্ভব নয়। ১৯৩৯-এর সীমান্ত অতিক্রম করে সােভিয়েট-বাহিনীর অগ্রগতি যদি কখনও সম্ভব হয়, তবে তার ফলে অপ্রত্যাশিত জটিলতা দেখা দিতে পারে। ইঙ্গ-মার্কিণ শক্তিদ্বয় ও সােভিয়েটের মধ্যে যে বােঝাপড়ার অভাব ও সংঘাত আছে তা তখন আরও বেড়ে যাবে।
এর ফলে আমরা তুরস্ক সমস্যার মধ্যে এসে পড়ি। বৃটিশ প্রচারকরা বিশ্ববাসীর মনে এই ধারণা সৃষ্টি করার প্রয়াস পাচ্ছে যে, এমন দিন আসবে যখন তুরস্ক মিত্রশক্তিদের পক্ষে যােগ দেবে। এই প্রচারকরা ভাবে, এই ধরণের প্রচারকার্য্য বৃটিশ-সমর্থনে ভারতীয় মুসলমানদের প্রভাবিত করবে। কিন্তু আধুনিক তুরস্ক সম্বন্ধে যার কিছুমাত্র জ্ঞান আছে, সে এই ধরণের অভিমতে আদৌ বিশ্বাস স্থাপন করতে পারবে না। তুরস্কে যদিও এমন সব উপদল আছে যারা স্পষ্টতঃ মিত্রপক্ষের সমর্থক এবং যদিও আঙ্কারার বেতার-কেন্দ্রের সুরও মিত্রপক্ষ সমর্থন করছে, তবু যুদ্ধরত উভয় পক্ষের কোনদিকেই তুরস্কের যােগদানের সম্ভাবনা নেই।
আমি প্রথমেই বলেছি, মিত্রপক্ষীয় শিবিরে মনােবল কৃত্রিম উপায়ে বাড়ানাের জন্যে প্রচারকরা আমেরিকার যুদ্ধ-পণ্যোৎপাদনের প্রাচুর্য্য নিয়ে খুব হৈ চৈ করেছে। কিন্তু আমেরিকার পণ্যোৎপাদন ইতিমধ্যেই সর্ব্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেচে, এবং ভবিষ্যতে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত না হয়ে এ উৎপাদন কমে যাবে। আর জার্ম্মানীর কথা বলতে গেলে সাম্প্রতিক বিমান আক্রমণ সত্ত্বেও তার যুদ্ধ-পণ্যোৎপাদন তেমন কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয় নি। কার্যতঃ কোন কোন বিষয়ে উৎপাদন বেড়েই গেছে। কাজেই জার্মমান যুদ্ধ-পণ্যোৎপাদন যুদ্ধ-পরিস্থিতির সঙ্গে তাল রেখে চলতে পারবে, এ সম্ভাবনা পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান।
ইউরোপের অবস্থা অতি সংক্ষেপে আমি এখন বর্ণনা করছি:
পূর্ব্ব রণাঙ্গনে জার্ম্মানদের পক্ষে রাশিয়াকে পরাজিত করা সম্ভব হয় নি। ঠিক সেইভাবে রুশদের পক্ষেও জার্ম্মানীকে পরাজিত করা সম্ভব হবে না। আমার কাছে যেটা খুব বেশী সম্ভব বলে মনে হয় সেটা হচ্ছে এই যে, এক ধরণের অচল অবস্থার সৃষ্টি হবে—যার ফলে উভয় পক্ষই হয়তো পরিখা খুঁড়ে মুখোমুখি অপেক্ষা করবে।
পশ্চিম রণাঙ্গনে কিন্তু কিছুকাল পরেই জার্ম্মানীর অনুকূলে যুদ্ধের গতি ফিরবে। তখন জার্ম্মানদের পক্ষে ফ্রান্সে ইঙ্গ-মার্কিণদের প্রত্যাঘাত করা সম্ভব হবে। ইটালীতে জার্ম্মানরা উপদ্বীপভাগ ত্যাগ করে উত্তর-ইটালীতে পশ্চাদপসরণ করবার পূর্ব্বে চুড়ান্ত রকম আত্মরক্ষামূলক সংগ্রাম করবে। উত্তর-ইটালীতে তারা দৃঢ়সংবদ্ধ হয়ে অবস্থান করবে; সেখান থেকে তাদের হটিয়ে দেওয়া ইঙ্গ-মার্কিণদের পক্ষে সম্ভব হবে না।
ইটালী ও ফরাসী রণাঙ্গন সম্বন্ধে আমার দৃঢ়বিশ্বাস, মিত্রপক্ষের মনোবল ক্ষুণ্ণ হতে আরম্ভ না হওয়া পর্য্যন্ত জার্ম্মানরা এ দুটি রণাঙ্গনে ঠিক থাকতে পারবে। জার্ম্মান-মনোবল ভেঙে যাবার কোন সম্ভাবনা আমি দেখি না। ইতিমধ্যেই জার্ম্মানীর উপর বিমান-আক্রমণ শিথিল হতে শুরু করেছে এবং উড়ন্ত-বোমার সাহায্যে জার্ম্মানী নূতন আক্রমণাত্মক অভিযান চালিয়েছে। জার্ম্মান মনোবলের উপর এর প্রভাব হয়েছে চমৎকার। পরের কয়েক মাস জার্ম্মানীর পক্ষে সঙ্কটজনক হবে। কিন্তু তারপর জার্ম্মানীর আবার সুদিন আসবে। আমার এই ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা হতে পারে যদি জার্ম্মান-মনােবলের আকস্মিক অধঃপতন ঘটে—যেমন বিগত যুদ্ধে হয়েছিল। কিন্তু তার কোন লক্ষণই আমি দেখছি না। মার্শাল ষ্টালিন যেমন রাশিয়ায় সমস্ত প্রতিরােধের অবসান করেছিলেন, ফুয়েরারও তেমনি জার্ম্মানীর অভ্যন্তরে সমস্ত প্রতিরোধ ধ্বংস করে আগে থেকেই এ সম্ভাবনার পথ রুদ্ধ করছেন।
ইউরােপের এ যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের যুদ্ধই হবে না, হবে স্নায়ুর যুদ্ধও। পক্ষের মনােবল বেশী থাকবে সেই পক্ষই জিতবে—এবং সে হচ্ছে জার্ম্মান পক্ষ। নিছক ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে ইউরােপের দীর্ঘ যুদ্ধ আমাদের পক্ষে এই অর্থে উপকারী হবে যে, এর ফলে মিত্রপক্ষীয় সেনা সেখানে আটক পড়ে থাকবে। ইঙ্গ-মার্কিণরা ইউরােপ মহাদেশকে যদি না ঘাঁটাত এবং তারা যদি ইটালী ও ফ্রান্সে সৈন্যাবতারণ না করত, তবে তারা ভারতে এবং পূর্ব্ব-এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে তাদের স্থল-সৈন্য ও নৌ-সৈন্য নিয়ােগ করতে পারত। কাজেই, ইউরােপে ইঙ্গ-মার্কিণদের বর্ত্তমান অভিযান আমাদের স্বাধীনতা-সংগ্রামে প্রত্যক্ষ সাহায্যের মতই।
ভারতীয় পরিস্থিতি ইউরােপীর পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল নয়। ভবিষ্যতে ইউরােপে যা-ই ঘটুক না কেন, ভারতীয় জনগণ আজ স্বাধীনতা-অর্জ্জনের দৈবপ্রেরিত সুযােগ পেয়েছে। কাজেই, ইউরােপীয় পরিস্থিতি যদিও আমাদের ঔৎসুক্যের বিষয় হয়ে থাকবে, তবু সেখানে কি ঘটবে না ঘটবে তা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানাের বিশেষ প্রয়ােজন নেই। মুক্তি আমাদের হাতের নাগালের মধ্যে এসে গেছে। আসুন, সুযােগ থাকতে থাকতে আমরা তাকে মুঠো করে ধরি। লােহা গরম থাকতে থাকতেই তার উপর আঘাত করতে হবে।
বেতার-বক্তৃতা: ৮ই জুলাই, ১৯৪৪